পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লঞ্চে আক্রমণ
১৯৭১ সালের সেপটেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার নিকটবর্তী পদ্মা নদীতে মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যবাহী ১টি লঞ্চে আক্রমণ করেন এবং লঞ্চটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেন। এ অপারেশনে ১১জন শত্রু সৈন্য ও ৩জন রাজাকার নিহত এবং ৮জন আহত হয়।
মানিকগঞ্জে পাকিস্তানি রিজার্ভ ক্যাম্পে হানা
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযােদ্ধারা মানিকগঞ্জ শহরে পাকিস্তানি রিজার্ভ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৮জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন।
বায়রার যুদ্ধ-২
মানিকগঞ্জ জেলার দক্ষিণ-পূর্বে সিঙ্গাইর থানা। এ থানারই একটি গ্রাম বায়রা। ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত গ্রামটি ব্যাবসাবাণিজ্যের জন্য এলাকায় প্রসিদ্ধ। গরুর হাটের জন্য বায়রা বাজার এতদঞ্চলে বিখ্যাত। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বায়রায় মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সিঙ্গাইর থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ১টি দল খাদ্যসামগ্রী আনার জন্য মানিকগঞ্জ শহরে যায়। এ সংবাদ পাওয়ার পর মুক্তিযােদ্ধারা তাদের মানিকগঞ্জ থেকে ফিরে আসার পথে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিকাল ৩টার সময় পাকিস্তানি সেনারা খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে নৌকাযােগে বায়রা নামক স্থানে পৌছলে মুক্তিযােদ্ধারা একযােগে ধলেশ্বরী নদীর উভয় তীর থেকে তাদের আক্রমণ করেন।
মুক্তিযােদ্ধা শামসুদ্দিনের রাশিয়ান এলএমজি’র প্রচণ্ড গুলি বর্ষণে পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই ১৫জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। আহত অন্য পাকিস্তানি সেনাদের মুক্তিযােদ্ধারা বেয়নেট দিয়ে হত্যা করেন। ছত্রভঙ্গ পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকজন পালিয়ে পাটক্ষেতের মধ্যে আত্মগােপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযােদ্ধারা তাদের খুঁজে বের করে এবং আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু তারা রাজি না হলে তাদের গুলি করে হত্যা করেন। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা এলএমজি, ২ ইঞ্চি মর্টার, এসএলআর, রাইফেল প্রভৃতি ব্যবহার করেন। এ যুদ্ধে মাত্র ১জন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন: ১. আজহারুল ইসলাম আরজু ২. আব্দুল হক ৩. মান্নান। ৪. আলী হােসেন। ৫. মিজানুর রহমান ৬. হজরত প্রমুখ।
কাকনার যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ৯ ও ১০ অক্টোবর বাতেন বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা নাগরপুর থানার দক্ষিণ এবং দৌলতপুর থানার পূর্বাঞ্চলের ধামেশ্বর এলাকায় অবস্থানে থাকেন। ১১ অক্টোবর রাত ১২টার পর ঐ সময়কার ১৬টি কোম্পানির অধিনায়কদের নিজ নিজ কোম্পানির মুক্তিযােদ্ধাদের কাকনা গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলােয় অবস্থান নেয়ার জন্য ফিল্ড কমান্ড নায়েব সুবেদার খন্দকার আবু তাহের নির্দেশ প্রদান করেন। বাহিনীর অবস্থানের সংবাদ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে। পৌছলে (গােয়েন্দা ও রাজাকারদের মাধ্যমে) শত্রু ভাের ৫টায় বাতেন বাহিনীর আহলাদ খান কোম্পানির ২ নম্বর প্ল্যাটুন অধিনায়ক মােঃ সিরাজুল ইসলাম খানের প্ল্যাটুনের মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ করলে বাতেন বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা পালটা আক্রমণ চালান। যুদ্ধের বিপদসংকেত পাওয়ার সাথে সাথে ঐ এলাকায়। অবস্থানরত সব কোম্পানি অধিনায়কদের নির্দেশে মুক্তিযােদ্ধারা ফায়ারিং করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যরা গানবােটযােগে দৌলতপুর থানা সদরে চলে যায়।
যুদ্ধে ২জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং বাতেন বাহিনীর ১জন শহিদ হন। অস্ত্র উদ্ধার হয় চাইনিজ রাইফেল ১টি, গুলি ১০০ রাউন্ড। ঐ যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন নায়েব সুবেদার খন্দকার আবু তাহের (ফিল্ড কমান্ড)। সহকারী ফিল্ড কমান্ডে ছিলেন নায়েক আলমগীর ভূইয়া। কোম্পানি অধিনায়কগণ ছিলেন। নায়েক আজহারুল ইসলাম, নায়েক আব্দুস সামাদ, নায়েক খন্দকার আব্দুল বারী, নায়েক মহিদুর রহমান, নায়েক ফরহাদ হােসেন, নায়েক মাে. হেলাল উদ্দিন, নায়েক মাে, মমরেজ উদ্দিন, নায়েক মীর ওছার হােসেন, নায়েক মাে. ওয়াজেদ আলী খান, নায়েক হুমায়ুন, নায়েক আওলাদ, মাে, ইনতাজ আলী, নায়েক সামছুল আলম, মাে. তােফাজ্জল হােসেন, মােঃ কাইউম খান।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড