You dont have javascript enabled! Please enable it! নেপালতলী ব্রিজের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
নেপালতলী ব্রিজের যুদ্ধ
ভূমিকা
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলােমিটার উত্তর-পূর্বে গাবতলী উপজেলা অবস্থিত। নেপালতলী ব্রিজের অবস্থান গাবতলী উপজেলার প্রায় ৪ কিলােমিটার পূর্বে। বর্তমানে যে স্থানে নেপালতলী ব্রিজটি অবস্থিত তা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতাে।
ভূমির পরিচিতি
একটি নকশা ছাড়া কোনাে তথ্য পাওয়া যায় নি। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ: ক. পাকিস্তানি বাহিনী: ১টি প্লাটুন। খ, মুক্তিবাহিনী: অধিনায়ক আব্দুস সবুর সওদাগর এবং উপ-অধিনায়ক। মােখলেসুর রহমান বাবলুসহ প্রায় ৫০-৬০জন। শক্রর বিন্যাস পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধে বিপন্ন তাদের বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য। সারিয়াকান্দি অভিমুখে রওনা হয়েছিল। যুদ্ধের বর্ণনা সারিয়াকান্দিতে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে বিপন্ন পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য গাবতলী সদর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ১টি প্লাটুন সারিয়াকান্দি অভিমুখে ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর রওনা হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের কাছে এ বিষয়ে পূর্বেই গােয়েন্দা তথ্য ছিল। তথ্য মােতাবেক অধিনায়ক আব্দুস সবুর সওদাগর ও উপ-অধিনায়ক মাে. মােখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের ১টি দল নেপালতলী ব্রজের পূর্ব পাশে অবস্থান গ্রহণ করে। পাকিস্তানি বাহিনী নিকটবর্তী হলে মুক্তিযােদ্ধারা গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী তাৎক্ষণিক অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। দীর্ঘ সময় গুলিবিনিময়ের পর একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কোনাে হতাহত হয় নি। তবে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে মাে. মােখলেছুর রহমান আহত হন। এ সংঘর্ষে মুক্তিযােদ্ধারা এলএমজি, এসএলআর, রাইফেল, স্টেনগান ইত্যাদি অস্ত্র ব্যবহার করেন। সামগ্রিকভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের এ সংঘর্ষের উদ্দেশ্য সফল হয়। মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের কারণ মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পিছনে নিচের কারণগুলাে উল্লেখ করা যায়: ক. মুক্তিযােদ্ধাদের পূর্ব তথ্য পাওয়া, প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ এবং সঠি সময়ে ফায়ার শুরু করার কারণে পাকিস্তানি বাহিনী তাৎক্ষণিক আক্রমণের সম্মুখীন হয়। ফলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। খ, মুক্তিযােদ্ধারা প্রয়ােজনীয় সময়ে উপযুক্ত অস্ত্র ও গােলাবারুদ ব্যবহ করে। এসব অস্ত্রের ভিতর এসএলআর, এলএমজি, স্টেনগান রাইফেল ব্যবহার করেন যা ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর কল্পনাতীত। গ. সর্বোপরি সারিয়াকান্দি যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বিজয় নেপালতলী যুদ্ধ। যােদ্ধাদের মনােবল দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে পাকিস্তানি বাহিনী হয় মানতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কারণ পাকিস্তানি বাহিনী নিচের কারণগুলাের জন্য পরাজিত হয়েছে বলে ধারণা ক হয়:
ক. পাকিস্তানি বাহিনীর অসতর্ক অবস্থা এবং যুদ্ধ কৌশল অনুসরণ  করে চলাচল করার ফলেই তাদের উপর মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রম সহজতর হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় হয়।
খ. মুক্তিবাহিনীকে কম শক্তিধর এবং হেয় ভাবাই ছিল পাকিস্তানি বাহিনী প্রধান ভুল, যার ফলে তারা মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলার মুে পর্যস্ত হয়।
গ, মনােবলে দুর্বল, ভীরুতা, অসতর্কতা এবং সর্বোপরি যুদ্ধে অযৌক্তিকতাই তাদের নেপালতলী যুদ্ধে পরাজয়ের মূল কারণ।
উপসংহার
১৯৭১ সালের গাবতলী উপজেলার নেপালতলী নামক স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী সাথে যে যুদ্ধ হয়েছিল তা আজও আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড