হান্ডিয়াল-নওগাঁর যুদ্ধ
ভূমিকা
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার অন্তর্গত হান্ডিয়াল ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামকে। এলাকাবাসী হান্ডিয়াল-নওগাঁ হিসেবে জানে। গ্রামটি তাড়াশ উপজেলার ৬ মাইল পূর্বে অবস্থিত। সিরাজগঞ্জ জেলায় যতগুলাে যুদ্ধ হয়েছে, তার মধ্যে এ যুদ্ধ অন্যতম বড় যুদ্ধ। এ এলাকার প্রধান বাজার ছিল হান্ডিয়াল-নওগাঁ বাজার এলাকাটি ছিল চলন বিলের একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম। এখানে নৌকাই ছিল চলাচলের প্রধান মাধ্যম। এলাকাটি বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে মুক্তিযােদ্ধারা এখানে সংগঠিত হয়ে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিলেন। পটভূমি হান্ডিয়াল-নওগাঁ জায়গাটি চলন বিলের দুর্গম এলাকায় হওয়ার কারণে মুক্তিবাহিনী এখানে অত্যন্ত শক্তভাবে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া হান্ডিয়াল-নওগাঁয় ছিল খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (র.)-এর দাদা পীর হজরত জিলানী (র.)-এর অতি প্রাচীন সুপ্রসিদ্ধ মাজার শরিফ। যে কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস ও সামর্থ্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কতিপয় অতি উৎসাহী রাজাকারদের সহযােগিতার কারণে পাকিস্তানি বাহিনী এ দুর্গম জনপদে হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানিরা মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সমূলে। ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এ এলাকা আক্রমণ করে। জায়গার বর্ণনা ও ভূমির রূপ এ ইউনিয়নে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বিখ্যাত আউলিয়া, কামেল ভারতের খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (র.)-এর দাদা পীর হজরত হাজি শাহ শরিফ জিলানী (র.)-এর পবিত্র মাজার শরিফ এবং সুলতান হােসেন শাহ আমলের নির্মিত। মসজিদ। একসময় এটা ছিল রাজা ভানুসিংহের সাম্রাজ্য। বহু পুরাতন কীর্তির নিদর্শন এখনাে এখানে বিদ্যমান। নওগাঁর চারদিকে রয়েছে চলন বিল। দক্ষিণ দিকে রয়েছে নদী। হান্ডিয়াল-নওগাঁ বাজারটি এলাকার একমাত্র প্রধান বাজার হিসেবে সমধিক প্রসিদ্ধ।
যুদ্ধের সংগঠন
যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক. পাকিস্তানি বাহিনী: ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ২৫০জন সৈন্য, অস্ত্র। (১৮টি এসএমজি, ১২২টি জিএফ রাইফেল, ৪টি এমজি, ১৮টি। এলএমজি, হ্যান্ড গ্রেনেড)। খ, মুক্তিবাহিনী: ৩০০জন মুক্তিযােদ্ধা, অস্ত্র (২টি এসএমজি, ১৪৮টি | ৩০৩ রাইফেল, ১টি এমজি, ৬টি এলএমজি, ১টি ২ ইঞ্চি মর্টার, ১২টি এসএমসি)। পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থান নওগাঁ মাজারের পশ্চিম পার্শ্বে পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল। মাজার এলাকায় কাউকে না পেয়ে উত্তর দিকে হান্ডিয়াল-নওগাঁ বাজারের দিকে যাত্রা। শুরু করে। মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুর উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার খবর পেয়ে বাজারের চারদিকে অবস্থান গ্রহণ করেন। শত্রু যখন বাজার অতিক্রম করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়, তখন মুক্তিবাহিনী তাদের অতর্কিতে আক্রমণ। চালায়। যুদ্ধের বর্ণনা ১০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর শেলটার ছিল নওগাঁ থেকে ২ মাইল উত্তর দিকে প্রতাপ নামক জায়গায়। মুক্তিবাহিনীর শেলটার কোথাও ১ দিনের কিংবা ১ রাতের বেশি হতাে না। কিন্তু প্রতাপে তারা ২ দিন অবস্থান করে (মঙ্গল ও বুধবার)। পাবনার ভাঙ্গুড়া থানার ভাঙ্গুড়া হাই স্কুলের শিক্ষক আনিছুর রহমান (যিনি আধ্যাত্মিক লােক হিসেবে মুক্তিবাহিনীর কাছে পরিচিত) বুধবার রাতে বললেন, আগামীকাল মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে পড়বে। সাথে সাথে হাই কমান্ডের মিটিং বসল।
শেলটার চেঞ্জ করার জন্য শুরু হলাে প্রতিটি কোম্পানি, প্লাটুন ও সেকশনের নৌকা ফল-ইন করা। পানি কিছুটা কমে। যাওয়ায় নৌকা টেনে নিচে নামিয়ে শেলটার মাস্টারের নির্দেশমতাে নৌকা ভাসিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা নওগাঁ অভিমুখে রওনা হলেন। রাত ত্রি-প্রহরের সময় নওগাঁ হাটখােলায় এসে নৌকা থামল এবং যার যার সুবিধামতাে অবস্থানে কোম্পানি অধিনায়করা অবস্থান নিলেন। কিন্তু সবাইকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হলাে। বিশেষ করে, গার্ড অধিনায়ক হােসেন আলী প্রতিটি নৌকায় এবং যেখানে যেখানে সেন্ট্রির প্রয়ােজন সেখানে সেন্ট্রি বসিয়ে লুঙ্কর রহমান অরুণের কাছে রিপাের্ট করলে তিনি ফাইনাল সেন্ট্রি পরিদর্শন করে সােহরাব হােসেন (তৎকালীন সিরাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ভিপি) ও আব্দুল লতিফ মির্জাকে ‘সব ঠিক আছে’ রিপাের্ট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। যথানিয়মে ভােরে প্রতিদিনের মতাে কোম্পানি অধিনায়করা তাদের কোম্পানির প্যারেড-পিটি শুরু করেছেন। প্রশিক্ষণ যথারীতি চলছে হঠাৎ করে আব্দুল লতিফ মির্জা সাহেব লুৎফর রহমান অরুণকে জরুরি তলব করে একটি চিরকুট পড়তে দিলেন, যাতে লেখা ছিল: লতিফ, বহুসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিবাহিনীর উপর অ্যাটাক করার জন্য আসছে।’ চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন। সহযােদ্ধা হাজি আব্দুস সাত্তার। উনি ফজরের নামাজ পড়ার জন্য নওগাঁ মসজিদে যান এবং ওখানে গিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য দেখে লােক মারফত তিনি এ চিরকুট পাঠান। লুৎফর রহমান অরুণের চিঠি পড়া শেষ হতে না হতেই নওগাঁ মাজারের কাছ থেকে অটোম্যাটিক হাতিয়ারের শব্দ শােনা গেল। অতঃপর যুদ্ধ শুরু। মুক্তিযােদ্ধা অরুণ, আব্দুল লতিফ মির্জা ও সােহরাব হােসেনসহ সবাই নৌকা থেকে নেমে পজিশন নিলেন। সারা নওগা গুলি ও মটারের আওয়াজে কাপতে লাগলাে। মুক্তিবাহিনী ছেলেদের মুহুর্মুহু ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির আওয়াজে নওগাঁর মাটি-আকাশ-বাতাস কাঁপছিল।
মুক্তিবাহিনী নওগাঁ মাজার থেকে আরম্ভ করে উত্তর দিকে প্রায় ১ মাইলের মতাে জায়গা নিয়ে একটি অর্ধচন্দ্র যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। শত্রুপক্ষ ধানক্ষেতের মধ্য থেকে ফায়ার করছে। মুক্তিবাহিনী পুকুরের কান্দি, আইল ও গাছের পিছন থেকে ফায়ার করছিল। মুক্তিবাহিনীর আব্দুল লতিফ মির্জা ২ নম্বর কোম্পানি অধিনায়ক বিনয় বাবুকে শত্রুপক্ষের এমএমজি’র প্রতি মর্টার শেল নিক্ষেপ করার অনবরত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও মুক্তিবাহিনীর কাছে শুধু ১টি ২ ইঞ্চি মর্টার এবং শেলও কম ছিল, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে কোনাে শেলই মিস হচ্ছিল না। অন্যদিকে, শত্রুপক্ষ বেশ কয়েকটা মটার একসঙ্গে মুক্তিবাহিনীর দিকে নিক্ষেপ করে চলেছে। কিন্তু ওদের সব শেল পানির মধ্যে পড়ছে। বিডিআর-এর মােকাদ্দেস ব্রিটিশ এলএমজি নিয়ে শত্রুর এলএমজিকে ঠেকানাের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত মাঝে মাঝে ব্যারেল গরম হয়ে যাচ্ছে। মােকাদ্দেস নিজের গায়ের গেঞ্জি খুলে ব্যারেল সাফ করে ঠান্ডা করে আবার ফায়ার ‘ করছেন। লুৎফর রহমান অরুণ এবং সােহরাব হােসেনের কাছে চাইনিজ। এসএমজি। এক প্রান্তে মির্জা খলিল, আজিজ মির্জা পান্না, আতাউর, আমজাদ হােসেন মিলন, ছামাদ, খােরশেদ, শহিদুল্ল ও কাইঞ্চা ছিলেন। তারা জোরে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিচ্ছিলেন। লুৎফর রহমান অরুণ সাথে গার্ড অধিনায়ক হােসেন আলী ও কোম্পানি অধিনায়ক বাছেদসহ অনেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছিলেন। অরুণের লক্ষ্য ছিল শুধু এমএমজি’র প্রতি। ভাের থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
সকাল ১০টা বাজার পরও কোনাে ফল হচ্ছে না। যদিও শত্রুপক্ষ। কিছুটা নিস্তেজ, কেননা ধানক্ষেতে পানি থাকায় ওদের পায়ের বুট কাদায় আটকে যাচ্ছে, যার ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ঠিকমতাে পজিশন চেঞ্জ করতে পারছে না। হঠাৎ আকাশের দিকে প্লেনের আওয়াজ শােনা গেল। মুক্তিবাহিনীর উপর দিয়ে ২টি পাকিস্তানি জেট ফাইটার প্লেন চলে গেল। পরে জানা গেছে, ওরা ভুল করে তখনকার মহকুমা নওগাঁয় গিয়ে বােম্বিং করেছে। অলৌকিকভাবে সবাই বেঁচে গেল। প্লেন চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শত্রুপক্ষ একেবারেই নিস্তেজ হয়ে। গেল, শুধু মাঝে মাঝে ২-১টি ফায়ার আসছে। অরুণ, মােকাদ্দেস ও মােস্তফা একত্রে এমএমজি দখল করার জন্য ডিস্ট্রিক্ট বাের্ডের রাস্তার পাশ দিয়ে সাইড। রােলিং করে অগ্রসর হতে লাগলেন। একেবারে এমএমজি’র ১০ হাতের মধ্যে প্রবেশ করে তারা ২জন এমএমজি চালককে মারার জন্য ফায়ার করলেন কিন্তু ক্লিক আওয়াজ হলাে, গুলি বের হলাে না। গুলি নেই বুঝতে পেরে প্রাণে বাঁচার জন্য সবাই পিছন দিকে ছুটলেন। ততক্ষণে এমএমজি চালক দেখে ফেলেছে এবং মুক্তিবাহিনীকে তাক করে ব্রাশ ফায়ার করছে। সৌভাগ্যক্রমে সবাই বেঁচে গেলেন। দুপুর ১২টার দিকে শত্রুপক্ষ আবার ফায়ার শুরু করেছে।
আস্তে আস্তে সবাই অগ্রসর হয়ে যে গ্রামে ওরা শেলটার নিয়েছিল, সে গ্রামে উঠে পড়ল। যাওয়ার সময় পথিমধ্যে এমএমজি’র চালক ২জনকে দেখা গেল মুক্তিযােদ্ধার মটারের শেলে মৃত্যুবরণ করেছে। আশপাশে শুধু খাকি পােশাকের লাশ এবং এদের মধ্যে যারা জীবিত ছিল, তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা ক্যাপ্টেন সেলিমকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন এবং এদেরকে পিছনে আব্দুল লতিফ মির্জার কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর কৌশলগত কারণে ওদের নিশ্রুপ করানাে হয়। যুদ্ধের পর পাশের গ্রামের লােকজন প্রকাশ্যে ১জন পাকিস্তানি সেনাকে ধরে মুক্তিবাহিনীর কাছে দিয়ে যায়। তার নাম ছিল আসলাম, বাড়ি পাকিস্তানের ঝিলামে। মুক্তিবাহিনী ৩ দিন পর এ পাকিস্তানি সেনাকে মেরে ফেলে। ঐ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৬০-৭০জন সৈন্য নিহত হয়েছে। ক্যাপ্টেন সেলিমসহ ৯জনকে জীবিত ধরা হয়েছে। প্রায় ৫০-৭০জন রাজাকারকে জনগণ পিটিয়ে মেরেছে।
