You dont have javascript enabled! Please enable it!
টাঙ্গাইল শহরের যুদ্ধ
টাঙ্গাইল শহরে অবস্থানরত শত্রু সেনাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং তাদেরকে হয়রানি, নাজেহাল, ধ্বংস এবং সর্বোপুরি মুক্তিযােদ্ধাদের উপস্থিতি জানানাের জন্য কাদের সিদ্দিকী শত্রুর উপর চোরাগােপ্তা হামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর একদল গেরিলার ঝটিকা আক্রমণে ২জন শত্রু সেনা নিহত এবং ৪জন আহত হয়। এ আক্রমণের ফলে টাঙ্গাইল শহরে পাকিস্তানি সেনাদের অবাধ চলাফেরা অনেকটা কমে যায়।
এ গেরিলা আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. মুক্ত মিয়া
২. নুরুল ইসলাম
৩. মুনছুর আলী
৪, ইদ্রিস আলী।
৫. লুত্যর রহমান
৬, আজিজুল হক।
ভাবলা এলাকার অ্যামবুশ
ভাবলা এলাকাটি টাঙ্গাইল শহরের নিকটেই অবস্থিত। ঐ এলাকার উপর দিয়ে প্রায়ই পাকিস্তানি সেনা ও পাকিস্তানি রেঞ্জার্স গাড়িবহর নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে অন্যত্র চলাচল করে থাকে। টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা শক্ত চলাচলের উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে এবং ১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের চলাচলের পথে ভাবলা এলাকায় অ্যামবুশ পেতে শত্রু আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধাদের রেঞ্জের মধ্যে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স দলের গাড়ি আসামাত্র মুক্তিযােদ্ধারা গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। শত্রুর হতাহতের সংখা না জানা গেলেও তাদের গাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এ অ্যামবুশে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১, আহাম্মদ আলী মাস্টার
২. সুবেদার জিয়াউল হক
৩. নূরুল ইসলাম
৪. মুনছুর আলী
৫. ইদ্রিস আলী
৬. লুৎফর রহমান
৭. আলাউদ্দিন
৮. আমির আলী
৯. গফুর খাঁ।
১০, আবদুল হাই
১১. সিদ্দিকুর রহমান।
বিবেকানন্দ এলাকায় রাজাকার দলের উপর আক্রমণ
টাঙ্গাইল শহরের সন্নিকটে বিবেকানন্দ নামক স্থানটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। ঐ এলাকায় রাজাকাররা স্থানীয় জনসাধারণের উপর নির্যাতন চালাত এবং হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল ইত্যাদি লুট করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতাে। রাত নেমে এলেই চলতাে নারী নির্যাতন। টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করে ৭জন রাজাকারকে আহত করতে সক্ষম হয়। ঐ আক্রমণের পর স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের অনেকটা নিরাপদ মনে করতে থাকে।
এ আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলাে:
১. আইয়ুব
২. আফছার
৩. জলিল
৪. গফুর
৫. কাশেম।
সেনবাড়ি রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ
সেনবাড়ি গ্রাম হালুয়াঘাট থানার অন্তর্গত এবং রেললাইনের পাশে অবস্থিত। সেনবাড়ি একটি রেল স্টেশন। এ রেল স্টেশনটি পাহারা দেয়ার জন্য রাজাকার অধিনায়ক আবদুল খালেকের নেতৃত্বে একটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল। রেল স্টেশনের পার্শ্বস্থ প্রাইমারি স্কুলে ছিল রাজাকারদের অবস্থান। ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধার একটি দল রেললাইনের পাশে অবস্থান গ্রহণ করে রাজাকার ক্যাম্পের উপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণের একপর্যায়ে রেললাইনের উপর দাঁড়ানাে একটি ট্রেনের ভিতর থেকে টহলরত পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ করে। আকস্মিক এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী কিছুটা ব্রিত হয়ে পড়ে। এ সময় মুক্তিবাহিনী ২ ইঞ্চি মর্টার ও এলএমজি দিয়ে ট্রেনের উপর গােলাবর্ষণ শুরু করলে পাকিস্তানি সৈন্যসহ ট্রেনটি অবস্থান পরিবর্তন করে মাইল তিনেক দূরে চলে যায়। পাকিস্তানি সৈন্যবাহী ট্রেন চলে যাওয়ার পর মুক্তিবাহিনী প্রাইমারি স্কুলে অবস্থানরত রাজাকারদের উপর সরাসরি আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ক্যাম্পে অবস্থানরত বেশির ভাগ রাজাকার নিহত হয় এবং কয়েকজন পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১, জবেদ আলী
২. মােজাফফর আলী
৩. খােরশেদ আলী।
৪. আবদুস সাত্তার
৫. আবদুল মান্নান
৬. বাবু মান্নান
৭. সুবেদার জিয়াউল হক
৮. তােফাজ্জল হােসেন চুন্ন
৯. আব্বাছ আলী
১০. মােজাহার আলী
১১. আবদুল হেকিম
১২. আমিনুল হক
১৩. আলম
১৪. আবদুর রহমান।
১৫. শাহাব উদ্দিন।
১৬. সুকুমার চক্রবর্তী
১৭. নাজমুল হক
১৮, আসকর আলী
১৯. ফজলুল হক
২০, ইদ্রিস আলী,
২১. মােহাম্মদ আলী
২২. কাজিম উদ্দিন
২৩. সহিদ মিয়া
২৪. আবদুর রহিম
২৫. দুলাল সাহা।
২৬. আবদুল হামিদ
২৭. হযরত আলী
২৮. আমিরুল ইসলাম
২৯. আবদুস সালাম তালুকদার
৩০. আফাজ উদ্দিন প্রমুখ।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!