You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফৌজি চটকলের নিষ্ফল অপারেশন

সাধারণ

পলাশ থানার শিল্পাঞ্চলে ফৌজি চটকল অবস্থিত। পলাশ শিল্পাঞ্চলে ফৌজি ফাউন্ডেশনের মালিকানাধীন ফৌজি চটকলটি প্রাক্তন সৈনিকদের ১টি কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালের সেপটেম্বর মাসের পূর্বেই (সঠিক তারিখ জানা যায় নি) পাকিস্তানি সেনারা এখানে ১টি ক্যাম্প স্থাপন করে। মিলটির চারদিকে উঁচু পুরু দেয়াল থাকায় পাকিস্তানি সেনারা বেশ নিরাপদে ছিল। পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় জনগণকে নানাভাবে হয়রানি করতাে। তারা জনগণের কাছ থেকে জোরপূর্বক খাসি, মুরগি ও টাকাপয়সা নিয়ে যেত এবং যুবতীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। তাই স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধারা প্রতিশােধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সংগঠন মুক্তিযােদ্ধা কাদিরের দলের ১০জন মুক্তিযােদ্ধা, ফেীজি চটকলে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সৈনিক (ফৌজি চটকলে কর্মরত) মিলে সর্বমােট ২৫-৩০জন (আনুমানিক) মুক্তিযােদ্ধা এ অপারেশনে অংশ নেন। চটকলে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের সংখ্যা জানা যায় নি, তবে সাধারণত তাদের ১০-১২জনের ১টি দল মাঝে মাঝেই ক্যাম্প থেকে বের হতাে। পলাশ শিল্পাঞ্চলে টহলের উদ্দেশ্যে অথবা গ্রামে লুটতরাজের উদ্দেশ্যে। পরিকল্পনা। ফৌজি চটকল ছিল শত্রুদের নিরাপদ স্থান। তা ছাড়া পাকিস্তানি সেনাদের জনবলও যথেষ্ট ছিল বলে মুক্তিযােদ্ধারা অনুমান করেন। অপর দিকে মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র, গােলাবারুদ এবং প্রশিক্ষিত যােদ্ধাদের সংখ্যা ছিল সীমিত। তাই তাঁরা তাঁদের দলকে ২টি ভাগে ভাগ করে মিলের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব ২টি স্থানে অ্যামবুশ পাতার পরিকল্পনা করেন। সাধারণত পাকিস্তানি সেনারা দিনের বেলায় ক্যাম্প থেকে বের হতাে। তাই মুক্তিযােদ্ধারা দিনের বেলায় অ্যামিবুশ করার পরিকল্পনা করেন।

যুদ্ধের বিবরণ

পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধা কাদির ১৯৭১ সালের সেপটেম্বরের শেষ সপ্তাহের কোনাে এক দিন তার দলকে দুই ভাগে ভাগ করে মিলের দুই পার্শ্বে মােতায়েন করেন। তারা খুব সতর্কভাবে শত্রুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তারা দেখতে পান যে, পাকিস্তানি সেনাদের ১টি ক্ষুদ্র দল মিল থেকে বের হয়ে আসছে। কিন্তু শত্রু অ্যামবুশ স্থানে পৌছার আগেই মুক্তিযােদ্ধাদের কিছু সদস্য ফায়ার শুরু করেন। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের কোনাে ক্ষতি তাে হলােই না বরং তারা সংগঠিত হয়ে মুক্তিবাহিনীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

মিল থেকে পাকিস্তানি সেনাদের অপর ১টি দল তাদের সাথে যােগ দেওয়ায় তাদের শক্তিবৃদ্ধি পায় এবং তারা প্রচণ্ডভাবে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযােদ্ধাদের ১টি দল মুক্তিযােদ্ধা কাদিরের নেতৃত্বে নীরবে স্থান ত্যাগ করে কিন্তু এ ব্যপারে অন্য দলটি কিছুই জানতে পারে নি। ফলে ঐ দলটি একাকী গুলি বিনিময় করতে থাকে। এ দলটিতে যুদ্ধরত মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন সিরাজউদ্দিন সাথী ও গফুর। এক সময় পাশের গ্রামের মফিজউদ্দিন ও রফিজ হামাগুড়ি দিয়ে এসে সিরাজকে খবর দেন যে, অন্য মুক্তিযােদ্ধারা চলে গেছেন। সিরাজ ও গফুর তখন ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে ফায়ার করতে করতে পিছনের দিকে যেতে থাকেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা বুঝতেই পারলাে না যে, মুক্তিযােদ্ধাদের সংখ্যা কত। এভাবে মুক্তিযােদ্ধারা নিরাপদে মিল এলাকা ছেড়ে চলে গেলেন। গুলি বিনিময়ে কোনাে পক্ষেরই হতাহত হয় নি।

ফলাফল ও শিক্ষণীয় বিষয়

আপাতদৃষ্টিতে এ অপারেশনে মুক্তিযােদ্ধারা কিছুই অর্জন করতে পারেন নি। তবে এ ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অপারেশনের কারণে পাকিস্তানি সেনাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত এবং আশপাশের এলাকায় তাদের চলাচল সীমিত হয়েছে। সার্বিকভাবে পাকিস্তানি সেনারা যত দিন নরসিংদীর মাটিতে ছিল, সব সময় তারা নিরাপত্তাহীনতা এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপের মধ্যে ছিল, যা তাদের মনােবলকে এতই কমিয়ে দিয়েছিল যে, পরবর্তী সময়ে মিত্র বাহিনীর চূড়ান্ত আক্রমণের সময় এ ধরনের ১টি প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী তেমন কোনাে প্রতিরােধ গড়ে তুলতে পারে নি। তা ছাড়া মুক্তিবাহিনী তথা যৌথ বাহিনীর উর্ধ্বতন অধিনায়করা যখন চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী এ ধরনের ক্ষুদ্র অপারেশনের মাধ্যমে যুদ্ধকে জিইয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল, যা বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ। থেকে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এ অপারেশনে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, মুক্তিযােদ্ধাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব ছিল। অ্যামবুশ দলের এক অংশ অপরটিকে না জানিয়েই স্থান ত্যাগ করে। তাই মুক্তিযোেদ্ধারা সাফল্যের পরিবর্তে প্রায় বড়াে ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিলেন। তা ছাড়া শত্রু অ্যামবুশ অবস্থানে পৌছার আগেই কিছু নবীন মুক্তিযােদ্ধা ফায়ার শুরু করার ফলে এ অপারেশনের অর্জন ব্যাহত হয়, যা থেকে মুক্তিযােদ্ধারা শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। সামান্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযােদ্ধা সিরাজউদ্দিন সাথী যে দক্ষতার সাথে শক্রকে ধােকা দিয়ে কোনােরূপ ক্ষতি ছাড়াই পশ্চাদপসরণ করেছিলেন, তা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

রায়পুরা সদর কলােনির যুদ্ধ

সাধারণ

স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন ইপিআর-এর বাঙালি সৈনিকরা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্রের দশম খণ্ডের ৪র্থ পাতায় মেজর রফিক (অব.) ইপিআর-এর ভূমিকা বর্ণনাকালীন বলেন, বিভিন্ন সেক্টর এবং ফোর্স পুনর্গঠনের কাজে ইপিআর বাহিনীর কাছ থেকেই বাংলাদেশ সরকার প্রায় সমুদয় অস্ত্র ও গােলাবারুদের ব্যবস্থা করেছিল। শুধু তা-ই নয়, প্রথম থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। তারাই প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিল। রায়পুরা সদর কলােনির খণ্ডযুদ্ধে অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের পাশাপাশি ইপিআরএর সৈনিকদের সে অবদানের প্রতিফলন ঘটে। এ অভিযানেও ইপিআর-এর সৈনিকেরা তাদের পক্ষ পরিবর্তন করে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে যােগ দেন। উদ্দেশ্য। রায়পুরা থানা সদর কলােনির ১ কিলােমিটার পূর্বে রেল সড়কের উপর অবস্থিত পাকিস্তানি ডিউটি পােস্ট আক্রমণ করা এবং ইপিআর-এর সৈনিক ও কতিপয় রাজাকারদের অস্ত্রসহ পালিয়ে আসতে সাহায্য করা এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের সম্পৃক্ত করা। স্থান ও সময় রায়পুরা থানা সদর এলাকা, গ্রিডসূত্র ৯৭১৫৭১, বাংলাদেশ ম্যাপ শিট নম্বর ৭৯ আই/১৩। অপারেশনটি ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর (সঠিক তারিখ জানা যায় নি) মাসে সম্পাদিত হয়েছিল।

পটভূমি/পরিস্থিতি

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি বাহিনী রায়পুরা থানা সদর কলােনিতে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। সেপটেম্বর মাসে ক্যাম্পে মেজর মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে প্রায় ১ কোম্পানি (আনুমানিক ১০০-১৫০জন) সৈন্য ছিল। ঐ ক্যাম্পে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, ইপিআর-এর কিছু সদস্য এবং রাজাকার ছিল। উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ রাতে পিলখানায় প্রচুর ইপিআর সদস্য বর্বর হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর কিছু ইপিআর সদস্য পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং কিছু ইপিআর সদস্য পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হন। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময় ইপিআর-এর স্থলে ইপিসিএএফ (EPCAF – ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস) গঠন করে। সৈন্যদের স্বল্পতা হেতু বন্দি ইপিআর-এর সদস্যদের বাধ্য করা হয় পাকিস্তানিদের পক্ষে লিখিতভাবে।

আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য। পাকিস্তানি সৈন্যের এসব সদস্যদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে তাদের সম্মুখে রাখত, যাতে তারা পালাতে না পারে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণপূর্বক এটা স্পষ্ট হয় যে, রায়পুরা সদর কলােনি ক্যাপ সংশ্লিষ্ট এলাকার মুক্তিযােদ্ধা সদস্যদের নিষ্ক্রিয় করা এবং রায়পুরা থানা এলাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়। ঐ ক্যাম্পের সদস্যরা স্থানীয় জনসাধারণের উপর যথেষ্ট অত্যাচার ও নির্যাতন চালাত। এ ক্যাপ থেকে দিবারাত্রি কলােনি থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় দণ্ডায়মান ও চলন্ত প্যাট্রল দল রেললাইনের উপর পাঠানাে হতাে। এমনই ১টি ডিউটি পােস্টের (বাংকার সমৃদ্ধ) অবস্থান ছিল রায়পুরা সদর কলােনি থেকে ৬০০ মিটার পূর্বে মহিষমারা নামক স্থানে। ঐ ডিউটি পােস্টে সাধারণত রাতে ইপিআর-এর নায়েক লতিফের নেতৃত্বে ইপিআর সদস্য, পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা ডিউটি করত। তাদের প্রধান কাজ ছিল ডিউটি পােস্টসংলগ্ন রেলসেতু পাহারা দেওয়া। সেপটেম্বর মাসের প্রথম দিকে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা মুক্তিযােদ্ধা সেকশন অধিনায়ক জয়দর আলীর কাছে সংবাদ পাঠান যে, তারা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে চায়। অতঃপর অধিনায়ক জয়দর আলী নায়েক লতিফের সাথে গােপনে দেখা করেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, মুক্তিবাহিনী নবীয়াবাদ গ্রাম থেকে মহিষমারা ডিউটি পােস্টের উপর আক্রমণ করবে এবং রেললাইনের উত্তর দিক থেকে সদর কলােনির উপর ফায়ার দেবে। মহিষমারা ডিউটি পােস্টের সদস্যরা তখন সে ফায়ার প্রতিহত না করে বরং আকাশের দিকে ফায়ার দেবে এবং কর্তব্যরত সেকশনের বাকি ইচ্ছুক সদস্যরা পালিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে যােগ দেবে। যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তাহলে সবাই মিলে নায়েক লতিফের সেকশনের দিক থেকে রায়পুরা সদর কলােনি ক্যাম্প আক্রমণ করারও পরিকল্পনা করা হয়। এ অপারেশনে স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধাদের প্রায় ৬০৭০জনের ১টি দল অংশগ্রহণ করে।

যুদ্ধের বর্ণনা

রায়পুরা সদর কলােনির এ অপারেশনে মুক্তিযােদ্ধারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রায়পুরা সদর কলােনির উত্তরে রেললাইনের অন্য পাশের গ্রামে (নকশায় বিশদভাবে চিত্রিত করা হলাে) এবং মহিষমারা ডিউটি পােস্টের উত্তর-পশ্চিমে নবীয়াবাদ গ্রামে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযােদ্ধারা রাত ১২টা ১ মিনিটের মধ্যে অবস্থান গ্রহণের কথা থাকলেও পথিমধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীকে এড়াতে গিয়ে অবস্থান নিতে বিলম্ব হয়। এর ফলে নায়েক লতিফের দলের। সদস্যদের (যারা পালাতে ইচ্ছুক ছিলেন) মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। অতঃপর অবস্থান গ্রহণের পর হাবিলদার জয়দর আলী প্রথমে মহিষমারা ডিউটি পােস্টের উপর দিয়ে গুলি ছােড়েন। তারপর ঐ পােস্ট ও সংলগ্ন স্থানের পলায়নে ইচ্ছুক সদস্যরা আকাশের দিকে গুলি করতে থাকেন। অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য গ্রুপটি রায়পুরা সদর কলােনি লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এক পর্যায়ে হাবিলদার জয়দর আলীর দল নায়েক লতিফের দলের সাথে মিলিত হয়। পরদিন ভাের হওয়ার সাথে সাথে মুক্তিযােদ্ধারা নায়েক লতিফের দলের ৬-৭জন সদস্য ও ২জন রাজাকারসহ (কিতাব আলী ও লাল মিয়া) পশ্চাদপসরণ করেন। সব মুক্তিযােদ্ধা ঘটনাস্থল থেকে ৩ কিলােমিটার উত্তরে জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে তাদের পশ্চাদপসরণের মিলন স্থানে একত্র হন এবং পরবর্তী সময় নিজ নিজ অপারেশন এলাকায় চলে যান।

এ অপারেশনে শিবপুর থানা অঞ্চল থেকেও মুক্তিযােদ্ধারা এসে যােগ দেন। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা ২ ইঞ্চি মটার, এলএমজি, এসএমজি, রাইফেল, এসএলআর এবং স্টেনগান ব্যবহার করেন। এর মধ্যে হাবিলদার জয়দর আলীর গ্রুপ নবীয়াবাদ গ্রামে ১টি এলএমজি, ১টি এসএলআর ও ৪টি ৯ মিলিমিটার স্টেনগান স্থাপন করেন। রায়পুরার সদর কলােনির যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। প্রাথমিকভাবে তারা সাফল্য পেলেও পরবর্তী সময় ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে মূল ক্যাম্পের দিকে আর অগ্রসর হন নি। তবে তাঁরা সাফল্যের সাথে ইপিআর সদস্য ও ২জন রাজাকারকে অস্ত্রসহ উদ্ধার করেন।

ফলাফল

এ খণ্ডযুদ্ধের ফলে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কর্মরত অন্যান্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের মনােবল বৃদ্ধি পায়, যা তাদেরকে দল ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ অভিযানের ফলে মােট ৮-৯জন সশস্ত্র যােদ্ধা মুক্তিযােদ্ধাদের দলে যুক্ত হন। নায়েক লতিফের দলের ল্যান্স নায়েক গােলাম মাওলা শহিদ এ অভিযানে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ হন।

শিক্ষণীয় বিষয়

দেশপ্রেম ১জন যােদ্ধাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। নায়েক লতিফের ঘটনাটি এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এরূপ সূক্ষ্ম একটি অভিযানে যথাসময়ে প্রতিটি কার্যসম্পাদন অত্যন্ত জরুরি বিষয়। হাবিলদার জয়দর আলী যেহেতু লক্ষ্যবস্তুতে পৌছাতে দেরি করেন, কাজেই নায়েক লতিফের দলের মধ্যে তা সংশয়ের সৃষ্টি করে। ঐ দ্বিধা ও সংশয়ই ল্যান্স নায়েক গােলাম মাওলা শহীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে জানা যায়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!