বালিগাঁও অ্যামবুশ
টঙ্গীবাড়ি থানা থেকে সােজা পশ্চিমে লৌহজং থানার সীমান্ত এলাকা বালিগাঁও। এ এলাকায় পাকিস্তানি সৈন্যদের তৎপরতা সীমিত আকারে হলেও মাঝে মাঝে সরবরাহ ও জনবল সঞ্চালনের জন্য নৌপথে চলাচল করত। এদিকে। মুক্তিযােদ্ধারা যুদ্ধ করতে করতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং সাহসী হয়ে ওঠেন। নভেম্বরের দিকে পরিকল্পনায় ও বাস্তবায়নে মুক্তিযােদ্ধারা বহু সফলতা লাভ করেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। শক্রর ১টি টহল দলের বালিগাঁও গ্রামে প্রবেশ। করার সংবাদ পান মুক্তিযােদ্ধারা। তৎক্ষণাৎ মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুকে অ্যামবুশ করার পরিকল্পনা করেন। গ্রামের রাস্তার পাশে ওত পেতে পাকিস্তানিদের আগমনের অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। মুক্তিযােদ্ধাদের একেবারে কাছাকাছি আসতেই শুরু হয় প্রবল গুলি বর্ষণ। পাকিস্তানি সেনারা প্রাণভয়ে পশ্চাদপসরণ করে পালিয়ে যায়। তাদের কোনাে হতাহতের খবর জানা যায় নি। মুক্তিযােদ্ধাদেরও কোনাে ক্ষতি হয় নি।
রতনপুরের অ্যামবুশ
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে রতনপুর গ্রাম। এ গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, লােকজনকে হত্যা ও নারী নির্যাতন করতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করত। এমতাবস্থায়। মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিশােধ নেয়ার সুযােগ খুজতে থাকেন। ৮ নভেম্বর। শত্রু সৈন্যরা রতনপুর গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিযােদ্ধারা যথাসময়ে খবর পেয়ে যান। মুক্তিযােদ্ধারা ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেন, শত্রুকে নিরাপদে ফিরতে দেবেন না। তারা শত্রুর চলা মেঠো পথের দক্ষিণের গ্রামে অ্যামবুশ অবস্থান গ্রহণ করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান শত্রুর থেকে প্রায় ৩০০ গজের বেশি দূরত্বে ছিল। অতএব তাদের গুলি যথেষ্ট কার্যকর হয় নি। পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরাপদ স্থানের খোঁজে উত্তর দিকে বণিক পাড়ার দিকে যেতে চেষ্টা করে। সেখানে অপেক্ষা করছিল আরেকটি মুক্তিযােদ্ধা দল। তারাও শক্রর উপর গুলি বর্ষণ শুরু করেন। বাধা পেয়ে শত্রু পুনরায় রতনপুরে প্রবেশ করে। এ পর্যায়ে তারা মূল অ্যামবুশের কার্যকরী দূরত্বের মধ্যে এসে যায়। উপর্যুপরি গুলি বর্ষণে তাদের অন্ততপক্ষে ২জন নিহত এবং বহু আহত হয়। হতাহতদের নিয়ে তারা হরগঙ্গা কলেজের দিকে পলায়ন করে। মুক্তিযােদ্ধাদের ১জন গুরুতর আহত হন।
টঙ্গীবাড়ি থানা আক্রমণ
মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর থেকে সড়ক পথে প্রায় ২০-২২ কিলােমিটার দক্ষিণপশ্চিমে টঙ্গীবাড়ি থানার অবস্থান। ১৯৭১ সালে টঙ্গীবাড়ি থানার অবস্থান ছিল বর্তমান উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত সরু খালের পশ্চিম পাড়ে। বর্তমানে থানার অবস্থান খালের পূর্ব পাড়ে। টঙ্গীবাড়ির প্রায় ৩ কিলােমিটার উত্তরে বেতকায় অবস্থিত ছিল মুক্তিযােদ্ধা রতনের দল। তারা ১৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় খালের পূর্ব পাড়ে অবস্থান। নেয়। অব্যবহিতপরেই গুলি বর্ষণ শুরু হয়। থানা থেকে পালটা গুলি বর্ষণ করা। হয়। গুলির শব্দে বেতকার পূর্বে আবদুল্লাপুরে অবস্থিত আবদুর রবের দল এবং টঙ্গীবাড়ি থানার কাছে পশ্চিমে আবদুস সালামের দল থানা ঘেরাও করে ফেলে। রব ও সালামের দলের মধ্যে পূর্বে কোনাে যােগাযােগ হয় নি। এমনকি তারা। একে অপরের আগমন ও অবস্থান সম্বন্ধেও জানতেন না। এমতবস্থায় ভুল বােঝাবুঝির সমূহ আশঙ্কা ছিল। সৌভাগ্যবশত তেমন অঘটন ঘটে নি। স্লোগান দিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ শুরু করেন।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড