বল্লার যুদ্ধ
১৬ জুলাই ৫টি নৌকাভর্তি পাকিস্তানি সেনা তাদের অস্ত্রশস্ত্রসহ টাঙ্গাইল জেলার বল্লা ঘাঁটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথিমধ্যে চারান গ্রামে স্থানীয় অধিনায়ক কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী তাদের বাধা প্রদান করে। সকাল ৭টা। থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ আক্রমণে মধ্য নদীতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩টি নৌকা ডুবে যায়। কিছু পাকিস্তানি সেনা নদী সাঁতরিয়ে আত্মরক্ষা করে। এ যুদ্ধে বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনা নিহত ও আহত হয়।
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. কাদের সিদ্দিকী
২. এ এস আই কোহিনূর রহমান।
৩. রফিকুল ইসলাম
৪, জালাল উদ্দিন।
৫. মাহবুব আলম প্রমুখ।
বীরবাসুভায় অ্যামবুশ
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানার উত্তর-পূর্বে বীরবাসুভা অবস্থিত। ১৮ জুলাই ভােরে কালিহাতি থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ২টি কোম্পানি দেওপাড়ার দিকে এগােতে থাকে। তারা কস্তুরীপাড়া বাজার পর্যন্ত এগিয়ে যায়, ভাের পাঁচটায় মুক্তিবাহিনী শত্রুর এগিয়ে আসার খবর পায়। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুর উপর আক্রমণ রচনার কৌশল ঠিক করে। দেওপাড়া থেকে ২ কিলােমিটার এগিয়ে বীরবাসুন্ডা ও তার আশপাশে তারা অবস্থান নেন। পাকিস্তানিরা খুব সতর্কতার সাথে প্রায় দেড় কিলােমিটার পথ লম্বা সারিতে খুবই ধীরগতিতে, চতুর্দিকে চোখ রেখে দেওপাড়ার দিকে এগােতে থাকে। ওদিকে মুক্তিযােদ্ধারাও প্রস্তুত। শত্রু দেওপাড়ার ৭০-৮০ মিটার দূরে থাকতেই মুক্তিবাহিনী প্রথম আঘাত করে। মুক্তিবাহিনীর এতটা কাছে এসে গেছে, শত্রু তা টেরই পায় নি। ৭০-৮০ মিটার দূর থেকে আচমকা ছোড়া গুলিতে মুহূর্তে শত্রুর ৮-১০জন গুরুতর আহত হয়। অবশিষ্টরা দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে এলােপাতাড়ি গুলি ছোড়া শুরু করে। শত্রুর উপর গুলি আসে দক্ষিণ পাশ থেকে। ফলে দিশেহারা শত্রু দৌড়ে রাস্তার উত্তর পাশে অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ ও সামনের দিকে যখন গুলি ছোঁড়া শুরু করে, ঠিক তখন উত্তর দিক অর্থাৎ শক্রর একেবারে পিছন থেকে ৬জন অকুতােভয় মুক্তিযােদ্ধা ঝাকে ঝাকে গুলির অগ্নিফুলকি ঝরিয়ে গা ঢাকা দেয়। ১০জন শত্রু সৈন্য নিহত ও ২০জন আহত হয়। ফলে তারা আস্তে আস্তে পিছনে সরে যেতে থাকে। কিন্তু পিছিয়েও তাদের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা শেষ হলাে কেননা বীরবাসুন্ডা ও কস্তুরীপাড়ার পাশে মুক্তিবাহিনীর ৪টি দল শত্রু নিধনের অপেক্ষায় ছিল। দেওপাড়ার দিকে শত্রুকে ৭০ মিটারের মধ্যে পেয়ে তারা শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মার খেয়ে কালিহাতির দিকে ফিরছে।
বীরবাসুন্ডার কাছাকাছি এলে তাদের মধ্যে দেখা দেয় শিথিলতা ও বিশৃঙ্খলা। কে-কাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে, এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় প্রতিযােগিতা। কেউ কারও হুকুম তামিল করছে না। ইতােমধ্যে শক্র মুক্তিযােদ্ধাদের ৬০-৭০ মিটারের মধ্যে এসে যায়। শক্রর এমন অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সুযােগে মুক্তিযােদ্ধারা ৩০৪০জন শত্রুকে লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। মাত্র দু-তিন মিনিটে মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুকে পরাজিত করেন। দেওপাড়ার কাছে শক্র যেমন মার খায়, ১ কিলােমিটার পিছনে এসে এখানেও অনুরূপ মার খায়। বীরবাসুন্ডায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০০জন শত্রু অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ অ্যামবুশে প্রায় ৫০জন পাকিস্তানি নিহত হয়। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের কাছ থেকে অনেক অস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করেন। তবে মুক্তিযােদ্ধাদের তেমন। ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।
দেওপাড়ার যুদ্ধ
মুক্তাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনী যে-সব প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল, পাকিস্তানিরা তাদের এদেশীয় দোসর ও রাজাকারদের মাধ্যমে খবর সগ্রহের মাধ্যমে তারা একে একে ঘাটিগুলাে আক্রমণের পরিকল্পনা তারা। তাদের প্রথম নজর পড়ে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানাধীন দেওপাড়ার মুক্তিযােদ্ধা ঘাটির উপর। ১৯ জুলাই ভােররাতে শত্রু মুক্তিযােদ্ধাদের এ ঘাঁটি আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসে। দেওপাড়া মুক্তিযােদ্ধা ঘাটির অধিনায়ক লােকমান হােসেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সৈনিক। তার সহকারী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নজির আহমদ পিন্টু। সম্ভাব্য হামলা ও শত্রুর অগ্রগতির সংবাদ পেয়ে লােকমান হােসেন কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে প্রায় ৩ কিলােমিটার পথ এগিয়ে শত্রুকে আক্রমণের জন্য রাস্তার পাশে ঝােপজঙ্গলের মধ্যে আত্মগােপন করেন। কিছুক্ষণ। পর তারা বুঝতে পারেন যে, এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে শত্রু অবিশ্রান্ত গুলিবর্ষণ করতে করতে দেওপাড়ার দিকে এগিয়ে আসছে। মুক্তিবাহিনীর আওতার মধ্যে এসে পড়তেই লােকমান গুলি চালানাের নির্দেশ দেন। আদেশ পেয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলাে একযােগে গর্জে ওঠে। এ অতর্কিত হামলার জন্য শত্রু প্রস্তুত ছিল না। আক্রমণে ৭জন পাকিস্তানি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। দুই পক্ষের গুলিবিনিময় চলে সারাদিন ধরে। এর মধ্যে কভারিং ফায়ার করে শক্রর লাশগুলাে তারা সরিয়ে নিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী সেদিন শত্রুর আক্রমণ সাফল্যজনকভাবে প্রতিহত করে পরবর্তী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ভােরে আক্রমণের নতুন নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানি বাহিনী।
তারা বেরিয়ে এসে সামনাসামনি আক্রমণ না করে প্রথমে কালিহাতি ঘাঁটি থেকে ৩ ইঞ্চি মর্টার ও ১২০ মিলিমিটার মর্টারের গােলায় মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। শক্রর শেল ও গােলাবর্ষণের মুখে মুক্তিযােদ্ধারা বাংকারের মধ্যে শত্রুর এগিয়ে আসার অপেক্ষা করতে থাকের। পাকিস্তানিরা মটার ও মেশিনগানের গুলি ছুঁড় এগিয়ে আসছে দেখে হাকিম আলী একটা ছােটো দল নিয়ে অগ্রবর্তী এলাকায় গিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুর অগ্রগতি বিশৃঙ্খল করে দেয়। শত্রু দ্রুত সংগঠিত হয়। তাদের আক্রমণ ক্রমেই প্রবলতর হয়। এদিকে মুক্তিবাহিনীর হাতে সর্বাধুনিক অস্ত্রের অভাব। চাইনিজ এলএমজি’র গুলিরও মাত্র ২টি চেইন অবশিষ্ট। প্রতি চেইনে ৮৫টি গুলি আছে। আর বাদবাকি সম্বল ৩০৩ রাইফেল। এ হাতিয়ার সম্বল করে সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কতক্ষণ প্রতিরােধ সংগ্রাম চালানাে যায়। তবু ওদের ঠেকিয়ে রাখতে হবে। এ ছিল প্রত্যেক মুক্তিযােদ্ধার সংকল্প। শত্রুর গােলা এসে পড়ছে মুক্তিবাহিনীর বাংকারের আশপাশে। কিন্তু মুক্তিযােদ্ধারা অধিনায়কের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বাংকারেই অবস্থান করতে থাকেন। এমন সময় শক্রর একটা গােলা অধিনায়ক লােকমানের সামনে এসে পড়ে এবং গােলার আঘাতে বাংকারের উপরে রাখা তাঁর রাইফেলের কাঠের বাট ভেঙে উড়ে যায়। আর গােলার আলােড়নে তার বাংকারের মাটি ধসে তাকে প্রায় অর্ধ সমাহিত করে ফেলে। আক্রমণের তীব্রতা বাড়ছে দেখে অধিনায়ক লােকমান আর সময় নষ্ট না করে মুক্তিবাহিনীকে পিছু হটার নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা বাংকার ছেড়ে পিছু হটে যান। শত্রু দেওপাড়ায় প্রবেশের জন্য বহু মর্টারের গােলাবর্ষণ করে। তারা এ অঞ্চলে এত অধিক গােলা এর আগে আর বর্ষণ করেনি। এ জন্য স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কও দেখা দেয়। মুক্তিবাহিনী পিছু হটে গেলেও অধিনায়কের নির্দেশ ছিল যে, চেইনের ৮৫টি গুলিই যেন শত্ৰু লক্ষ্য ভেদ করে।
তরুণ মুক্তিযােদ্ধা রফিক শত্রুর অপেক্ষায় বসে থাকেন। কিছুক্ষণ। পরই শত্রু রাস্তার দুই ধারে গুলিবর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসে। রফিকের নিশানার মধ্যে প্রবেশের সাথে সাথেই তিনি হাতের এলএমজি’র ট্রিগার চেপে ধরেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৮৫টি গুলিই শত্রুর বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। প্রায় ২৪জন পাকিস্তানি সেনা ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। শক্রর বাকি অংশের পাল্টা হামলার আগেই রফিক নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে যান। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী নতুন করে প্রচণ্ড রকমের আক্রমণ করে। সারারাত ধরে পাকিস্তানি বাহিনী দেওপাড়া গ্রামের উপর গােলাবর্ষণ করতে থাকে। পাকিস্তানিদের মর্টারের গােলায় গ্রামের মধ্যে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। পরের দিন ভােরবেলায় শক্র দেওপাড়ায় ঢুকে গ্রামের নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন চালায়। এ যুদ্ধে আনুমানিক ৩১জন পাকিস্তানি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। হতাহত শত্রুর কাছে থেকে অনেক অস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দেওলা খেয়াঘাটের অ্যামবুশ
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানাধীন হরিপুর-কন্তুরীপাড়ার মাঝে দেওলা খেয়াঘাট। অধিনায়ক লােকমান হােসেন ১৬জন অসীম সাহসী মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে এ ঘাটে অবস্থান গ্রহণ করেন। তারা প্রথমে কস্তুরীপাড়ায় অবস্থান নেন। কিন্তু বীরবাসুভার আক্রমণের কথা চিন্তা করে এত কাছাকাছি আবার আক্রমণের খুব একটা ফল হবে না ভেবে দলবল নিয়ে কিছু পশ্চিমে সরে দেওলা খেয়াঘাট এলাকায় ১৯ জুলাই শক্র হননের জন্য পজিশন নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা। করেন। কিন্তু তাদের উপর আর কোনাে আক্রমণ হয়নি। এ অবস্থায় তাড়াতাড়ি সরে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মাঝারি সাইজের একটি নৌকায় ২০-২৫জন করে শত্রু দেওলা খেয়া পার হচ্ছিল। ৪০-৫০জন পার হয়ে তারপর আহত নিহতদের পার করা শুরু করলাে। এদিকে লােকমান হােসেন ৭০-৮০ মিটার দূরে বসে শত্রুর খাল পার হওয়া দৃশ্য দেখতে থাকেন। লােকমান হােসেনের হিসাবমতাে কাঁধে বয়ে নেয়া আহত-নিহতদের সংখ্যা ৭০-এর বেশি। তবে তার সহযােদ্ধাদের অনুমান, আহত-নিহতদের সংখ্যা চল্লিশের বেশি নয়।
তখনাে প্রায় ৮০জন শত্রু খেয়াঘাটের পূর্ব পাড়ে রয়েছে। খেয়ানৌকা। এপার থেকে ওপারে যায়। এদিকে মুক্তিযােদ্ধারা একটি বাঁধের আড়ালে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। তাদের বন্দুকের নলের মুখে প্রায় ঘন্টা খানেক পর। পর্যায়ক্রমে শক্র খাল পার হয়। খেয়াপার হতে আর মাত্র ৫০-৬০জন বাকি। মুক্তিযােদ্ধারা এতটা সময় একেবারে চুপচাপ বসেছিলেন। কিন্তু আর বসে থাকা যায় না। ২০-২৫জনকে নিয়ে খেয়ানৌকা খালের মাঝে এসে গেছে। এমন সময় খেয়ানৌকা ও পূর্ব পাড়ের শত্রুর উপর মুক্তিবাহিনী আবার আঘাত হানে। অধিনায়ক লােকমানের এলএমজি কড়কড় শব্দে গর্জে ওঠে। সদাপ্রস্তুত অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্রগুলােও অগ্নি ঝরাতে শুরু করে দেয়। গুলির সাথে খেয়ানৌকার পাকিস্তানিরা পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি একজনও সাঁতার জানতাে না বলে এদের অনেকেই রক্ষা পায়নি। এখানে মাত্র ১০ মিনিটের তুমুল গুলিবর্ষণে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্ষতির পরিমাণ হয় সবচেয়ে বেশি। দিশেহারা শত্রু ১০-১২টি সর্বাধুনিক অস্ত্র ও গােলাবারুদ ফেলে চলে যায়। যুদ্ধ শেষে অস্ত্রগুলাে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা সংগ্রহ করে রাতে দেওপাড়া মুক্তিযােদ্ধাদের ঘাঁটিতে পৌছে দেন। এ অ্যামবুশে ২৫জন পাকিস্তানি নিহত হয়। তবে মুক্তিযােদ্ধাদের কোনাে ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।
বেগুনবাড়ি রেলসেতু আক্রমণ
বেগুনবাড়ি ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) বাহাদুরাবাদ ঘাটের নিকটবর্তী একটি গ্রাম। এ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খালের উপর ছােটো রেলসেতুর অবস্থান। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে এ রেলসেতুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। | ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই ডালুতে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক আবদুল গনির মুক্তিযােদ্ধা দলের উপর ময়মনসিংহ-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেললাইন ধ্বংসের দায়িত্ব অর্পিত হয়। এ দায়িত্ব পালনে কোম্পানির সহ-অধিনায়ক মির্জা নজরুল ইসলাম বেগ গ্রুপ অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে ৩০-৩৫জন মুক্তিযােদ্ধার একটি দল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ২০ জুলাই নজরুল ইসলাম বেগের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা দলটি ডালু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনার পর দলের অধিনায়ক ময়মনসিংহের বাহাদুরাবাদ ঘাট রেল স্টেশনের কাছাকাছি বেগুনবাড়ি রেলসেতুটি ধ্বংসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনার প্রস্তুতি হিসেবে এ মুক্তিযােদ্ধা দলটি প্রাথমিকভাবে নারায়ণখােলা নামক স্থানে তাদের হাইড আউট স্থাপন করে। এ হাইড আউটের অবস্থান ছিল বেগুনবাড়ি সেতু থেকে ১০ কিলােমিটার দূরে। মুক্তিবাহিনীর এ দলটির সাথে অস্ত্র হিসেবে ছিল ৫টি রাইফেল, ১টি এলএমজি, ১টি এসএমজি ও প্রয়ােজনীয় এক্সপ্লোসিভ। | ২০ জুলাই মধ্যরাতে মুক্তিবাহিনী সেতুর কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে ভাের ৫টায় এক্সপ্লোসিভের সাহায্যে বেগুনবাড়ি সেতু ধ্বংস করে। সেতু ধ্বংসের শব্দে টহলরত পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানকে নির্দিষ্ট করে পাল্টা আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে অবস্থান ত্যাগ করে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিয়ে উল্লেখ করা হলাে
১. মির্জা নজরুল ইসলাম বেগ
২. ইদ্রিস আলী
৩. আবদুল গনি।
৪. আলী হােসেন
৫. নাজমুল হক
৬. ফজলুল হক
৭. আবুল কাশেম
৮. নাজমুল হুদা।
৯. আবদুর রাজ্জাক
১০. সুরেশ
১১. জালাল উদ্দিন।
১২. সাইদুল হক প্রমুখ।
মন্তব্য
বেগুনবাড়ি আক্রমণ ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ। সংক্ষিপ্ত এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী তাদের মূল লক্ষ্য বেগুনবাড়ি সেতু ধ্বংস করে রেল যােগাযােগ ব্যাহত করতে সক্ষম হয়। এটি ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি সফল আক্রমণ।
আমলীতলা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ আমলীতলা ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার অন্তর্গত একটি গ্রাম। এ গ্রামে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর একটি নিয়মিত ক্যাম্পের অবস্থান ছিল। এ রাজাকার। ক্যাম্পটি মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর, ভাওয়াল এলাকায় চলাচলের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালের ২১ জুলাই গ্রুপ অধিনায়ক শামসুদ্দিন আহাম্মদের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল ভােররাতে আমলীতলা গ্রামের রাজাকার বাহিনীর এ ক্যাম্পের উপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে রাজাকার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং বেশ কিছু রাজাকার নিহত হয়। অস্ত্রসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। রাজাকার ঘাটি দখলের মুখােমুখি এ যুদ্ধে মুন্তাজ আলীসহ ২জন মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. শামসুদ্দিন আহাম্মদ
২. বশির উদ্দিন আহাম্মদ
৩. ফজলুল হক বেগ
৪. আমজাদ হােসেন
৫. আফসার উদ্দিন।
৬. আবদুর রাজ্জাক
৭. শামছুল হক।
৮. ইকবাল-ই-আলম (কামাল)
৯. সুরুজ আলী
১০. আবদুল বাতেন।
১১. আমজাদ আলী।
১২. মাইন উদ্দিন।
১৩. বিল্লাল হক
১৪. সুবেদ আলী
১৫. তারা মিয়া
১৬, নাজিম উদ্দিন
১৭, মফিজ উদ্দিন।
১৮. আজহারুল ইসলাম
১৯. বিল্লাল হােসেন।
২০, আবদুস সালাম।
২১. আনছার মাস্টার
২২. আবুল হােসেন।
২৩. আবদুল মােতালেব
২৪. আবদুল মতিন
২৫. রাইসুল ইসলাম।
২৬. মােহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রমুখ।
নাজিরপুরের যুদ্ধ
নাজিরপুর গ্রামের অবস্থান
ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) উত্তর সীমান্তে কলমাকান্দা থানার একটি গ্রাম নাজিরপুর । কলমাকান্দা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং ভারতীয় সীমান্ত থেকে ১০ কিলােমিটার দক্ষিণে কলমাকান্দা থানা সদরের অবস্থান। কলমাকান্দা থানা সদর থেকে ৪-৫ কিলােমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নাজিরপুর গ্রাম। এখান থেকে ৫ কিলােমিটার পশ্চিমে উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত সােমেশ্বরী নদী। নাজিরপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলাের মধ্যে বােরখপনা, কইলাতি, বকলজোড়া, কাকৈরগড়া, গজারমারী, ভবানীপুর উল্লেখযােগ্য।
পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান
নেত্রকোনা মহকুমা এলাকা পাকিস্তান ৭১ উইং রেঞ্জার্স বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ময়মনসিংহ শহরে ছিল ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সদর দপ্তর। কলমাকান্দা থানা এলাকায় ১ প্ল্যাটুন রেঞ্জার্স ফোর্স এবং সহযােগী ১ প্লাটুন রাজাকার। নিয়ােজিত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযােগী বাহিনীর সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহলদানে নিয়ােজিত ছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ঘাটির সাথে যােগাযােগ ব্যবস্থা রক্ষায় এ টহল দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পালন করতাে।
মুক্তিবাহিনীর অবস্থান
ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকায় ডালু সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর অপারেশন ক্যাম্প গড়ে ওঠে। এ সাব-সেক্টরের অধীন রংড়া এলাকায় মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি কোম্পানির অবস্থান ছিল। জুলাই মাস নাগাদ মুক্তিবাহিনী এ ক্যাম্প এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ পরিচালনা করে। এ যুদ্ধগুলাের মধ্যে অধিনায়ক নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে নাজিরপুর গ্রামের যুদ্ধ একটি উল্লেখযােগ্য স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধ পরিকল্পনায় ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই ডালু মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্পে খবর আসে যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি ঘাটি থেকে গােলাবারুদ ও রেশনসামগ্রী কলমাকান্দা থানায় অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাদের জন্য নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ সংবাদে মুক্তিবাহিনীর কোম্পানি অধিনায়খ নাজমুল হক তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দলকে প্রতিরােধ করার পরিকল্পনা করেন। দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দা থানা সদরের দূরত্ব ১২ কিলােমিটার। যােগাযােগের জন্য যানবাহন চলার মতাে কোনাে পাকা রাস্তা নেই। পাকিস্তানি বাহিনীকে গ্রামের পথেই অগ্রসর হতে হবে। বিরিশিরি থেকে সােমেশ্বরী নদী পার হয়ে নাজিরপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে কলমাকান্দা থানা সদরে যাওয়ার একটিমাত্র গ্রামীণ পথ আছে। এ পথ ধরেই পাকিস্তানি বাহিনীকে অগ্রসর হতে হবে। মাঝপথে বিরিশিরির ৩ কিলােমিটার পূর্বে সােমেশ্বরী নদী। অধিনায়ক নাজমুল হক নদীর ৫ কিলােমিটার পূর্বে নাজিরপুর গ্রামের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নাজিরপুর গ্রামটি একটি দুর্গম এলাকা। গ্রামের মাঝ দিয়ে রাস্তা থাকলেও আশপাশে ছিল। জঙ্গল ও ঝােপঝাড়। নাজমুল হক তারা তার কোম্পানির অধীনস্থ অধিনায়ক ইপিআর বাহিনীর সদস্য আবদুল গনি ও পুলিশ সদস্য রহমতউল্লাহর সাথে আলাপ-আলােচনা করে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।
যুদ্ধের বিবরণ
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় নাজমুল হক তারা মুক্তিযােদ্ধা দলসহ রংড়া ক্যাম্প থেকে নাজিরপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ঐ রাতেই নাজিরপুর গ্রামে পৌছান। প্রাথমিকভাবে এলাকার অবস্থান ভালােভাবে পর্যবেক্ষণের পর গ্রুপ অধিনায়কদের নিয়ে তিনি আক্রমণের স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি কোম্পানির সদস্যদের ৩টি গ্রুপে বিভক্ত করে তিন স্থানে অবস্থানের নির্দেশ দেন। প্রথম গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ছিল ২০জন। এ গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন ইপিআর বাহিনীর সদস্য আবদুল গনি। এ গ্রুপটি নাজিরপুর বাজারের পশ্চিম পাশে অবস্থান গ্রহণ করে। দ্বিতীয় গ্রুপের সংখ্যা ছিল ৩০জন। পুলিশ বাহিনীর সদস্য রহমতউল্লাহ এ গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। এ দলটি নাজিরপুর গ্রামের পূর্ব দিকে গজারমারী গ্রামে অবস্থান নেয়। মুক্তিযােদ্ধা দলের তৃতীয় গ্রুপটিকে নিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হক দুই দলের মধ্যবর্তী স্থানে ভবানীপুর কাচারির সম্মুখে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ দলে মুক্তিযােদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩০জন। তিন দলের অবস্থান ছিল ৩টি পৃথক স্থানে। এক দলের অবস্থান থেকে অন্য দলের অবস্থান ছিল বেশ কিছুটা দূরে। যােগাযােগের জন্য তাদের সাথে কোনাে ওয়্যারলেস সেট না থাকায় ব্যক্তিমাধ্যমে যােগাযােগ করার সিদ্ধান্ত জানানাে হয়। রাতের মধ্যেই সমস্ত দল তাদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। নাজিরপুরের জঙ্গলের ভিতর বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর পাকিস্তানি সেনাদের কোনাে সন্ধান না পেয়ে ইপিআর সদস্য আবদুল গনি তার গ্রুপ নিয়ে অ্যামবুশ অবস্থানের কাছাকাছি কলমাকান্দা থানা থেকে খাদ্যসামগ্রী বহনকারী ৮জন রাজাকারকে একরকম বিনা যুদ্ধে বন্দি করে কিছুটা অবস্থান পরিবর্তন করেন। এর মধ্য থেকে কয়েকজন রাজাকার পালিয়ে ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান জানিয়ে দেয়।বেলা ৯টা নাগাদ নাজমুল হক তারা তাঁর সামনে ও পিছন থেকে গােলাগুলির আওয়াজ শুনে সতর্ক হয়ে পড়েন। উভয় পাশ থেকে গুলি ছোঁড়ার মাত্রা বৃদ্ধিতে তিনি নিজেই দলসহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণে পড়েছেন বলে অনুমান করেন। অল্পক্ষণেই তাঁর অনুমান সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। দুদিক থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করতে থাকে।
