ব্ৰহ্মগাছার যুদ্ধ
ভূমিকা
১৯৭১ সালের জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্রহ্মগাছার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ব্রহ্মগাছা গ্রামটি সিরাজগঞ্জ শহর থেকে আনুমানিক ২০ কিলােমিটার দূরে রায়গঞ্জ থানায় এবং হাট পাদাসী ইউনিয়নে অবস্থিত। পটভূমি শত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছিল। মুক্তিবাহিনীর অবস্থান রাজাকার কর্তৃক চিহ্নিত হওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করতে এবং আত্মরক্ষার্থে মুক্তিবাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জায়গার বর্ণনা ও ভূমির রূপ ঘটনাস্থলের মধ্য দিয়ে ইছামতি নদী প্রবাহিত। এ নদীর উত্তর পার্শ্বে পাকিস্তানি বাহিনী এবং দক্ষিণ পার্শ্বে মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিলেন। নদীর দক্ষিণ পার্শ্বে ছিল কাঁচা সড়ক। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক, পাকিস্তানি বাহিনী: ৩ প্লাটুন। খ. মুক্তিবাহিনী: ৩ কোম্পানি (প্রায় ৪২০জন), অস্ত্র (চাইনিজ রাইফেল, চাইনিজ এসএমজি, এসএলআর, ব্রিটিশ স্টেনগান, .৩০৩ রাইফেল, পিস্তল, ২ ইঞ্চি মর্টার)। শত্রুপক্ষের অবস্থান। শত্রু সিরাজগঞ্জ ক্যাম্প এলাকা থেকে ঐ স্থানে আক্রমণের উদ্দেশ্যে গমন করে। নদীর দক্ষিণ পাড়ে কাঁচা সড়ক, যেটাকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়; অন্যদিকে, মুক্তিবাহিনী কাশবনের ভিতর লুক্কায়িত বাংকারে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর পালটা আক্রমণ করে।
যুদ্ধের বর্ণনা
মুক্তিযােদ্ধা দলটি দ্রঘাটে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর জুনের শেষে কিংবা জুলাইয়ের প্রথম দিকে ব্রহ্মগাছায় চলে যায় এবং রৌমারী থেকে কিছু সদস্য ব্রহ্মগাছায় চলে আসে। ৪২টি নৌকার মাধ্যমে ইছামতি নদীপথে তারা এ এলাকা মুক্ত রাখে। এর মধ্যে কিছু নতুন সদস্য অস্ত্র চালনা শিক্ষা গ্রহণ করে। ঘটনার ২ দিন পূর্বে সৈনিক রফিক ও সঙ্গে আরও ২জন ইছামতি নদীর উত্তর-পূর্ব দিকে ওপিতে অবস্থান করছিল। ১জন রাজাকার সদস্য ব্রহ্মগাছা গ্রামে আসে তার স্ত্রীকে নেয়ার জন্য। সৈনিক রফিক ঐ রাজাকার সদস্যকে ধরে ফেলেন নৌকায় ওঠার সময়। তাকে বেঁধে রাখা হয় এবং এক ফাকে সে পালিয়ে সিরাজগঞ্জ এসে সেখানে অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীকে খবর দেয়। পরদিন মুক্তিযােদ্ধারা রায়গঞ্জ থানার বগাদহ নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। ভােরের দিকে খবর এলাে, পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থান থেকে ৩ কিলােমিটার দূরে একত্র হচ্ছে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ করার জন্য। পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জা, গাজী লুৎফর রহমান (অরুণ) এবং ২ নম্বর কোম্পানি অধিনায়ক ইপিআর-এর। মােজাহারুলকে ডাকলেন এবং যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে আলােচনা করে সিদ্ধান্ত হলাে।
যেহেতু পাকিস্তানি সেনারা ব্ৰহ্মগাছা নদীর ওপারে প্রতিরক্ষা নিয়েছে এবং শক্তি বৃদ্ধি করছে সেহেতু মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে রায়গঞ্জে আব্দুল খালেক মন্টু ভারত থেকে আনা ২ ইঞ্চি মর্টারসহ মােজাহারুলের ১ প্লাটুন, গাজী লুত্যর রহমানের (অরুণ) ১ প্লাটুন এবং গার্ড অধিনায়ক হােসেন আলী ১ সেকশন যােদ্ধা নিয়ে পজিশনে থাকবেন। আব্দুল লতিফ মির্জা নির্দেশ দেন, ক্যাম্পের সিএনসি সােহরাব আলী সরকারসহ ১ নম্বর কোম্পানির অধিনায়ক সেনাবাহিনীর সদস্য বাকুয়ার মাে. সামাদ তার কোম্পানি নিয়ে পরে যােগ দেবেন এবং অন্য কোম্পানিগুলাে এখানে থাকবে উধ্বতন অধিনায়কের নির্দেশে পরবর্তী কার্যক্রম চলবে। সিদ্ধান্ত শেষে সবাই পজিশনে যাওয়ার জন্য দৌড়াতে শুরু করেন।
হােসেনের সেকশনকে মাঝখানে রেখে বাকি ২ প্লাটুন দুই দিকে অবস্থান নিয়ে শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করে। মাঝখান থেকে গার্ড অধিনায়ক হােসেন চেঁচিয়ে উঠলেন, ঐ যে শালারা… বলেই সারাজীবনের আক্রোশ মেটানাের জন্য ফায়ার শুরু করে দিলেন। তিনি একসময় এয়ার ফোর্সে চাকরি করতেন। লুৎফর রহমান (অরুণ) ফায়ার বন্ধ করতে নির্দেশ। দিলেন, কেননা নদীর এ পাড়ে মুক্তিবাহিনী আর ও পাড়ে পাকিস্তানি বাহিনী, তাই যুদ্ধে কেবল গুলি নষ্ট হবে। ২ নম্বর কোম্পানি অধিনায়ক মােজাহারুলের কাছে ২ ইঞ্চি মর্টার ছিল। মুক্তিবাহিনী পর্যবেক্ষণ করছিল শত্রু কোন স্থান থেকে ভারি অস্ত্র চালাচ্ছে। যত গুলিই চালানাে হােক না কেন, কারও তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল না, কাজেই একমাত্র মর্টারই ছিল ভরসা। তাই শক্রর ভারি অস্ত্রের বিরুদ্ধে মর্টারের শেল নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হলাে। কিন্তু প্রথম গােলা ফুটলাে না, কারণ সেটা একটু ভেজা ছিল। দ্বিতীয় শেল নিক্ষেপ করা হলে প্রচণ্ড শব্দে লক্ষ্যবস্তুতে ছুটে গেল। এতে শত্রুর অবস্থানে আঘাত করলেও ক্ষয়ক্ষতির সফলতা বােঝা যায় নি, তবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেল। মুক্তিযােদ্ধারা চেষ্টা করেও শত্রুর কিছুই করতে পারছিলেন না, শত্রুরাও না। গােলাবারুদের অপ্রতুলতার কারণে মুক্তিযােদ্ধাদের তরফ থেকে। ২-১টি গুলি ছােড়া হয়। শত্রুপক্ষ লাগাতার ঝুঁকে ঝাঁকে গুলি ছােড়ে। একপর্যায়ে মর্টার শেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রাতে আবারও জরুরি ভিত্তিতে লতিফ মির্জার নেতৃত্বে আলােচনা সভা হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। সশস্ত্র বাহিনীর অবদান।
মুক্তিযােদ্ধা লুৎফর রহমান অরুণ (যিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে করপােরাল, নম্বর ৬২৭০৭৭৭, ৩০ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন) এবং সৈনিক মাে.। রফিক এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিশ্লেষণ/বিজয়ের কারণ ও পর্যালােচনা এ যুদ্ধে পুরােপুরি বিজয় চিহ্নিত হয় নি তবে যুদ্ধের বিশ্লেষণ নিম্নরূপ: ক, এ যুদ্ধে মর্টারের ব্যবহার শত্রুকে যথেষ্ট পরিমাণে ঘায়েল করতে সহায়তা করে, যেখানে ক্ষুদ্রান্ত্রের ব্যবহারে কোনাে ফলাফল অর্জিত হয় নি। শত্রুবাহিনীর উপর মুক্তিযােদ্ধাদের তীব্র আক্রোশ ও তার ফলাফল পাকিস্তানি বাহিনীকে অবস্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। গ, মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর মাঝখানে নদীর অবস্থান প্রাকৃতিকভাবে শত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করে। শিক্ষণীয় বিষয়। ক, উচ্চ প্রক্ষেপণকারী অস্ত্রের ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে সহায়তা করে। খ, ‘শত্রু ধ্বংস করে জয় অনিবার্য’ এ নীতি মুক্তিবাহিনীর মনােবলকে বাড়িয়ে দিয়েছে। গ, প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক অনেক সময় সহায়তা প্রদান করতে পারে। উপসংহার যে-কোনাে যুদ্ধের জন্য কৌশল প্রয়ােগ করা হয় এবং এর তাৎপর্য বিশাল। যুদ্ধের ময়দানে এর প্রয়ােগ যত স্পষ্ট হবে ফলাফল তত ভালাে হবে। যুদ্ধের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক পরিষ্কার এবং আবেগ দমন করতে হবে। এ যুদ্ধে প্রাকৃতিক বাধা এবং উচ্চ প্রক্ষেপণকারী অস্ত্র যুদ্ধে জয়লাভের জন্য বহুলাংশে প্রশংসার। দাবিদার।
তাড়াশ থানা রেইড
ভূমিকা
