You dont have javascript enabled! Please enable it! দাসকান্দি গ্রামে যুদ্ধ - নয়াবাড়ি গ্রামের যুদ্ধ - নিলুয়া গ্রামের অ্যামবুশ - সংগ্রামের নোটবুক
দাসকান্দি গ্রামে যুদ্ধ
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পদ্মা নদীর তীরে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানাধীন দাসকান্দি নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা ‘দাসকান্দি যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। বর্তমান অতিপরিচিত আরিচা ঘাট থেকে এটি ৭ কিলােমিটার দক্ষিণে পদ্মার তীরবর্তী এলাকা। সময় ৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টা (ফজরের নামাজের আগে)। পদ্মা নদীর এপার তঙ্কালীন ঢাকা জেলা, ওপার ছিল ফরিদপুর জেলা। পাকিস্তান। সেনাবাহিনী পদ্মা নদী কখনাে-বা লঞ্চে কখনাে-বা নৌকায় যাতায়াত করত। ৮ ডিসেম্বর শত্রু সেনারা ১টি পানসি নৌকাযােগে গােয়ালন্দ থেকে দাসকান্দি এলাকায় আগমন করে। গােপন সংবাদের ভিত্তিতে এ সংবাদ জানতে পারেন। মানিকগঞ্জের মুক্তিযােদ্ধা অধিনায়ক ক্যাপটেন হালিম চৌধুরী। তার নির্দেশে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ খানের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা ৬ ডিসেম্বর রাতে খিরাই নদী, মরাগাং ও বাইদ্যাখােলা, শিবালয় হয়ে দাসকান্দি নদীর তীরে যান এবং নদীর তীরে পরিখা খনন করে অবস্থান নেন। প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন আ. মতিন চৌধুরী।
অতঃপর ৮ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় শত্রুর আগমন ঘটে। সর্বপ্রথম আব্দুর। রউফ খানের ৩০৩ রাইফেল গর্জে ওঠে। ২০-২৫ মিনিট যুদ্ধের পর পানসি নৌকা পদ্মা নদীতে ডুবে যায় এবং আনুমানিক ৩০-৩৫জন শত্রু সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। এখান থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গােলাবারুদ পাওয়া যায়। একই দিন। স্থানীয় জনগণের সহযােগিতায় মুক্তিযােদ্ধারা স্থান পরিবর্তন করে উথলি ও আজিমনগর হয়ে হরিরামপুর থানায় চলে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধার পক্ষে ২জন। আহত হন এবং তাদেরকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য। স্থানান্তর করা হয়। আহতদের মধ্যে এনায়েত মােল্লা গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
নয়াবাড়ি গ্রামের যুদ্ধ
নয়াবাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানাধীন একটি গ্রাম। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নয়াবাড়িতে পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থানের উপর আক্রমণ করা হয়। পাকিস্তানি সেনাদের ১টি টহল দল রাস্তা দিয়ে নয়াবাড়ি গ্রাম হয়ে শিবালয় থানার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, এ মর্মে সংবাদ পেয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের ১টি দল সহঅধিনায়ক গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি ফাঁদ পাতে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর মুক্তিযােদ্ধারা দেখতে পান যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা কাছাকাছি এলে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে সিকদারবাড়ির পুকুর পাড় দিয়ে ক্রসকান্ট্রিভাবে অন্যত্র চলে যায়। তারা ফাঁদে পড়ায় পূর্বেই ১জন মুক্তিযােদ্ধা অস্ত্র দিয়ে ফায়ার করার ফলে গােপনীয়তা বিনষ্ট হয় এবং অভিযান ব্যর্থ হয়।
নিলুয়া গ্রামের অ্যামবুশ
মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ঘিওর থানার অন্তর্গত। একটি গ্রাম নিলুয়া। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর নিলুয়া গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের উপর আক্রমণ করা হয়। পাকিস্তানি সেনাদের ১টি টহল দল রাস্তা দিয়ে ঘিওর থানার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, এ মর্মে খবর পেয়ে মুক্তিযােদ্ধারা ২টি উপদলে বিভক্ত হয়ে ঐ রাস্তার উপর ‘L ধরনের একটি ফাঁদ পাতে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর মুক্তিযােদ্ধারা দেখতে পান যে, পাকিস্তানি সেনারা অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা কাছাকাছি অগ্রসর হয়ে পার্শ্ববর্তী মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান টের পায়, ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য রাস্তা ত্যাগ করে জমির মধ্য দিয়ে ক্রসকান্ট্রিভাবে চলতে থাকে। জমির মাঝখান দিয়ে একটি খালের বিদঘুটে অবস্থানের জন্য। মুক্তিযােদ্ধাদের ২টি উপদলের অবস্থান অনেকটা মুখােমুখি হয়। চলার পথে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযােদ্ধাদের ২টি উপদলের মাঝামাঝি চলে আসে কিন্তু ফায়ার করলে নিজেদের গুলিতে নিজেরাই হতাহত হবেন ভেবে মুক্তিযােদ্ধারা ফায়ার করেন নি। পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনারা বেশ কিছু দূর অগ্রসর হয়ে গেলে মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান পরিবর্তনের পর ফায়ার শুরু করেন। পাকিস্তানি। সেনারা কোনাে ফায়ার না করেই দৌড়ে ঐ এলাকা ত্যাগ করে। খালের জন্য দেরি হওয়ায় মুক্তিযােদ্ধারা প্রায় ২ মাইল পিছু ধাওয়া করেও কোনাে পাকিস্তানি সেনাকে ধরতে পারেন নি।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড