লতিফপুর-বাইলকা ব্রিজ ও বংশাই ব্রিজ আক্রমণ
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন লতিফপুর-বাইলকা ব্রিজ ও বংশাই ব্রিজ অবস্থিত। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার মিলিয়ে ১ প্লাটুনের কিছু কম সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বাইলকা ব্রিজে ও তার আশপাশের এলাকায় শত্রুরা অবস্থান নেয় এবং টাঙ্গাইল জেলার সীমান্তে। শ্রীফলতলী গ্রামে মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান নেন। অধিনায়ক ছিলেন আকতারুজ্জামান। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর প্লাটুন অধিনায়ক আকতারুজ্জামানের নেতৃত্বে আনুমানিক প্রায় রাত ১২টার দিকে মুক্তিবাহিনীর ১টি প্ল্যাটুন লতিফপুর-বাইলকা ব্রিজ ও বংশাই ব্রিজ এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় এবং পাকিস্তানি সেনারা অবশেষে ব্রিজের অবস্থান। পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে ৩জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ২জন গুরুতর আহত এবং ১১জন রাজাকার ও ৩জন পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধবন্দি হয়। একই সাথে ১৩টি রাইফেল ও বেশ কিছু গােলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
ন্যাশনাল জুট মিলের যুদ্ধ
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ন্যাশনাল জুট মিলস্ অবস্থিত। এটি উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলােমিটার উত্তরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কালীগঞ্জকাপাসিয়া রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ন্যাশনাল জুট মিলেও তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। শীতলক্ষ্যা নদীর উপর রেলসেতুর আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান নেয়। মূলত কুমিল্লা-ঢাকা রেললাইনকে মুক্তিবাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করে তা সরবরাহ লাইন হিসেবে ব্যবহার করাই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য। ঘােড়াশাল-কালীগঞ্জ ব্রিজের কালীগঞ্জের দিকে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা এবং জুট মিলে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় গ্রামগুলােয় অত্যাচার চালাত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খােজ করত। মুক্তিযুদ্ধ যখন আস্তে আস্তে তীব্র আকার ধারণ করে তখন অন্য সেক্টরে সেনা প্রেরণের প্রয়ােজনে অক্টোবরের প্রথম দিকে তারা। ন্যাশনাল জুট মিল থেকে ক্যাম্প উঠিয়ে নিয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ মিলের সার্বিক নিরাপত্তা অফিসার ছিলেন মাে. আব্বাসী এবং ম্যানেজার ছিলেন। রিজভী। যারা উভয়ই পাকিস্তানি। ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখানে নির্বিঘ্নে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করতে পেরেছিল। নভেম্বরের শেষ দিকে আবার ক্যাম্প স্থাপন করে মিলের কর্মচারীদের কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। মিলের প্রশাসনিক অফিসার আবু তালেব এবং প্রােডাকশন অফিসার ইসমাইল গােপনে মুক্তিবাহিনীকে আর্থিক সাহায্য প্রদান। করে এবং মিলের চতুর্দিকে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়ও মুক্তিবাহিনীকে সক্রিয় করে তােলেন।
তারপর পাকিস্তানি সৈন্যরা ন্যাশনাল জুট মিল থেকে উত্তরে কাপাসিয়ার দিকে এগােতে থাকে। প্রায় ২ কিলােমিটার উত্তরে যাওয়ার পর জামালপুর বাজারে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এমতাবস্থায় পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছু হটে ন্যাশনাল জুট মিলে ফেরত আসে। উপরি-উক্ত ঘটনায় প্রায় ৫০-৬০জন পাকিস্তানি সৈন্যের ১টি দল ক্ষিপ্ত হয়ে ১ ডিসেম্বর আনুমানিক বিকাল ৫টায় ন্যাশনাল জুট মিলের ১৪২জন কর্মকর্তাকর্মচারীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ ছিল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ন্যাশনাল জুট মিল রক্তবন্যায় ভেসে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা এহেন ঘটনাকে আজও অশ্রুসিক্ত নয়নে কারবালা প্রান্তরের সাথে তুলনা করেন। পাকিস্তানি সেনারা তাদের এরূপ হীন কর্মকাণ্ডের পর সে এলাকায় আর থাকা। নিরাপদ মনে করে নি। ১ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে ৭০জনের ১টি দল নদীপথ ও স্থলপথে ন্যাশনাল জুট মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর হঠাৎ প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এতে পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কয়েকজন নিহত হয়। কিছু পাকিস্তানি সেনা নদীপথে কালীগঞ্জের দিকে এবং কিছু পুবাইলের দিকে সড়ক পথে পালিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর সকালে পলাশ থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে ন্যাশনাল জুট মিলস্ থেকে প্রায় ২ কিলােমিটার পশ্চিমে ঈশ্বরপুরের মাঠে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে পলায়মান পাকিস্তানি সেনাদের এক সংঘর্ষ হয়। এখানেও এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন আব্দুল আজিজ এবং এখানেই। মুক্তিযােদ্ধা মােজাফফর হােসেন শহিদ হন। মােজাফফর হােসেন গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ও মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুর বিরুদ্ধে নিজের অস্ত্রকে সক্রিয় করে। রেখেছিলেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী সম্পূর্ণ পরাস্ত ও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে আরও যারা নিজের জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন তাঁরা হলেন অধিনায়ক সিরাজ, মাে. নাজিম উদ্দিন গাজী ও মােবারক আলী মােড়ল।
এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৫-৭জন মারা যায় এবং ৩জন ধরা পড়ে। অবশিষ্ট পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকার দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ন্যাশনাল। জুট মিলের ১৪২জন মৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৭৬জনকে মিলের পাশে গণকবর দেওয়া হয় এবং বাকি ৬৬জনকে তাদের আত্মীয়স্বজনরা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান। ঈশ্বরপুরের মাঠে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা মােজাফফর শহিদ হন। বর্তমানে ন্যাশনাল জুট মিলের পার্শ্বে শহিদদের স্মরণে স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে গণকবরের উপর ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
গােলাঘাট রেলসেতুর (কাওরাইদ) যুদ্ধ
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার কাওরাইদ ও ইজ্জতপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে গােলাঘাট রেলসেতুটি অবস্থিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে এ এলাকার ভিটিপাড়া কে এইচ কে উচ্চবিদ্যালয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অবস্থান গ্রহণ করে এবং রেলসেতু রক্ষা করার জন্য সৈন্যসমাবেশ করে। রণকৌশলগত কারণে গােলাঘাট রেলসেতুটি পাকিস্তানিদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ ময়মনসিংহ ও ইজ্জতপুরের মধ্যে এটি ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্ত অবস্থান। ভিটিপাড়া কে এইচ কে উচ্চবিদ্যালয়ে আনুমানিক ১৫০জন পাকিস্তানি সৈন্য ছিল। মুক্তিযােদ্ধারা প্রায়ই তাদের অবস্থানের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালাতেন, তবে তারা তেমন কোনাে ক্ষতিসাধন করতে পারে নি। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কাওরাইদ বাজার সংলগ্ন এলাকায় পাকিস্তানি বােমারু বিমান গােলা বর্ষণ করে। অক্টোবরের শেষ দিকে মুক্তিযােদ্ধারা আংশিকভাবে গােলাঘাট রেলসেতুটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন। ফলে পাকিস্তানিদের যােগাযােগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা নানাভাবে বিঘ্নিত হয়। বিকল্প রাস্তা তৈরি করে তারা যােগাযােগ ব্যবস্থা সচল রাখে।
১১-১২ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মতাে মুক্তিযােদ্ধারা অতর্কিতে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর প্রচণ্ড আক্রমণ পরিচালনা করেন। এতে উভয় পক্ষের বেশ ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় এবং কয়েকজন আহত হয়। পাকিস্তানিদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে মুক্তিযােদ্ধারা পালিয়ে যান। এভাবে ৭-৮ ঘণ্টা যুদ্ধের পরে কিছুটা যুদ্ধবিরতি আসে। পাকিস্তানি সেনারা নিকটবর্তী গ্রামের অনেক বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, অনেক মা-বােনের ইজ্জত হনন করে। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরােচিত কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করার জন্য পলায়মান মুক্তিযােদ্ধারা আবার একত্র হতে শুরু করেন। পরদিনই আবার সংঘর্ষ শুরু হয় এবং ২ রাত ও ১ দিন ধরে গােলাগুলি চলতে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান। আক্রমণের ফলে পুনরায় মুক্তিবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সুযােগে জীবন রক্ষার্থে পাকিস্তানি বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্য কে এইচ কে হাই স্কুল থেকে পালিয়ে ইজ্জতপুর রেল স্টেশনের দিকে এবং কিছু সংখ্যক সদস্য ঢাকাময়মনসিংহ প্রধান সড়কের দিকে চলে যায়। তারা প্রচুর পরিমাণ গােলাবারুদ ও নিজেদের ব্যবহার্য তৈজসপত্র হাই স্কুলে রেখে যেতে বাধ্য হন। এ সংঘর্ষে মুক্তিযােদ্ধা আব্দুর রশীদ চিনু ও নুরুল হক শহিদ হন।
কালিয়াকৈর বাজারের ত্রিমুখী যুদ্ধ
গাজীপুর জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে কালিয়াকৈর থানা অবস্থিত। গাজীপুর থেকে এ থানার উপর দিয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত পাকা সড়ক বিস্তৃত। ১৯৭১ সালের ১০-১২ ডিসেম্বর কালিয়াকৈর পুরাতন থানা এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের উপর মুক্তিবাহিনী ত্রিমুখী এক সর্বাত্মক আক্রমণ রচনা করে।। অধিনায়ক আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে ৩০জন মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল কালিয়াকৈর। থেকে তুরাগের শাখা অতিক্রম করে স্কুল কমপ্লেক্স এলাকায় প্লাটুন অধিনায়ক আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০-২২জনের ১টি দল শ্রীফলতলী থেকে লতিফপুর। ব্রিজে এবং প্লাটুন অধিনায়ক বি এইচ এম আফসারের নেতৃত্বে ১টি প্ল্যাটুন। চাপাইর ব্যাপারী পাড়া থেকে পুরাতন থানা কমপ্লেক্স আক্রমণ পরিচালনা করেন। প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে ২ ইঞ্চি মর্টার, গ্রেনেড, এলএমজি, জি-৩ রাইফেল ও অন্যান্য হালকা অস্ত্র মুক্তিযােদ্ধারা ব্যবহার করেন। ভাের ৫টার। দিকে পাকিস্তানি বাহিনী পত্রযােগে আত্মসমর্পণে রাজি হয় এবং প্রায় শতাধিক পাকিস্তানি সেনাকে কাশিমপুরে মিত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। লতিফপুর ব্রিজে ৭জন, কালিয়াকৈর বাজারের গােলাম নবী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ৫জন এবং পুরাতন থানা এলাকায় ৭জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধে কালিয়াকৈর পাল পাড়ায় মুক্তিযােদ্ধা গােবিন্দ চন্দ্র দাস শহিদ হন।
ইজ্জতপুর রেলসেতুর (শ্রীপুর) যুদ্ধ
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় ইজ্জতপুর একটি গ্রাম। এ গ্রামের ঢাকাময়মনসিংহ রেললাইনে শ্রীপুর উপজেলা থেকে ৭ কিলােমিটার দক্ষিণে এবং রাজেন্দ্রপুর থেকে ৬ কিলােমিটার উত্তরে রেলসেতুটি অবস্থিত। | ২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অপতৎপরতার অংশ হিসেবে রাজেন্দ্রপুর-শ্রীপুর রেলপথে টহল জোরদার করে। শ্রীপুর থানার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন বয়সীদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হতে থাকে। তারা পরিকল্পনা করতে থাকেন, কী করে পাকিস্তানি বাহিনীর এ অশুভ চক্রান্তের দাতভাঙা জবাব দেওয়া যায়। প্রথম দিকে তাদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও অচিরেই তারা সুসংগঠিত হতে শুরু করে এবং সাহস সঞ্চয় করতে থাকেন। ১৪-১৫জনের মুক্তিবাহিনীর ১টি দল গাজীপুর রেল লাইনে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর নজর রাখতে শুরু করে এবং শ্রীপুর উপজেলার অন্তর্গত ইজ্জতপুর গ্রামে রেলসেতুটি ধ্বংসের পরিকল্পনা করে। ইতােমধ্যেই পাকিস্তানি বাহিনীর ৩০-৪০জনের ১টি দল ইজ্জতপুর রেলসেতুর দক্ষিণ পার্শ্বে ৪টি বাংকার তৈরি করে সেখানে অবস্থান নেয়।
মুক্তিবাহিনীর ১০-১২জনের ১টি দল রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান রেকি করে এবং পরবর্তী সময় তৃতীয় বারের প্রচেষ্টায় ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্রিজটি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, ব্রিজ ধ্বংসের পূর্বে প্রায় প্রতি রাতেই পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর গুলি বিনিময় হতাে। এ কারণেই অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি বাহিনী পার্শ্ববর্তী পাটপচা ও নলজানী গ্রামের ১৬-১৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ব্রিজটি ধ্বংসের পর ট্রেনে পাকিস্তানি বাহিনীর টহল ও মালামাল পরিবহণ সাময়িক বন্ধ হলেও বাংকারে তাদের অবস্থান বহাল থাকে। ব্রিজ ধ্বংসের পর পরই মুক্তিযােদ্ধারা ডিনামাইট দিয়ে বাংকারগুলাে উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মুক্তিবাহিনীর ছােটো ছােটো ৩টি দল উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয় ১৩-১৪ ডিসেম্বর রাতে। শাহাবুদ্দিন নামের এক মুক্তিযােদ্ধা, সাথে আরও ২জন সহযােদ্ধা রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি অবস্থানের পিছন দিক থেকে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে লুকিয়ে বাংকারের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তারা যখন বাংকার থেকে ২০-২৫ গজ দূরে, তখন ফজরের আজান। হয়ে গেছে এবং আলাে ফুটতে শুরু করেছে। ঠিক এ সময় পাকিস্তানি সেনারা শাহাবুদ্দিনকে দেখে ফেলে এবং তাৎক্ষণিক ফায়ারে শাহাবুদ্দিন সেখানেই শহিদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী তাকে সেখানেই মাঠে গর্ত করে মাটি চাপা দেয় এবং ঐ। স্থান ত্যাগ করে।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড