You dont have javascript enabled! Please enable it!
ধলাপাড়ায় শত্রুর আক্রমণ
১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী পুনরায় ঘাটাইল থানাধীন ধলাপাড়ায় আক্রমণ চালাতে আসে। উভয় পক্ষের ১৬ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে ১০জন রাজাকার নিহত এবং ৪জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ৪জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দি হয়। কিন্তু যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুক্তিযােদ্ধারা ধলাপাড়া ঘাটি আগলে রাখতে না পেরে সামান্য পিছিয়ে যান। অন্যদিকে, কুয়াশার কারণে আশপাশের অবস্থা ভালােভাবে দেখা না যাওয়ায় মুক্তিযােদ্ধা হারুন বাংকারে বসে গুলি চালান। এ সময় ২-৩জন লােক তার দিকে আসতে থাকে। প্রথমে তাদের গ্রামবাসী মনে করে হারুন আক্রমণ করেন নি। কিন্তু কাছে আসতেই বােঝা যায়। যে, তারা শত্রু বাহিনীর। মুক্তিযােদ্ধা হারুন তাদের উদ্দেশ্যে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন, কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তৎক্ষণাৎ তিনি হানাদারদের হাতে বন্দি হন। এরপর অধিনায়ক নবী নেওয়াজের কোম্পানি হানাদারদের পিছন থেকে আক্রমণ করলে শত্রু বেশিক্ষণ ধলাপাড়ায় থাকতে না পেরে কালিহাতিতে ফিরে যায়। দুপুরে হানাদাররা বন্দি মুক্তিযােদ্ধা হারুনকে ২জন পাকিস্তানি সেনা ও ২জন রাজাকারের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর বন্দি বিনিময় হয়।
ভাতকুড়া সেতু ধ্বংস
১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলা সদরে অবস্থিত ভাতকুড়া সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা ভাতকুড়ার দিকে এগিয়ে চলেন। ভাতকুড়া সেতুতে বিস্ফোরক লাগানাের কাজ ইতােমধ্যেই। শেষ করে মুক্তিযােদ্ধারা অপেক্ষায় ছিলেন। কারণ, বিস্ফোরণ ঘটানাের কাজটি কাদের সিদ্দিকী সমাধা করতে চেয়েছিলেন। বিস্ফোরক-বিশারদ মুক্তাগাছার হাবিব ভাতকুড়া সেতুতে চক্রাকারে বিস্ফোরক লাগিয়ে কর্টেক্স ডেটোনেটর সংযােগ করে রেখেছিলেন। শুধু সেফটি-ফিউজে আগুন লাগানাে বাকি। ভাতকুড়া পুলে ফিরে এসে মাত্র ২জনকে রেখে কাদের সিদ্দিকী সবাইকে দক্ষিণে। সরে যেতে বললেন। রাত আনুমানিক ১০টা ১০ মিনিটে ভাতকুড়া সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটানাে হলাে। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে সমস্ত এলাকা থরথর করে। কেঁপে উঠল। চারদিক ঘন ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। কিন্তু এত প্রচণ্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানাের পরও ভাতকুড়া সেতুটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হলাে না। সেতুটিকে একেবারে নিচে ফেলে না দিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে রেখে দিতে চেয়েছিলেন। সিদ্দিকী। সেতুটি নিচে পড়ে গেলে তার উপর শত্রুরা সহজেই অস্থায়ী সেতু তৈরি করতে পারবে। দুমড়ে-মুচড়ে রেখে দিতে পারলে তার উপর বেইলি ব্রিজ। তৈরি করতে অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগবে। বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞ হাবিবকে সাথে নিয়ে বিধ্বস্ত সেতুটি আবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন সিদ্দিকী। প্রথম বিস্ফোরণে সেতুটি আশানারূপ ধ্বংস না হওয়ায় দ্বিতীয়বার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। সেতুটিকে ধ্বংস করা হয়।
ভুয়াপুর গানবোেট আক্রমণ
টাঙ্গাইল-মধুপুর সড়কের পশ্চিমে ধলেশ্বরী-যমুনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র ভুয়াপুর। উত্তর টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ এ এলাকা শত্রু সেনাদের জন্য বিভীষিকাময় অঞ্চল। শক্রর বিভিন্নমুখী আক্রমণ ভুয়াপুর প্রতিরক্ষা অবস্থানের। কাছে বারবার প্রতিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাদলের ৫টি সশস্ত্র বােট ভুয়াপুরের কাছে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। এবং গানবােটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন:
১. শফিউল্লাহ।
২. আহাম্মদ আলী।
৩, আবদুল হাই।
৪. মুনছুর আলী
৫. ইদ্রিস আলী
৬, লুৎফর রহমান।
মহিষবাথান সেতু আক্রমণ
টাঙ্গাইল জেলার মিঠাপুর থানায় মহিষবাথান অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা কালিয়াকৈর থানা উন্নয়ন অফিসের দক্ষিণে মহিষবাথান সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে। অধিনায়ক আব্দুল হাকিমকে সেতু ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর টহলদার দল প্রতিদিন টহলে। বের হতাে। ঢাকা অভিমুখী টহলদার দল মহিষবাথান সেতু অতিক্রম করার সাথে সাথে অধিনায়ক হাকিমের ইশারায় মুক্তিযােদ্ধারা সেতুর উপর উঠে পড়েন। সেতুটি তখন শক্রর নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ছিল। সেতু পাহারার দায়িত্বে নিয়ােজিত রাজাকাররা ঈদের আনন্দ উপভােগের জন্য কালিয়াকৈর বাজারে গিয়েছিল। অধিনায়ক হাকিম সে সুযােগটি কাজে লাগিয়ে পর পর ৩টি বিস্ফোরণের মাধ্যমে সেতুটি ধ্বংস করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!