You dont have javascript enabled! Please enable it!

লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় এলাকায়

দরজার সামনে এসে পড়েছে লড়াই। সীমান্তের ভারতীয় এলাকায় পাকিস্তানিরা ছুড়ছে মেসিনগানের গুলী। আহত হচ্ছেন ভারতীয় নাগরিক। সম্প্রতি এমনতর ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুওে এব ত্রিপুরায়। ইসলামাবাদেও কাছে কড়া চিঠি দিয়েছেন নয়াদিল্লী। সহজ পাত্র নন ইয়াহিয়া খান। তিনি মুর্তিমান শয়তান। অস্বীকার করবেন ইসলামাবাদ অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলাের কথা। তার বেতার যন্ত্র এখন চালাচ্ছে আজগবী প্রচার। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দুটি কোম্পানী নিশ্চহ্ন। করেছে পাক সৈন্যদল। তাদের তিনজনকে অপহরণ করেছে পাকিস্তানিরা। যথারীতি প্রতিবাদপত্র পাঠান হয়েছিল পশ্চিমা স্বৈরতন্ত্রীদেও কাছে। অস্ত্রসহ এদেও ফেরত পাঠাবার দাবীও জানিয়েছিলেন নয়াদিল্লী। দিল্লীর কথায় পাত্তা দেননি ইসলামাবাদ। এখন তারা আনছেন পাল্টা অভিযােগ এবং প্রচার করছেন পাক-চমুর অপূর্ব বীরত্ব কাহিনী। আকাশ পথে ভারতীয় বিমান নিয়ে বােম্বেটেগিরির সব দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন ইয়াহিয়া খান। নয়াদিল্লীর কড়া নােট গ্রাহ্য করেন নি তিনি। পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে নিষিদ্ধ হল ভারতের আকাশে পাক-বিমান চলাচল। টনক নড়ল ইসলামাবাদের। এ আকাশ খােলা পাবার জন্য তাঁদের দরবার চলছে দুনিয়ার সর্বত্র। চেপে যাচ্ছেন নষ্টামীর গােড়ার কথা। মিথ্যার বেসাতি এবং বিশ্বাসঘাতকতা পাকিস্তানের জন্মগত অভ্যাস। ১৯৪৭ সালে হানাদারদের পাঠালেন তারা কাশ্মীরে। প্রথমে সাজলেন ভাল মানুষ। অস্বীকার করলেন সব দায়িত্ব। প্রচণ্ড মার খাবার পর মুখ থেকে বেরিয়ে এল সত্য কথা। ভারত গেল রাষ্ট্রসঙ্ঘে। তার জের চলছে এখনও। ১৯৬৫ পাক-হানাদার আবার ঢুকল কাশ্মীরে। ভারতীয় জওয়ানদের হাতে খেল এলােপাথারী পিটুনী। পিন্ডির দিকে চেয়ে ওরা হকল বাজান! জান বাঁচাও। পাক-সৈন্যদের আক্রমণ করল ভারত। পাল্টা আঘাত হাললেন নয়াদিল্লী। লড়াই থামল লাহােরের কাছে ইছােগিল খালের পারে। রাষ্ট্রসঙ্ তখন হস্তক্ষেপ না করলে এবং তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে আজ ইয়াহিয়ার নাম শুনত না কেউ। পশ্চিম পাকিস্তান মানচিত্র থেকে মুছে যেত। অচল প্যাটন ট্যাঙ্কের নীচে দমবন্ধ হয়ে মরতেন আয়ুব খান। আর ভুট্টো যেতেন সহমরণে। পাক-বেতার এখনও বলছে যুদ্ধে তারা জিতেছে। আক্রমণকারী ভারতকে তারা হটিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ না ঘটলে এবং তাসখন্দ চুক্তি না হলে পাক-চমু দখল করত দিল্লী। লালকেল্লায় বসে চা খেতেন আয়ুব খান ।। এই জানােয়ারগুলাের কাছে প্রতিবাদ পত্র পাঠানাে বৃথা। ওতে শুধু সময় এবং কাগজের অপচয়। যতদিন যাবে ভারতীয় এলাকায় তত বেশী পাক-গােলাগুলী পড়বে। তা না হলে স্বাধীন বাঙলাদেশের বাঙালী নিধন সর্বাত্মক হবে না।
আয়ুবের উত্তরসূরী ইয়াহিয়া খান। এই ক্ষুদে পিপড়াটিরও ডানা গজাচ্ছে। বাঙালী মুক্তিযােদ্ধাদের বড় দুর্বলতা—ওদের মাথার উপর নেই বিমান আচ্ছাদন। ভারী কামান, বিমান, বিধ্বংসী কামান এবং শিক্ষিত সৈনিকের বড় অভাব। তার সুযােগ নিচ্ছে পাক-বাহিনী। গণহত্যা চালাচ্ছে বাঙলাদেশে। ওদের দৌরাত্ম ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চলগুলােতে। পাক গুলীতে কেন আহত হল ভারতের নাগরিকরা? জওয়ানদের হাতে তাে অস্ত্রের অভাব নেই। ইয়াহিয়া কি জানে না যে, তাঁর স্পর্ধিত ডানা পুড়িয়ে দিতে বেশী সময় লাগে না। ইসলামাবাদের ডিকটেটর হয়ত বুদ্ধিভ্রংশ ঘটেছে। ভারতীয় এলাকায় গুলী ছুড়ে তিনি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন—পশ্চিমারা মস্তবড় বীর। অস্ত্রহীন পূবের বাঙালী কোন্ ছর। সশস্ত্র ভারতও তাদের ভয়ে কাপে। মেসিনগানের সুরসুরি দিলেও নয়াদিল্লী সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণের সাহস পান না। শুধুমাত্র প্রতিবাদ জানিয়েই চুপচাপ বসে থাকেন। তিনি হয়ত ভাবছেন—বিনা শাস্তিতে এধরনের নষ্টামী চালিয়ে যেতে পারলে বাঙলাদেশের মনােবল ভেঙ্গে পড়বে। তাদের কবরের উপর তিনি তান্ডব নৃত্য করতে পারবেন। নয়াদিল্লী সবধান। পাক ডিটেকটর ঔদ্ধত্য সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে বাঙলাদেশে চলছে পাইকারী হারে নরহত্যা। প্রতিবাদের আন্তর্জাতিক ঝড় তােলার চেষ্টা করছে ভারত। সাফল্য খুবই সীমিত। এখন ভারতের উপরেই শুরু হয়েছে হামলা। এ অবস্থা বেশীদিন চলতে দেওয়া চলে না। সীমান্তের ঠিক ওপারে গণতন্ত্র উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাতমুখর দর্শক হয়ে থাকতে পারে না ভারত। নিজের সার্বভৌম মর্যাদা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই অন্ত্র নিতে হবে তাকে। ইয়াহিয়ার স্পর্ধার জবাব প্রতিবাদ নয়, কামানের জ্বলন্ত গােলা। সুযােগ এসে গেছে। স্বাধীন বাঙলাদেশ জীবন-মরণ সংগ্রামে লিপ্ত । ওদের কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিন নয়াদিল্লী। তারপর জ্বলুক আগুন। পুড়ে ছাই হােক ইসলামাবাদের ক্ষুদে পিপড়ার ডানা। এই সঙ্গে নিপাত যাক তার ঘাতক বাহিনী। সঙ্কল্পের দৃঢ়তা না থাকলে পাক-বিশ্বাসঘাতকতা এবং দৌরাত্ম থেকে রক্ষা পাবে না ভারত। বন্ধ হবে না বাঙলাদেশের রক্তস্রোত।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১৭ এপ্রিল ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!