You dont have javascript enabled! Please enable it!
ভাওয়ালিয়া বাজুর যুদ্ধ
মধুপুর মুক্তিবাহিনীর প্রতিরােধ ভেঙে পড়লে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আফসার উদ্দিন (মেজর আফসার হিসেবে পরিচিত) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মধুপুর গড়ের গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেন। তিনি স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তােলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে মুক্তিবাহিনীর এ দলটি আফসার বাহিনী বলে পরিচিতি লাভ করে। ভালুকা-গাজীপুর এলাকায় আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে অনেক যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তার মধ্যে ভাওয়ালিয়া বাজুর যুদ্ধ বেশ উল্লেখযােগ্য। |ভাওয়ালিয়া বাজুর যুদ্ধ ছিল মূলত পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্রাভিযান রােধের একটি যুদ্ধ। এ এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থানকে ধ্বংস করতে পাকিস্তানি বাহিনী ঘাঁটি স্থাপনের লক্ষ্যে অবস্থান পরিবর্তনের সময় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়।
ভাওয়ালিয়া বাজুর অবস্থান
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত ভালুকা থানায় ভাওয়ালিয়া বাজু একটি গ্রাম। এ গ্রামটির অবস্থান ভালুকা ও গফরগাঁও থানার মধ্যবর্তী স্থানে। ভালুকা থানা সদর থেকে এর দূরত্ব সােজা পূর্ব দিকে ১৫ কিলােমিটার। এ গ্রামের পাশ দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে অপ্রসারিত একটি নদী। নদীর উপর কোনাে সেতু নেই। সবাইকে নৌকাতেই পারাপার হতে হয়। ভালুকা থেকে গফরগাঁও যাওয়ার যােগাযােগ সড়কটি আধা কাচা-আধা পাকা। এটি সামরিক বাহিনীর যানবাহন চলাচলের জন্য উপযােগী নয়। উঁচুনিচু, নালা-ঝিলে-বিলে-খালে সমগ্র এলাকা বিস্তৃত। ময়মনসিংহ থেকে একটি রেললাইন সােজাসুজি গফরগাঁও হয়ে ঢাকার সাথে মিশেছে। এ সময় ঢাকাময়মনসিংহ সরাসরি কোনাে সড়কপথ ছিল না। টাঙ্গাইল হয়ে সড়কপথে এ যােগাযােগ ছিল। ফলে অবস্থান, যােগাযােগ ও দূরত্বের দিক থেকে ভালুকা ছিল অনেকটা প্রত্যন্ত অঞ্চল। পুরাে এলাকাটি অনেকটা জঙ্গলাকীর্ণ। ভাওয়ালিয়া বাজু গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলাের মধ্যে বিরুনিয়া, কুথুলী, পাঁচগাঁও, দীঘা, বান্দবাে উল্লেখযােগ্য। ভালুকা থানার পশ্চিমে টাঙ্গাইল জেলা, দক্ষিণে গাজীপুর থানা, পূর্বে গফরগাঁও থানা এবং উত্তরে ত্রিশাল থানা এলাকার অবস্থান। পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান পাকিস্তানি বাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এবং ৭০ উইং রেঞ্জার্সের অপারেশনাল এলাকায় ছিল ভালুকা থানার অবস্থান। পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল ও রাজেন্দ্রপুরে অবস্থান করছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্ট। ভালুকা ও প্রত্যন্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হয়ে উঠছে, এ সংবাদ পাওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু অতি সন্নিকটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনাে ঘাটি বা অবস্থান না থাকায় ভালুকা দখলের জন্য তাদের ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে সেনা সমাবেশের প্রয়ােজন দেখা দেয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্রযাত্রা
পাকিস্তানি বাহিনী অতি সন্তর্পণে অথচ যথাসম্ভব গতিতে ২৪ জুন রাতে ঢাকা ও ময়মনসিংহ উভয় স্থান থেকে গফরগাঁও থানায় সমবেত হয়। কিন্তু গফরগাঁও থেকে ভালুকা পর্যন্ত রাস্তা যানবাহন উপযােগী না হওয়ায় ২৫ জুন ভােরে গরু ও মহিষের গাড়িতে ভারি অস্ত্র ও গােলাবারুদ উঠিয়ে সেনাসদস্যরা গাড়ির দুই পাশ দিয়ে হেঁটে অগ্রসর হতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এক কোম্পানি সৈন্য এবং তাদের রসদ ও রেশনসামগ্রী বহন করার জন্য ৪০টি গরুর গাড়ি নিয়ােজিত করা হয়। কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তা অতিক্রম করে ভালুকা পর্যন্ত পৌছানাে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মুক্তিযযাদ্ধাদের প্রতিরোেধ ২৪ জুন অধিনায়ক আফসার উদ্দিনের সহকারী অধিনায়ক আনছার উদ্দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভালুকা থানার দিকে আগমন সংবাদ জানতে পারেন। এ সংবাদে আনছার উদ্দিন মাত্র ৯জন যুবককে নিয়ে শান্তিগঞ্জ নামক গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করেন। ২৫ জুন পাকিস্তানি বাহিনীর গতিপথ যাচাই করে আনছার উদ্দিন প্রাথমিকভাবে শান্তিগঞ্জ বাজার এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরােধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাস্তব অবস্থার কারণে তিনি ভাওয়ালিয়া বাজু ফেরি পার হয়ে নদীর বিপরীত তীরে (পশ্চিম পাশে) পাকিস্তানি বাহিনীকে মােকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেন। নদীর তীর ঘেঁষে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে তিনি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করেন। 
২৫ জুন সকাল ১০টা নাগাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ দলটি এবং তাদের রসদ বহনকারী গরু ও মহিষের গাড়িগুলাে ভাওয়ালিয়া বাজু ফেরিঘাটে এসে পৌছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর পাকিস্তানি বাহিনী গরু ও মহিষের গাড়িগুলাে ফেরির মাধ্যমে নদী পার করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে প্রথমে ৬জন পাকিস্তানি সেনা নদীর পার্শ্ববর্তী উঁচু পাড় থেকে নেমে ফেরির উপর এসে দাঁড়ায়। তারা নদীর অপর পাড়ে পৌছে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সংকেত দিলে বাকিরা ফেরি পার হবে, এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল বলে। অনুমান করা যায়। গ্রুপ অধিনায়ক আনছার উদ্দিন পাকিস্তানি বাহিনীকে আর সে সুযােগ নিতে দেননি। ৬জন সৈন্যসহ ফেরি মাঝ নদীতে আসা মাত্রই তিনি তাদের উপর লাইট মেশিনগানের গুলি চালান। ঘটনাস্থলে ৬জন শত্রু সৈন্য আহত বা নিহত হয়। নদীর পাড়ে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যরা অবস্থা বুঝে সাথে সাথে অবস্থান নিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ভারি মেশিনগানের গুলিতে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। মুক্তিযােদ্ধার সংখ্যা অল্প হলেও সুরক্ষিত অবস্থানে থেকে যুদ্ধ করায় পাকিস্তানি বাহিনীর ভারি অস্ত্রের গােলাবর্ষণ তাঁদের কাবু করতে পারেনি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকে। এ সময় আঞ্চলিক অধিনায়ক আফসার উদ্দিন আরও ৩০জন মুক্তিযােদ্ধাকে সাথে নিয়ে দুপুর ১টায় এ যুদ্ধে যােগদান করেন এবং যুদ্ধের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সারাদিন গােলাগুলি করেও পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীকে পিছু হটাতে পারেনি। উপরন্তু, বিকাল থেকে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেছে, এটা শত্রু বাহিনীও বুঝতে পারে। কিন্তু সম্মুখে নদী থাকায় তারা কোনােভাবে পথ অতিক্রম করতে পারেনি। এ রাতে মুক্তিবাহিনীর আরও নতুন সদস্য এসে যুদ্ধে যােগদান করেন। ২৬ জুন সকালে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ডভাবে গােলাগুলি শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টারযােগে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের পিছনের গ্রামে সৈন্য নামাতে শুরু করে। এমতাবস্থায় মুক্তিযােদ্ধারা ঘেরাওয়ের মধ্যে আটকে পড়ার ভয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আবদুল মান্নান শহিদ হন।
ভাওয়ালিয়া বাজুর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা
ভাওয়ালিয়া বাজুর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নাম নিমে উল্লেখ করা। হলাে:
১. আফসার উদ্দিন
২. আনছার উদ্দিন
৩. আবদুল মান্নান শহিদ
৪. আজহারুল ইসলাম
৫.মােসলেম উদ্দিন
৬. মােজাম্মেল হক।
৭. বশির উদ্দিন
৮. দেলােয়ার হােসেন
৯. আকবর আলী
১০. আবদুল হক
১১. হামিদ মিয়া।
১২, মােহাম্মদ ইব্রাহিম।
১৩. আহাম্মদ আলী মিয়া
১৪. আবদুল কুদ্দুছ।
১৫. মােহাম্মদ সামসুদ্দিন
১৬. আবদুল বাতেন ।
১৭. আমজাদ হােসেন।
১৮. সামছুল হক
১৯, মাইন উদ্দিন
২০. সুরুজ মিয়া
২১. আনছার মাস্টার
২২. ফজলুল হক
২৩. ফরিদ আলী
২৪. আবদুল লতিফ
২৫. জালাল উদ্দিন
২৬. মাহবুব আলম
২৭. আবুল কাশেম
২৮. লােকমান আলী প্রমুখ।
যুদ্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ
এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রাকৃতিক কারণে বিপর্যয়ের মুখােমুখি হয়। পাকিস্তানি সৈনিকেরা সাঁতার জানত না। এ জন্য নদীনালা-জলাভূমিকে তারা ভয় পেত। অন্যদিকে মুক্তিযােদ্ধারা এ দেশের কাদা-জলে বেড়ে উঠেছেন। তাদের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতাই যুদ্ধের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। 
নুরুন্দী রেলস্টেশনের যুদ্ধ
নুরুন্দী রেলস্টেশনের অবস্থান ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমা সদর থেকে ১৫ কিলােমিটার পূর্বে নুরুন্দী রেল স্টেশন। এ রেল স্টেশনের উত্তর দিকে শেরপুর মহকুমা, পূর্ব দিকে ময়মনসিংহ সদর মহকুমা এবং দক্ষিণ দিকে টাঙ্গাইল জেলা। নুরুন্দী রেল স্টেশনটি জামালপুর থানায় অবস্থিত। রেল স্টেশনটির উত্তরাংশে অধিকাংশ নদী ও বিল এলাকা। দক্ষিণ দিকে সমতল ভূমি। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলাের মধ্যে ঘােবদাপ, বাঁশচরা, মাছরা, তুলসীরচর, টিকরাকান্দী, ইটাহল, লক্ষ্মীরচর, বারুয়ামারী উল্লেখযােগ্য। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নুরুন্দী রেলস্টেশনের গুরুত্ব ১৯৭১ সালে সড়কপথে যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারণে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল এবং দেশের উত্তরাঞ্চল বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুরের সাথে সংযােগ রক্ষার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী রেল যােগাযােগের উপর নির্ভরশীল ছিল। ভৈরব থেকে রেলপথে ময়মনসিংহ শহরের উপর দিয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট এবং জগন্নাথগঞ্জ ঘাট হয়ে উত্তরবঙ্গের সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যােগাযােগ ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল। ময়মনসিংহ ও জামালপুরের মধ্যবর্তী স্থানে নুরুন্দী রেল স্টেশন। দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে রেলপথ, জলপথ ও সড়কপথে যােগাযােগের সুযােগ থাকায় মুক্তিযুদ্ধের। প্রেক্ষাপটে এ স্থানের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামালপুর ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মহকুমা শহর। এ সময় জামালপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলাের নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পিত ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের উপর। ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের অধীনস্থ এলাকা ছিল জামালপুর, রাজেন্দ্রপুর, হাতিবান্ধা, দেওয়ানগঞ্জ ও টাঙ্গাইল এবং সদর দপ্তর ছিল জামালপুর। পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ছাড়াও ৮৩ ইন্ডিপেন্ডেন্ট মর্টার ব্যাটারি এ এলাকায় নিয়ােজিত ছিল। ময়মনসিংহ এলাকায় অবস্থানরত ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সদর দপ্তর ছিল ময়মনসিংহ শহরে।
পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়মিত সৈন্যদের সাথে রেঞ্জার্স ও রাজাকার যুক্ত করে। তাদের শক্তি বৃদ্ধি করা হতাে। উল্লেখযােগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলােয় রেঞ্জার্স ও রাজাকার মিলিয়ে প্রহরার ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়মিত সৈন্যদল টহলদানের মাধ্যমে এসব স্থানে তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতাে। এ সময় নুরুন্দী রেল স্টেশন পাহারায় রাজাকার বাহিনীর একটি ছােটো দল নিয়ােজিত ছিল। পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানির অবস্থান ছিল নুরুন্দী রেল স্টেশন থেকে ৩ কিলােমিটার দূরে।
মুক্তিবাহিনীর অবস্থান
ময়মনসিংহ জেলার উত্তর সীমান্ত কামালপুর ও পুরাখাসিয়া থেকে নুরুন্দী রেল স্টেশন প্রায় ৫০ কিলােমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এলাকায় তাদের সেনা ইউনিট মােতায়েন করায় এ অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে স্থায়ী কোনাে হাইড আউট সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। সীমান্ত এলাকা থেকে এ সময় বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালিত হতাে। যুদ্ধের পরিকল্পনা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিবহনব্যবস্থা বিধ্বস্ত করার লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের বিস্ফোরক ব্যবহারের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেক্টর অধিনায়কের নির্দেশে ময়মনসিংহ-বাহাদুরাবাদ ঘাটের মধ্যস্থল জামালপুর ও পিয়ারপুর রেল স্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইপিআর বাহিনীর নায়েক ফরহাদের নেতৃত্বে ৬০জনের একটি মুক্তিযােদ্ধা দল গঠিত হয়। এ দলের মধ্যে ৬জন ছিলেন এক্সপ্লোসিভ ও ডিনামাইট বিস্ফোরণে পারদর্শী। যাদের এ বিষয়ের উপর পৃথকভাবে বিশেষ। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য অতিরিক্ত ৫৪জনের এ দলটিকে সাজানাে হয়। ফরহাদের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধা এ দলটিকে ৩টি সাব-গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। প্রথম গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন জবেদ আলী, দ্বিতীয় গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন ইলিয়াস চৌধুরী এবং তৃতীয় গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. বাবর আলী। প্রতিটি দলে ছিল সমানসংখ্যক মুক্তিযােদ্ধা। এদের সাথে ছিল ৬০০ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ এবং ৬টি অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন। ২২ জুন রাতে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরের কামালপুর মুক্তিযােদ্ধা ক্যাম্প থেকে নায়েক ফরহাদের। নেতৃত্বে ৬০জনের একটি মুক্তিযােদ্ধা দল এ অপারেশনের দায়িত্ব নিয়ে। জামালপুর এলাকায় প্রবেশ করেন।
যুদ্ধের বিবরণ
১৯৭১ সালের ২২ জুন ভােরবেলা ৬০জনের মুক্তিযােদ্ধা দলটি মেরুর চরে এসে পৌছায়। এ স্থানে দিনযাপনের পর পুনরায় রাতে যাত্রা শুরু করে ২৩ জুন ভােরবেলা দলটি চরপুঠিমারীতে পৌছে। গ্রুপ অধিনায়ক এ গ্রামের একজন মুক্তিযােদ্ধার বাড়িতে তার প্রাথমিক বেজ স্থাপন করেন। কর্দমাক্ত পথে এ সময় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের পথ চলা কষ্টকর ছিল।
২৪ জুন সকালে মুক্তিযােদ্ধাদের এ দলটি জামালপুর জেলার লক্ষ্মীরচরে এসে পৌছায়। গ্রামটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীর বরাবর উত্তর পাশে অবস্থিত। এ গ্রামের ৫ কিলােমিটার দূরত্বে পশ্চিম দিকে জামালপুর মহকুমা সদর দপ্তর। মাঝখানে ব্রহ্মপুত্র নদ। এমতাবস্থায় গ্রুপ অধিনায়ক নায়েক ফরহাদ এলাকার জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং নিজ প্রচেষ্টায় অপারেশন এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সম্ভাব্য অবস্থান যাচাইয়ের চেষ্টা চালান। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্ত যনি বাহিনীর অবস্থান বেশ শক্তিশালী ছিল, যা ভেদ করে জামালপুর ও পিয়ারপুরে প্রবেশ করা কষ্টকর হবে বলে বিবেচিত হয়। অপারেশনের মূল অধিনায়ক নায়েক ফরহাদ অন্য ৩জন গ্রুপ অধিনায়কের সাথে পরামর্শক্রমে সামান্য অস্ত্র ও মুক্তিযােদ্ধা দল নিয়ে জামালপুর এলাকায় প্রবেশ করা সম্ভব নয় ভেবে লক্ষ্যস্থল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মুক্তিযােদ্ধারা অধিনায়কদের পরামর্শ মতে জামালপুর শহর থেকে ১৫ কিলােমিটার পূর্বে নুরুন্দী রেল স্টেশনটিতে আক্রমণ চালিয়ে এক্সপ্লোসিভ দিয়ে স্টেশনটি উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের বর্তমান আশ্রয়স্থল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ পাশে নুরুন্দী রেল স্টেশনটির অবস্থান। নদীর তীর থেকে এর দূরত্ব ২ কিলােমিটার। ২৫ জুন সন্ধ্যার পর মুক্তিযােদ্ধা দলটি ৩টি নৌকাযােগে লক্ষ্মীর চরের পূর্ব সীমান্তে পৌছে। পাশেই তুলসীর চরের মধ্যবর্তী স্থানে যেখানে ব্রহ্মপুত্র কিছুটা কম প্রশস্ত, সেখান দিয়ে নদী পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন মধ্যরাত, চারদিকে অন্ধকার। বিনা বাধায় পর পর ৩টি নৌকা নুরুন্দীর পাড়ে এসে ভিড়তে সক্ষম হয়।
নুরুন্দী রেল স্টেশনের কাছাকাছি অবস্থান থেকে নায়েক ফরহাদ ২জন মুক্তিযােদ্ধাকে পাঠিয়ে স্টেশনের অবস্থা পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করেন। তথ্যমতে, ১০-১২জনের একটি রাজাকার দল স্টেশন পাহারায় নিয়ােজিত আছে। যুদ্ধের পরিকল্পনামতাে নায়েক ফরহাদ পুনরায় মুক্তিযােদ্ধা দলটিকে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত করে তিন দিকে পজিশন গ্রহণের নির্দেশ দেন। স্টেশনের দুই পাশে ২জন গ্রুপ অধিনায়ক জবেদ আলী ও ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩০জন মুক্তিযােদ্ধা অবস্থান নেন। মূল দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফরহাদ নিজে, সাথে ডা. বাবর আলী। নায়েক ফরহাদ স্টেশনের উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে রাজাকারদের আটক ও নিরস্ত্র করেন। রাজাকারদের বেঁধে নৌকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় । বিস্ফোরক ব্যবহারকারী দল ত্বরিতগতিতে প্লাস্টিক স্ন্যাভগুলাে রেললাইনের একাধিক স্থানে বসিয়ে ডেটনেটিং করে সেফটি ফিউজ ও কর্ডেক্স জুড়ে ২০০ গজের অধিক দূরত্বে এসে সেফটি ফিউজে আগুন ধরিয়ে দেন। ২ মিনিট পরই প্রচণ্ড শব্দে রেললাইন খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে দূরে গিয়ে পড়ে। অধিনায়ক নায়েক ফরহাদ অপারেশন শেষে ব্রহ্মপুত্রের অপর পাড়ে গােপন আস্তানায় ফিরে সে রাতেই বন্দি রাজাকারসহ বেশির ভাগ মুক্তিযােদ্ধাকে সেক্টর সদর দপ্তরে প্রেরণ করেন। নুরুন্দী রেল স্টেশনের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধা নুরুন্দী রেল স্টেশনের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের নামের তালিকা নিম্নেরূপ:
১. নায়েক ফরহাদ
২. জবেদ আলী।
৩. ইলিয়াস চৌধুরী
৪. ডা. বাবর আলী
৫. খােরশেদ আলী
৬. আবদুস ছালাম
৭. রবিউল ইসলাম
৮. সামছুল আলম
৯. চানু মিয়া
১০. শামছুল হক।
১১. মােজাফফর আলী
১২. ওমর ফারুক
১৩. ফারুক হােসেন
১৪. নায়েক বিল্লাল হােসেন।
১৫. নায়েক মহিউদ্দিন (অব.)
১৬. শাহজাহান আলী
১৭. নজরুল ইসলাম
১৮, আবদুল মজিদ
১৯. আবু রাব্বী প্রমুখ।
পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ
২৫ জুন নুরুন্দী রেল স্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটায় পাকিস্তানি বাহিনীর যােগাযােগ ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে বন্ধ না হলেও প্রায় ২৪ ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ থাকে। এ দুঃসাহসিক ঘটনায় পাকিস্তানি বাহিনীর মাঝে যথেষ্ট ভীতির সঞ্চার হয়। পক্ষান্তরে সীমান্ত থেকে এত অভ্যন্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাটির কাছাকাছি মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার ফলে জনগণের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। বিদেশি প্রচারমাধ্যমেও এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিবরণ প্রচারিত হওয়ায় বাংলাদেশে যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, বিদেশিরা তা জানতে পারে। এর ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের মাঝেও সাহস সঞ্চারিত হয়।
খাসকাউলিয়ার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার খাসকাউলিয়া গ্রামে একটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল। খাসকাউলিয়া ছিল রাজাকার বাহিনীর অন্যতম প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক আব্দুল খালেকের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল। তাদের হত্যা, লুটপাট ও নারী ধর্ষণের ফলে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। বাতেন বাহিনীর ফজলুল হক মল্লিকের নেতৃত্বে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ঘাতকদের ধ্বংসযজ্ঞের সংবাদ পেয়ে বাতেন বাহিনীর অধিনায়কের নির্দেশ মােতাবেক মুক্তিযোেদ্ধা মাে, ফজলুল হক মল্লিক অভিযান পরিচালনার জন্য এক অভিনব রণকৌশল উদ্ভাবন করেন। তার রণকৌশল অনুসারে ২৮ জুন সােমবার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। জেনারেল ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ শুনে রাজাকারদের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলাপ-আলােচনার খাসকাউলিয়া মাদ্রাসা ও স্কুল প্রাঙ্গণে একটি সভার আহ্বান করা হয়। রাজাকারদের আলােচনা সভার সংবাদ পেয়ে অনেককে একত্রে পাওয়ার সম্ভাবনায় ফজলুল হক মল্লিক সেদিন অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। রণকৌশল হিসেবে অভিযানকারী দল বরযাত্রী বেশে রাজাকারদের সভাস্থলের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বর সাজেন অভিযানকারী দলের অধিনায়ক দুঃসাহসী মুক্তিযােদ্ধা মাে. ফজলুল হক মল্লিক নিজেই। তিনি পিতার জীবদ্দশায় রেখে যাওয়া মাসলাইস লুঙ্গি পরে দুজন সহযােদ্ধা নিয়ে অগ্রসর হন। লক্ষ্যস্থলের দিকে। অন্যদের নির্দেশ দেন তাকে অনুসরণ করতে। কিছুদূর যাওয়ার পর পরিচিত এক বাড়ি থেকে জিন্নাহ টুপি, রুমাল ও স্পঞ্জ সংগ্রহ করে প্রকৃত বরের বেশ ধারণ করে নৌকাযােগে সঙ্গীদের নিয়ে সভাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি সভাস্থলে পৌছার সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাসার সামনে বসা ২৭-২৮জন লােকের মধ্যে থেকে ২-৩জন এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
তখন ফজলুল হক মল্লিক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমার বাবা মারা যাওয়ায় বৃদ্ধা মা আমাকে বিয়ে করানাের ইচ্ছা প্রকাশ করাতে এ বিপদের দিনেও আমি বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা দুজন আগে এসেছি, আমার চাচা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন পিছনে আসছে মিষ্টি নিয়ে। সে সঙ্গে তিনি পূর্বপরিচিত ঐ এলাকার একজন কাজির নামও বলেন। কেউ কেউ ইতস্তত করলেও রাজাকারদের মধ্যে বসা অনেকে উৎসাহী হয়ে বলে ওঠে, এত দিন পর বিয়ের মিষ্টি খাবাে, এতে আবার চিন্তার কারণ কি? এরপর ২জনকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সভার মাঝে নিয়ে বসিয়ে আলাপ করতে থাকে। ইতিমধ্যে মাগরিবের আজান হয়ে যায়। আজানের সময় হলে মুক্তিযােদ্ধা মাে. ফজলুল হক মল্লিকও নামাজ পড়তে যান। কিন্তু সুন্নত নামাজ আদায়ের পর শেষ রাকাতে তার বেয়নেটের আঘাতে কাপড় খুলে লুঙ্গি ছিড়ে গেলে নফল পড়া বাদ দিয়ে তিনি নামাজ শেষ করে মাঠে আসেন। এর মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায়। ইতােমধ্যে ইয়াহিয়া খানের ভাষণ শােনার জন্য একটি ঘরে রাজাকারদের অনেকেই একত্র হয়। উপস্থিত রাজাকারদের অনেকেই ইয়াহিয়ার ভাষণ শােনার জন্য ফজলুল হক মল্লিককে। অনুরােধ করে।
রাজাকারদের অনুরােধে তিনি ভাষণ শােনার জন্য রেডিও’র কাছে গিয়ে দাঁড়ান। কিন্তু একজন তাকে হাত ধরে টান দিয়ে বসানাের সময় আবার বেয়নেটের আঘাতে লুঙ্গি ছিড়ে যাওয়ার ফলে তিনি দাড়িয়ে যান এবং ধীরে ধীরে আবার বসেন। তাঁর অপর সঙ্গী পূর্বসিদ্ধান্ত অনুসারে বাইরের মাঠে। অবস্থান করেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে ফজলুল হক মল্লিক বেয়নেট বের করে নড়াচড়া করতে নিষেধ করে সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। ইতােমধ্যে তার পাশে দাড়ানাে এক যুবকের পিঠে গুলি লাগায় সে সতর্ক হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং অবস্থা বেগতিক দেখে ক্রলিং করে মাঠের মাঝখানে গিয়ে উচ্চস্বরে। গুলি বন্ধ করার জন্য সংকেত উচ্চারণ করে। আক্রমণ শুরু ও বন্ধ করার সাংকেতিক শব্দ ছিল চাদ ও ফুল। ভুলবশত অভিযান পরিচালনাকারী দলের যােগাযােগ অসম্পূর্ণ রেখে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘটনাস্থলে ফজলুল হক মল্লিক অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান।
পরে তিনি গুলিবর্ষণকারী দলের নেতার উপর চটে যান এবং তাঁকে ভৎসনা করেন। মারাত্মক ভুলের জন্য সুবেদার আব্দুল বারীর কাছে গুলিবর্ষণকারী দলের নেতাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। এ অভিযানের দুঃসাহসিকতার জন্য মুক্তিযােদ্ধা মাে. ফজলুল হক মল্লিক বাতেন বাহিনীতে ব্যাপক পরিচিত ও প্রশংসা অর্জন করেন। যাকে উদ্দেশ্য করে ঐ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল, শত্রুর সে সহচর পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে মৃত্যুবরণ করে। এরপর ঐ এলাকার রাজাকার ও শান্তি বাহিনীর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়।এ আক্রমণে ৮জন রাজাকার নিহত হয়। কয়েকজনকে বন্দি করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। হতাহত ও পালিয়ে যাওয়া রাজাকারদের কাছে থেকে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের কোনাে ক্ষতি হয় নি।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – চতুর্থ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!