You dont have javascript enabled! Please enable it! মাধবপুরের যুদ্ধ - দাশুড়িয়ার যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
মাধবপুরের যুদ্ধ
ভূমিকা
যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ঈশ্বরদী থানার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশগণ, ছাত্র-জনতাকে একত্রিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে এবং তারা বন্দুক, .৩০৩ রাইফেল, .২২ বাের রাইফেল ও হাতবােমাসহ সার্বক্ষণিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে।
পটভূমি
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ সকাল ১০টার সময় রাজশাহী থেকে পাবনায় অবরুদ্ধ। পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে উদ্ধারের জন্য অন্য সৈন্যরা দাশুড়িয়া হয়ে পাবনা সদরে প্রবেশ করে এবং ২৯ মার্চ আনুমানিক সকাল ১০টার সময় জানা যায় যে, পাবনা মানসিক হাসপাতালের পাশ দিয়ে মাধবপুরের দিকে পাকিস্তানি সেনারা আসছে। সে সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকশীতে শামসুর রহমান শরীফ (দিলু), ইউসুফ আলী চেয়ারম্যান, কাজী সদরুল হক সুদা, আব্দুল বারী সরদার, ইয়ার বক্স, সৈয়দ জাফর সাজ্জাদ ও খিচুর নেতৃত্বে প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা লাঠিসোটা ও বন্দুকসহ মাধবপুরে রওনা দেয়। আনুমানিক ১টার সময় তারা মাধবপুর বটতলায় পৌছে বটগাছের নিচে এবং আশপাশের বাড়িঘরে অ্যামবুশ পাতে। পাকিস্তানি সেনারা বটতলা পৌছানাের সাথে সাথে প্রতিরােধ যুদ্ধ শুরু হয়।
যুদ্ধের সংগঠন
যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক. পাকিস্তানি বাহিনী: ১ কোম্পানি (+), পাকিস্তানি বাহিনীর ১১টি ট্রাক, ১টি জিপ গাড়ি। তাতে পাকিস্তানি সেনা আনুমানিক ২০০জন। খ, মুক্তিবাহিনী: ছাত্র-জনতা আনুমানিক ২ হাজার, অন্যান্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ও আনসার প্রায় ৫-১০জন।
যুদ্ধের বর্ণনা
পরিকল্পনা মােতাবেক ছাত্র-জনতা ২৯ মার্চ মাধবপুর বটতলায় ও বাড়িঘরের আশপাশের বিভিন্ন গাছের নিচে অ্যামবুশে অংশ নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী পাবনা থেকে মেজর ইসলামের নেতৃত্বে হাসপাতালের পাশ দিয়ে মাধবপুরে পৌছায়। পৌছানার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-জনতা পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ করে এবং প্রচণ্ড যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এ যুদ্ধে ঈশ্বরদী থানার ৭জন শহিদ হন। অতঃপর পাকিস্তানি সেনারা দাশুড়িয়ার দিকে চলে যায়।
বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা
পাকিস্তানি সেনারা মূলত রাজশাহী সেনানিবাস থেকে পাবনায় তাদের অবরুদ্ধ সেনাদের সহায়তার জন্য আসে যায় এবং সহায়তা শেষে তারা রাজশাহী। অভিমুখে রওনা দেয়। পথিমধ্যে মাধবপুর নামক স্থানে মুক্তিকামী জনতা প্রতিরােধ করে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের রাজশাহী সেনানিবাসে যাওয়া বন্ধ করতে না পারলেও মুক্তিকামী জনতা তাদের বেশ ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হয়। এতে জনতার মধ্যে ৭জন ঘটনাস্থলে শহিদ হন। যুদ্ধের প্রারম্ভে এ ধরনের প্রতিরােধ এবং সুসংগঠিত সেনাদলের কিছুটা ক্ষতিসাধন তখন জনতার জন্য। ছিল বিরাট উৎসাহের নিয়ামক। পরবর্তী সময় এ সফলতা জনতার মুক্তিবাহিনীতে সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
দাশুড়িয়ার যুদ্ধ
ভূমিকা
