প্রসঙ্গক্রমে
চীন সম্পর্কে এসইউসি নেতা
এস,ইউ,সির নেতা শ্রী শিবদাস ঘােষ বলেছেন- বাঙলাদেশ সম্পর্কে চীনের মনােভাবকে একই নিন্দা করা যায় না।” তিনি বিদেশী বুর্জোয়া পত্রিকা রাজনৈতিক ভাষ্যকে তার মন্তব্যের সমর্থনে ব্যবহার করেছেন। ঐ সব পত্রিকায় বলা হয়েছে- “ইয়াহিয়ার প্রতি চীনের সমর্থন শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে পর্যবসিত হতে পারে।”
চীনের নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হলে সকলে খুশি হবেন। কিন্তু শিবদাসবাবু কী বলবেন যে, বাঙলাদেশে পাকিস্তানে জঙ্গীশাসন যে গণহত্যার অনুষ্ঠান করেছে তার সম্পর্কে সমাজবাদী চীন নীরব কেন? কেনই বা চীনের নেতারা ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনকে সমর্থন করছেন এবং অস্ত্র, অর্থ ও স্পীড বােট দিয়ে মুক্তিসংগ্রামকে ধবংস করার জন্য ইয়াহিয়াকে সাহায্য করছেন? মর্কিন সাম্রাজ্যবাদ অস্ত্রবােঝাই জাহাজ ও অর্থ পাঠিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করছে। চীনও একই কাজ করছে। অতএব বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে দমন করার ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও সমাজতান্ত্রিক চীনের কাজের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রেরণের জন্য যদি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিন্দনীয় হয়ে থাকে, তা হলে ঐ একই কাজের জন্য কেন চীনের নেতারা নিন্দার থেকে রেহাই পাবেন না? শিবদাসবাবু এসব প্রশ্নের উত্তর দিলে পাঠকেরা উপকৃত হবেন।
বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে ভেদ সৃষ্টি করে এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা অসম্ভব। কারণ সােভিয়েত ও বিশ্ব-সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাই হল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ও নির্ধারক শক্তি। চীনের নেতারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের নীতিকে অস্বীকার করেছেন এবং ভিয়েতনামে মার্কিন অগ্রাসনের বিরুদ্ধে সােভিয়েত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে ফ্রন্ট গঠন করতে অস্বীকার করেছেন। বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব-কমিউনিস্ট সম্মেলনের যুক্ত সংগ্রামের আহ্বানকে চীনের নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। লক্ষ্য করা যায় যে, এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চীন ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে বৈরীতার পরিবর্তে মিত্রতাই বেড়ে চলেছে বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে সেই মিত্রতা নগ্নভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে মাত্র।
শিবদাসবাবু বােধ হয় লক্ষ্য করেন নি যে, মাওবাদ পূর্বে ছিল এক ধরণের বিচ্যুত, কিন্তু বর্তমানে হয়ে উঠেছে মূলতঃ পেটি বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের আদর্শ এবং সম্পূর্ণ ভাবে মার্কর্সবাদ লেনিনবাদ বিরােধী।
চীনের জনগণ যদি তাদের নেতাদের নীতি পরিবর্তন ও মার্কিন দালাল ইয়াহিয়া খানের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করিয়ে মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ঘােরাতে পারেন তাহলে শিবদাসবাবুর মত আমরাও খুশি হতাম। কিছু কোদালকে সােনার অলঙ্কার আখ্যা না দিয়ে কোদাল বলাই ভাল।
সূত্র: কালান্তর, ১৩.৭.১৯৭১