যে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিহত হয়েছিল তাদেরকে পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনারা উল্লাপাড়া হাসপাতালের সামনে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিল। ঐ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে মুক্তিযােদ্ধারা এলএমজিসহ বহু অটোম্যাটিক হাতিয়ার, মর্টার ও চাইনিজ রাইফেলসহ প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করেন। এ যুদ্ধে কোনাে মুক্তিযােদ্ধা শহিদ হন নি। শুধু ৩ নম্বর অধিনায়ক আব্দুস ছালাম (ছদ্মনাম: ওয়াসিম বাবু) ও প্লাটুন অধিনায়ক কাইঞ্চা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। মুক্তিবাহিনীর জন্য এ যুদ্ধ ছিল একটি বড়াে রকমের সফল যুদ্ধ। সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এ যুদ্ধে সেনাবাহিনীর সদস্য করপােরাল লুত্যর রহমান অরুণ নিজের জীবনকে বাজি রেখে বীরের মতাে লড়াই করেছেন। বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের কারণ ক, যুদ্ধে বিজয়ের কারণ ছিল মুক্তিবাহিনীর সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও চারপাশের ধানক্ষেত, যা আড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
খ, এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুবাহিনীকে সম্মুখযুদ্ধে পরাস্ত করেন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পরিচিত এলাকার সম্পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করেছিল। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযােগিতার কারণে সব পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সমূলে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কারণ ক, দুর্গম এলাকা সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকা সত্ত্বেও রাজাকারদের পরামর্শে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আক্রমণ পরিচালনা করে। খ, প্রখ্যাতি হজরত পীর জিলানী (র.)-এর মাজারকে অপমান করায়। ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষীপ্ত হওয়া। গ, জনসাধারণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরােধিতা করার ফলে এবং সাহায্য সহযােগিতা মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে থাকার কারণে। শিক্ষণীয় বিষয় ক, যে-কোনাে যুদ্ধে কাক্ষিত সফলতা পেতে হলে এলাকা সম্পর্কে। পরিষ্কার ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। খ, যুদ্ধে জয়ের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে জনসাধারণের আন্তরিক ও সার্বিক সহযােগিতা। শত্রু যতই দুর্বল ও কম শক্তিশালী। হােক না কেন, শত্রুকে শত্রু হিসেবে গণ্য করা উচিত।
উপসংহার
পরিচিত এলাকা এবং মুক্তিযােদ্ধাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা এ যুদ্ধে বিজয়ের একটি বড়াে কারণ। এ ছাড়া জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযােগিতার কারণে মুক্তিযােদ্ধারা। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সমূলে ধ্বংস করতে সক্ষম হন। যুদ্ধে সুষ্ঠু। পরিকল্পনা যুদ্ধের জয় অর্জনে বিশেষভাবে প্রযােজ্য।
মাঝগ্রামের যুদ্ধ
ভূমিকা
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাবনার মাঝগ্রাম যুদ্ধ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বাঙালি মুক্তিকামী মানুষের এক মরণপণ লড়াই। পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর যে নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে, তারই সাক্ষী মাঝগ্রাম যুদ্ধ। পটভূমি ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ঈশ্বরদী থানার প্রধান নুরুজ্জামান বিশ্বাসের নেতৃত্বে সব কর্মকর্তা এক সভায় পরিকল্পনা নেন যে, মুলাডুলি ইউনিয়নের মাঝগ্রামে। রাজাকাররা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার, বাড়িঘর জ্বালানাে, গরু-ছাগল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করা হবে। সে মােতাবেক ১২ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী গ্রামে মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান নেন। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক, শত্রুবাহিনী: রাজাকারসহ ৪০জন। খ. মুক্তিবাহিনী: ৩০জন। যুদ্ধের বর্ণনা। ১২ নভেম্বর পরিকল্পনা মােতাবেক মুলাডুলি ইউনিয়নের মাঝগ্রামে মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান নেন। মুক্তিযােদ্ধারা মুলাডুলি রাজাকার ক্যাম্পের রেকিসহ যাবতীয়। কার্যক্রম শেষ করে ১৩ নভেম্বর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। আক্রমণের জন্য সবকিছু শেষ করার পর রাজাকাররা হঠাৎ মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করে, এতে মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল মান্নান শহিদ হন। মুক্তিযােদ্ধারা ঐ সময় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার কারণে তাদের উপর প্রতি-আক্রমণ করা সম্ভব হয় নি। বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা। মুলাডুলির মাঝগ্রামের এ যুদ্ধ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মুক্তিযােদ্ধাদের রাজাকার ক্যাম্পে রেকির গােপনীয়তা ছিল না। ফলে মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই রাজাকাররা মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করে, এতে মুক্তিযােদ্ধারা হতবিহ্বল হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় তারা ত্বরিত সুসংগঠিত হতে না পারার কারণে প্রতি-আক্রমণ রচনা করা তাদের দ্বারা সম্ভব হয় নি। তাছাড়া, রাজাকারেরা এলাকার অধিবাসী হওয়ায় তারা মুক্তিযােদ্ধাদের সব গতিবিধির উপর সার্বক্ষণিক নজর রেখে তাদের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড
কুইজ
প্রশ্ন
প্রতাপ নামক জায়গাটি নওগাঁ থেকে কোন দিকে?
ক) উত্তর দিকে
খ) দক্ষিণ দিকে
গ) পূর্ব দিকে
ঘ) পশ্চিম দিকে।
(কুইজের নিয়মঃ আপনার উত্তর, নাম আর যে মোবাইল নাম্বারে রিচার্জ পাঠানো হবে সেই নাম্বারটি এই পোস্টের কমেন্টে দেবেন। প্রিপেইড বা পোস্ট পেইড হলেও উল্লেখ করবেন। প্রথম ১০ জনকে মোবাইলে ২০ টাকা রিচার্জ পাঠানো হবে। আমাদের আর্থিক সঞ্চয় কম থাকায় এবং ছাত্ররা যাতে বেশী মাত্রায় কুইজের দিকে ঝুঁকে না যায় সেকারণে টাকার পরিমাণ কম রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ার প্রতি আগ্রহী করার উদ্যেশ্যে পোস্টের সাথে কুইজ রাখা হয়েছে। প্রথমে সকল কমেন্ট গোপন রাখা হবে যাতে একজনেরটা দেখে আরেকজন কমেন্ট না করে। কুইজের শেষে কমেন্ট উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। )