পিরােজপুরের যুদ্ধ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বৈদ্যের বাজার থানায় পিরােজপুর ইউনিয়ন পরিষদ অবস্থিত। ঐ ইউনিয়ন পরিষদে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পের সামনে দিয়ে পিরােজপুর গ্রামের সাধারণ মানুষেরা আসা-যাওয়া করত। এখান থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করতাে এবং টাকাপয়সা লুটে নিত। এমতাবস্থায় ৭ নভেম্বর পিরােজপুর ইউনিয়নের অধিনায়ক মােহাম্মদ আলী বৈদ্যের বাজার থানার অন্য মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে নিয়ে শত্রুর ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালান। পালটা আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি সৈন্যরা। প্রায় ১ ঘন্টা যুদ্ধের পর শত্রুরা স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। পরদিন খুব ভােরে শত্রুরা পিরােজপুর। গ্রাম ও হাবিবপুর গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে নিরীহ সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি হয়। আক্রমণে শত্রুর হতাহতের খবর জানা যায় নি। মুক্তিযােদ্ধাদেরও কোনাে ক্ষতি হয় নি।
বােগাদী গ্রামের অ্যামবুশ
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ আড়াইহাজার থানা মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসার ১৫২০ দিন পরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ সদস্যের ১টি দল পুনরায় থানাটি দখল করে। মুক্তিযােদ্ধারা এলাকার স্বার্থে কোনাে প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই অবস্থান ত্যাগ করেন। অন্যথায় শত্রুরা সাধারণত নিকটবর্তী এলাকার নিরীহ জনগণের উপর অত্যাচার শুরু করত ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিত। মুক্তিযােদ্ধারা। এমতাবস্থায় শক্রর উপর চাপ প্রয়ােগের লক্ষ্যে থানাকে কেন্দ্র করে চারদিকে। সার্বক্ষণিক অবস্থান গ্রহণ করেন। এর ফলে থানায় অবস্থিত শত্রুদের রসদ ও খাদ্যসংগ্রহে বাধার সম্মুখীন হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার লক্ষ্যে শত্রুরা নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করে সতর্কতার সাথে মেঘনা নদীর পােলদী ঘাট দিয়ে রসদ আনার ব্যবস্থা নেয়। ৭ নভেম্বর আড়াইহাজার থানা থেকে ২ কিলােমিটার দূরে গােপালদীআড়াইহাজার সংযােগকারী কাঁচা সড়কের উপর অবস্থিত দক্ষিণ পাড়া গ্রামে মুক্তিযােদ্ধা কাজী মঞ্জুর হােসেনের নেতৃত্বে প্রায় ১৫-১৬জনের ১টি দল অবস্থান করছিল। এ পথে শক্রর আগমনের সংবাদ পেয়ে নিকটবর্তী গ্রামে রাস্তার উভয়।
পার্শ্বে দুই দলে বিভক্ত হয়ে তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতীক্ষায় থাকেন। পূর্বপশ্চিমে বিস্তৃত এ পথের উত্তরপার্শ্বের গ্রামে অবস্থান করছিলেন মঞ্জুর এবং দক্ষিণে পুকুর পাড়ে অপর দল। পরিকল্পনা ছিল, বােগাদীর দিক থেকে ফায়ার আসার পর শত্রুরা রাস্তার দক্ষিণে অবস্থান করলে পুকুর পাড় থেকে ফায়ার করে তাদের ধ্বংস করা। শত্রুরা কাছাকাছি পৌছালে গর্জে ওঠে মুক্তিযােদ্ধাদের অস্ত্র। প্রায় ৫০জন সৈন্যের অর্ধেক লুটিয়ে পড়ে মাটিতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত অবশিষ্ট সৈন্যরা পালটা গুলি ছুড়ে। এ অবস্থায় পুকুর পাড়ের যােদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ২য় বর্ষের ছাত্র মধুর একাই তার দল নিয়ে ঘণ্টা খানেক যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে সব নিচুপ হয়ে যায়। মঞ্জুর তার দলের সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলে নতুন ম্যাগাজিন লােড করেন এবং সামনে এগিয়ে এক খেজুর গাছের আড়ালে অবস্থান নেন। উদ্দেশ্য, অবশিষ্ট সৈন্যদেরকে সমূলে খতম করা। কিন্তু লুকিয়ে থাকা এক পাকিস্তানি সৈন্যের এলএমজি’র গুলি এক বীর মুক্তিযােদ্ধার মাথার খুলিতে আঘাত করে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি শহিদ হন। পরে শত্রু এলাকা ছেড়ে চলে গেলে এ বীর শহিদের মৃতদেহ একই থানাধীন ইদবারদী গ্রামে সমাহিত করা হয়।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড