You dont have javascript enabled! Please enable it!
পাগলা রেলসেতু ধ্বংস
১০ অক্টোবর সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে মুক্তিযােদ্ধারা পাগলা রেলসেতু সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন। এ সেতুটি ধ্বংসের ব্যাপারে মুক্তিযােদ্ধারা সকাল সাড়ে ৮টায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী ১জন মাটির নিচ থেকে এক্সপ্লোসিভ তুলে আনেন। ৩০ পাউন্ড করে ২টি চার্জ গঠন, অপর ২জন এগুলাে মাথায় তুলে নেন। নিরাপত্তার জন্য হালকা অস্ত্রশস্ত্র সাথে নিয়ে ৯টা ৫০ মিনিটে মুক্তিযােদ্ধারা পাগলার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাস্তায় তাঁদের কোথাও কোনােপ্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সেতুর দুই জায়গায় ২টি চার্জ বসানাে হয় এবং যােদ্ধারা নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার উপযােগী সেফটি ফিউজ লাগিয়ে তাতে আগুন ক্বালিয়ে দেলপাড় চলে আসেন। এক সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে চারদিক প্রকম্পিত হয় এবং সেতুটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মাত্র ৩জন মুক্তিযােদ্ধা এ অপারেশন সম্পন্ন করেন।
এমভি তুরাগ শিপ আক্রমণ
বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের গাড়মােড়া এলাকার চর ধলেশ্বরীর পাড়ে শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদৰােঝাই জাহাজ এমভি তুরাগ নােঙর করে রাখা হয়। মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক পিয়াসউদ্দিনের নির্দেশে নৌ-কমান্ডাে আবদুল আজিজের নেতৃত্বে গ্রুপ অধিনায়ক সাহাবুদ্দিন খান সবুজের সহযােগিতায় ১৮জন মুক্তিযােদ্ধার পল লিমপেট মাইন দিয়ে ১৮ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে জাহাজটি ডুবিয়ে দেয়। যার ফলে পরদিন। মুক্তিবাহিনী বহু আগ্নেয়াস্ত্র হস্তগত করে। গ্রামবাসী মুক্তিযােদ্ধাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং বহু পাকিস্তানিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এ অপারেশনে ১৮জন মুক্তিযােদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ ঘটনার পর মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ করার অন্ত্র জোগাড় হয় এবং তাদের দল আরও শক্তিশালী হয়। এ যুদ্ধে নৌ-কমান্ডাের অধিনায়ক আবদুল আজিজ ও গ্রুপ অধিনায়ক সাহাবুদ্দিন খান সবুজসহ অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেনঃ ১, নৌ প্লাটুনের আ, সােৰাহান ২. হাজি লিয়াকত ৩. জি কে বাৰুল ৪. দুলাল ৫, নুরুজ্জামান। ৬. গিয়াসউদ্দিন গেসু। ৭. সামছুদ্দিন ৮. কুতুবউদ্দিন ৯. কাজী ইসহাক ১০. আলী হােসেন। ১১. আমান। ১২. মিজানুর রহমান ১৩. টুকু ১৪. মােজাম্মেল ১৫. আলাউদ্দিন ১৬. আজাদ খান ১৭. নাছির ১৮. সেলিম। ১৯, মােশারফ। ৪. দুলাল ৫, নুরুজ্জামান। ৬. গিয়াসউদ্দিন গেসু। ৭. সামছুদ্দিন ৮. কুতুবউদ্দিন ৯. কাজী ইসহাক ১০. আলী হােসেন। ১১. আমান। ১২. মিজানুর রহমান ১৩. টুকু ১৪. মােজাম্মেল ১৫. আলাউদ্দিন ১৬. আজাদ খান ১৭. নাছির ১৮. সেলিম। ১৯, মােশারফ।
সােনারগাঁও অ্যামবুশ-২ (চিলারবাগ)
তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী কুখ্যাত রাজাকার এ এস এম সােলায়মান তৎকালীন বৈদ্যের বাজার (বর্তমান সােনারগাও) থানার অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য আগমন করবেন। এ সংবাদ প্রকাশের সাথে সাথে মারমুখী হয়ে ওঠেন মুক্তিযােদ্ধারা। রাজাকারের আগমন প্রতিহত করার €২জন্য থানা সদর রােডের সােনারগাঁও পার্ক (চিলারবাগ) নামক স্থানে রাস্তায় মাইন পুঁতে ওত পেতে বসে থাকেন মুক্তিযােদ্ধারা। অপেক্ষা করতে থাকেন কুখ্যাত রাজাকারের জন্য। কিন্তু এ এস এম সােলায়মান সড়ক পথে এসে। হেলিকপটারে আসে। আর এ দিকে থানা সদর রাস্তা দিয়ে শক্রর ২টি জিপ আসতে থাকে। ১টি জিপ পুঁতে রাখা মাইনের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। অপর জিপ থেকে শত্রু মুক্তিযােদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধারাও পালটা আক্রমণ চালান। যুদ্ধ চলতে থাকে প্রায় ২ ঘণ্টা। এ যুদ্ধে বিবিসি’র বিশিষ্ট সাংবাদিক নিহত হন বলে জানা যায়। সন্ধ্যা নেমে আসার পর মুক্তিযােদ্ধারা শ্লোগান দিতে দিতে স্থান ত্যাগ করেন।
এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা আবদুল আউয়াল আহত হন। এই যুদ্ধের সংবাদ বিবিসি লন্ডন। থেকে প্রচার করা হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন: ১. অধিনায়ক আব্দুল মালেক ২. অধিনায়ক রুহুল আমিন ৩. অধিনায়ক মােহাম্মদ আলী। ৪. অধিনায়ক সুলতান আহম্মদ মােল্লা ৫. অধিনায়ক সিরাজুল ইসলাম (মাস্টার) ৬, আবদুল খালেক। ৭. আবদুল বাতেন ৮. মাে, ওছমান গনি ৯, বজলুর রহমান। ১০. এরশাদ আলী ১১. সেলিম রেজা। ১২. সৈয়দ হােসাইন ১৩. আবদুল কাদির ১৪. নুরুল ইসলাম। ১৫. আসলাম। ১৬, আবদুল আউয়াল ১৭. ইব্রাহীম ১৮. সােলেমান ও আরও অনেকে। ২৩ অক্টোবরের যুদ্ধের পরাজয়ের আক্রোশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল ২৪ অক্টোবর ফজর নামাজের সাথে সাথে চিলারবাগ, খাসনগর। দিঘির পাড়, ইছাপাড়া, আদমপুর, দুলালপুর, আমিনপুর, কৃষ্টপুর ও দৌলবাগে অবস্থানরত মুক্তিযােদ্ধা ও সাধারণ মানুষের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধারাও টের পেয়ে সব দিক থেকে পালটা আক্রমণ চালান। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় ৫ ঘণ্টা এ যুদ্ধ চলতে থাকে। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা মজনু শহিদ হন এবং দৌলরবাগ গ্রামের ২জন নিরীহ গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হন। অপরদিকে ৫জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।
মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর মিলন স্থলে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান ছিল। যুদ্ধকালীন নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। তার নেতৃত্বে ২৬ অক্টোবর ১১টায় ব্রহ্মপুত্র নদের মােহনায় ৫৭ মিলিমিটার। ব্লেন্ডিসাইড ব্যবহার করে পানৰােট সে করা হয়। এ অপারেশনে ২জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৪-৫জন আহত হয়। ২৫ অক্টোবর অধিনায়ক গিয়াসউদ্দিন খবর পান যে, নদীর মােহনায় পাকিস্তানিদের পানৰােট টহল দেয়। সেদিন বিকাল ৫টায় ৫৭ মিলিমিটার ব্লেন্ডিসাইডসহ ৩০জন মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল গানৰােট অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সন্ধ্যার পর ঠাৱা খাবার খেয়ে যার যার অবস্থানে শত্রুর আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সারারাত কেটে যায়। পরদিন ২৬ অক্টোবর বেলা ১১টায় এক কৃষক এসে অধিনায়ৰুৰুে গুৰর দিলেন যে, পানৰােট আসছে। মুহুর্তেই সবাই অবস্থান গ্রহণ করেন। গানৰােট আয়ত্তের মধ্যে আসার সাথে। সাথেই পানৰােট লক্ষ্য করে ব্লেন্ডিসাইড ফায়ার করা হয়। মােট ৩টি গােলা নিক্ষেপ করা হয়। গানবােটটি ঘুরে মুক্তিযােদ্ধাদেৱ উপর গুলি করে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত গানবােটটি আঁকা হয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের দিকে আসতে থাকে। মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিতে ২জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পর মুহূর্তেই দেখা গেল, মুন্সিগঞ্জ টার্মিনাল থেকে অন্য ১টি গানৰােট বৃষ্টির মতাে গুলি ছুড়তে ছুড়তে মুক্তিযােদ্ধাদের দিকে এগিয়ে আসছে। নিজেদের অবস্থান ত্যাগ করে।
নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান মুক্তিযােদ্ধারা। অধিনায়ক গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা ১. সাহাবুদ্দিন খান সবুজ ২, জি কে বাৰুল। ৩. শাহদৎ হােসেন দুলাল ৪. আলী আজগর ৫. গিয়াসউদ্দিন পেসু ৬, নুরুজ্জামান ৭, কুতুব উদ্দিন ৮, হাতেম ৯. আলী হােসেন ১০, কাজী ইসহাক ১১. মােজাম্মেল ১২. মিজানুর রহমান ঢালী ১৩. সামছুদ্দিন ১৪, আতাউর রহমান ১৫. মতিন ১৬. বাতেন ১৭. গােলাম মােরশেদ ১৮. কাজী মােবারক ১৯. আবদুল আজিজ ২০. জসিম উদ্দিন কবির ২১. আক্তার হােসেন দেশী ২২. মিলন ২৩. পুতুল ২৪. মাে. জসিম উদ্দিন ২৫. আলাউদ্দিন প্রমুখ।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!