ঘিওর থানা আক্রমণ-২
মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ঘিওর থানা অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৭ জুন মুক্তিযােদ্ধারা ঘিওর থানা কমপ্লেক্সে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা। সদস্যদের উপর গুলি বর্ষণ করেন। এটি কোনাে সংঘবদ্ধ আক্রমণ ছিল না। পাকিস্তানি সেনাদের ১ সেকশনের চেয়ে কিছু বেশি সদস্য এ থানা কমপ্লেক্সে। অবস্থান করত। মুক্তিযােদ্ধাদের অধিনায়ক আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে আরও প্রায় ২০-২৫জন সহযােদ্ধা রাতের বেলায় শত্রু অবস্থানের উপর দূর থেকে ফায়ার। করেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা পালটা ফায়ার করলে। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের ফায়ার বন্ধ করে অবস্থান ত্যাগ করে নিকটবর্তী গ্রামে। আত্মগােপন করেন।
বায়রা গ্রামের যুদ্ধ-১
মানিকগঞ্জ থানায় যে কতকগুলাে খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়, তারমধ্যে বায়রা গ্রামের যুদ্ধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়রা গ্রামটি মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে। এবং সিঙ্গাইর থানা সদর দপ্তর থেকে ৪-৫ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। বায়রা বাজারটি ব্রিটিশ আমল থেকে পাট ব্যাবসার জন্য বিখ্যাত। পাকিস্তানি বাহিনীর রেশন দলের উপর সার্থকভাবে অ্যামবুশ পরিচালনার ফলে বেশ কিছু চাইনিজ অস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। ১৯৭১ সালের ১৩ জুলাই অ্যাডভােকেট মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ১টি ছােটো দল বায়রা গ্রামের কাছাকাছি একটি গুপ্ত স্থানে অবস্থান নেয়। তখন দুপুর আনুমানিক দেড়টায় । এমন সময় নিজস্ব গােয়েন্দা সূত্রে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকাযােগে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর রেশন দল আগমনের সংবাদ পাওয়া যায়।
ঐ ক্যাম্প অবস্থানে ছিলেন সুবেদার আব্দুল হক, যিনি শত্রু পরিস্থিতি ও ভূমির মূল্যায়ন করার পর তাৎক্ষণিকভাবে শক্রর উপর অ্যামবুশের পরামর্শ দেন। পরিকল্পনা মাফিক অ্যাডভােকেট মিজানুর রহমান ৯জন সহযােদ্ধা নিয়ে উল্লিখিত স্থানের দুই পাশে বিস্তৃত হয়ে ধলেশ্বরী নদীপথে শত্রু আগমনের জন্য সতর্ক অবস্থান নিয়ে থাকেন। বেলা ২টা। ৪০ মিনিটে শক্রর ৪টি নৌযান যখন অ্যামবুশে প্রবেশ করে, পরিকল্পনা মােতাবেক মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুর উপর প্রবল গুলি বর্ষণ করেন। পাকিস্তানি বাহিনীও পালটা গুলি ছুড়ে। একটানা ২ ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধের পর ২০জন। পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং তারা পরাজিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী কোনাে হতাহত ছাড়াই পরাজিত পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে ২০টি চাইনিজ অস্ত্র লাভ করে। সেগুলাের মধ্যে কয়েকটি এসএমজি ছিল।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – তৃতীয় খন্ড