সিরাজগঞ্জ জেলায় মুক্তিযােদ্ধাদের সফল রেইডগুলাের মধ্যে তাড়াশ থানা রেইডটি ছিল বিশেষ উল্লেখযােগ্য। এ রেইডের মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধারা শুধু অনেক অস্ত্র ও গােলাবারুদই দখল করে নি, বরং এ সফল রেইডের মাধ্যমে তাদের মনােবলও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণে। মুক্তিযােদ্ধাদের নামে মাত্র কিছু ৩০৩ রাইফেল ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রশিক্ষিত মুক্তিযােদ্ধাদের প্রয়ােজনীয় অস্ত্র ও গােলাবারুদের জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাড়াশ থানার উপর রেইড করা হয়।
পটভূমি
তাড়াশ থানাটি চলন বিলের কূল ঘেঁষে অবস্থিত বিধায় মুক্তিযােদ্ধারা এটিকে রেইড করার পরিকল্পনা করেন। থানায় কিছুদিন পূর্বে পাকিস্তানি বাহিনী এসে বাংকার প্রস্তুত করে প্রচুর অস্ত্র ও গােলাবারুদ মজুদ করে। মুক্তিযােদ্ধারা তাদের অতিপ্রয়ােজনীয় যুদ্ধের সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য এ থানাকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে স্থির করেন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় বর্ষা মৌসুমে নৌকার সাহায্য নিয়ে এ রেইডের পরিকল্পনা করা হয়। জায়গার বর্ণনা ও ভূমির রূপ তাড়াশ থানাটি শহরের পশ্চিম-উত্তর কোণে সম্পূর্ণ একটি আলাদা এলাকায় অবস্থিত। থানাটিকে বর্ষাকালে একটি দ্বীপের মতাে মনে হয়। প্রধান সড়ক থেকে একটিমাত্র ঢােকার রাস্তা, যেটি থানার মধ্যে থেকে গ্রামের দিকে চলে গিয়েছে। পশ্চিম দিকে শুধু চলন বিল। উত্তর ও পূর্ব দিকে গ্রাম এলাকা। আর দক্ষিণ দিকে তাড়াশ প্রধান সড়ক। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক. পাকিস্তানি বাহিনী: পুলিশ ও রাজাকার ৩৫জন, অস্ত্র (১৭টি রাইফেল, ৫টি এসএলআর, ২টি এলএমজি, ৮টি এসএমসি)। খ. মুক্তিবাহিনী: ১৫জন, অস্ত্র (২টি এলএমজি, ৫টি এসএমজি, ১০টি রাইফেল, ৫১টি হ্যান্ড গ্রেনেড)।
শত্রুপক্ষের অবস্থান
শত্রুপক্ষের অবস্থান ছিল তাড়াশ থানার পুলিশ ক্যাম্প। এখানে পুলিশ ও রাজাকাররা একত্রে চতুর্মুখী প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিল। জানা যায়, থানার ছাদের উপর শত্রু একটি এলএমজি পােস্ট স্থাপন করেছিল। যুদ্ধের বর্ণনা পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের কলেবর দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলার স্বাধীনচেতা যুবক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষসহ অনেক বৃদ্ধ ব্যক্তিও মাতৃভূমি। বাংলাদেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দলে দলে। মুক্তিযােদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে লাগলেন। এভাবে ধীরে। ধীরে প্রতিদিন পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরে ভিড় জমতে থাকে। তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করার প্রয়ােজনীয়তাকে অনুভব করছিলেন। যার ফলে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রয়ােজনীয় অস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই হাই কমান্ড জরুরি মিটিং ডেকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, এখন থেকে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকাররা যে যেখানে সশস্ত্র অবস্থায় থাকবে, তাকে সেখানেই খতম করে তার অস্ত্র সংগ্রহ করে নেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত মােতাবেক মুক্তিযােদ্ধারা তাড়াশ থানায় রেইড করে অস্ত্র ও গােলাবারুদ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
খুব সম্ভব ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় হান্ডিয়াল নওগাঁ এলাকা থেকে প্রায় ১ কোম্পানি মুক্তিযােদ্ধা বিকাল ৫টার দিকে নৌকাযােগে তাড়াশ থানা অভিমুখে রওনা হন। নৌকাগুলাে আগে থেকেই বিভিন্ন উপদলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। আর ঠিক সেভাবেই যে যার অবস্থানের দিকে এগিয়ে চলছিল। সন্ধ্যার পরই চারদিকে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার। ঠিক সে সময় মুক্তিযােদ্ধাদের সমস্ত নৌকা তাড়াশ থানাসংলগ্ন রাস্তায় ভিড়ল। চোখের পলকে মুক্তিযােদ্ধারা থানার সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে যার যার অবস্থান নিলেন। এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল যে, কে কোথায় পজিশন নেবেন। থানার ভিতর থাকা পুলিশরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোম্পানি অধিনায়ক অস্ত্রের কোত দখল করে নেন। ওখানে এক পুলিশ গুলি করার চেষ্টা করলে তাকে সেখানেই খতম করে দেওয়া হয়। তখনই প্রথম গুলির আওয়াজ শােনা যায়। তবে সবাই বুঝতে পারলেন যে, এটা নিজেদের বাহিনীর গুলির শব্দ। এ অবস্থায় মুক্তিযােদ্ধারা যার যার অবস্থানে প্রস্তুত থেকে ফায়ার না করার নির্দেশ। মেনে চললেন, যাতে করে রাতের অন্ধকারে নিজেদের গুলিতে নিজেরা মারা না। যান। এ অবস্থায় মুক্তিযােদ্ধারা তাদের পূর্বপরিকল্পনা মােতাবেক পুলিশ ও রাজাকারসহ সমস্ত অস্ত্র ও গােলাবারুদ হস্তগত করেন।
পুলিশ ও রাজাকাররা মুক্তিযােদ্ধাদের সব ধরনের সাহায্য-সহযােগিতা করবে এবং যাদের সামর্থ্য আছে, তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার নিশ্চয়তা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওরা সবাই জীবনে বেঁচে যাওয়ায় আনন্দে কেঁদে ফেলে। প্রায় ২১-২২টির মতাে ৩০৩ রাইফেল এবং বেশ কিছু গােলাবারুদ উদ্ধার করা হলাে। সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এ রেইডে সেনাবাহিনীর সদস্য করপােরাল লুৎফর রহমান (অরুণ) বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। মূল পরিকল্পনায় তার যথেষ্ট অবদান আছে এবং কার্যকর পর্বে তাঁর অপরিসীম ধৈর্য ও বীরত্বের কারণে রেইডটি সফল হয়েছিল। বিশ্লেষণ/বিজয়ের কারণ ও পর্যালােচনা ক. মুক্তিযােদ্ধাদের পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা সম্পূর্ণ সঠিক ছিল, যে কারণে মুক্তিযােদ্ধারা প্রধান সড়ক ব্যবহার না করে কার্যকরী দল থানা এলাকায় শক্রর অজান্তে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। খ, থানা রেইড করার জন্য কার্যকরী দল প্রহরীদেরকে নিঃশব্দে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। গ. রেইড পরিচালনা করার জন্য যে পরিমাণ দক্ষতার প্রয়ােজন, তা তারা দেখাতে সক্ষম হয়েছিল। শিক্ষণীয় বিষয়। ক, রেইডের মতাে একটি কঠিন অপারেশন পরিচালনা করার জন্য দরকার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও মানসিক শক্তি। প্রয়ােজনীয় অস্ত্র ও গােলাবারুদ এ অপারেশনকে সফল করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। | খ. রেইডের জন্য সময় ও আবহওয়া বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ রেইড তারই একটি জলন্ত উদাহরণ। উপসংহার এ যুদ্ধ রণকৌশলের চমৎকার একটা উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদন করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। একজন কমান্ডারের যেভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া উচিত, করপােরাল লুঙ্কর তা যথাযথভাবে পালন করেছেন। রণকৌশল পরিকল্পনা, দিকনির্দেশনা ও কার্যসম্পাদনের চমৎকার। সমন্বয় ঘটিয়ে মুক্তিবাহিনী এ যুদ্ধে বিনা বাধায় জয়লাভ করে।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড