You dont have javascript enabled! Please enable it! হরিরামপুর সিও অফিস আক্রমণ - সুতালড়ি গ্রামের যুদ্ধ - তিল্লীর যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
হরিরামপুর সিও অফিস আক্রমণ
মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে দক্ষিণে পদ্মা নদীর পাড়ে হরিরামপুর অবস্থিত। হরিরামপুরের হরিণা ক্যাম্প ছিল অত্র এলাকার সবচেয়ে বড়াে পাকিস্তানি ক্যাম্প। মােট সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০জন। তাদের মধ্যে ৬০জন নিয়মিত বাহিনীর সদস্য, বাকি ৪০জন ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) ও রাজাকার। সময় ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর। হরিরামপুর থানার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে মুক্তিযােদ্ধা হাসেমের বাড়িতে মুক্তিযােদ্ধাদের সাংগঠনিক অধিনায়ক মীর মােশারফ হােসেন, লিয়াকত হােসেন খান, গােলাম মহিউদ্দিন ও হাসান ইমাম ইপিআর-এর সদস্য লাল মিয়ার সাথে গােপনে যােগাযােগ করেন এবং এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হন যে, সন্ধ্যার সময় যখন তারা অস্ত্র পায়, তখন যদি মুক্তিযােদ্ধারা ক্যাম্প আক্রমণ করেন, তবে ক্যাম্পে অবস্থানরত ইপিআর-এর সদস্যরা মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে যােগ দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ঘায়েল করবেন। এ সূত্রের ভিত্তিতেই পরিকল্পিত হয় হরিরামপুর থানার উপর আক্রমণের অভিযান। আনুমানিক বিকাল ৪টার সময় মুক্তিযােদ্ধারা আক্রমণ করেন। প্রায় ১৫০জন মুক্তিযোদ্ধা রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে ওয়্যারলেস অফিস থেকে কাঠের ব্রিজ এলাকার মধ্যে অবস্থান গ্রহণ করেন । অস্ত্র ছিল এসএলআর, মার্ক থ্রি রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড। আশ্চর্যজনকভাবে ছাদের উপর ২টি এলএমজিসহ ২জন পাঠান সৈন্য মুক্তিযােদ্ধাদের গুলি করে নি। তারাও মুক্তিযােদ্ধাদের দলে যােগ দেয়। বিভিন্ন কারণে তারা পাকিস্তানিদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আনা হয়েছিল। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের ২জনকে সাথে করে নিয়ে আসেন। ওয়্যারলেস অফিসে আগুন লাগানাের সময় বীর মুক্তিযােদ্ধা মাহফুজুর রহমান শহিদ হন এবং বজলুল হুদা পানু আহত হন। আনুমানিক ৬০জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অবশিষ্ট যারা ২-১জন বেঁচে ছিল, তাদের সবাই পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে আরও ২জনকে হত্যা করা। হয়, তারা ক্যাম্পের বাইরে গ্রামের ভিতর লুকিয়ে ছিল।
সুতালড়ি গ্রামের যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর দিবাগত রাত ৯টার সময় পাকিস্তানি সেনারা মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানাধীন সুতালড়ি গ্রাম আক্রমণ করলে মুক্তিযােদ্ধারা প্রবল প্রতিরােধের সৃষ্টি করেন এবং ঐ রাত থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পালিয়ে গিয়ে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়ে পাকিস্তানি সেনারা ১৭ অক্টোবর পুনরায় সুতালড়ি গ্রামে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধারাও প্রবলভাবে বাধা প্রদান করেন। শুরু হয় দুই পক্ষের প্রচণ্ড গুলি বর্ষণ। মুক্তিযােদ্ধাদের বাধার সামনে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে। বাধ্য হয়। ঐ দিন পাকিস্তানি সেনারা গানবােটে সজ্জিত হয়ে প্রায় ৩০০ সৈন্য নিয়ে রংবাজ, খামারডিঙ্গি, ইব্রাহীমপুর, দৌলতপুর প্রভৃতি স্থান দখলের চেষ্টা চালায়। তারা গানবােট থেকে শেলিং করতে করতে তীরে নামার চেষ্টা করে। এ সময়ও মুক্তিযােদ্ধারা প্রচণ্ড প্রতিরােধের সৃষ্টি করেন। সারাদিন উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের পর রণক্লান্ত পাকিস্তানি সেনারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
উপরি-উক্ত রণক্ষেত্রে যে-সকল মুক্তিযােদ্ধা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন: ১. খন্দকার লিয়াকত আলী ২. আব্দুল হাকিম ৩. রকীব। ৪. বজলুল হুদা ৫. শহিদ মাহফুজুর রহমান ৬. শহিদ নওশের বাবু ৭. আবুল কাশেম ৮. সােহরাব ৯. গােলাম মহিউদ্দিন ১০. অমিত নাগ ১১. হাকিম উদ্দিন ১২. হালিম। ১৩. সিরাজ উদ্দিন ১৪. ওহাব। ১৫. আবুল বাসার ১৬. হারুনুর রশিদ ১৭. শুকুর চেীধুরী। ১৮. শামসুদ্দিন ১৯. সিদ্দিক। ২০. শাহ আলম এলমেছ প্রমুখ।
তিল্লীর যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর বাতেন বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা অধিনায়কের নির্দেশে তিল্লী গ্রামসহ এলাকার গ্রামগুলােতে অবস্থান নেন। মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থানের কথা জানতে পেরে ২০ অক্টোবর ভাের সাড়ে ৪টায় শত্রু সৈন্যরা অতর্কিতে বাতেন বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালালে বাতেন বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা একযােগে পালটা আক্রমণ চালান। অবস্থা বেগতিক দেখে শত্রু বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত পিছু হটে।
এ যুদ্ধে কেউ হতাহত হয় নি, তবে গুলিতে ২টি গরু মারা যায়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড