ভুয়াপুর অ্যামবুশ
ভুয়াপুর থানাটি টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে উত্তরে এবং যমুনা নদীর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। পাকিস্তানি অস্ত্রশস্ত্রবাহী জাহাজ ধ্বংসের পর শত্রু ভুয়াপুরের উপর। প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করে। সে আক্রমণের মুখে সম্মুখযুদ্ধ করে টিকে থাকা। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। মুক্তিযােদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে অ্যামবুশ। পেতে শত্রু সেনাদের ক্ষতিসাধনে সচেষ্ট হন। ১৩ আগস্ট ভুয়াপুর থানার সন্নিকটে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশে শত্রুর টহল দলের বেশ কিছু সৈন্য হতাহত হয়। মুক্তিযােদ্ধারা আচমকা এ ধরনের অ্যামবুশের মাধ্যমে শত্রুকে তটস্থ রাখতেন।
করটিয়ায় কমান্ডাে আক্রমণ
শত্রু বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল টাঙ্গাইল শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত করটিয়ায়। টাঙ্গাইল সামরিক ছাউনির পরেই করটিয়ার নাম করা যায়। করটিয়ার জমিদারদের এক অংশের সক্রিয় সহায়তায় এবং জামায়াতে ইসলামীদের উদ্যোগ এখানে রাজাকারদের একটা বড় রকমের ঘাটি সৃষ্টি হয়। প্রথমে হাতেম নামক এক কুখ্যাত ব্যক্তি রাজাকার অধিনায়ক হয়ে স্বাধীনতা সগ্রামীদের উপর অত্যাচার চালায় এবং যুবক ও ছাত্রদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। অবশ্য জুন মাসের দিকে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়। করটিয়া রাজাকার ক্যাম্পে হাতেম যখন রাজাকারদের শিক্ষা দিচ্ছিল, তখন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডাে সবুরের গুলির আঘাতে মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনার পর বেশ কিছুদিন রাজাকারদের উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। জনসাধারণও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাচে। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল, আগস্ট মাসের মাঝামাঝি জমিদারবাড়ির কেউ কেউ বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য। তারা নতুন করে রাজাকার বাহিনী গঠনে উঠে পড়ে লেগে গেল। স্থানীয় দারােগা ও দালালদের সহায়তায় রাজাকার অধিনায়ক হাতেমের হত্যার দায়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক সুফি মিয়া ও অন্যান্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা সাজিয়ে ফেলল।
এ জন্য তারা কিছু সাক্ষীসাবুদও তৈরি করে ফেলল। দালালদের এ কারসাজি নস্যাৎ করার জন্য অধিনায়ক বাঘা সিদ্দিকী কমান্ডাে সবুরকে ব্যবস্থা করতে বললেন। সবুর নেতার নির্দেশক্রমে ফিরদৌসকে সঙ্গে নিয়ে ১২ আগস্ট রাতে করটিয়ার কাছে একটি গ্রামে আশ্রয় নিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে প্রয়ােজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে লাগলেন। তারা ১৩ আগস্ট রাতে করটিয়া সেতু ধ্বংস করে দিলেন এবং হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে কলেজ ভবনে হামলা চালিয়ে ৫জন রাজাকারকে খতম করলেন। ১৪ আগস্ট ভােররাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের উপর সামরিক জিপের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে গাড়িটি অকেজো করে দেয়া হয় এবং জিপের আরােহী ২জন শক্র নিহত হয়। পাল্টা হামলা হওয়ার আগেই সবুর তার সঙ্গীদের নিয়ে নিরাপদ ঘাটিতে ফিরে আসেন। এ হামলার পর করটিয়ার রাজাকার তৎপরতা স্তব্ধ হয়ে যায়।
গর্জনার যুদ্ধ
১৪ আগস্ট টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানাধীন গর্জনায় মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে। পাকিস্তানি সেনাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। টাঙ্গাইলে ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী যত যুদ্ধে। অংশগ্রহণ করেছে, তার মধ্যে মাটিকাটার জাহাজ ধ্বংসের যুদ্ধ বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকার মতাে। কারণ এ যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, আর মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার অভাবিতপূর্ব সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। মুক্তিবাহিনীর এ সাফল্য ও লাভের কথা চিন্তা করে তরুণ যােদ্ধারা আহার-দ্রিা ত্যাগ করে উদ্ধারকৃত অস্ত্রশস্ত্র নিরাপদ স্থানে পার করার কাজে নিয়ােজিত থাকেন। কিন্তু যখন পার করার কাজ শেষ হলাে, তখন শুরু হলাে তাঁদের পেটে ক্ষুধার অগ্নিজ্বালা। অনেক মুক্তিযােদ্ধা চলে গিয়েছেন সদর দপ্তর সখীপুরে, শুধু পিছনে পড়ে থাকলেন বাঘা সিদ্দিকী ও তার সঙ্গী কয়েকজন। দিনের আলােয় সড়ক অতিক্রম করে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই ক্ষুধায় কাতর অবস্থায় তার ঘাটাইল থেকে ২ মাইল। পশ্চিমে গর্জনা গ্রামের জনৈক বি ডি মেম্বারের বাড়িতে এবং তার পাশের বাড়িতে ২টি দলে বিভক্ত হয়ে রাত যাপন করার ব্যবস্থা করলেন। সে রাতেও পেটে কিছু পড়লাে না ।
কিন্তু সকালবেলা দেখা গেল, বি ডি মেম্বার সাহেব খুব ধুমধামের সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের খাওয়ার আয়ােজনে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। খাসি জবাই করা হলাে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য। মুক্তিযােদ্ধারা রাতে সড়ক অতিক্রম করে চলে গিয়েছে মনে করে বাঘা সিদ্দিকী নিশ্চিন্ত ছিলেন, কিন্তু পর পর খবর আসতে লাগলাে যে, বেনুর কোম্পানি গর্জনার পশ্চিম পাড়ায় গােপন করে আছে। পাশের গ্রাম থেকে খবর এল যে, খােরশেদ আলমের কোম্পানিও কাল সড়ক পার হতে পারেনি। তারা অস্ত্রশস্ত্রের লটবহর নিয়ে গ্রামে লুকিয়ে আছে। বাঘা সিদ্দিকী সব দলকে একত্র করলেন এবং নির্দেশ দিলেন, “মুক্তিযােদ্ধাদের চতুর্দিকে শত্রু সেনা অবস্থান করছে। চোখ-কান খােলা রেখে চলবে। আর শক্র আক্রমণ না করলে কখনাে গুলি ছুঁড়বে না।” বাঘা সিদ্দিকীর নির্দেশ নিয়ে বেনু ও খােরশেদ আলম একই নৌকায় চলে গেলেন। যাওয়ার পথে বেনুর অনুরােধে খােরশেদ আলম বেনুর ক্যাম্পের ছেলেদের একটু দেখতে গেলেন।
এদিকে বি ডি মেম্বারের বাড়িতে খাসি রান্না চলছে, কিন্তু বাড়ির মহিলা ও শিশুরা যেন অতি সন্ত্রস্তভাবে বাক্সপ্যাটরা ও পােটলা-পুঁটলি নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তারা কেন চলে যাচ্ছে, এটা চিন্তা করলেন বাঘা সিদ্দিকী। তিনি বুঝতে পারলেন, ভিতরে ভিতরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি সহযােদ্ধাদের সজাগ করে দিয়ে ঘরের বাইরে এলেন এবং দুরবিন দিয়ে গ্রামের চারপাশে দেখতে লাগলেন। পাশের বাড়িতে অবস্থানরত নূরুন্নবী, বুলবুল খান। মহবুব, নূরুল ইসলামসহ অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের ডেকে পাঠালেন এবং সঙ্গে যে ৪টি নৌকা ছিল সেগুলােয় গােলাবারুদ বোঝাই করে ভােলা, আলীম ও লতিফকে দিয়ে দূরের গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন। এ সময় গােয়েন্দা বিভাগের ছেলেরা খবর দিল যে, ২ মাইল দূরে ঘাটাইল থানা থেকে ১০টি নৌকা বােঝাই হয়ে শক্র গর্জনার দিকে আসছে। তিনি খবর পেয়েই নূরুল ইসলাম, নূরুন্নবী, বুলবুল এবং অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের আর বিলম্ব না করে সেখান থেকে সরিয়ে দিলেন এবং তার সঙ্গে মাত্র ৪জন মুক্তিযােদ্ধাকে রাখলেন। তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে দুরবিন দিয়ে দেখলেন, ৬টি নৌকা বােঝাই পাকিস্তানি সেনারা এদিকে আসছে আর ৪টি নৌকা অন্য পথ ধরেছে, উদ্দেশ্য অন্যদিক থেকে গ্রামটা ঘিরে ফেলা। অবস্থা সংকটজনক বিবেচনা করে তিনি বাড়ি ছেড়ে দূরে উঁচু খড় বনের মধ্যে অবস্থান নিলেন। শত্রুর যে ৪টি নৌকা অন্যপথ ধরেছিল, তিনি তাদের পথ আগলে বসে রইলেন। কিন্তু নৌকা তার দিকে না এসে বেনু যে গ্রামে অবস্থান করছিল, সেদিকে চলতে লাগলাে। বাঘা সিদ্দিকী তবু তার অবস্থান ছাড়লেন না, শক্রর অন্য নৌকাগুলাের অপেক্ষায় ওত পেতে থাকলেন। বেনু ও খােরশেদ আলমকে সঙ্গে নিয়ে তার কোম্পানির সঙ্গে মিলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সেনাদের প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন। অবশ্য তার ধারণা হয়েছিল যে, বাহিনীর প্রধান যে বাড়িতে আছেন, পাকিস্তানি সেনারা সে বাড়ি আক্রমণ করবে। কিন্তু অচিরে তাদের এ ভুল ভাঙলাে।
দেখা গেল, পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থানের চারদিকে নেমে পড়েছে এবং কাছের বাড়িগুলােতে অবস্থান নিয়েছে। বেনু ও খােরশেদ বাড়ির দুই দিকে দুই দল মুক্তিযােদ্ধার কমান্ড নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। খােরশেদ বাড়ির পূর্ব পাশে অবস্থান নিলেন। তিনি দেখলেন, একদল শত্রু নৌকা থেকে নেমে একটি বাড়িতে অবস্থান নিতে যাচ্ছে, অমনি তাঁর স্টেনগান গর্জে উঠল। পাকিস্তানি সেনারাও জবাবে গুলি চালাল। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হলাে। এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের নৌকা গুলির আঘাতে ডুবে গেল। গুলিবর্ষণের ভিতর পাকিস্তানি সেনারা একটি বাড়িতে প্রবেশ করে অবস্থান নিয়ে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ চালাতে লাগলাে। বাড়ির দক্ষিণ পাশের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একজন রাজাকার কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে সে বাড়িতে নামল। রাজাকারটি আগে সেনাবাহিনীতে ছিল। সে ক্রলিং করে এগিয়ে আসতে লাগলাে। কিন্তু তার এ কাণ্ডকারখানা খােরশেদের দৃষ্টি এড়াল না। তিনি মুক্তাগাছার জাহাঙ্গীর নামক একজন মুক্তিযােদ্ধাকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন এবং একটি গাছের আড়াল থেকে শক্রর উপর ব্রাশ ফায়ার শুরু করলেন। ফলে একজন পাকিস্তানি সেনার বুক ঝাঝরা হয়ে গেল। সে তখনই মৃত্যুবরণ করলাে। অপর একজন গুরুতর জখম হয়ে মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগলাে। বাকি একজন পাকিস্তানি সেনাকে জীবন্ত ধরার জন্য খােরশেদ গাছের আড়াল থেকে যেই বেরিয়েছেন, অমনি পাশের বাড়িতে অবস্থানরত শত্রু সেনাদের ২টি গুলি এসে খােরশেদের বাহু ও পিঠের একপাশ ভেদ করে গেল। খােরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। খােরশেদ আগে কখনাে যুদ্ধ করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন কন্ট্রাক্টর।
কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে তিনি শরিক হয়েছিলেন দেশাত্মবােধের অনুপ্রেরণায় । তুমুল যুদ্ধ চলছে, তার মধ্যে বাঘা সিদ্দিকী ৩টি নৌকা পাঠালেন খােরশেদ ও অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কালিহাতি থানা আওয়ামী লীগ সম্পাদক খােন্দকার নুরুল ইসলাম নৌকাগুলাে নিয়ে গুলিবর্ষণের মধ্যে এগিয়ে গেলেন। মাঝিরাও বেপরােয়াভাবে নৌকা চালিয়ে আহত খােরশেদ আলমের কাছে উপস্থিত হলেন। ইতােমধ্যে বেনুর কোম্পানির আছালত, স্মৃতি, মতি, আনিস ও মন্টু অসীম বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে শত্রু সেনাদের হটিয়ে দিলেন। তারা ২টি নৌকা দিয়ে একজন শত্রু সেনার লাশ এবং ১০জন জখম পাকিস্তানি সেনাকে নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের নিশানার বাইরে চলে গেল। বেনু ও খােরশেদ আলমের কোম্পানি এসে বাঘা সিদ্দিকীর সঙ্গে মিলিত হলাে। তারা যখন স্থান ত্যাগ করতে শুরু করেছে, তখন শত্রুরা আবার ৩ ইঞ্চি মর্টারের শেল নিক্ষেপ করতে শুরু করলাে। ওদের শেল ও গুলি মুক্তিবাহিনীর কাছাকাছি এসে পড়তে লাগলাে, কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মুক্তিযােদ্ধারা আহত খােরশেদকে নিয়ে সখীপুর যাত্রার ব্যবস্থা করলেন। খােরশেদের একখানি হাতের হাড় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল এবং একটি গুলি পিঠের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। আপাতত তাঁকে সাধারণ ব্যান্ডেজ করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।
বিলম্ব করারও সময় নেই। শত্রু সেনারা ভুয়াপুর বাজারে ঢুকে পড়েছে, দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। আগুনের ধোঁয়ায় আকাশ অন্ধকার। সঙ্গে যে বিপুল পরিমাণ গােলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র ছিল, তার বেশির ভাগ বাঘা সিদ্দিকীর নির্দেশে গােপন জায়গায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা হলাে। খােরশেদকে একটি খাটিয়ায় করে বয়ে নিয়ে চললেন ৪জন মুক্তিযােদ্ধা। মুক্তিবাহিনীর এ আকস্মিক বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে যে তথ্য জানা যায়, তাতে বি ডি মেম্বারের খাসি খাওয়ানাের এবং তার বাড়ির শিশু ও মহিলাদের গ্রাম ত্যাগের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। বাঘা সিদ্দিকীকে জীবিত বা মৃত ধরে দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে পাকিস্তানি হানাদাররা ঘােষণা করেছিল। এ টাকার লােভে গর্জনার সেই বি ডি মেম্বার খাসি খাওয়াবার। ফাঁদ পেতে ঘাটাইলে পাকিস্তানি বাহিনীকে খবর পাঠিয়েছিল। একটি বড়াে রকমের শিকার পাওয়া গেছে মনে করে হানাদাররা এ আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু বি ডি মেম্বারের সে আশা পূর্ণ হলাে না। হানাদাররাও ভালাে রকম মার খেয়ে পিছু হটলাে। আর জনসাধারণ বি ডি মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে তার। লােভের চিরসমাপ্তি ঘটিয়েছিল।
চারুয়াপাড়া যুদ্ধ
ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত ধােবাউড়া থানার চারুয়াপাড়ায় ইপিআর ক্যাম্পটি মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী এ সীমান্ত ঘাঁটি দখলের জন্য বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালায়। মুক্তিবাহিনীর সতর্কতায় পাকিস্তানি বাহিনী এ সীমান্ত ঘাঁটি দখলে ব্যর্থ হয়। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী এ ক্যাম্প আক্রমণ করে। স্থানীয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আকরামের নির্দেশমতাে পাকিস্তানি বাহিনীর ১টি প্ল্যাটুন মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর জোরালাে আক্রমণ চালায়। ১৬ ঘণ্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানকে দুর্বল করতে না পেরে ১৬ আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী পশ্চাদপসরণ করে। এ যুদ্ধে ফেরদৌস ও গফুর নামে ২জন মুক্তিযােদ্ধা। শহিদ হন।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাগণ ছিলেন:
১. তােফাজ্জল হােসেন চুন্ন
২. আবদুল আজিজ
৩. হাবিবুর রহমান
৪. এবাদুল ইসলাম
৫. আবদুল হাকিম
৬. আবদুল খালেক
৭. আবুল কালাম আজাদ
৮. ফজলুল হক
৯. আবুল হাসিম
১০, মােহাম্মদ শামছুদ্দিন
১১. মকবুল হােসেন।
১২. সিরাজ ফকির।
১৩, আনছার উদ্দিন
১৪. রজব আলী
১৫. দীপক সাংমা।
১৬. মােহাম্মদ রফিক
১৭. শাফায়েত হােসেন
১৮. মাহবুব
১৯. ইদ্রিস
২০. ফেরদৌস
২১. আবদুল গফুর প্রমুখ।
মন্তব্য চারুয়াপাড়া যুদ্ধটি ছিল একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ। সীমান্ত অঞ্চল এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে পাকিস্তানি বাহিনী এ যুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি। অন্যদিকে, মেঘালয় সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় মুক্তিবাহিনীর আনুষঙ্গিক অবস্থান ছিল সুবিধাজনক।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড