You dont have javascript enabled! Please enable it!
আদমদিঘির অভিযান
ভূমিকা
বগুড়া জেলার একটি উন্নত থানা আদমদিঘির নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তানি বাহিনী। সেখানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের দোসর রাজাকাররাও ঐ ক্যাম্পে অবস্থান করতাে। ডিসেম্বরের উত্তাল দিনগুলােয় মুক্তিযােদ্ধাদের দুর্দমনীয় আঘাতে ধীরে ধীরে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যুহতে ফাটল ধরছিল। এমতাবস্থায় বীর মুক্তিযােদ্ধারা আদমদিঘিতে অবস্থিত ক্যাম্পে হানা দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঐ এলাকা থেকে বিতাড়নে সক্ষম হয়।
যুদ্ধের পটভূমি
আদমদিঘিতে অবস্থিত ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিত টহল প্রদান করতাে এবং এলাকাবাসীর উপর অকারণে অত্যাচার করতাে। তাদের দোসর রাজাকারদের মদদে অত্যাচারের মাত্রা একপর্যায়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। মুক্তিবাহিনীর সদস্য সন্দেহে তারা অনেক নিরীহ লােককে অমানুষিক অত্যাচারের পর হত্যা করতাে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যেই মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পটিতে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ভূমির পরিচিতি আদমদিঘির পাশ দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে বগুড়া-সান্তাহার রেললাইন। এ ছাড়া এ রেললাইনের প্রায় সমান্তরালে বগুড়া-সান্তাহার সড়ক রয়েছে। গ্রামের অন্যান্য সড়কগুলাে ছােটো ছােটো যানবাহন চলাচলে উপযােগী। আদমদিঘির উত্তরে টালসান, দক্ষিণে মান্দাপুর এবং পূর্বে সুদিন গ্রামের অবস্থান। এখানকার গ্রামগুলাে বেশ জনবসতিপূর্ণ। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক. পাকিস্তানি বাহিনী: প্রায় ১ প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা ও ৩০/৪০জন রাজাকার। খ. মুক্তিবাহিনী: ৭ নম্বর সেক্টরের ৭০জন মুক্তিযােদ্ধা।
যুদ্ধের বিবরণ
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর আদমদিঘি থানা সদরে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে মুক্তিযােদ্ধারা একটি রেইড পরিচালনা করেন। এ অভিযানে মুক্তিযোেদ্ধাদের কয়েকটি দল অংশ নেয়। আদমদিঘি উপজেলা সদরে পাকিস্তানি সেনাদের উল্লিখিত ক্যাম্পে ২০-২৫জন পাকিস্তানি সেনা এবং ৩০-৪০জন রাজাকার অবস্থান করতাে। ১১ ডিসেম্বর মাে. মােজাফফর হােসেন, মাে. আ. হামিদ, আমজাদ হােসেন, এল কে আবুল হােসেন, আব্বাস আলী ও মাে. সোলায়মানের নেতৃত্বে ৭০জনের ১টি মুক্তিযােদ্ধা দল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পের উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযােদ্ধাদের এ অভিযানের ব্যাপারে কিছুই আঁচ করতে পারে নি। অবস্থান গ্রহণের পর মুক্তিযােদ্ধারা ক্যাম্প লক্ষ্য করে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীও পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট গুলিবিনিময়ের পর পাকিস্তানি সেনারা ক্যাম্পটি ছেড়ে দিয়ে সান্তাহারে পালিয়ে যায়। এ অভিযানে কয়েকজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা কিছু পরিত্যক্ত অস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করতে সক্ষম। হন। এ সংঘর্ষে কোনাে পক্ষে কোনােপ্রকার হতাহত হয় নি। সাফল্যের কারণ মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। অকুতােভয় মুক্তিযােদ্ধাদের এ সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের ফলে আদমদিঘি শত্রুমুক্ত হয়। সাফল্যের কারণগুলাে নিমরূপ:
ক, আকস্মিকতা অর্জন। খ. সাহসিকতা ও দৃঢ় মনােবল। গ. গােপনীয়তা বজায় রেখে লক্ষ্যবস্তুর কাছে গমন।
ঘ. স্থানীয় জনগণের সহায়তা। শিক্ষণীয় বিষয় যুদ্ধে জয়ের প্রতিজ্ঞা ও মনোেবল সামগ্রিকভাবে আক্রমণকারীকে এনে দেয়। সাফল্যের বরমাল্য।
উপসংহার
আকস্মিকতা অর্জন যে-কোনাে যুদ্ধে জয়লাভের একটি মৌলিক বিষয়। পাশাপাশি বিশেষ করে গেরিলাযুদ্ধে স্থানীয় জনগণের সহায়তা অনস্বীকার্য। আদমদিঘির এ অভিযানটিতে স্থানীয় জনগণের সহায়তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার হয়ে থাকবে।
 
*/

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!