কিশােরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রাস্তার সেতু ধ্বংস
১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ-কিশােরগঞ্জ রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সেতু ধ্বংসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্থানীয় অধিনায়ক আবদুস সালাম ফকিরের নেতৃত্বে একটি দল রামগােপালপুর ও মিরপুরের মাঝে ময়মনসিংহ ও কিশােরগঞ্জ রাস্তায় সেতু ধ্বংস করার জন্য অগ্রসর হয়। শিবপুর গ্রামে অবস্থান নিয়ে মুক্তিবাহিনী এ আক্রমণ চালায়। ফজরের আজানের কিছুক্ষণ পরই সেতুর উভয় পার্শ্বে মাইন বসিয়ে সেতু ধ্বংস করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে এ রাস্তা চলাচলের। অযােগ্য হয়ে পড়ে।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে
১. আবদুস সালাম ফকির
২. নূরুল ইসলাম
৩, আবদুস সালাম
৪. আবু তাহের মিয়া
৫. তাহের উদ্দিন
৬. মতিউর রহমান
৭. হাবিবুর রহমান হিরু প্রমুখ।
চরাঘাটি সেতু আক্রমণ
ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল ব্যাহত করার লক্ষ্যে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ-জামালপুর পাকা রাস্তায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ চরাঘাটি সেতুটি ধ্বংস করা হয় এবং এর ফলে এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় মুক্তিবাহিনী গ্রুপ অধিনায়ক আবদুল মজিদ ১ প্লাটুন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে জামালপুর এলাকায় আসেন। চরাঘাটি সেতু ধ্বংসের লক্ষ্যে তিনি স্থানীয়ভাবে খবরাখবর নিতে চেষ্টা চালান। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ সময় সেতু পাহারায় স্থানীয়ভাবে রাজাকার ও পুলিশ নিয়ােজিত ছিল। রাজাকাররা পাহারা সম্বন্ধে খুব সতর্ক ছিল না। পুলিশ সদস্যরা প্রায় সময় ক্যাম্পের বাইরে অবস্থান করতাে। গুরুত্বপূর্ণ এ সংবাদে গ্রুপ অধিনায়ক আবদুল মজিদ দুই দিক দিয়ে এ ক্যাম্প আক্রমণ এবং আরেকটি দল দিয়ে সেতুটি উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরিকল্পনামতাে মধ্যরাতে মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প আক্রমণ করলে বেশির ভাগ রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং অনেক অস্ত্র ফেলে গ্রামের মধ্যে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে গােলাম রব্বানী নামে ১জন মুক্তিযােদ্ধা শাহাদতবরণ করেন। ২৭টি অস্ত্রসহ বেশ কিছু গােলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোেদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. ডা. বাবর আলী
২. মতিউল ইসলাম বেগ
৩. আবদুল মজিদ।
৪.ফরহাদ হােসেন
৫. আবদুল হালিম
৬. গিয়াস উদ্দিন
৭, ডা. মামুদ
৮. জিয়াউল হক
৯. শামছুল আলম
১০. গােলাম রব্বানী
১১. জয়নাল আবেদীন
১২. মকবুল হােসেন।
১৩. আবদুল আলিম
১৪, মমতাজ আলী।
১৫. কাশেম আলী ফকির
১৬. আবদুল আজিজ
১৭. নূর মােহাম্মদ
১৮. কিতাব আলী
১৯. আবু মনছুর
২০, শাহেদ আলী
২১. মতিউর রহমান
২২. জালাল উদ্দিন
২৩. আরনেস আলী
২৪. আবদুর রহিম
২৫. সিরাজ আলী
২৬, আবুল হােসেন
২৭. নূর আহম্মেদ
২৮. আবদুল কুদ্ছ খান।
২৯. আবদুল হামিদ খান।
৩০. আফছার আলী
৩১. আলাউদ্দিন।
৩২. আমজাদ আলী
৩৩. দীপকচন্দ্র দাস
৩৪. আবদুস সামাদ
৩৫. নূরুল হক।
৩৬. ফিরােজ আলী।
৩৭. লিয়াকত আলী
৩৮, মফিজ উদ্দিন
৩৯. নঈম উদ্দিন
৪০. নিপেনচন্দ্র দাস
৪১. আবদুল বাছেদ আকন্দ
৪২. খুরশেদ।
৪৩. আকতার আলী
৪৪. শামছুল হক।
৪৫. আনিসুর রহমান।
৪৬. শাহজাহান
৪৭. আবদুল করিম
৪৮, আবদুল মজিদ
৪৯. ওমর ফারুক
৫০. বিল্লাল হােসেন
৫১. নূরুল ইসলাম
৫২. নাসির উদ্দিন
৫৩. মফিজ উদ্দিন
৫৪. হাবিবুর রহমান
৫৫. হাছেন আলী
৫৬, নাসির উদ্দিন সরকার
৫৭. খুরশেদ আলম।
৫৮, আকরাম হােসেন প্রমুখ।
আটপাড়া থানা আক্রমণ
আটপাড়া ময়মনসিংহের নেত্রকোনা মহকুমার একটি থানা। মহকুমা সদর থেকে আটপাড়া থানা ১০-১২ কিলােমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পাকিস্তানি বাহিনীর থানা এলাকায় স্থায়ী কোনাে অবস্থান ছিল না। মাঝে মাঝে দিনের বেলায় সেনাবাহিনী টহল দিয়ে রাতে নেত্রকোনা মহকুমা সদরে ফিরে যেত। মহকুমা সদরেই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়মিত অবস্থান। তবে থানার নিরাপত্তার জন্য রাজাকার বাহিনীর অবস্থান ছিল। ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট নাজমুল হকের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযােদ্ধা। আটপাড়া থানা আক্রমণ করে। আকস্মিক এ আক্রমণে বেশ কয়েকজন নিহত হয় এবং অন্যরা অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। থানার ওসি মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিবাহিনী থানা থেকে ২০-২১টি রাইফেল হস্তগত করে ।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে
: ১. নাজমুল হক।
২. আবদুস সালাম
৩, বাবু মান্নান।
৪. জবেদ আলী
৫. আবদুল খালেক।
৬. রিয়াজ উদ্দিন
৭. শামছুল আলম
৮. রতনচন্দ্র দাস।
৯. আবদুস সালাম
১০. আবদুর রশিদ
১১. আবুল কাশেম
১২. ইব্রাহিম খলিল
১৩. এ কে এম মতিউর রহমান
১৪. ফজলুল হক
১৫. মােজাফফর আহমেদ
১৬. সুবেদার মাহতাব উদ্দিন খান।
১৭. আবদুল জব্বার
১৮, হাবিবুর রহমান
১৯, মাহফুজুল ইসলাম খান
২০. ইয়াহিয়া খান
২১. আবদুর রহিম।
২২. আয়নাল হক
২৩. আবদুল হাই আকন্দ
২৪, জাহান আলী।
২৫. নজরুল ইসলাম
২৬. মহিউদ্দিন আহমেদ
২৭. রহিম খান।
২৮. আলী আজম প্রমুখ।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড