You dont have javascript enabled! Please enable it! রামনগর গ্যাস পাইপ লাইন অপারেশন - সংগ্রামের নোটবুক
রামনগর গ্যাস পাইপ লাইন অপারেশন
 
সাধারণ ১৯৭১ সালের ১১-১৭ জুলাই পর্যন্ত কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ অধিবেশনে তদানীন্তন সরকার প্রধান, বাংলাদেশ বাহিনীর চীফ অব স্টাফ ও সব সেক্টরের অধিনায়কগণ অংশগ্রহণ করেন। ঐ অধিবেশনে শক্রর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিল্পকারখানা বন্ধ তথা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদিতে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করে ৩ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মুক্তিযােদ্ধা কর্তৃক কয়েকটি পাইপলাইন এবং অনেক বৈদ্যুতিক খুঁটি ধ্বংস করা হয়। রামনগরের গ্যাস। পাইপ ধ্বংসকরণ অপারেশন এ ধরনেরই একটি অপারেশন। উদ্দেশ্য। রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামের সন্নিকটে রেলসেতু সংলগ্ন গ্যাস পাইপে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কুমিল্লা থেকে ঘােড়াশাল ও ঢাকায় গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানাে এবং বৈদ্যুতিক সরবরাহে বিপর্যয় ঘটিয়ে মিল-কারখানা বন্ধকরণে সরকারকে বাধ্য করা।
 
স্থান ও সময়
চট্টগ্রাম-ঢাকা রেললাইনের উপর রামনগর রেলসেতুর উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত গ্যাস পাইপ, গ্রিডসূত্র ০৬৪৬১৪, বাংলাদেশ ম্যাপ শিট এল/১৬ এবং এ অপারেশনটি ১৯৭১ সালের ৩০ জুলাই সম্পাদন করা হয়েছিল। পটভূমি/পরিস্থিতি ৩ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক খসরু জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে তার দলবল নিয়ে সেক্টর সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার সঙ্গে ভৈরবের গ্যাস যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন । ঐ অপারেশনের জন্য ভৈরব থেকে ৩ কিলােমিটার পশ্চিমে রামনগর রেলসেতু ও এর আশপাশের এলাকাকে বেছে নেয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেনাদের কোনাে দল ঐ স্থানে তখন ছিল না।
 
সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, গ্যাস পাইপের চারদিকে বিস্ফোরক লাগিয়ে ডিটোনেটরের সাহায্যে ফাটানাে হবে। এ বিস্ফোরক তৈরিতে মুক্তিযােদ্ধা মােল্লা মাে. হুমায়ুন কবীর অধিনায়ক খসরুকে সহায়তা করেন। এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন: ১. মাে. খসরু ২. মাে. হুমায়ুন কবীর ৩, মাে, গােলাপ মিয়া ৪, মাে. ফরিদ ৫. সুলতান উদ্দিন ৬. জজ মিয়া। ৭. শেখ তারা মিয়া এবং আরও অনেকে। যুদ্ধের বর্ণনা পরিকল্পনা মােতাবেক অধিনায়ক খসরু তার মূল দলকে নিয়ে ব্রিজের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে গ্যাস পাইপের দিকে অগ্রসর হন। দলকে ৩টি উপদলে বিভক্ত করে অভিযান স্থলে গমন করেন। তিনি ১টি দলকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেল সড়কে রামনগর ব্রিজের পার্শ্বে এবং অপর দলকে রেললাইনের উত্তর-পশ্চিমে রামনগর গ্রামে মােতায়েন করেন।
 
৩০ জুলাই আনুমানিক রাত ২টায় মুক্তিযােদ্ধারা গ্যাস পাইপের চতুর্দিকে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। প্রথম পর্যায়ে ডিটোনেটরের অকার্যকারিতার দরুন বিস্ফোরক ফাটাতে তারা ব্যর্থ হন। পরবর্তী সময় আবার ভাের ৪টায় বিস্ফোরক লাগানাে হয় এবং ভাের ৪টা ১৫ মিনিটে বিস্ফোরকটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সাথে গ্যাস পাইপকে ফাটিয়ে দেয়। ফলে ঐ এলাকায়। দাউদাউ করে গ্যাসের আগুন জ্বলতে থাকে। অপারেশনের সফলতার পর মুক্তিযােদ্ধাদের পুরাে দলটিই রাধানগরের ৪ কিলােমিটার উত্তরে জালালাবাদ চলে যায়। ঐ অভিযান জালালাবাদ থেকেই (বিতর্কিত) পরিচালনা করা হয়েছিল এবং এ অপারেশনে লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাবর আলী মাস্টার মুক্তিযােদ্ধাদেরকে সার্বিকভাবে সহায়তা করেন। ফলাফল এ অভিযানের ফলে ভৈরব থেকে ঢাকার গ্যাস সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয় এবং এ অপারেশনের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধাদের কর্তৃক শত্রু লক্ষ্যবস্তুর উপর বিস্ফোরক দ্রব্য সঠিকভাবে প্রয়ােগের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যায়। শিক্ষণীয় বিষয়
ক. গেরিলা যুদ্ধে সরকারের অঙ্গসংগঠনগুলাে ও চালিকা শক্তি গুলাের ধ্বংসকরণ/নিষ্ক্রিয়করণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
খ, বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার শত্রুকে অনেকাংশেই মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়।
গ. ধৈর্যধারণ ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তা যে-কোনাে অভিযানের সাফল্য আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘ, গেরিলা সংগঠনে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন (Technically Efficient) জনশক্তি থাকা অত্যাবশ্যকীয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড