You dont have javascript enabled! Please enable it! সুলতানগঞ্জের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
সুলতানগঞ্জের যুদ্ধ
ভূমিকা
বগুড়া শহরের অতি নিকটে সুলতানগঞ্জের অবস্থান। এটি বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১ কিলােমিটার দূরে অবস্থিত। সুলতানগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল।
ভূমির পরিচিতি
একটি নকশা ছাড়া কোনাে তথ্য সংগ্রহ করা যায় নি। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক, পাকিস্তানি বাহিনী: পাকিস্তানি বাহিনী সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া যায় নি। খ. মিত্রবাহিনী: ক্যাপ্টেন শ্রী ধীরেন কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১০০জন সদস্য, আব্দুস সবুরসহ ২২জন। শত্রুর বিন্যাস পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বেতগাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল। যুদ্ধের বর্ণনা ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন শ্রী ধীরেন কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আনুমানিক ১০০ সদস্যের ১টি দল বগুড়া শহরের পূর্ব দিক দিয়ে সাজাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সাজাপুরে অবস্থানরত শক্র এলাকার কাছাকাছি পৌছলে বেতগাড়িতে অবস্থানরত সেনাদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রায় ২ ঘন্টা উভয় পক্ষে গুলিবিনিময়ের পর পাকিস্তানি সেনারা অবস্থান ছেড়ে দিয়ে শহরের ভিতর ঠনঠনিয়া এলাকায় চলে যায়। ফলে মিত্রবাহিনী অবস্থানটি দখল করে নেয়।  এ অভিযানে কয়েকজন ভারতীয় সেনা নিহত হয় এবং ৯জন পাকিস্তানি। সেনার লাশ উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযােদ্ধারা এখানে পাকিস্তানি সেনাদের পরিত্যক্ত একটি ট্যাংক ধ্বংস করে।
বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা
মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের কারণ মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পিছনে নিচের কারণগুলাে উল্লেখ করা যায়: ক. সুদক্ষ নেতৃত্ব: মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন শ্রী ধীরেন কুমার সিংয়ের সুযােগ্য নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ১০০জন সদস্য এবং সাজাপুর এলাকায় অবস্থানরত ২ শতাধিক মুক্তিযােদ্ধা অপ্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীকে সুযােগ্য এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ এক অপ্রতিরােধ্য বাহিনীতে পরিণত করেছিল। উচ্চ মনােবল: মুক্তিবাহিনী অপ্রতিরােধ্য গতিতে একের পর এক শত্রু অধিকৃত বিভিন্ন ঘাটি ও স্থানে সফল আক্রমণ করে যাচ্ছিল। তাদের। খাদ্য, বাসস্থান, প্রয়ােজনীয় গােলাবারুদ, অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির অভাব থাকলেও তারা ছিল উচ্চ মনােবলে বলীয়ান। এ ছাড়া তাদের মনে ছিল স্বদেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কারণ পাকিস্তানি বাহিনী নিচের কারণগুলাের জন্য পরাজিত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়: ক. পর্যাপ্ত গােলাবারুদের অভাব: দীর্ঘ সময় চালিয়ে যাওয়ার মতাে পর্যাপ্ত গােলাবারুদ পাকিস্তানি সেনাদের ছিল না। ফলে তারা তাদের অধিকৃত সুলতানগঞ্জ ক্যাম্পটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। গ. দুর্বল মনােবল: মনােবলে দুর্বল, ভীরু ও অসতর্কতা এবং সর্বোপরি যুদ্ধের অযৌক্তিকতাই তাদের সুলতানগঞ্জ যুদ্ধে হারার মূল কারণ। মুক্তিবাহিনীকে কম শক্তিধর এবং হেয় ভাবাই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান ভুল যার ফলে তারা মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলার মুখে পর্যুদস্ত হয়।
উপসংহার
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সুলতানগঞ্জের সাজাপুরে যে যুদ্ধ হয়েছিল, মূলত সে যুদ্ধে আমাদের মুক্তিযােদ্ধারা দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংকল্পে অটল ছিল।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড