You dont have javascript enabled! Please enable it!

Timeline august

১ আগস্ট ১৯৭১ জামাত শিবির
জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি অধ্যাপক গোলাম আজম এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি নূরুল ইসলাম ও সম্পাদক আলী আহসান মুজাহিদ
পাকিস্তানি শাসকদের প্রবর্তিত তথাকথিত শিক্ষা সংস্কারকে অভিনন্দন জানান। গোলাম আজম পাঠ্য পুস্তক হইতে অবাঞ্ছিত অংশ সমুহ বাদ দেয়ার জন্য চ্যান্সেলর এর প্রতি আহবান জানান। অপরদিকে ছাত্রসংঘের নেতারা দাবি করে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শিক্ষকদের শিক্ষাঙ্গন থেকে বহিষ্কারের। তারা বলেন ‘এসব পাকিস্তানবিরোধী শিক্ষকদের কারণেই ছাত্রদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তার জন্ম নিয়েছে। এরাই ছাত্র সমাজকে উস্কে দিয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।’

১ আগস্ট ১৯৭১ মুসলিম লীগ
এদিন ঢাকা শহর মুসলিম লীগের এক সভায় মুসলিম লীগ সেক্রেটারি এএনএম ইউসুফ আবারো দেশের অবস্থার জন্যে তার ভাষায় মুক্তিযোদ্ধা নামধারী দুষ্কৃতকারীদের দায়ী করে। সে মুসলিম লীগের প্রতিটি কর্মী ও সদস্যকে নির্দেশ দেয় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে দুষ্কৃতকারী দমন করার। প্রাদেশিক কাউন্সিল মুসলিম লীগ সহ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি নেতা এদিন বলেন পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য দেশবাসীকে ত্যাগ স্বীকার করতে। প্রাদেশিক কাউন্সিল মুসলিম লীগ সাধারন সম্পাদক এই দিনে গভর্নর টিক্কা খানের সাথে দেখা করেছেন।

১ আগস্ট ১৯৭১ ইয়াহিয়া
ইয়াহিয়া খান এদিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘যদি পূর্ব-পাকিস্তানে অব্যাহতভাবে সংঘর্ষ চলতেই থাকে, তবে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে হবে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সেনাবাহিনীকে গুলিবর্ষণ বন্ধ করে কেবল গোলাগুলির শিকার হতে বলতে পারি না। দেশের প্রতিরক্ষার স্বার্থে আমি আরেক গাল পেতে দেব না। আমি পাল্টা আঘাত হানব।’

২ আগস্ট ১৯৭১ শান্তি কমিটি
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা এদিন ঢাকায় মাদ্রাসা সম্মেলন করে । সম্মেলনে একিউএম শফিকুল ইসলাম, খাজা খয়েরউদ্দীন, মাওলানা আবদুর রহিম, অধ্যা. গোলাম আযম, ফরিদ আহমদ, মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আশরাফ আলী, ড. হাসান জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখে।
এ সম্মেলনে জামাতের তৎকালীন সহকারী আমীর পরবর্তিতে আইডিএল-এর নেতা মাওলানা আব্দুর রহিম বলেছিল, ‘বর্তমান সরকার একদিকে পাকিস্তানের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করছে, অপরদিকে ইসলামের ভিত্তিতে সত্যিকার পাকিস্তান গঠনের চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে।’
গোলাম আযম এই সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতি রক্ষার জন্যে দৃঢ় সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছিল, ‘অতীতে এক শ্রেণীর কায়েমী স্বার্থবাদীরা ইসলামী শিক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। এরা ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমন।’ তৎকালীন ছাত্রসংঘ ও আল-বাদর বাহিনী প্রধান মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তানকে রক্ষার জন্যে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে।
পাকিস্তানিদের এই দালালরা পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থী বই পুস্তক বাজেয়াপ্ত করার, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাকিস্তানবিরোধীদের উৎখাতের দাবি জানিয়েছিল। এই দালালরা এদিন ঢাকা শহরে মিছিল এবং শোভাযাত্রাও করে।

২ আগস্ট ১৯৭১ ডগলাস হিউম
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার এ্যালেক ডগলাস হিউম বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা পাকিস্তান সরকারকেই নিতে হবে। আমরা যতো শিগ্গির সম্ভব একটি সমাধান দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। কেননা, সেখানকার জনগণের অনবরত দেশত্যাগ আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ছবি ১৯৭২ এর

২ আগস্ট ১৯৭১ রাজাকার
এদিন রাজশাহীতে রাজাকার বাহিনীর প্রথম ব্যাচের সশস্ত্র ট্রেনিং সমাপ্ত হয়। এ উপলক্ষে স্থানীয় জিন্নাহ ইনস্টিটিউট হলে মিয়া মুহম্মদ কাসেমীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। মুসলিম লীগ অ শান্তিকমিটির নেতা আয়েনউদ্দীন রাজাকারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে পাকিস্তানের আদর্শ, সংহতি ও অখনডতা রক্ষার জন্যে রাজাকার বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে।’ দেশপ্রেমিক রাজাকাররা জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পরে পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করাইয়া রাজাকারদের শপথ করানো হয় ।

৩ আগস্ট ১৯৭১ শেখ মুজিব এর বিচার
পাকিস্তান টেলিভিশনে এক সাক্ষাত্কারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দেশের আইন অনুসরণ করেই তাঁর বিচার করা হবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আরো বলেন, শেখ মুজিব দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই করেননি, তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন।

৩ আগস্ট, ১৯৭১ পিডিপি

পিডিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ ঢাকা আসার পর এদিন পিডিপি প্রাদেশিক সভাপতি নূরুল আমীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সিলেটের কানাইঘাটে পিডিপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুস সালাম সভায় বক্তব্য রাখেন। ্তিনি তথাকথিত দেশদ্রোহী ও ধর্মদ্রোহীদের কার্যকলাপ প্রতিরোধের জন্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানায়।

আন্দোলন সংগ্রামে কিশোর (১৯৫২-১৯৭২)
১৯৫২ থেকে ১৯৭১ এই সময়ের আন্দোলন সংগ্রামে কিশোর ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহনের হার ছিল অনেক। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেই হোক আর সামরিক জান্তার বিরুদ্ধেই হোক সিনিয়রদের সাথে কিশোর সংগ্রামীরা যুগপৎ আন্দোলন করে গেছে এবং অনেকেই শহীদ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিরাট একটা অংশ ছিল কিশোর। স্বাধীনের পর সিলেবাস কেন্দ্রিক একটি স্কুল ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল যা কয়েকটি স্কুলেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখনকার ছাত্র আন্দোলনটা ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের রুপ নিতে থাকা অবস্থায় এর সৌন্দর্য হানী ঘটলো তাদের কিছু বিশ্রী অশালীন পোস্টার এর জন্যই। ৭২ এ এই কিশোর ছাত্র ছাত্রী গন টিফিনের টাকা জমাইয়া কিভাবে দেশের সাহায্যের জন্য সরকার কে সাহায্য করল।

৫ আগস্ট ১৯৭১ কূটনীতিক
এই দিনে জাতিসঙ্ঘ ও আমেরিকাস্থ পাকিস্তান এম্বেসী থেকে ১৪ জন বাংলাদেশী কূটনীতিক পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন।

১। এ, এম, এ মুহিত- ইকোনমিক কাউন্সিলর, পাকিস্তান এম্বেসী,ইউএসএ।
২।এস, এ করিম-ডেপুটি পার্মানেন্ট রিপ্রেসেন্টেটিভ, ইউএন
৩।ই, করিম- মিনিস্টার এট দ্যা এম্বেসী
৪।এ, এম, এস কিবরিয়া- এডুক্যাশনাল কাউন্সিলর
৫। এ, আর চৌধুরী- এম্বেসী ফাইনান্স এন্ড একাউন্ট অফিসার
৬।এস, এম আলী- থার্ড সেক্রেটারী

৬ আগস্ট ১৯৭১ বৃটিশ পার্লামেন্ট
বৃটিশ পার্লামেন্টে সাবেক মন্ত্রী জন স্টোনহাউস আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য চাপ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিবকে মুক্তি দিলে পূর্ব পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

৭ আগস্ট ১৯৭১ গোলাম আজম
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম কুষ্টিয়ায় শান্তি কমিটির এক সভায় বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সাথে মৈত্রী স্থাপন করে জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব ও তার ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সদস্যদের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বীর জওয়ানরা যথা সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে জনগণের দুর্ভোগের সীমা থাকতো না। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সর্ম্পকে সতর্ক থাকার এবং রাষ্ট্রবিরোধীদের দমনে শান্তি কমিটি, রাজাকার মুজাহিদ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগীতা করার জন্য জামায়াত কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

৭ আগস্ট ১৯৭১ মাহমুদ আলী

comments –

সিলটের মাহমূদ আলী পাকিস্তানের দালালি করতে শেঘতক ১৯৭১ এর ডিসেম্বরেে ভূটটর সাথে জাতিসংঘ পরযনত ওকালতি করতে যান। এর পর আর বাংলাদেশে ফিরে আসেনাই। ২০০৭ পাকিস্তানেই মার যান।

মাহমুদ আলী তাঁর স্ত্রী হাজেরা মাহমুদ এক , তাসাদ্সদুকময় বাম রাজনিতীর নিবিড় এক সঞ্চালিকা শক্তি ছিলেন । ৩০/৪০ দশকে সিলেটের তিন তুখোড় বামপন্থী রাজনিতীবিদ ছিলেন , মা আলী , তাসাদ্দুক আহমদ এবং পীর হাবিবুর রাহমান । মাহমুদ আলীর রাজনিতীতে সরওয়ারদি ছিলেন তার রাজনৈতিক প্রতিধন্ধি ।

সিলেটর মাহমূূূদ আলি প্রথমদিকে বাম দলের থাকলেও পরে মুসলিম লীগে ও পরে PDP তে আসেন। ১৯৭১ এ তার স্ত্রী প্রায় সময় ঢাকায় আমাদের ধানমনডির আাসমা খালাকে ( বাবূ ভাই ও সোহেলের আম্মা) মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঠাট্টা করতেন। প্রয়সময় তার এক্তাই প্রস্ন ছিল – ” তুমার বাবু সোহেল কোথায়? ” – উত্তরে খালা শূধূ চূপ করে থাকতেন, কখনোই তার রাগ প্রকাশ করতেন না। একদিন সেই হাজেরা মাহমুদ খালাকে টিটকারি করে বলেন ” তোমার বাবূয়ে কিতা তূৃমার কূছ ভরিয়া সাধিনতা আানিয়া দিব নিগো ? ” আৃমরা তখনও খালার বাসায় রিফূজী হিসাবে আস্রিত।

Saleem Quraishi parvez , they are our next door neighbor in sheikh para . His mother was related to us as our great grand father married to their clan in shunam ganj . when Mahmud ali and his brothers were very lil their mother bring them to sylhet to study and take a land from us as a kobuliath (at that time system was not renting ) rather leasing for certain years . MAhmud Ali amd Ahmed ali grew up in this house they used to call ABba and chacha mamu and we used to call them bhaisb . mahmud alis daughters name was Rana , we still call their house rana r basha . as an young adult mahmud Ali aligned himself with left politics , as sylhet was at that period totally left leaning and shunamganj was a incubator of Bengal communist party . Any way as muslim league was not that popular in sylhet congress has its strong roots in young sylhety both hindu and muslim newly educated students . ghandi and neheru was more welcome in sylhet than Jinnah , the left leaning student leaders were attested with congress in most number . mahmud ali with his political idealouge once made a great political venture with young muslin students from sk Mujib nurur rahman mujaffar ahmed . moshiur rahman , shah aziz , monsur ali , mushtaque , abdul haque , and all contemporary young and vibrant muslim youngs . SK mujib used to visit mahmud allis house in regular interbal . Mahmud ali was more chinese lefty than regular lefty . during sylhet referendum he joined in muslim league as congress with its crowd was supporting sylhet to go to india . ayub khan brought him through chaina and let him established a right wing party. Ayub khan expelled Tassaduk Ahmed from the country giving him a 30 days notice and pir habib was uptill 69 most of the time was in jail . later on Mahmud ali used to stay in west Pakistan , if he is in sylhet he used to visit us , used to brought us lots of grapes from pakistan . His relationship fall apart with SK mujib during zukta front election as Sheikh leaned towards sarwardi . they totally abandoned the political relationship after the provincial ministry was formed by Ataur rahman . where sk mujob was selected as agriculture minister . in 71 he totally revesed himself twards pakistan thinking Yahaya will make him the governor of east pakistan and bhutto also put a carrot infront him to be the next foreign minister of pakistan . In august of 71 he last visited sylhet and see us off . I remember abba told him bhagna this time you are walking in wrong road . well during 71 he was not accused of killing or looting but nurul amin and mahmud ali both become too Pakistan . later bhonghbondhu allowed hajera mahmud to go to Pakistan via London and it was escorted by Tofail ahmed . .

৭ আগস্ট ১৯৭১ ক্লিন আওয়ামী এম পি তালিকা প্রকাশ
(এই দিন পর্যন্ত মাত্র ৯ জন পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য দেখাইয়াছিল। তালিকার প্রায় সবাই ভারতে প্রবাসী সরকারের সাথে যুক্ত ছিলেন।)

৮ আগস্ট, ১৯৭১ পিডিপি
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিডিপি নেতা হামিদুল হক চৌধুরী ও পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী লন্ডনে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে ভারতকে নিবৃত্ত করার জন্য সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকোর প্রতি আহ্বান জানান।

৮ আগস্ট, ১৯৭১ জামায়াতে ইসলামী
ঢাকা শহর শান্তি কমিটির সভায় ঢাকা শহর জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘পাকিস্তান টিকে থাকার জন্যে জন্ম লাভ করেছে এবং চিরদিন টিকে থাকবে। আমরা বর্তমান দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সময়োচিত হস্তক্ষেপে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি।’

৮ আগস্ট ১৯৭১ ক্র্যাক প্লাটুন
ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধা জুয়েল, বদিউজ্জামান, আলম, পুলু, স্বপন ও সামাদ ফার্মগেটের মিলিটারী চেকপোস্টের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনীর এ অভিযানে পাঁচজন মিলিটারী পুলিশ ও তাদের সহযোগী ছয়জন রাজাকার নিহত হয়।

৮ আগস্ট, ১৯৭১ সৈয়দ নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তাঁর জীবন নাশের প্রহসনমূলক বিচার অনুষ্ঠান থেকে বিরত না হলে এর দায়ভাগ ইয়াহিয়াকে বহন করতে হবে।সৈয়দ নজরুল ইসলাম অবিলম্বে বাংলাদেশের নেতার প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।

৮ আগস্ট, ১৯৭১ সরদার শরণ সিং
ভারতীয় লোকসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সামরিক আদালতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বিচার অনুষ্ঠানের ঘোষণায় ভারত সরকারের উদ্বেগ ও ক্ষোভের কথা জানান। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।

৯ আগস্ট ১৯৭১ শেখ মুজিব
এদিন প্রধান সামরিক প্রশাসকের সদর দফতর থেকে প্রকাশিত প্রেসনোটে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর এবং অন্যান্য দেশদ্রোহী অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত। তাই বিশেষ সামরিক আদালতে ১১ আগস্ট তার বিচার করা হবে।’ রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বিচারের ফলাফল গোপন রাখারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।

২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ প্রতিপক্ষের মৃত্যুশয্যায় শেখ মুজিব

abdus salam khan

সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর মামা শ্বশুর কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ১৯৭০ নির্বাচন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী পিডিপি নেতা ছিলেন তবে ৭১ এ অনেকটাই নিরপেক্ষ ছিলেন। দালাল হিসাবে চিহ্নিত হন নাই ৭২ এ গ্রেফতার হন নাই তবে তাড়াতাড়ি মারা গেলেন।

আগরতলা মামলায় উনি বংগবন্ধুর পক্ষে লড়েছিলেন।

হা তবে শেখ হাসিনার বিয়েতে ১০ টি ১০ টাকার নোট উপহার দিয়েছিলেন

১৯৬১ অবাঙ্গালী জনপ্রিয় গভর্নর আজম খান

আজম খান আর এডমিরাল আহসানকে পাকিরা বাঙালি বলিত। এদের কথা রাখিতনা কেন্দ্র।

আজম খানের যে বিদায় সম্বর্ধনা বাঙালি দিয়াছিল তাহা স্মরণ রাখার মত। তার বিদায়ে লোকজন কান্নাকাটি করেছিল। শেষ দিন বঙ্গভবনের গেট সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বঙ্গভবনের নতুন ভবন তিনি তৈরি করেছিলেন

আমি দেখিনাই ১৯৬০ এর দিকে উনি সিতাকুন্ডে এসেছিল বলে শুনেছি সাইক্লোনের লাশ উদ্ধারে লেগেছিল নিজে।

জেনারেল আজম খান এক জন নিতীবান মানূষ ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালে লাহোরে জামাতের কাদিয়ানি বিরোধী দাংগার সময়
প্রথম মারশাল জারি করেন এবং মওলানা আবূ আলা মওদুদি কে গ্রেফতার করেন। বিচারে মওদুদির ফাসির সাজা হয়।

১০ আগস্ট ১৯৭১ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়ম রজার্স বাংলাদেশ প্রশ্নে পাকিস্তান-ভারত পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ সদর দফতরে মহাসচিব উ‘ থান্টের সাথে আলোচনা করেন। চার ঘন্টা ব্যাপী এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ বুশও উপস্থিত ছিলেন।

১০ আগস্ট ১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তান জামাত
পশ্চিম-পাকিস্তানের জামাত নেতা ড. নাজির আহমেদ ও রাজা বাসারাত পূর্ব-পাকিস্তান সফর করেন।. নাজির আহমদ খুলনায় বলেন, ‘পাকিস্তানের জন্মকে শত চেষ্টা করেও ঠেকিয়ে রাখতে না পেরে শত্রুরা একে ধ্বংস করার জন্যে ভেতর-বাইরে থেকে চেষ্টা করছে।

১১ আগস্ট ১৯৭১ গোলাম আজম
জামায়াতে ইসলামীর প্রাদেশিক আমীর গোলাম আজম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকরা ইসলামের দুশমন। তারা ইতিমধ্যে বহু ঈমানদার ও দেশপ্রেমিককে হত্যা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দু‘একজন নেতাকে হত্যা করে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না।’

১১ আগস্ট, ১৯৭১
মুক্তিবাহিনী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে টাইম বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়.।মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসী গেরিলা যোদ্ধারা ঢাকার বিলাসবহুল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে টাইম বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আমেরিকার টাইমস্ পত্রিকার সংবাদদাতাসহ ২০ জন খানসেনা গুরুতররূপে আহত হয়।

১১ আগস্ট ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খান প্রেসিডেন্ট এর ত্রান উপদেষ্টা ডা.এ.এম. মালিক ও জাতিসংঘের উদ্বাস্তু কমিশনের প্রতিনিধি জন কেলীসহ রংপুর-দিনাজপুর এলাকা সফর করেন। রংপুর শান্তি কমিটির বৈঠকে টিক্কা খান রাজাকারদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজাকাররা না থাকলে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না।’

১১ আগস্ট ১৯৭১
ভারত হইতে ন্যাপ ভাসানির সকল শীর্ষ নেতাদের পলায়ন এবং পাকিস্তানের প্রতি সংহতি । তাদের ভাষায় মওলানা কলকাতায় অসুস্থ অবস্থায় আটক।

১২ আগস্ট, ১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব ও ২৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আবেদন জানান।

১২ আগস্ট, ১৯৭১ : লন্ডনে অনুষ্ঠিত এ্যাকশন কমিটির সভায় প্রস্তাবপত্র
বিচারপতি এ এস চৌধুরী তাঁর এবং ব্রিটেনের বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতাদের ভিতরে অনুষ্ঠিত অদপ্তরিক বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পরিচালনা কমিটির তদন্তকারী সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিলেন। এই সিদ্ধান্ত প্রচার করার দায়িত্ব পরিচালনা কমিটির সদস্য জনাব কবিরকে দেওয়া হয়। যেহেতু জনাব কবির চৌধুরী তৎকালীন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেন নি, তাই পরিচালনা কমিটির আহ্ববায়ক ১২ অগাস্ট, ১১ গোরিং স্ট্রিট, ইসি৩, ৬ টায় গুরুত্তপূর্ণ একটি সভার ডাক দেন। উক্ত সভায় নিম্নের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন :
ক) জনাব শেখ আবদুল মান্নান।
খ) জনাব শামসুর রহমান।
গ) জনাব আজিজুল হক ভুইঞা
সভায় নিচের সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয় :
ক) বিচারপতি এ এস চৌধুরীর অনুরোধে তাঁর এবং ব্রিটেনের বাংলা সম্প্রদায়ের নেতাদের ভিতরে অনুষ্ঠিত বেসরকারি বৈঠকটিকে অনুমোদন দেওয়া হয় সেই সাথে বৈঠকে নেওয়া প্রস্তাবগুলো ও পরিচালনা কমিটি অনুমতি প্রদান করেন যেনো অধিবেশন কমিটি এটি আওতায় রাখতে পারে।
খ)আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, নিম্নের পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ অধিবেশন কমিটির অধীনে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।
ক) জনাব শেখ আবদুল মান্নান।
খ) জনাব আজিজুল হক ভুইঞা।
পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৬ আগস্ট, ১৯৯৭১, ১১ গোরিং স্ট্রিট, ইসি ৩, ৬ টায় বিচারপতি এ এস চৌধুরী এবং ব্রিটেনের বাংলা সম্প্রদায়ের নেতাদের ভেতরে অদপ্তরিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে নিম্নের ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন :
১) মি : শেখ আবদুল মান্নান।
২) মি: শামসুর রহমান।
৩) মি: আজিজুল হক ভুইঞা।
৪) মি: কাবিল চৌধুরী।
এবং বৈঠকে নিম্নের সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়:
ক) পরিচালনা কমিটির অধিবেশনের মাধ্যমে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সংগঠন তৈরী করার পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেইসাথে এই সংগঠন দ্বারা ব্রিটেনে মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও অদপ্তরিক বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা হয় নি, তারপরেও তারা আনন্দের সাথে চারজন স্থানীয় প্রতিনিধি দিয়ে কমিটি সংগঠিত করেন। এরূপ প্রচেষ্টার জন্য পরিচালনা কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে আন্তরিক সাধুবাদ জানায়।
খ) এতে আরো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, সভার বক্তব্য বিচারপতি এ এস চৌধুরী এর কাছে পৌঁছে দেওয়া ও অনুমোদন এর জন্য জনাব শামসুর রহমান, জনাব শেখ আব্দুল মান্নান এবং জনাব কবির চৌধুরিকে বিচারপতি চৌধুরীরর সাথে পরের দিন সকালে দেখা করতে বলা হয়।

১২ আগস্ট, ১৯৭১ এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান

বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান মুজিবনগরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এখন কেবল মুক্তিফৌজ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই লড়াই এখন জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। দেশবাসী হানাদারদের বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।

১২ আগস্ট, ১৯৭১ হামিদুল হক চৌধুরী/ রাজাকার

লন্ডনে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী বৃটিশ মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাৎকালে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বর্তমানে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে, তা সেনাবাহিনীর সৃষ্ট নয়। এর জন্য দায়ী সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযোদ্ধা)।
ঢাকা শহর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ মনসুর আলী প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যথাযথভাবে আজাদী দিবস পালনের আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অবশ্যই আমাদেরকে দুষ্কৃতকারী ও বিছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশের আদর্শ ও অখন্ডতা রক্ষার জন্যে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।

১৩ আগস্ট, ১৯৭১ কেনেডি

সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবিরসমূহ পরিদর্শন শেষে নয়াদিল্লী পৌঁছান এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরির সাথে বৈঠকে মিলিত হন।

১৩ আগস্ট, ১৯৭১ উ’ থান্ট

জাতিসংঘ মহাসচিব উ’ থান্ট বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রসঙ্গে জাতিসংঘ সনদে উল্লিখিত মানবিক বিষয়ের পরিপন্থী মন্তব্য করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মামলা সম্পর্কে কোনো আইনগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পাকিস্তান সীমান্তের বাইরে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। কেননা, তাঁর বিচার প্রসঙ্গটি মানবিক উদ্বেগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

১৩ আগস্ট, ১৯৭১ শান্তি কমিটি ও রাজাকার

দিনাজপুরের সামরিক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের সমম্বয়ে একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ আগামীকাল রাজাকার ও পুলিশের র্যা লী এবং প্যারেড অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সকল সরকারী কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়। ঢাকা শহর শান্তি কমিটির আহ্বায়ক সিরাজউদ্দিন বলেন, “দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে মানুষ রাজাকারে যোগ দিচ্ছে। রাজাকাররা দেশ থেকে দুষ্কৃতকারীদের উৎখাত করবেই।”

১৩ আগস্ট ১৯৭১
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি প্রদান করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু হলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যয় নেমে আসবে।

২ আগস্ট ১৯৭২
শেখ মুজিব জিয়াকে উপ প্রধান সেনাপতি হিসাবে নিয়োগ দেন

১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের পক্ষে ন্যাপ ভাসানির প্রচারে তখনকার আওয়ামী নেতৃবৃন্দ (হক কথা)

১৪ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আজম

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির উদ্যোগে ঢাকায় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রাদেশিক জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, এবার শুধু তারাই স্বাধীনতা দিবস পালন করছে যারা পাকিস্তানকে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ঘরে-বাইরে শত্রুর অভাব নেই। তবু একথা একশ ভাগ সত্য, পাকিস্তান টিকে থাকার জন্যই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা পাকিস্তানকে অখন্ড রাখার জন্য সংগ্রাম করছি। এদেশ টিকে না থাকলে আমাদের মুসলমান হিসেবে টিকে থাকা মুশকিল হবে।

১৪ আগস্ট ১৯৭১ পূর্ব জার্মানী
জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকের( পূর্ব জার্মান) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক আদালতের নেওয়া পদক্ষেপে তাঁর দেশের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, জিডিআরের জনগণ পাকিস্তান সরকারের কাছে জনগণের নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ন্যায়বিচার, মানবিকতা ও শ্রদ্ধা জানানোর আবেদন জানাচ্ছে। জিডিআরের জনগণ পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতের বিচারকার্য বন্ধ করার মাধ্যমে পাকিস্তানে বিদ্যমান সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান বের করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়।

১৫ আগস্ট ১৯৭১ উথান্ট
জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট সতর্ক করেছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের একচ্ছত্র নেতা মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার নামে গোপন বিচার গত নভেম্বরে বয়ে যাওয়া হারিকেন ও পরে কলেরার আক্রমণ পূর্ব বাংলাকে যতটা না ধ্বংস করেছে তার চেয়ে বেশি ভয়াবহ হবে।’
La Nacion বুয়েনস এইরেস ১৫ আগস্ট ১৯৭১।

১৫ আগস্ট ১৯৭১ অপারেশন জ্যাকপট

১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট পরিচালিত নৌ-কমান্ডো বাহিনীর প্রথম অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে পরিচিত। এদিন রাতে নৌ-কমান্ডোরা একযোগে মংলা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ বন্দর আক্রমণ করে এবং পাকিস্তান বাহিনীর ২৬ টি পণ্য ও সমরাস্ত্রবাহী জাহাজ ও গানবোট ডুবিয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাঞ্চলকে যে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এর মধ্যে ১০নং সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ-কমান্ডো। মূলত সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা, নদী ও সমুদ্র বন্দরসহ বাংলাদেশের সমগ্র জলপথ নিয়ে এ সেক্টর গঠিত হয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রপথে পাকিস্তানের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া ছিল নৌ-কমান্ডো আক্রমণের উদ্দেশ্য। ১০নং সেক্টরের কোনো নির্দিষ্ট সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। অপারেশনের সময় কমান্ডোদের কাজের নিয়ন্ত্রণ থাকত যে এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হবে সে এলাকার সেক্টর কমান্ডারের ওপর। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ১৪৮ জন নৌ-কমান্ডোকে চারটি দলে ভাগ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬০ জন কমান্ডো গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী (বীরউত্তম)। তবে চট্টগ্রামে নৌ-কমান্ডো অপারেশন পরিচালিত হয় সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে। ১৫ আগস্ট রাত ১২ টায় অপারেশন জ্যাকপট শুরু হয়। কমান্ডোরা জাহাজে মাইন সংযোজন করে ফেরত আসেন। কিছু মাইন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিস্ফোরিত হয়। ১৫ আগস্ট রাত ১-৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দর প্রকম্পিত হয়। বন্দরে ‘এম.ভি হরমুজ’ এবং ‘এম.ভি আল-আববাস’ নামে দুটি পাকিস্তানি জাহাজসহ বেশ কয়েকটি বার্জ ও জাহাজ ধ্বংস হয়। এম.ভি হরমুজে ৯৯১০ টন এবং এম.ভি আল-আববাসে ১০,৪১৮ টন সমর সরঞ্জাম ছিল। সাবমেরিনার আহসানউল্লাহর (বীরপ্রতীক) নেতৃত্বে ৪৮ জন নৌ-কমান্ডো মংলা বন্দরে অভিযান করেন। বন্দরের ৬ টি জাহাজ মাইনের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়। চাঁদপুর নদীবন্দর অভিযানে সাবমেরিনার বদিউল আলমের (বীরউত্তম) নেতৃত্বে ২০ জন নৌ-কমান্ডো সফল হন। তাঁরা ১৫ আগস্ট রাতে একই সময় চাঁদপুর বন্দরে মাইন দ্বারা কয়েকটি জাহাজ ধ্বংস করেন। সাবমেরিনার আবদুর রহমান (বীরবিক্রম) ও শাহজাহান সিদ্দিকের (বীরবিক্রম) নেতৃত্বে ২০ জনের কমান্ডো দল নারায়ণগঞ্জ ও দাউদকান্দি নদীবন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে।
পাকিস্তান সরকার অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে বহির্বিশ্বে যে প্রচারণা চালায় নৌ-কমান্ডোদের সফল অভিযানের মাধ্যমে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌ-অভিযানের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়। এরপর থেকে কোনো বিদেশি জাহাজ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসতে রাজি হয় নি। অপারেশন জ্যাকপটের কারণে মুক্তিযুদ্ধ বহির্বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
courtesy[আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]

১৫ আগস্ট ১৯৭৫। খুনি চক্র ।
প্রথম ছবি মুস্তাক অনুগত্তদের মিছিল। ২য় ছবি রেডিও ভবনে মুস্তাকের রেডিও ভাষণের পূর্বে উল্লসিত ওসমানী দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলছেন। পাশে জিয়া ও খলিলুর রহমান।