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পর ঈশ্বরদী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরােধ করা হবে। যে-সব রাস্তা দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদীতে প্রবেশ করতে পারে এমন সব রাস্তা প্রতিরােধ করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ সকাল ১০টার দিকে জানা যায়, পাবনায় অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধারের জন্য রাজশাহী সেনানিবাস থেকে উদ্ধারকারী পাকিস্তানি সেনাদল দাশুড়িয়া হয়ে পাবনা সদরে চলে গেছে এবং ২৯ মার্চ সকালে পাবনা থেকে পাকিস্তানি সেনারা মাধবপুর হয়ে দাশুড়িয়ায় আসছে। এ সময় ছাত্র-জনতার সাথে মাধবপুরের পাকিস্তানি সেনাদের সংঘর্ষ হয়। এতে সিরাজুল ইসলাম মন্টুর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা দাশুড়িয়াতে প্রতিরােধ করার প্রস্তুতি নেয়। দাশুড়িয়া বাজার, হাই স্কুল ও বাড়ির আশপাশে অ্যামবুশ আকারে বিভিন্ন জায়গায় তারা প্রতিরােধের জন্য অবস্থান নেন। ছাত্র-জনতার কাছে অস্ত্র হিসেবে ছিল .৩০৩ রাইফেল, .২২ বাের রাইফেল, গাদা বন্দুক, বল্লম এবং তীর।
যুদ্ধের সংগঠন
যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ:
ক, পাকিস্তানি বাহিনী: ১ কোম্পানি (+)।
খ, মুক্তিবাহিনী: আনুমানিক ৩০০জন।
যুদ্ধের বর্ণনা
২৮ মার্চের পরিকল্পনা মােতাবেক ২৯ মার্চ সকাল থেকে যুদ্ধের জন্য দাশুড়িয়া রাস্তার দুই পাশে স্কুল বাজার ও বাড়িঘরের আশপাশে অ্যামবুশ অবস্থায় ছাত্র| জনতা অবস্থান নেন। মাধবপুর থেকে পাকিস্তানি সেনারা মেজর ইসলামের | নেতৃত্বে আনুমানিক ৬টার সময় দাশুড়িয়া প্রবেশের সাথে সাথে ছাত্র-জনতা। তাদের উপর আক্রমণ করে। দাশুড়িয়া যুদ্ধে ৩জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ছাত্র-জনতা পাকিস্তানি সেনাদের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে দিলে তাদের অনেকে পায়ে হেঁটে মুলাডুলির দিকে চলে যায়। বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা পাকিস্তানি সেনারা প্রকৃতপক্ষে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে পাবনা থেকে রওনা দেয়। পথিমধ্যে তারা দাশুড়িয়া নামক স্থানে মুক্তিযােদ্ধাদের দ্বারা বেশ বাধার সম্মুখীন হলে তারা মুলাডুলি হয়ে রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা করে। এখানে ছাত্র-জনতা পাকিস্তানি সেনাদের পর পর ২টি জায়গায় বাধা প্রদান করে। প্রথম বাধা দেয়।  মাধবপুরে এবং পরে দাশুড়িয়ায় এতে ছাত্র-জনতা পাকিস্তানি সেনাদের বেশ কয়েকজনকে নিহত করতে সক্ষম হন। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের মনােবলের উপর এর বেশ প্রভাব পড়ে। নিঃসন্দেহে বিষয়টি ছাত্র-জনতার মনােবলকে অনেক দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে। যুদ্ধের প্রারম্ভে এ ধরনের ছােটোখাটো সফলতা ছাত্র-জনতার জন্য তখন ছিল উৎসাহের নিয়ামক। এ সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনার আগমনের সংবাদ আক্রমণকারী ছাত্র-জনতার কাছে ত্বরিত পৌছে পাকিস্তানি সেনার আগমন বার্তায় পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠিত ছাত্র-জনতা তাদের প্রতিহত করার জন্য যার যা আছে তাই নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরােধ করে। তাদের এ ত্বরিত প্রতিরােধ প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা সফলতা আনে কিন্তু পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনারা নিজেদের সংগঠিত করে পুনরায় তাদের গন্তব্যে রওনা দেয়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড