মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ফেনীসহ বিভিন্ন অঞ্চল
মুজিবনগর, ২৪ অক্টোবর (ইউএনআই) সম্প্রতি মুক্তিবাহিনী শত্রুসেনাদের হাত থেকে নােয়াখালী জেলার ফেনী এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে দখলদার পাকসেনারা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবর্তী রাস্তার পাশের স্থানসমূহ মুক্ত করে নিয়েছেন। এই সাফল্যজনক তৎপরতায় দক্ষিণ ও উত্তর কুমিল্লার মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মুখােমুখি ঐ সংঘর্ষে ১২ জন পাকসেনা নিহত এবং বাকিরা পালিয়ে গেছে।
পাক অধিকৃত অঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা বেড়েছে
বাঙলাদেশের পাক অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে গেরিলা তৎপরতা আরাে বৃদ্ধি পেয়েছে। খােদ ঢাকা শহরে গেরিলা তৎপরতা উল্লেখযােগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগরতলা ইউএনআই প্রেরিত এক সংবাদে প্রকাশ যে, গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার অভ্যন্তরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মুক্তিবাহিনী ২০ জনকে খতম করেছেন। বিলম্বে প্রাপ্ত ঐ সংবাদে আরাে জানা গেল যে, ইস্ট পাকিস্তান ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং হাউস বিল্ডিং-এর সামনে গেরিলারা ২৫ পাউণ্ড এর একটি বিস্ফোরক একটি গাড়িতে রেখে দেয়। বিস্ফোরণে ঐ গাড়িটি সহ আরাে বহু গাড়ির ক্ষতিসাধন হয়েছে।
রংপুর জেলার সিংহীমারীতে ২১ অক্টোবর গেরিলা আক্রমণে দখলদার সৈন্যসহ ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ঐ জেলার খেতাবাড়িতে গত ২০ অক্টোবর আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ২০ জনকে খতম করেছেন। ঐ অভিযানে একজন গেরিলা শহীদ হন। ঐদিন খাড়বাড়িতে ৭ জন শত্রুসেনা গেরিলাদের হাতে নিহত হয়। এক দিনে মুরাদপুরেও ২ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার গােদাগাড়ি হাটে একটি উল্লেখযােগ্য তৎপরতা চালিয়ে গেরিলারা ৫ জন শত্রু সেনাকে খতম করেছেন। ঐ দিন হরগােবিন্দ পুরে একদল টহলদারী পাকসেনার উপর আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ১ জন শত্রু সেনাকে নিহত এবং ২ জনকে আহত করেন। রংপুর জেলার লালমনিরহাটে গত ১৮ অক্টোবর আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন শত্রুসেনাকে খতম করেন। ১৭ আক্রমণ কুড়িগ্রামে ২ জন হানাদার সেনা নিহত হয়। কুড়িগ্রাম ও উলিপুরের মধ্যে রেল লাইন অপসারণ করে মুক্তিবাহিনী রেল যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঐ দিন গেরিলারা দিনাজপুর, সৈয়দপুর রােডে একটি পাটবাহী ট্রাক উল্টে দিয়েছেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা রণাঙ্গনে
২০ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার মুকুন্দপুরে ৪ জন পাকসেনা আক্রমণে নিহত হয়। নলুরায় পাকঘাটির উপর মর্টার আক্রমণ চালিয়ে গেরিলারা ৩ জন শত্রুকে খতম করেন। গুথুমা নদী এলাকায় গত ১৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৫ জন পাকসেনা আহত হন। ঐদিন নােয়াখালি জেলার পাগলীরকুলে ৮ জন শক্রসেনা খতম হয়েছে। এই জেলার ফুলগাজীতেও ঐদিন ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। ঐ একই দিনে শালধর এলাকায় গেরিলা তৎপরতায় ৮ জন শত্রুসেনা খতম এবং একটি শক্র বাঙ্কার ধ্বংস হয়েছে।
ময়মনসিংহ শ্রীহট্ট মৌলভী বাজার
ময়মনসিংহ জেলার বাঘামারা এলাকায় গত ২১ অক্টোবর ন’জন রাজাকার গেরিলা আক্রমণে নিহত হয়েছে। ২০ অক্টোবর নাজিরপুরে ২ জন শত্রুসেনা এবং ৪ জন রাজাকার নিহত হয়। ১৭ অক্টোবর শ্রীহট্ট ও ছাতকের মধ্যে বিদ্যুৎ স্তম্ভ ধ্বংস করে দিয়ে গেরিলারা সরবরাহ ব্যবস্থা অচল করে দিয়েছেন। ঐদিন ফুলপুরে ৪ জন শত্রুসেনা নিহত হয়েছে।
কুষ্টিয়া, যশাের, খুলনা রণাঙ্গনে
১৮ অক্টোবর গেরিলা আক্রমণে শিজল এলাকায় ৪ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে। ঐ স্থান গত ১১ অক্টোবর গেরিলাদের হাতে ৪ জন শত্রুসেনা এবং ৭ জন রাজাকার নিহত হয়েছে। জানা গেল, যুবড়ি এলাকা থেকে পাক-কর্তৃপক্ষ মেজর মনসুরকে অপসারণ করেছে। ১০ অক্টোবর ঐ স্থানে গেরিলা আক্রমণে ৭ জন শত্রু সৈন্য নিহত হওয়ার ব্যর্থতাজনিত মেজর মনসুরকে অপসরণ করা হয়েছে।
আগরতলা থেকে ইউএনআই জানাচ্ছে : গতকাল পাকসেনাদের বর্বর আক্রমণে কসবা রণাঙ্গনে ২০০ গ্রামবাসী নিহত এবং ২০ হাজার গ্রামবাসী ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন।
প্রকাশ, মুক্তিবাহিনী কর্তৃক ঐ স্থান মুক্ত হওয়ার পরে পাকসৈন্য ৫টি জেট বিমান নিয়ে সেখানে আক্রমণ চালিয়ে উল্লিখিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
সূত্র: কালান্তর, ২৫.১০.১৯৭১