You dont have javascript enabled! Please enable it!
কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরিঘাটের যুদ্ধ
যুদ্ধকালে নিরাপদ যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলার বিষয়টি ছিল অপরিহার্য। ১৯৭১ সালের মে মাস নাগাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সমর্থ হয়। মুক্তিবাহিনী যেন সহজে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং জনগণ যেন দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে না পারে, সে জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারত সীমান্ত বরাবর টহল চৌকি স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা চালায়। পাকিস্তানি বাহিনীর এসব চৌকিতে অবস্থানকারী সৈন্যদের যুদ্ধসরঞ্জাম, খাদ্য, চিকিৎসাসহ প্রয়ােজনীয় সামগ্রী সরবরাহের জন্য যােগাযোেগ ব্যবস্থা রক্ষা করার বিষয়টি অপরিহার্য ছিল। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, কালভাট, ফেরিঘাট ও ফেরিবােট ধ্বংসের পরিকল্পনা। গ্রহণ করে। কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরিঘাটের অবস্থান বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অধীন শেরপুর মহকুমা (বর্তমানে জেলা) সদর থেকে একটি সড়ক নালিতাবাড়ি থানা হয়ে ময়মনসিংহ জেলা সদর পৌঁছেছে। নালিতাবাড়ি থানার পূর্ব পাশ দিয়ে বাঘাই নদী ভারতের অভ্যন্তর থেকে সােজা দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রে এসে মিশেছে। আরও একটি ছােটো নদী বা খাল নালিতাবাড়ি থানার পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর থেকে সােজা দক্ষিণ দিকে নকলা থানার অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত। নালিতাবাড়ি থানা সদরের। পশ্চিমে খালের উপর তিনআনি ফেরি এবং পূর্ব দিকে বাঘাই নদীর উপর কাটাখালী সেতুর অবস্থান। তিনআনি ফেরি সে সময় ইঞ্জিনচালিত ছিল না। মােটা শক্ত রশির সাহায্যে পন্টুনের উপর হাত দিয়ে হাতল ঘুরিয়ে ফেরি পারাপার করতে হতাে। তিনআনি ফেরি থেকে নালিতাবাড়ির দূরত্ব ৪ কিলােমিটার। নালিতাবাড়ি থানা শেরপুর মহকুমা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলােমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। নালিতাবাড়ি থেকে সােজা ১৫ কিলােমিটার দক্ষিণে নকলা থানার অবস্থান। পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ও ফুলপুর থানা। উত্তর দিকের সীমান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অবস্থান।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরিঘাটের গুরুত্ব
ময়মনসিংহ সদর থেকে শেরপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাটসহ বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত অনেক বিওপি’র সাথে সড়কপথে যােগাযােগের জন্য এ তিনআনি ফেরিঘাট ও কাটাখালী সেতুর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। পাকিস্তানি। বাহিনী সীমান্তে অবস্থানের কারণে এ এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের চলাচল বাধ্যগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর সীমান্তের অবস্থানগুলােকে দুর্বল করার লক্ষ্যে মুক্তিযােদ্ধারা সীমান্তের অবস্থানের সাথে পাকিস্তান সৈন্যদের সড়কপথে যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান
কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরিঘাটে পাকিস্তানি নিয়মিত বাহিনীর কোনাে স্থানীয় অবস্থান ছিল না। এটা ছিল ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অপারেশনাল এলাকায়। ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সদর দপ্তর ছিল ময়মনসিংহে। হালুয়াঘাটে ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্যের অবস্থান ছিল। একই সাথে রেঞ্জার্স ও রাজাকার বাহিনীর একটি করে কোম্পানি নিয়ােজিত ছিল। পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈনিকেরা রাস্তার চলাচল নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ফেরিঘাট ও সেতু এলাকায় নিয়মিত টহল দিতে এবং প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই সৈনিকেরা। হালুয়াঘাট ক্যাম্পে ফিরে যেত। এ ছাড়া কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরি পাহারা দেয়ার জন্য ১ প্লাটুন রাজাকারের সার্বক্ষণিক অবস্থান ছিল। ফেরিঘাট ও সেতু এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা করাই ছিল তাদের প্রধান দায়িত্ব। যুদ্ধের পরিকল্পনা ও বিবরণ জুন মাসে ডালু সাব-সেক্টর অধিনায়কের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়িত্ব অর্পিত হয় । ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নাজমুল আহসান গ্রুপ অধিনায়ক হিসেবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কাটাখালী সেতু এবং তিনআনি ফেরিঘাট ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পনা গৃহীত হয়। ৪ জুলাই কোম্পানি অধিনায়ক নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে ৫৪জন মুক্তিযােদ্ধার একটি দল ডালু অপারেশন ক্যাম্প থেকে নালিতাবাড়ি থানাধীন কাটাখালী সেতু এবং তিনআনি ফেরিঘাট ধ্বংস করার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ দলের সাথে ফেরিবােট ও সেতু ধ্বংসের জন্য প্রয়ােজনীয় অস্ত্রসহ ৩০০ প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করা হয়। বৃষ্টির মধ্যে গাইডের সহায়তায় রাতের অন্ধকারে মুক্তিযােদ্ধা দলটি বড়ামারীর পশ্চিম পাশ দিয়ে রাত ১টায় নালিতাবাড়ির উত্তরে শিমুলতলী গ্রামে হাইড আউট স্থাপন করে। অধিনায়ক নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে এ দলের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল দুটি। একটি কাটাখালী সেতু অপরটি তিনআনি ফেরি। নাজমুল আহসানের নির্দেশে হাইড আউটে দলকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়। মুক্তিযােদ্ধা আবদুল গনির নেতৃত্বে ২৪জনের একটি দলের উপর তিনআনি ফেরিঘাটের ফেরি ধ্বংস করার দায়িত্ব অর্পিত হয়। এ দলের সাথে ১৫০ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভসহ বিস্ফোরণ ঘটানাের জন্য প্রয়ােজনীয় ডেটনেটর, কর্ডেক্স, সেফটি ফিউজ দেয়া হয়। গ্রুপ।
অধিনায়ক নাজমুল আহসান নিজে অপর ৩০জন মুক্তিযােদ্ধা দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এ দলের সাথেও সেতু ধ্বংস করার জন্য প্রয়ােজনীয় এক্সপ্লোসিভ দেয়া হয়। উভয় দল একই সময় কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরিঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত ৩টা নাগাদ উভয় দল নির্দিষ্ট টার্গেটের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। সেতু এলাকায় শত্রুর অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য ২জন মুক্তিযােদ্ধাকে সেতুর কাছাকাছি পাঠানাে হয়। এ সময় প্রবল বর্ষণের কারণে রাজাকাররা। নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব ত্যাগ করে বাংকারের ভিতরে অবস্থান করছিল। পর্যবেক্ষণ দল ফিরে এসে এ অবস্থা জানানাের সাথে সাথে ত্বরিতগতিতে মুক্তিযােদ্ধারা রাজাকারদের তাবু আক্রমণ করে তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। নিরাপত্তার কারণে রাজাকারদের বেঁধে রেখে তাদের অস্ত্রগুলাে সংগ্রহ। করা হয়। অধিনায়ক নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে একরকম বিনা প্রতিরােধে সেতুটি সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেয়ার পর নিজের দল নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফিরে। অপর দলের অপেক্ষায় থাকেন। | তিনআনি ফেরিঘাটে রাজাকারদের অবস্থান ছিল ঘাট থেকে একটু দূরে। বৃষ্টির কারণে এখানেও রাজাকাররা ঘরের মধ্যে অবস্থান করছিল। আবদুল গনির নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা দলটি সহজেই ফেরিতে এক্সপ্লোসিভ বসিয়ে ফেরিটি ধ্বংস করেন। রাজাকারদের আক্রমণের পূর্বে দলটি নির্দিষ্ট অবস্থানে ফিরে। আসে। শেষ রাত নাগাদ উভয় দল নিরাপদে নির্দিষ্ট স্থানে পুনরায় মিলিত হয়। গ্রুপ অধিনায়ক নাজমুল আহসান দলের নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অবস্থান। পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আশ্রয়স্থলে বিপত্তি
পর পর ২টি অপারেশনের পর দিনের বেলায় অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টি মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য কঠিন হয়ে দাড়ায়। অনেক সাবধানতায় অধিনায়ক নাজমুল আহসান নালিতাবাড়ি থানার অধীন রাঙামাটি গ্রামে জনৈক নঈমুদ্দিনের বাড়িতে দলসহ আশ্রয় গ্রহণ করেন। ৬ জুলাই রাত ১০টায় পাকিস্তানি বাহিনী অতর্কিতে নঈমুদ্দিনের বাড়িতে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধা দলকে ঘিরে ফেলে। সে সময় ক্লান্ত মুক্তিযােদ্ধারা প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। শুধু পাহারার দায়িত্বে নিয়ােজিত দুজন মুক্তিযােদ্ধা সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে, তারা পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে। বিষয়টি জানিয়ে দেন। গ্রুপ অধিনায়ক নাজমুল আহসান এগিয়ে দেখেন, উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনী এগিয়ে আসছে। প্রস্তুতি নেয়ার পূর্বেই পাকিস্তানি বাহিনী গুলিবর্ষণ শুরু করে। অপরদিকে, মুক্তিযােদ্ধারাও তাদের রাইফেল নিয়ে প্রতিরােধ করতে চেষ্টা চালান।
অধিনায়ক নাজমুল পাকিস্তানি বাহিনীর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করে সবাইকে যে করেই হােক অবস্থান ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। ইতােমধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে জব্বার, আবু সাঈদসহ আরও ২জন আহত এবং ১জন শহিদ হন। নাজমুল এ অবস্থায় অস্থির হয়ে দলকে বিলের মধ্য দিয়ে সাঁতরিয়ে পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দেন। দাড়িয়ে নির্দেশ দেয়ার সময় নাজমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়েন। নাজমুল হকের উদ্ধারের চেষ্টায় মােফাজ্জল হােসেন আলী হােসেন শক্রর গুলিতে শহিদ হন। অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধারা আহতদের নিয়ে বিলের পূর্ব পাড়ে আশ্রয় নেন এবং পরবর্তীতে ডালু অপারেশন ক্যাম্পে ফেরত আসেন। কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরি ধ্বংসে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা কাটাখালী সেতু ও তিনআনি ফেরি ধ্বংস অভিযানে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা হলাে:
১. নাজমুল আহসান
২. আবদুল হামিদ
৩. আবদুল গনি
৪.আবদুল খালেক
৫. জিয়াউল হক
৬. শহিদুল ইসলাম
৭. রফিজ উদ্দিন
৮, জবেদ আলী
৯. নূরুল ইসলাম
১০. হাসান আলী
১১. ইব্রাহীম আলী
১২. মাসুদ আলী
১৩. হুরুমুজ আলী ফরাজী
১৪. কেরামত আলী
১৫. হাবিবুর রহমান (চানু)
১৬, মােসলেম উদ্দিন।
১৭. হযরত আলী।
১৮. আবদুল কাদের।
১৯. ইছব আলী
২০. আবদুস সালাম
২১. ইউনুছ আলী
২২. মােহাম্মদ আলী আকন্দ
২৩. সুলতান আহম্মদ
২৪. ইব্রাহীম হােসেন প্রমুখ। মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ মুক্তিবাহিনীর এটি ছিল একটি সফল অভিযান। পরিকল্পিত এ অভিযানে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতার পরিচয় দিতে সক্ষম হন।
কিন্তু ফেরার পথে দিনের আলােয় চলাচল নিরাপদ মনে না করে তারা দূরবর্তী রাঙামাটি গ্রামে বিশ্রাম এবং দিন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনআনি ফেরিঘাটে অবস্থানকারী রাজাকারদের মুক্তিবাহিনী হত্যা না করে রাইফেল নিয়ে ছেড়ে দেয়। এদেরই একজন মুক্তিযােদ্ধাদের প্রত্যাবর্তনকালে পিছু নিয়ে তাদের অবস্থান জেনে নিকটবর্তী পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিতে সংবাদ পৌছে দেয়। মুক্তিবাহিনীর সঠিক অবস্থান জেনে পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে তাদের ঘিরে ফেলে এবং আক্রমণ করে। অতর্কিত এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শত্রুকে ছছাটো ভেবে কিংবা দয়াপরবশ হয়ে নিরাপদ দূরত্বে পৌছানাের পূর্বেই তাদের চলে যাওয়ার সুযােগ দেওয়া যুদ্ধের ইতিহাসে একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এজন্য মুক্তিযােদ্ধা দলকে চরম মূল্য দিতে হয়।
কালির বাজার আক্রমণ
কালির বাজার ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী একটি গ্রাম্য বাজার। গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ। এ গ্রামটির বর্তমান নাম ফাতেমানগর। এ বাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযােগী। দল রাজাকার বাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। রাজাকারদের এ ক্যাম্প স্থানীয় জনগণকে হয়রানিসহ মুক্তিযােদ্ধাদের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তােলে। স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা অনািয়কের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী এ ক্যাম্প দখলের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মেঘালয়ের ডালু ক্যাম্প থেকে জুন মাসের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনীর। ১২০জনের একটি দল ময়মনসিংহের উদ্দেশে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গ্রুপ। অধিনায়ক জবেদ আলীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর এ দল হালুয়াঘাট থানার পশ্চিম। অংশ দিয়ে নালিতাবাড়ি হয়ে ময়মনসিংহ শহরের প্রায় ১০ মাইল পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে মুক্তাগাছা থানার কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ করে। অধিনায়ক জবেদ আলীর নির্দেশমতাে কালির বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। অপারেশন অধিনায়কের নির্দেশমতাে গ্রুপ অধিনায়ক মমতাজ উদ্দিন তার দল নিয়ে ত্রিশাল থানার পূর্ব দিক দিয়ে নৌকাযােগে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে মরিচার চর গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন। ২ দিন রেকি করার মাধ্যমে নদী পার হয়ে কালির বাজারের দক্ষিণে রেলপথের কাছাকাছি হাই স্কুলে অবস্থানরত রাজাকার ক্যাম্পে চূড়ান্ত আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ জুন মুক্তিবাহিনী তিন দিক দিয়ে এ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। কিন্তু আক্রমণের পূর্বে রেল স্টেশনের টেলিফোন সংযােগ নষ্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় কালির বাজারে আক্রমণের সংবাদ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে পৌছায়। পাকিস্তানি। বাহিনীর একটি দল তুরিতগতিতে রেলযােগে রাজাকারদের সাহায্যে এগিয়ে। আসে এবং মুক্তিবাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী আক্রমণ তীব্রতর করলেও পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের মুখে অবস্থান পরিবর্তন করে। নিরাপদ স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। কালির বাজার আক্রমণে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা কালির বাজার আক্রমণে নিমােক্ত মুক্তিযােদ্ধাগণ অংশগ্রহণ করেন:
১. আবদুস সালাম।
২. জবেদ আলী।
৩. রফিকুল ইসলাম
৪, মমতাজ উদ্দিন।
৫. আবদুস সাত্তার
৬, রফিজ উদ্দিন।
৭. শামছুল আলম
৮, জিয়াউল হক।
৯, তােফাজ্জল হােসেন চুন্ন
১০. রবিউল ইসলাম
১১. শামছুল হক
১২. মােজাহার হােসেন
১৩. আবদুল হেকিম
১৪, আয়নাল হক।
১৫. রফিকুল ইসলাম
১৬, জালাল উদ্দিন
১৭. মাহবুব আলম
১৮, আবুল কাশেম।
১৯. লােকমান আসকর
২০. ফজলুল হক
২১. ইদ্রিস আলী
২২. শাহাব উদ্দিন
২৩. ওয়াহেদ আলী
২৪. আবদুল মান্নান।
২৫. আজিজ উদ্দিন
২৬, আবদুল গনি।
২৭. আবদুর রহমান
২৮. হাবিবুল্লাহ ।
২৯, হযরত আলী।
৩০, হাবিবুর রহমান
৩১. মােসলেম উদ্দিন
৩২. ইছব আলী প্রমুখ।
মন্তব্য
কালির বাজার আক্রমণটি ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি সংগঠিত পরিকল্পিত। আক্রমণ। এ সময় থেকে মুক্তিবাহিনী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা জোরদার করে।
সূত্রাপুর সেতু ধ্বংস
টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায় সূত্রাপুর সেতু অবস্থিত। সুলতান ও রঞ্জুর দল গজারিয়া পাড়ার সেতুতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওখান থেকে আরও আধমাইল টাঙ্গাইলের দিকে এসে সূত্রাপুর সেতু দখল নেন। এখানে রাজাকাররা সামান্য গুলি ছুঁড়লেও পার্শ্ববর্তী পুলে বিস্ফোরণ ঘটায় তারা এমনিতেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সুরক্ষার চিন্তায় অস্থির ছিল। মুক্তিবাহিনীর খুব বেশি গােলাগুলি ছুড়তে হলাে না । অতি সহজেই ৩০জন রাজাকারকে বন্দি করে মুক্তিবাহিনী সেতুটি দখল করে নেয়। উল্লেখ্য, ২৯ জুন আবদুল গফুর ও খােরশেদ আলমের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযােদ্ধা এ সেতুটিতে সর্বপ্রথম বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। সেটাই ছিল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর প্রথম সেতু ধ্বংস। এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন জগন্নাথগঞ্জের বারী মাস্টার ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র হাজরাবাড়ির আবদুল হাই। সেবার সেতুটি পুরােপুরি ধ্বংস হয়নি। আগের চেয়ে আরও অধিক সুসংহত ও শক্তিশালী মুক্তিযােদ্ধারা এবার সেতুটির চিহ্ন রাখতে চাননি। শত্রুপক্ষের। ব্যাপক আক্রমণের তেমন আশঙ্কা ছিল না। তাই মুক্তিবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি ধীরস্থিরভাবে সেতুতে বিস্ফোরণের ব্যবস্থা করে। প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে পুলের দুই দিকে ৫-৬ ফুট খুঁড়ে বিরাট গর্তে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানাে হয়। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড আঘাতে সেতুটি টুকরাে টুকরাে হয়ে ভেঙে নিচে পড়ে যায়।
লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশ
লক্ষ্মীপুরের অবস্থান
লক্ষ্মীপুর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত ফুলবাড়িয়া থানার অধীন একটি গ্রাম। ময়মনসিংহ থেকে একটি পাকা রাস্তা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ফুলবাড়িয়া থানা সদরে শেষ হয়েছে। ফুলবাড়িয়া থেকে একটি কাঁচা রাস্তা লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে জেলার পশ্চিমাংশের সীমান্তবর্তী গ্রাম রাঙামাটির মধ্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল বাজার এলাকায় মিশেছে। ময়মনসিংহ শহর থেকে ফুলবাড়িয়া থানা সদরের দূরত্ব ১০ কিলােমিটার। ফুলবাড়িয়া থানা সদর থেকে লক্ষ্মীপুর ও রাঙামাটি গ্রামের দূরত্ব যথাক্রমে ৫ ও ৭ কিলােমিটার। লক্ষ্মীপুর গ্রামটি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়ের কাছাকাছি। এ অঞ্চলের ভূমি অনেকটা উঁচু ও অনুর্বর।
পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান
ময়মনসিংহ শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রেঞ্জার্স সৈন্যের অবস্থান ছিল। শহরে অবস্থানরত সেনাবাহিনী সরাসরি পার্শ্ববর্তী এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতাে। প্রায় প্রতিদিন সেনাসদস্যদের একটি টহল দল ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় পাঠানাে হতাে। এ সেনাদল সাধারণত সারাদিন অবস্থানের পর সন্ধ্যায় ময়মনসিংহে ফিরে আসতাে। ফুলবাড়িয়া থানা ছিল ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ও ৭০ উইং রেঞ্জার্সের অপারেশনাল এলাকার নিয়ন্ত্রণাধীন।
মুক্তিবাহিনীর অবস্থান
লক্ষ্মীপুর গ্রাম ও ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় প্রাথমিক অবস্থায় মুক্তিযােদ্ধাদের কোনাে স্থায়ী ঘাঁটি ছিল না। মুক্তিযােদ্ধাদের সীমান্ত ঘাঁটি থেকে বিভিন্ন সময় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযােগীদের উপর আক্রমণ পরিচালিত হতাে। ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের ২টি দুঃসাহসিক অভিযান শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এ যুদ্ধের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের যুদ্ধ অন্যতম।
যুদ্ধের বিবরণ
ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহলদারির সংবাদটি মুক্তিযােদ্ধাদের গােচরীভুত হয়। গ্রাম্য এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করা সহজতর হবে বিধায় স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক এ টহলদার বাহিনীর উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর এ দলকে অ্যামবুশ করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত নায়েক এস কে মােজাফফর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের একটি দল ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় প্রবেশ করে স্থানীয় জনগণের সহযােগিতায় আত্মগােপনের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচলের উপর নজর রেখে আক্রমণের পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা চালাতে থাকে। | ১৩ জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি দল গাড়িযােগে ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় টহলে আসে। এ সময় মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান ছিল ফুলবাড়িয়া থানা থেকে ৪ কিলােমিটার পূর্বে কাটাখালী নামক গ্রামে। সকাল ৮টায় বেবিট্যাক্সির চালক আজগর আলীর মাধ্যমে পাকিস্তানি। বাহিনীর এ আগমনের সংবাদ আসে। | মুক্তিযােদ্ধা গ্রুপ অধিনায়ক নায়েক এস কে মােজাফফর রহমান তার সহযােদ্ধাদের সাথে আলােচনার পর পাকিস্তানি বাহিনীর এ কনভয়ের উপর। আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এ সময় মুক্তিযােদ্ধা দলের সাথে ছিল ২টি এলএমজি, ৩টি এসএমজি, ১২টি রাইফেল এবং বেশ কিছু গ্রেনেড । দ্রুতগতিতে মুক্তিযােদ্ধা দলটি কাটাখালী থেকে পায়ে হেঁটে সকাল সাড়ে ৯টায় লক্ষ্মীপুর বাজারে এসে পৌছায়। এদিন লক্ষ্মীপুরে ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। স্থানীয় জনগণের চলাচল থাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান পরিবর্তনে বেশি বেগ পেতে হয় নি। অধিনায়ক মােজাফফর রহমান তার দলকে তিন ভাগে বিভক্ত করে লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকার সুবিধাজনক ৩টি স্থানে অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দেন। ২টি কাট অফ পার্টিকে কিছু দূরত্বে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নিতে বলেন। প্রতিটি কাট অফ পাটিতে ১০জন করে মুক্তিযােদ্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম কাট অফ পার্টির অধিনায়ক মাে. ইউনুস আলী (আনসার) ১০জন সদস্য নিয়ে কাটাখালী বাজার স্কুল এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে। দ্বিতীয় কাট অফ পার্টির অধিনায়ক মাে. সামসুল হক ১০জন সদস্য নিয়ে ছনকান্দা এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে। মূল দলের দায়িত্বে ছিলেন নায়েক এম কে মােজাফফর রহমান। তার দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ১৭জন। মূল দল বা অ্যাকশন পাটি ফুলবাড়িয়াময়মনসিংহ সড়কের পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকায় শেওড়াগাছকে আড়াল করে তার নিচে শক্রর আগমনের অপেক্ষায় অবস্থান গ্রহণ করে। 
আনুমানিক সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর। অগ্রবর্তী ট্রাকটি অফিসারসহ লক্ষ্মীপুর বাজারে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশ স্থলের কাছাকাছি পৌছানাের সাথে সাথে গাড়ির চাকাকে লক্ষ্য করে মুক্তিযােদ্ধা ইপিআর নায়েক বকুল প্রথম ২টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। গ্রেনেড ২টি ট্রাকের পাশেই বিস্ফোরিত হয়। একইসাথে অপর মুক্তিবাহিনীর সদস্যের গুলিতে বাসের পিছনের চাকা ফেটে থেমে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী প্রস্তুতি নেয়ার পূর্বেই মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষ থেকে আরও ৭-৮টি গ্রেনেড ছোড়া হয়। ফলে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরােধ প্রস্তুতি অনেকাংশে রুদ্ধ হয়ে পড়ে। রাস্তা ছােটো থাকায় গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়া পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। নায়েক মান্নান তার এলএমজি মূল সড়কের উপর স্থাপন করে সারিবদ্ধ অবস্থায় থাকা গাড়ির উপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ গুলিতে প্রথম ট্রাকের সামনে বসা জনৈক পাকিস্তানি অফিসার নিহত হয়। সামনের দিকে যাওয়া সম্ভব নয় ভেবে পিছনের গাড়ি থেকে সেনাসদস্যরা পশ্চাদপসরণ করে। বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য ময়মনসিংহ সদর দপ্তরে ফিরে। মুক্তিবাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানি বাহিনী আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পৌছায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১০-১২টি গাড়ি সৈন্যসহ ঘটনাস্থল লক্ষ্মীপুর বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যদলের আগমন সংবাদে মুক্তিযােদ্ধারা নিহত পাকিস্তানি সৈন্যদের রাইফেল, গােলাবারুদ ও একটি ওয়্যারলেস সেট নিয়ে প্রথমে কাটাখালী গ্রামে এবং পরবর্তী সময় কাটাখালী থেকে আরও দক্ষিণে কুতুবখালী বাজারের কাছাকাছি অবস্থান গ্রহণ। করেন। | বেলা ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যদল লক্ষ্মীপুর পৌছে নিরীহ জনগণের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী বাজারে আগুন ধরিয়ে দিলে পার্শ্ববর্তী অসংখ্য বাড়ি ভস্মীভূত হয়। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিশােধ পরায়ণ হয়ে লক্ষ্মীপুর বাজার ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের ১৬জনকে গুলি করে হত্যা করে। লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশে নিম্নলিখিত মুক্তিযােদ্ধাগণ অংশগ্রহণ করেন:
১. নায়েক এম কে মােজাফফর রহমান
২. হাবিলদার খােরশেদ
৩. আবদুস সালাম, নায়েক বকুল (প্রাক্তন ইপিআর)
৪, নায়েক ইদ্রিস আলী।
৫.নায়েক মােজাম্মেল হক।
৬. সিপাহি হাসান মুরাদ।
৭. নায়েক আবদুল মান্নান
৮, ল্যান্স নায়েক আক্কাছ আলী
৯. হাবিলদার দুলাল উদ্দিন
১০. ইউনুস আলী (আনসার)
১১. সিপাহি ইদ্রিস আলী
১২. সিপাহি হাবিবুর রহমান।
১৩. আবু বকর সিদ্দিক
১৪. সিপাহি ইমাম হােসেন
১৫. নায়েক আবদুল খালেক
১৬. সিপাহি মুজিবুর রহমান
১৭. মােহাম্মদ আলী
১৮. সিপাহি মজিবুর রহমান (পুলিশ)
১৯, সিপাহি আবদুল মালেক
২০. আবদুর রাজ্জাক (ছাত্র)
২১. মীর আবদুর রহমান।
২২. শাহাবউদ্দিন (আনসার)
২৩. আবদুল মান্নান।
২৪. সিপাহি সামছুল হক (আনসার)
২৫. সিপাহি সাহেব আলী (আনসার)
২৬. হযরত আলী (পুলিশ)।
২৭. ল্যান্স নায়েক আবু সাঈদ
২৮, সিপাহি মােজাহিদ।
২৯. নায়েব সুবেদার মুসলেম উদ্দিন।
৩০, মােহাম্মদ আলী।
৩১. সুবেদার ইব্রাহিম খলিল
৩২. সিপাহি আবুল খালেক (আনসার)।
আক্রমণের ফলাফল বিশ্লেষণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টহল দলের লক্ষ্মীপুর-ফুলবাড়িয়া রাস্তায় নিয়মিত আসাযাওয়া ছিল। কখনাে কোনােপ্রকার বাধা বা জনগণের কাছ থেকে বিরুদ্ধাচরণ জাতীয় কোনাে ঘটনা না ঘটায় তারা এ পথ সম্বন্ধে কোনােরূপ সন্দেহ পােষণ করেনি। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী অনেকটা অসতর্ক অবস্থায় ছিল। ১৩ জুলাই মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর বিপর্যয়ের এটাই ছিল মূল কারণ। লােকবল ও অস্ত্রবলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের চেয়ে কয়েক গুণ। বেশি থাকলেও তারা প্রস্তুতি গ্রহণের কোনাে সুযোেগ পায়নি। মুক্তিবাহিনীর। অ্যামবুশের স্থান নির্বাচনে বাজার এলাকা কোনােভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। এ আক্রমণ তাদের জন্য আত্মঘাতি হতে পারতাে। সামগ্রিক মূল্যায়ন মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশে মুক্তিবাহিনীর সফলতা মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবলকে আরও শক্তিশালী করে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!