১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার অন্তর্গত বালিরটেকের দক্ষিণে কাগজিনগর গ্রামে গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুজিব বাহিনীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং ১জন পাকিস্তানি সেনা মুজিব বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধারা হলেন:
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভােরে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর এক যুদ্ধ সংঘটিত হয় মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কাছে সেওতা ব্রিজের কাছে। টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত হয়ে এক দল পাকিস্তানি সেনা গ্রামের ভিতর দিয়ে ঢাকা আসার চেষ্টা করে। ঐ দলটি যখন মানিকগঞ্জের কাছে সেওতা ব্রিজের কাছে আসে, তখন মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ চালান। প্রায় ২ ঘণ্টা চলে এ যুদ্ধ। যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মুক্তিযােদ্ধা আফতাব উদ্দিন খান। এখানে প্রায় ২০০ মুক্তিযােদ্ধা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানি সেনাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০৩০০জন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে শত্রু সেনারা পালিয়ে যায়। তারপরই মানিকগঞ্জ শহর মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসে। মুক্তিযােদ্ধা আফতাব উদ্দিন খান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কিছু ছাত্রযুবক সঙ্গে নিয়ে সাটুরিয়া থানার নিরালীতে ক্যাম্প স্থাপন করেন। প্রায় ২০০৩০০ ছাত্র-জনতা নিয়ে এখানে তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং সাটুরিয়া থানার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
ধল্লাবাজার যুদ্ধ
সময় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। পাকিস্তানি বাহিনীর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানাধীন জয়মণ্ডপ ধল্লা মহাসড়ক ধরে ঢাকা প্রস্থানের খবর জানতে পেরে অ্যাডভােকেট ফজলুল হক খানের নেতৃত্বে উল্লিখিত স্থানের মধ্যবর্তী এলাকায় খননকৃত পরিখায় ১৮৭জন মুক্তিযােদ্ধা মােতায়েন করা হয়। এ অ্যামবুশের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ধলেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সমূহ ক্ষতিসাধন করা। বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় ৩০০জন পাকিস্তানি সেনা অপারেশন এলাকার কাছাকাছি আসে, দুর্ঘটনাক্রমে একজন মুক্তিযােদ্ধার ফায়ারের ফলে অ্যামবুশের গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ফায়ার ও চলাচল পদ্ধতিতে বংশী নদী পর্যন্ত পৌঁছে। ইতােমধ্যে ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড় থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্য দল ফায়ার কভার দেয়, ফলে তারা বংশী নদী অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে আনিসুর রহমান, আক্কেল আলী, শরিফুল ইসলাম, রামিজ উদ্দিন প্রমুখ। মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন। ধল্লাবাজার হাই স্কুলের অভ্যন্তরে শহিদদের পাকা কবর রয়েছে।
সেওতা ও মনিরা এলাকায় অ্যামবুশ
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টায় তােবারক হােসেন লুডু ৯০জন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখে। পলায়মান পাকিস্তানি সেনার ৫০০জনের ১টি দলের উপর অ্যামবুশ করেন। বৈকুণ্ঠপুর থেকে আফতাবের গােপন সংবাদের ভিত্তিতে তােবারক হােসেন লুডু, আব্দুর রউফ ও আফতাব মানিকগঞ্জ সদরের সন্নিকটে সেওতা ও মনিরায় অ্যামবুশের জন্য অবস্থান নেন। এ যুদ্ধে চান মিয়া শহিদ হন এবং বাদল আহত হন।
ধানকোড়ায় অ্যামবুশ
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাটুরিয়া থানাধীন আটিগ্রাম ক্যাম্পের ১০-১১জন মুক্তিযােদ্ধা নয়াডিঙি ব্রিজের পাশে ধানকোড়া গ্রামে আরিচা থেকে ঢাকা-আরিচা রাস্তা বরাবর প্রত্যাহাররত পাকিস্তানি সেনা দলকে মােঃ ফয়েজ হােসেন ও আব্দুল লতিফ মােল্লার অধীন ২টি উপদলে বিভক্ত হয়ে অ্যামবুশ করেন। পাকিস্তানিদের গুলিতে মাে. আব্দুল হামিদ ও মােহাম্মদ আলী কানসুন শহিদ হন।