অতর্কিত এ আক্রমণে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। কারণ, যে দুদিক থেকে অর্থাৎ গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে গুলি আসছে, ঐ দুই অবস্থানে তার নিজের ২টি গ্রুপের অবস্থান থাকার কথা। তিনি অবস্থান ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের কারণে সেটা সম্ভব হবে না বিবেচনা করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা ক্রলিং করে সন্তর্পণে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে ঢুকে পড়ে। মুক্তিযােদ্ধা আবদুর রহিম খানের স্টেনগানের গুলিতে ২জন পাকিস্তানি সেনা আহত হয়। এলএমজি চালক জামাল তার এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। অধিনায়ক নাজমুল হক তারা রাস্তার। পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে মােকাবিলার চেষ্টা করেন। দুপুরের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর এলএমজি পজিশন নির্দিষ্ট করে জামালের অবস্থানের উপর ফায়ার শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলে জামাল শহিদ হন। বিকাল ৪টা নাগাদ মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ শুরু করে। অধিনায়ক নাজমুল হক গলায় গুলিবদ্ধ হয়ে আহত হন। এরপর যুদ্ধের গতি পাল্টে যায়। পাকিস্তানি। বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধাকে বন্দি করে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। অধিনায়ক নাজমুল হক আহত অবস্থায় ক্যাম্পে ফিরে আসেন। মুক্তিবাহিনীর অন্য সদস্যরা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় অবস্থান ছেড়ে আত্মরক্ষার্থে ক্যাম্পে ফিরে আসে। নাজিরপুরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা নাজিরপুরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. নাজমুল হক তারা
২. মমতাজ আলী।
৩. ইউসুফ আলী
৪, বিপ্লব ভট্টাচার্য।
৫, আজগর আলী
৬. মমতাজ শেখ
৭. ইকরাম হােসেন
৮. নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ
৯. শামছুল হক (বাদল)
১০. হাফিজ খান
১১. আবদুল খালেক
১২. ইছব আলী
১৩. আবদুর রহিম।
১৪. শেখ শামছুদ্দিন ফকির
১৫. আবদুল জব্বার
১৬. হেকিম মাস্টার।
১৭. ছিদ্দিকুর রহমান
১৮. আবুল কালাম।
১৯. এ টি এম আবদুল মােতালেব
২০. আবদুল হাই আকন্দ।
২১. রফিজ উদ্দিন রেফাজ
২২. সামছুল ইসলাম প্রমুখ ।
নাজিরপুর যুদ্ধের শহিদ মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. জামাল।
২. নূরুজ্জামান
৩. ভবতােষচন্দ্র দাস
৪. ইয়ার মাহমুদ।
৫. আজিজ
৬. ফজলু
৭. কালা মিয়া
৮, আবদুল গনি
৯, রহমতউল্লাহ।
যুদ্ধের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ
কোম্পানি অধিনায়ক নাজমুল হকের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি গ্রুপ নিজ নিজ অবস্থানে থাকলে যুদ্ধের ফলাফল ইতিবাচক হতাে। রাজাকারদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা কোম্পানি অধিনায়কের জানা ছিল না। পলাতক রাজাকাররা পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানে ফিরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ জানালে পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ রচনা করে। যদিও যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পরিকল্পনা ঠিকই ছিল, কিন্তু তারা পরিকল্পনার সঠিক সমন্বয় সাধন করতে পারেনি। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ৮০জন। শুধু সুষ্ঠু যােগাযােগ ব্যবস্থা ও তথ্যের আদান-প্রদানের অভাবে মুক্তিবাহিনীকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
নাজিরপুর যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী জয়লাভ করলেও মুক্তিবাহিনীর সাহস ও বীরত্বের পরিচয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট। নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে এ যুদ্ধ থেকে। এটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, গ্রামের পথে চলাচল পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য কোনােক্রমেই নিরাপদ ছিল না। ইতােমধ্যে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা সীমান্ত অঞ্চল ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী সাফল্য লাভ করতে না পারলেও গ্রামের দুর্গম পথে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণের মধ্য দিয়ে তাদের দৃঢ় মনােবল ও আত্মপ্রত্যয়ের পরিচয় পাওয়া যায়।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড