You dont have javascript enabled! Please enable it!
ভাতকুড়ার যুদ্ধ
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে দক্ষিণে অবস্থিত দেলদুয়ার থানা থেকে সােজা দক্ষিণে পাথরাইল-চণ্ডী । চণ্ডী থেকে কুবুল্লির মাঝ দিয়ে ১৫০জনের একটি দল নিয়ে ভাতকুড়া ও কুমিল্লার মাঝামাঝি একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক স্থানে কাদের সিদ্দিকী অবস্থান গ্রহণ করলেন। এখান থেকে দলটিকে ৩টি ছােটো দলে বিভক্ত করা হলাে। অধিনায়ক মকবুল হােসেন খােকার নেতৃত্বে প্রথম দল ভাতকুড়া সেতু দখল করবে। অধিনায়ক বজলুর নেতৃত্বে ৩০জনের দ্বিতীয় দল। ভাতকুড়া সেতুর প্রায় ২ মাইল উত্তরে টাঙ্গাইলের দিকে সড়ক আগলে থাকবে। ১৫জনের তৃতীয় ও সর্বশেষ দলটি বাবুলের নেতৃত্বে ভাতকুড়ার মাইল খানেক দক্ষিণে ক্ষুদিরামপুর রাস্তার উপর অবরােধ সৃষ্টি করবে। উভয় দলের দায়িত্ব সেতু ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা আগলে রেখে কোনাে দিক থেকে যাতে সেতুতে সাহায্য আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া আরও প্রায় ৪০জন সহযােদ্ধা নিয়ে কাদের সিদ্দিকী মর্টার প্লাটুনের দায়িত্ব নেন। নির্ভুল নিশানায় গােলাবর্ষণে অব্যর্থ সামাদ গামাও কাদের সিদ্দিকীর সহযােগী। ভাতকুড়া লৌহজং নদের পাড়ে কর্নেল জিয়ার কাছ থেকে নেয়া চাইনিজ ৩ ইঞ্চি মর্টারটি বসান হলাে। এ মর্টার ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা এ যে, এটা দিয়ে ১ মাইল থেকে °, মাইলের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুর উপর নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে আঘাত হানা যায়। কিন্তু ব্রিটিশ ৩ ইঞ্চি মর্টার দিয়ে ১ মাইলের মধ্যে গােলা নিক্ষেপ খুবই বিপজ্জনক।
অথচ কাদের সিদ্দিকী চাচ্ছিলেন মর্টারটি ভাতকুড়া সেতুর কাছাকাছি কোথাও বসাতে, যাতে লক্ষ্যবস্তু দেখে দেখে সঠিক নিশানায় গােলা নিক্ষেপ করা যায়। ব্রিটিশ ও চাইনিজ ৩ ইঞ্চি মর্টার থেকে গােলা নিক্ষেপে সামাদ গামা ইতােমধ্যেই খুব পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। কাদের সিদ্দিকীর ২ ইঞ্চি মর্টারের নিশানা ছিল অব্যর্থ। ৩ ইঞ্চি মর্টার থেকে গােলা নিক্ষেপের কিছু বাড়তি সুবিধা থাকায় কাদের সিদ্দিকী ৩ ইঞ্চি মর্টার থেকে গােলা ছুঁড়তে আরও সুবিধা পান। দলের সাথে মর্টার আছে, আর অধিনায়ক নিজে মর্টার থেকে গােলা ছুঁড়ছেন বা কীভাবে ছুঁড়তে হবে, তা মর্টার প্ল্যাটুনকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল ছিল উঁচু। সেতু থেকে ১ মাইল দূরে মর্টার বসানাের কাজ শেষ হলে সামাদ গামাকে মর্টারের কাছে থাকতে নির্দেশ দিয়ে ভাতকুড়া গােরস্থানের পূর্বে পাকা রাস্তায় উঠে সরেজমিনে দেখে ফিরে এসে কাদের সিদ্দিকী সামাদকে গােলা ছুঁড়তে নির্দেশ দেন। দুলাল, শামসুল হক, আব্দুল লতিফ, শামসু, ভােম্বল, ছানােয়ার খান, আজাহার, বেনু মীর্জা, আব্দুল্লাহ, আব্দুল মান্নান, পিন্টু ও মাসুদসহ ২০জনকে নিয়ে আস্তে আস্তে লৌহজং নদ অতিক্রম করে ভাতকুড়া গােরস্থানের পশ্চিম পাশে গেলেন কাদের সিদ্দিকী। ঢাকা-টাঙ্গাইল পাকা রাস্তার দিকে কিছুদূর এগিয়ে কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা ভালাে করে দেখেশুনে রাস্তা নিরাপদ বলে জানালে সড়কের উপর যাওয়ার জন্য এগােতে শুরু করলেন। তিনি। এমন সময় ভাতকুড়া পাকা রাস্তার মাত্র ২০-২৫ গজ পশ্চিমে গােরস্থানের কাছে আসামাত্রই ভাতকুড়ার স্বেচ্ছাসেবক অধিনায়ক ২-৩জন। মুক্তিযােদ্ধাসহ কাদের সিদ্দিকীকে জানালেন যে, সেতু দখল হয়েছে এবং রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করছে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!