 15 august

জন্ডিসে আক্রান্ত হবার পর থেকেই শরীরটা বেশ দুর্বল হয়ে গেছিল রাসেলের, তবে দিন দুয়েক আগে বাবা বলেছিলেন নিচের বাগানে ইমরান আর আদিলের সাথে সাইকেল নিয়ে খেলতে দেবেন। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্নই দেখছিল রাসেল। হঠাত কার ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছু বুঝে উঠার আগেই মা তাকে টেনে উঠিয়ে পাশের বাথরুমে নিয়ে গেল, আর বলল ‘মাথা নিচু করে বসে থাকো’। ঘুমের ঘোর কেটে যাওয়ার এতক্ষণে রাসেল বুঝতে পারলো যে চারিদিকে খুব হইচই হচ্ছে, গোলাগুলি চলছে, কারা যেন বুট পায়ে দৌড়াদৌড়ি করছে!
.
মার কথা শুনে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে রাসেল। বুঝতে পারছে ভয়ানক কিছু হচ্ছে আজ রাতে, কিন্তু কি হচ্ছে সেটা তার ছোট্ট মনে কিছুতেই ধরছে না। বুকটা ধুকপুক করছে অনেক জোরে, কিন্তু অজানা ভয়ে চোখ বুজে আসছে বারবার।
.
একটু পর গোলাগুলি বন্ধ হল। রাসেল ওভাবে বসে থেকেই কান পেতে শুনছে। শুনতে পেল বুটের আওয়াজ সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠেছে। এক পশলা গুলির শব্দে আবারো কান ঢেকে ফেলল রাসেল। এবারে গুলির শব্দ খুব কাছ থেকে এলো। গুলির শব্দ বন্ধ হল আবার। এবার রাসেল শুনতে পেল বাবার ভারী গলার শব্দ ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’
.
এরপর কিছুক্ষণ তর্কবিতর্ক চলল, কি নিয়ে তা বুঝলো না ছোট্ট রাসেল। ততক্ষণে সে তার ভাবীদের গলার আওয়াজও পাচ্ছে আশেপাশে। তারপর হঠাত করেই আবার অনেকগুলো গুলির শব্দ। কুঁকড়ে আর ছোট হয়ে মিশে যেতে চাইছে রাসেল। হঠাত করেই বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো মা আর রোজী ভাবী আর নতুন সুলতানা ভাবী। সবার পেছনে এই বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল নাসের চাচা আর রমা। মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল রাসেল। মা তাকে জড়িয়ে ধরে শুধু কাঁদছিলেন, রাসেলের একটা কথারও উত্তর দিচ্ছিলেন না। সবাইই কাঁদছিল ভয়ে।
.
দুই মিনিট পরেই বেডরুমের সামনের দরজায় লাথির আওয়াজ শোনা গেল, সেই সাথে গুলি। নাসের চাচা বললেন, ‘দরজা না খুললে ওরা গুলি করেই মেরে ফেলবে’। মা তখন গলা উঁচিয়ে বললেন, ‘দরজা খুলছি, আপনারা কাউকে মারবেন না’। মা সবাইকে নিয়ে বের হয়ে দরজা খুলে দিলেন, প্রায় লাফ দিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল কালো পোশাক পড়া কয়েকজন সৈনিক। ওরা নাসের চাচা আর রমাকে একদিকে দাঁড় করালো, তারপর রাসেলকে হাত ধরে টেনে বলল, ‘নীচে চল’। রাসেলের মা কেও ওরা বলল ‘আপনিও নীচে চলুন’।
.
ঘর থেকে বের হয়েই রাসেল দেখতে পেল সামনের সিঁড়ির মাঝখানে বাবা পড়ে আছেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে সিঁড়ি। চোখ বুজে ফেলল ছোট্ট রাসেল। শুনতে পেল মা চিৎকার করে বলছেন ‘আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।’ সিঁড়ি দিয়ে রাসেলকে টেনে হিঁচড়ে নামাচ্ছিল সৈনিকটা। মাঝ সিঁড়িতে এসে বাবার দিকে আবার চোখ পড়ল আবার, পারলো না তাকিয়ে থাকতে রাসেল, চোখ বন্ধ করে ফেলল আবার। বাবার রক্তে পিচ্ছিল হয়ে আছে সিঁড়ি, সৈনিকটা টেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলেই আছাড়টা খেল না রাসেল।
.
নীচে এনে রাসেল সহ সবাইকে লাইন ধরে দাঁড় করানো হল। ছোট্ট রাসেল ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। উপর থেকে আবারো ভেসে এলো গুলির শব্দ আর মেয়েদের আর্তচিৎকার। রাসেল ততক্ষণে বুঝে গেছে কি হচ্ছে উপরে। চোখের পানিতে ভাসতে ভাসতে সে পাশে দাঁড়ানো মহিতুল ভাইয়ার জামা খামছে ধরে জিজ্ঞাসা করে ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ মহিতুল সাহস দেয়, “না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।”
.
নাসের চাচাকে রাসেলের চোখের সামনেই পাশের বাথরুমে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলল ওরা। প্রতিটা গুলির সাথে সাথে কুঁকড়ে যেতে থাকে রাসেল। রাসেলের মনে হতে থাকে , এই সময়ে মাকে জড়িয়ে ধরলে হয়তো একটু ভাল লাগত; ‘আমাকে মার কাছে দিয়ে আসো, আমি মার কাছে যাব’ বলে রাসেল। একথা শুনে একজন সৈনিক আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলল ‘যাও, ওকে মার কাছে দিয়ে এসো’। একজন সৈনিক ওকে হ্যাঁচকা টানে মহিতুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যেতে থাকে। এবার আর চোখ বুঝে থাকে না রাসেল, উপরে যেতে যেতে অপলক তাকিয়ে থাকে মাঝ সিঁড়িতে পড়ে থাকা বাবার মৃতদেহর দিকে। সিঁড়ির উপরে উঠেই দেখতে পায় সামনেই পড়ে আছে মার মৃতদেহ। এবার রাসেল ডুকরে কেঁদে উঠে, কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে ‘আমি হাসু বুবুর কাছে যাবো।’
.
সৈনিকটা একটা ধাক্কা দিয়ে রাসেলকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বিকৃত স্বরে বলে ‘যাও, মার কাছে যাও।’
.
ধাক্কা খেয়ে মার মৃতদেহ পেরিয়ে দুই ভাবীর মৃতদেহের মাঝে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে রাসেল। সেখান থেকেই দেখতে পায় অস্ত্র তুলছে সেই সৈনিকটা। সাথে সাথেই রাসেল বুঝে যায়, আর হবে না আদিল আর ইমরানের সাথে সাইকেল নিয়ে খেলা, পোষা কবুতরগুলোকে খাবার দেয়াও আর হবে না, হবে না দেখা হাসু বুবুর সাথেও।
.
চোখ বুজে অনন্তের অপেক্ষায় থাকে ছোট্ট রাসেল।
.
এক ঝাঁক গুলির শব্দ।
.
নীচে এক সৈনিক আরেকজনকে রিপোর্ট করে “অল আর ফিনিশড।’
.
নিভে গেল পৃথিবী থেকে আরেকটি নক্ষত্রের আলো।

১৬ আগস্ট, ১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিল্লীতে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্কটজনিত পরিস্থিতি স্বাধীনতার পর ভারতের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিপুল শরণার্থীর চাপে ভারতের অর্থনীতি সঙ্কটের মুখে।

১৬ আগস্ট, ১৯৭১ ১৪ জন এমএনএ কে সামরিক আদালতে তলব

সামরিক শাসক ১৪ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে ২২ আগস্ট সকাল ১০টার মধ্যে নাটোরে ২নং সেক্টরের উপ-সামরিক আইন প্রশাসকের আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। এঁরা হচ্ছেন: রিয়াজউদ্দিন আহমেদ রংপুর, মোশাররফ হোসেন চৌধুরী দিনাজপুর, মতিউর রহমান রংপুর , মফিজ আলী মোহাম্মদ চৌধুরী (ভুল নাম প্রকৃত মাজহার হোসেন চৌধুরী হবে) রংপুর , মোঃ আজিজুর রহমান দিনাজপুর, শাহ মাহতাব আহমেদ দিনাজপুর, মুজিবুর রহমান বগুড়া , মোতাহার হোসেন তালুকদার সিরাজগঞ্জ, আবদুল আউয়াল রংপুর, আবদুল মোমিন তালুকদার পাবনা, আবু সাঈদ পাবনা, এ.বি.এম. মোকসেদ আলী দিনাজপুর ও অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ আলী দিনাজপুর।

১৭ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আজম

লাহোরে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম বলেন, ভারত পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করার ব্যাপারে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযোদ্ধা) পাঠিয়ে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে এবং যুদ্ধের মাধ্যমেই পাকিস্তানকে তার জবাব দিতে হবে। গোলাম আজম আওয়ামী লীগের ৮৮ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যের আসন বহাল থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

১৭ আগস্ট ১৯৭১ আন্তর্জাতিক জুরিস্ট কমিশন
জেনেভাস্থ আন্তর্জাতিক জুরিস্ট কমিশন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য একটি টেলিগ্রাম প্রেরণ করে।

১৭ আগস্ট, ১৯৭১

‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লে: জেনারেল টিক্কা খান আওয়ামী লীগের ১৬ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে ২৩ আগস্টের মধ্যে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচার করা হবে বলে ঘোষণা করে। এঁরা হচ্ছেন: আতাউর রহমান তালুকদার রাজশাহী ,ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম দিনাজপুর, মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ নওগা, খালিদ আলী মিয়া রাজশাহী, শাহ মোহাম্মদ জাফরউল্লাহ রাজশাহী, এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান রাজশাহী , আমিরুল ইসলাম কুষ্টিয়া, আজিজুর রহমান আক্কাস কুষ্টিয়া, আবু আহমদ আফজালুর রশিদ বাদল কুষ্টিয়া,শহী উদ্দিন মেহেরপুর, খোন্দকার আব্দুল হাফিজ নড়াইল, সোহরাব হোসেন মাগুরা, এম. রওশন আলী যশোর , সুবোধ কুমার মিত্র যশোর, মোহাম্মদ মহসীন খুলনা।

১৭ আগস্ট ১৯৭১ আবুল কাসেম
কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রাদেশিক সাধারন সম্পাদক ( টিক্কা খানের পর বেসামরিক মালিক সরকারের ২ সেপ্টেম্বর ৭১ থেকে অর্থমন্ত্রী) বলেন ভারতের হিন্দুদের যোগসাজশে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান ভাঙ্গার যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা এখন নগ্ন ভাবে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন হিন্দুদের অত্যাচারের ফলেই মুসলিম পাকিস্তানের জন্ম হইয়াছিল। খোলাফায়ে রাসেদিনের আলোকে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল পাকিস্তান কায়েমের উদ্দেশ্য। এই দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ বা পাশ্চাত্য ধরনের গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে তা নিয়ে আলোচনার কোন অবকাশ নাই (বাকি ইমেজে)
নোটঃ কুড়িগ্রামের উলিপুর নিবাসী এই নেতার পুত্র মাইদুল ইসলাম সাবেক বিএনপি ও জাপা নেতা।

মেজর জলিলকে নিয়ে অপপ্রচার
মেজর জলিল মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। সেক্টর হলেও এটি জনবল বা সাব সেক্টর সংখ্যা ও বাহিনি বিন্যাসে ২ বা ৬-৮ নং সেক্টরের একটি সাব সেক্টর সাইজের ছিল। কারন ছিল ভু প্রকৃতি। এখানে নিয়মিত সৈন্য বরাদ্দ ছিল কম। ৯ নং সেক্টরের হলেও খুলনাকে স্বাধীন করে ৮ নং সেক্টর ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কম্যান্ড। বহুমুখী ১৪ টি অপরাধে ৭১ এর ৩১ ডিসেম্বর মেজর জলিল কে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। এই কারারুদ্ধ করাকে ভাসানি ন্যাপ এবং জাসদ সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী প্রচার করে সফল হইয়াছিল। সেই প্রচার এখনও অনেকে বলে এবং রেফারেন্স ব্যাবহার করে। আসলে কি ঘটিয়াছিল তখন? দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশে শুরু হইল আরেক নৈরাজ্য লুটপাট ও চাদাবাজি। শেখ মুজিব এবং প্রবাসী সরকার তখনও দেশে আসে নাই। বলতে লজ্জা নাই এই লুটপাটে কিছু দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি সামরিক কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে সবচে সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন মেজর জলিল (কাদের সিদ্দিকিও ছিল এই গ্রুপে) । ১৮ ডিসেম্বর খুলনার ডিসি হিসাবে যোগদান করতে আসেন খালেদার সাবেক মুখ্য সচিব ডঃ কামাল সিদ্দিকি। জলিল তাকে দায়িত্ব পালনে বাধাদেন। পরে প্রবাসী সরকারের চাপে সিদ্দিকি দায়িত্ব পাইলে প্রশাসনের কন অনুষ্ঠানে জলিল কে দেখা যাইত না। এমনকি বরিশালের অনুষ্ঠানগুলিতেও জলিল অনুপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় কমান্ডের মেজর জেনারেল দলবির সিং খুলনার ডিসিকে সহায়তা করে যাইতেছিলেন। জলিলের এই বিষয় ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে প্রবাসী সরকারের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে ওসমানী নাড়াচাড়া শুরু করেন। ডেপুটি চিফ একে খোন্দকারকে তদন্তভার দেয়া হয়। জলিলের সেক্টরের আওতায় কোন ক্যান্টনমেন্ট না থাকায় তিনি বিভাগিয় সদর দফতর খুলনার সামরিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। পাশেই ৮ নং সেক্টরের কমান্ডার মঞ্জুর যশোরে সেনানিবাসেই ছিলেন। তদন্ত কমিটির চেয়ে তার কাছেই জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলি বেশী জমা হইতেছিল। মেজর জলিলকে কৌশলে যশোর সেনানিবাসে সংযুক্ত করা হয় এবং সেখান থেকেই ৩১ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ কে খন্দকারের তদন্তে জলিল দোষী প্রমান হইলে সেনা নিয়ম অনুযায়ী মেজর মঞ্জুর সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে গুরুতর অভিযোগ ছিল শরণার্থীদের কাছ থেকে চাদা নেয়া ও অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারি। গ্রেফতারের পর হইতেই তার মা ছেলের মুক্তির জন্য প্রানপন চেষ্টা করেন। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে তিনি ছাড়া পান। তার ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারক ছিলেন কর্নেল তাহের। সদস্য ছিলেন মেজর শওকত, মেজর আশরাফ, ক্যাপ্টেন আমিরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন আনোয়ার, ক্যাপ্টেন মান্নান। তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার রফিকুর রহমান (ইসলাম নহে) ও মেজর মতিউর। সরকার পক্ষে কৌঁসুলি ছিলেন মেজর শামশুদ্দিন ও এডভোকেট মালেক। ২১ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। ছাড়া পাওয়ার পর মেজর জলিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সেই দিনেই তাহার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

১৮ আগস্ট, ১৯৭১ মিঃ চেস্টার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারী ও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মিঃ চেস্টার বোলস শেখ মুজিবুর রহমানের তথাকথিত বিচারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন: পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের যে গোপন বিচার চালাচ্ছে তা আগাগোড়া একটি প্রহসন মাত্র। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার এটা একটা চরম ধৃষ্টতা। এ বিচার সকল রীতিনীতি ও আইন-কানুনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

‘ওয়াশিংটন পোষ্ট’-এ একটি তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধে মিঃ চেস্টার বোলস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অতীতের সব ভুলত্রুটি সংশোধন করে পাকিস্তানের কাছে সামরিক অস্ত্র ও সমরসম্ভার বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা এবং পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক সাহায্য দান একেবারে বন্ধ করে দেবার আহ্বান জানান।

১৮ আগস্ট, ১৯৭১ সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী

মার্কিন সিনেটের উদ্বাস্তু বিষয়ক কমিটির সভাপতি সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী বলেন: পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র অপরাধ হলো তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। তাঁর বিচার আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে বিচারের ব্যাভিচার ও ন্যায়বিচারের প্রহসন মাত্র।

১৯ আগস্ট, ১৯৭১ সামরিক আদালতে এমএনএ দের তলব
ঢাকায় সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান আওয়ামী লীগের ২৯ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। এঁরা হচ্ছেন: আবদুল মমিন, আবদুল হামিদ, জিল্লুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মৌলবী হুমায়ুন খালিদ, শামসুর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, আলী আজম, আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ আবদুর রব, মোস্তফা আলী, এ.কে. লতিফুর রহমান চৌধুরী মানিক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, মোহাম্মদ ইলিয়াস, ফজলুর রহমান, এ.কে.শামসুজ্জোহা, আবদুল করিম ব্যাপারী, এ. ভুঁইয়া, শামসুল হক, কে.এম. ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন মোল্লা, এম.এ. গফুর, শেখ আবদুল আজিজ, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, এ. মান্নান হাওলাদার, আবদুর রব সেরানিয়াবাত এবং এনায়েত হোসেন খান।

১৯ আগস্ট, ১৯৭১ এমপিএ
পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদে অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত ৯৪ জন সদস্যের সদস্যপদ ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহাল।

১৯ আগস্ট, ১৯৭১
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র রবার্ট ম্যাকক্লক্সি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে বলে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী যে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার সাথে একমত নন।

২০ আগস্ট, ১৯৭১ জামায়াতে ইসলামী

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয কমিটির এক বৈঠকের প্রস্তাবে বলা হয়, ভারতীয় যুদ্ধবাজ ও তাদের চরদের যোগসাজশে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তিদের দমন করার কাজে সরকার যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, মজলিশে শুরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। (অবশিষ্ট ইমেজে)।

২০ আগস্ট, ১৯৭১ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর

করাচীর মাসরুর বিমান ঘাঁটির ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনীর টি-৩৩ বিমানে করে ভারতে আসার সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

মতিউর ১৯৬১ সালে রিসালপুরে পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র দুই বছর পর ১৯৬৩ সালে বৈমানিক হিসেবে কমিশন পান। বীরত্ব ও কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য খুব অল্প সময়েই তিনি পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে তিনি কৃতিত্ব দেখান। বিমান চালনায় দুরন্তপনার জন্য তার সঙ্গীরা তাকে ডেয়ার ডেভিল ফাইটার পাইলট নামে ডাকতেন। এরই মাঝে তিনি একবার বিমান ক্রাশ করে বেঁচে যান। এ কারণে তাকে এক বছর গ্রাউন্ডেড করে রাখা হয়। যদিও একই অপরাধে অন্য পশ্চিম পাকিস্তানীদের লঘুদন্ড দেয়া হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বৈরী আচরণের শিকার হয়েও নিজস্ব যোগ্যতায় মতিউর রিসালপুর একাডেমিতে কোয়ালিফায়েড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে মনোনীত হন এবং সাফল্যের পরিচয় দেন।
মতিউর রহমান ১৯ এপ্রিল ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেন। মতিউর রহমানের ভগ্নীপতি ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ। অপরদিকে মিলি রহমানের ভগ্নীপতি ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং মতিউর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনবোধ তাকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের বিরুদ্ধে মানসিকভাবে তৈরি হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব যখন কলাভবনে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা তুলছিলেন তখন ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মতিউর। আবার ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের ভাষণ শুনতে ড. আলাউদ্দিন আল আজাদের সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মতিউর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একমাস গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। তিনি গ্রামবাসীকে নিয়ে সভা করে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতিহত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। গ্রামের মাঠে সংঘবদ্ধ লোকজনকে ট্রেনিং দেয়াও শুরু করেন।
মতিউর মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন দেশ স্বাধীন হবে। এ কারণে মার্চে যখন তিনি ছুটিতে ঢাকায় ছিলেন তার প্রায় বড় সময় কাটিয়েছেন গোপন সাংগঠনিক কাজে। দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে তখন ঢাকার অবস্থানকারী বাঙ্গালী বিমান অফিসাররা পলাইয়া যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য জোটবদ্ধ হচ্ছিলেন। এ সময় উইং কমান্ডার এমকে বাশার, স্কোয়াড্রন লিডার এম সদরুদ্দীন, ফ্লাইট লে. সুলতান মাহমুদ, ফ্লাইট লে. এম হামিদুল্লাহসহ আরো কয়েকজন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারী গোপনে মিলিত হতেন। ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান ছিলেন অন্যতম সমন্বয়কারীর ভূমিকায়। পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের বাঙ্গালী ১৮ জন পাইলট এবং প্রায় ৫০ জন টেকনিশিয়ান একত্র হয়ে ভারতে চলে গিয়ে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন। মতিউর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিলেও তিনি নিজে তাতে অংশ নিতে পারেননি। যুদ্ধের শুরুতে তিনি যান তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর গ্রামে। তিনি যখন জানতে পারেন শফিউল্লাহর ২ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভৈরবের দিকে আসছে। তখন তিনি তাদের সাথে যোগ দেন। ১৪ এপ্রিল ব্রাহ্মানবারিয়াতে পাকিস্তানি বিমান হামলায় ২ বেঙ্গল ভারতে সরে গেলে তিনি ভারতে না যাইয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে স্ট্র্র্যাটেজি বদলান। পারিবারিক পরামর্শ ও তার নিজের প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ভগ্নহৃদয় মতিউর মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে ৬ মে পাকিস্থানের করাচিতে ফিরে যান। সেখান থেকে তিনি একটি বিমান হাইজ্যাক করে ভারতে পালিয়ে গিয়ে তারপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার চিন্তা করেন। বাঙ্গালী সৈনিকদের প্রতি পাকিস্থানীদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি থাকার কারণে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন তিনি। মানসিক যন্ত্রণাকে তিনি মনের মধ্যেই চেপে রেখে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। এক মাসের ব্যবধানে জুলাই মাসে পাকিস্তান এয়ার লাইন্সের (পিআইএ) একটি বোয়িং বিমান হাইজ্যাক করার পরিকল্পনা নেন। ‘কপালের লেখন না যায় খন্ডন।’ এবারো তিনি ব্যর্থ হন। দুর্ভাগ্যবশত পরিকল্পনাটি শেষ মুহূর্তে ফাঁস হয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত কোনো বাঙ্গালী অফিসারের নাম জানতে পারেনি পাকিস্তানীরা। পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে বলে তার মনোবল ভেঙে যায়নি।
বিমান হাইজ্যাক করার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার ফলে হঠাৎ করে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বাঙ্গালী পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করে দেয়া হয়। করাচি মশরুর বিমান ঘাঁটিতে বেস কমান্ডার সব বাঙ্গালী বৈমানিককে একত্রিত করে সতর্ক করে দেন যে কোনো অপারেশন্যাল এলাকায় তারা যেতে পারবে না এবং তাদের জন্য বিমান চালনা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। সঙ্গে সঙ্গে মতিউর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। সংকল্প নিলেন বিমান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে শক্তিশালী করার। তিনি কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন হয়ে মশরুর বিমান ঘাঁটিতে বেস ফ্লাইট সেফটি অফিসারের দায়িত্ব লাভ করেন।
পিআইএর বিমান হাইজ্যাক পরিকল্পনা বানচাল হওয়ায় মতিউর রহমান মানসিকভাবে বেশ আঘাত পেলেন। এই মানসিকভাবে আঘাতই তাকে আরো মরিয়া করে তুলে। এই সময় তিনি পাইলট অফিসার রাশেদ মিনহাজকে জেট বিমান উড্ডয়ন শিক্ষা দিতেন। ছুটিতে দেশে যাওয়ার সময় ছিল আসন্ন। তিনি মনে মনে পরিকল্পনা করলেন মিনহাজ যখন বিমান চড়ে উড়তে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে তিনিও ওই বিমানে চড়ে মিনহাজ সহই বিমানটি হাইজ্যাক করবেন এবং সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের আকাশে প্রবেশ করবেন। তার এই মনোবাসনা কেউ জানতে পারেনি। এমনকি তার স্ত্রীও তার কথাবার্তা-হাবভাবে বুঝতে পারেননি যে তিনি এত বড় একটা অ্যাকশন করতে যাচ্ছেন।
২০ আগস্ট শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় মতিউর রহমানের ছাত্র পাইলট অফিসার মিনহাজ ‘টি-৩৩’ বিমান নিয়ে উড়বার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। পূর্ব শিডিউল মতে সেটি আকাশে উড়বার জন্য প্রস্তুত ছিল। কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রত্যেক বিমানের একটা সাংকেতিক নাম থাকে। টি-৩৩ বিমানটির নাম ছিল ব্লু বার্ড-১৬৬। মিনহাজ টি-৩৩ নিয়ে উড়বার অনুমতি চাইলে কন্ট্রোল টাওয়ার তাকে নিয়ম মাফিক অনুমতি অর্থাৎ স্ট্যান্ডার্ড ক্লিয়ারেন্স দেয়। কন্ট্রোল টাওয়ারে তখন ডিউটিতে ছিলেন বাঙ্গালী পাইলট অফিসার ফরিদউজ্জামান এবং পাকিস্তান বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আসিম। ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর বিমানটি যখন রানওয়ে ২৭ এ ঢোকার জন্য চার নং ট্যাক্সি ট্রাক দিয়ে এগিয়ে টিলার আড়ালে পৌছে, মতিউর তখন তার গাড়ি নিয়ে তীব্রগতিতে ধেয়ে যান সেখানে। তিনি বিমান থামানোর নিদিষ্ট সংকেত দেন মিনহাজকে। নিয়ম হলো কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বিমান নিয়ে উড়বার ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরও যদি ফ্লাইট সেফটি অফিসার কোনো বিশেষ কারণে বৈমানিককে বিমান থামানোর সংকেত দেখান, তাহলে ওই বৈমানিক বিমান থামাতে বাধ্য থাকেন। নিরাপত্তা অফিসারের সংকেত মানতেই হলো রাশেদ মিনহাজের।
রানওয়েতে ট্যাক্সিট্রাকের মাঝপথে বিমানটিকে থেমে গিয়ে ক্যানোপি খুলতে দেখে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে পাইলট অফিসার ফরিউজ্জামান টি-৩৩ কে জিজ্ঞাসা করেন কোনো রকম অসুবিধা আছে কিনা? টি-৩৩ থেকে কোনো জবাব আসেনি। এরই মধ্যে বিমান থামিয়ে ক্যানেপি (বৈমানিকের বসার স্থানের ওপর স্বচ্ছ আবরণ) খোলার সঙ্গে সঙ্গে মতিউর ক্ষিপ্তগতিতে লাফিয়ে ওঠেন ককপিটের পেছনের আসনে। ককপিটে ওঠার আগে নিজের গাড়িকে বিমানের পেছনে আড়াআড়িভাবে রেখেছিলেন যাতে অন্য কোনো বিমান তার পিছু না নিতে পারে। মতিউর তার পিস্তল বাসায় রেখে প্যারাসুট হেলমেট কিছু না নিয়েই সম্পূর্ণ নিরস্ত্র-নিরাপত্তাহীনভাবে বিমানে চড়ে বসেছিলেন। কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে অনায়াসে ভারতে গুজরাটের বিমানঘাঁটি জামনগরে অবতরণ করতে পারবেন। ককপিটে শুরু হলো মতিউর-মিনহাজ অর্থাৎ গুরু-শিষ্যের তুমুল লড়াই। ধস্তাধস্তির মধ্যে বিমানটি হঠাৎ দ্রুত রানওয়ের মাত্র কয়েক ফুট ওপর দিয়ে বিপজ্জনকভাবে টি-৩৩ বিমানটি রানওয়ের দিকে এগিয়ে যায়। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে বিমানটি বহু কষ্টে উপরে উঠে যায়। বিমানটি এমনভাবে একাত-ওকাত হয়ে উড়তে থাকে যাতে বোঝা যায় বিমানটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ককপিটের ভেতর ভীষণ হাতাহাতি চলছে। রাডারে যাতে বিমানের অবস্থান ধরা না যায় তার জন্য টি-৩৩ খুব নিচু দিয়ে উড়ে গেল। বিমানের ডানা দুটি তখনো জোরে কাঁপছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই বিমানটি দিগন্তে মিলিয়ে যায়। কন্ট্রোল টাওয়ারে তখন হুলস্থূল পড়ে গেছে। দুঃসংবাদ বাতাসের এসে গেল।
পাকিস্তানী ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আসিম সঙ্গে সঙ্গে বেস কমান্ডারকে টি-৩৩ ছিনতাইয়ের খবর জানালেন। খবর শোনামাত্র বেস কমান্ডারও দ্রুত কন্ট্রোল টাওয়ারে চলে এলেন। অল্প ক্ষণের মধ্যেই দুটি এফ-৮৬ জঙ্গি বিমান টি-৩৩ এর খোঁজে আকাশে উড়ে যায়। সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও টি-৩৩ এর কোনো হদিস করা গেল না। বিকালের দিকে খবর পাওয়া গেল থাট্টার অদূরে তালাহারে বিমানটি টি-৩৩ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং দুজন বৈমানিকই নিহত হয়েছেন। মতিউরের দেহ সম্পূর্ণ অবস্থায় মুল ক্রাশ এলাকা থেকে আধা কিমি দূরে পাওয়া যায়। মিনহাজের দেহ খণ্ডিত অবস্থায় ক্রাশ পয়েন্ট এর কাছেই পাওয়া যায়। পাকিস্তানীদের তদন্তে যানা যায় ক্রাশের আগে মতিউর ছিটকে পড়েন মাটিতে মিনহাজ বিমান নিয়ে ফেরত আসার চেষ্টায় ক্রাশে মারা যান। ঘটনাটি পাকিস্তানী বিমান বাহিনীসহ সবখানে আলোড়ন তোলে। মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি ও দুই বাচ্চার জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় মানসিক অত্যাচার। একটি বাড়িতে তাদের আটকে রাখা হয়। যে বাড়ির রং ছিল কালো। মিলি রহমানের এক বোন রোজী কুদ্দুস ছিলেন তাদেরই প্রতিবেশী। তার স্বামী এম এ কুদ্দুস বিমান বাহিনীর অফিসার হওয়ায় তাদেরও ধরে নিয়ে যায়। এদের পাশাপাশি পাশবিক অত্যাচার চালায় ফ্লাইট লে. মতিউর রহমানের সহকর্মী বাঙ্গালী বিমানবাহিনীর সদস্যের ওপর। পাকিস্তান সরকার রশিদ মিনহাজকে জাতীয় বীর হিসেবে নিশান-ই-হায়দার উপাধিতে ভূষিত করে আর মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে করাচিতে মাসরুর এয়ার বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের গোরস্তানে কবর দেয়া হয়েছিল।

ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ এমনই একজন মানুষ ছিলেন।’
বাংলাদেশে সাত বীরশ্রেষ্ঠের ৫ জনের কবর হলেও বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের কবর থেকে যায় করাচিতে বিমানবাহিনীর কবরস্থানে। ফলে কেউ পাকিস্তান গেলেও যেখানে যাইতে পারতো না। বছরের পর বছর ধরে অযত্ন, অবহেলায় পড়ে ছিল এই বীরের কবর। শহীদ মতিউরের কবরে দেখতে চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধানের কাছে এক আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধানের কাছে এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে বলা হয়। খালেদা জিয়া সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি অনুমোদন করে পাকিস্তানে শহীদ মতিউরের কবরের কাছে তার পরিবারের সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের মেয়ে মাহীন, তার স্বামী ফয়সাল খন্দকার ও তাদের ছেলে রাশাদ পাকিস্তানে মতিউর রহমানের কবর জিয়ারতের সুযোগ পান। কবর দেয়ার ২৩ বছর পর পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান। এরপর থেকে ফ্লাইট লে. মতিউর রহমানের দেহাবশেষ আনার বিষয়টি আলোচনায় আসতে থাকে। বিশেষ করে তার পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে চেষ্টা করতে থাকেন। শহীদের স্ত্রী মিলি রহমান পত্রিকায় লিখে, স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ২০০৬ সালের মার্চে পাকিস্তান সফরকালে পাকিস্তানী সরকারের সঙ্গে তিনি সরাসরি এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের একটি টিম পাকিস্তানে যায়। তারা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ২৪ জুন। ৩৫ বছর পর তিনি ঘরে ফিরলেন। তবে শূন্য হাতে নয়, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় উজার করা ভালোবাসায় পূর্ণ হয়েই তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। এদেশের মানুষকে তার মতো বীরেরা জীবনের বিনিময়ে এদের দিয়েছেন। সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ-স্বাধীনতা।
মতিউরের দেহাবশেষ ২৪ জুন ২০০৬ সাল রাতে পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছে। দেশের মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা
তা গ্রহণ করেন। পরদিন সকালে প্যারেড স্কোয়ারে দোয়া ও দর্শনার্থীদের জন্য তা কিছুক্ষণ রাখা হয়। যদিও এ সময় অতিরিক্ত কড়া নিরাপত্তার কারণে অনেকের পক্ষেই কফিনের কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ন্যাশনাল প্যারেড স্কোয়ার এক সময় পরিচিত ছিলো তেজগাও এয়ারপোর্ট হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে মতিউর রহমান বাংলাদেশ ছাড়ার সময় এ এয়ারপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন। ৩৫ বছর পর তিনি সেই এয়ারপোর্টেই এসে কিছুটা সময় থাকলেন। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবার জন্যই একটি অসাধারণ ঘটনা। বিশেষ করে দেশের স্বাধীনতার পর জন্ম নেয়া প্রজন্মের জন্য এ এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। দেশের জন্য শহীদ হওয়া সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্ত এক বীরের মৃত্যুর ৩৫ বছর পর কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার বিষয়টি এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেয়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সংরক্ষিত অংশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠদের গ্রামে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে সময় কাটছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমানের। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর মতিউর রহমানের দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনায় একটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে তার। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে মতিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর’ করার যে দাবি জানিয়ে আসছেন, তা আজও পূরণ হয়নি। মিলি রহমান বর্তমানে ঢাকার মনিপুরীপাড়ায় বসবাস করেন। তার দুই সন্তান মাহিন মতিউর ও তুহিন মতিউর বর্তমানে প্রবাসে। ঢাকার মনিপুরীপাড়ায় যে বাসটিতে মিলি রহমানের বসবাস, সে বাসাটির প্রায় সর্বত্রই সাজানো হয়েছে মতিউরের স্মৃতিচিহ্ন। ড্রইংরুমের দেয়ালে বাঁধানো পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি এফ-৮৬ ও একটি টি-৩৭ বিমান।

২১ আগস্ট ১৯৭১ রাজাকার বাহিনি
এ দিন টিক্কা খান আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনিতে পরিণত করার আদেশ জারী করেন। রাজাকার অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ১৯৫৮ সালের আনসার এ্যাক্ট বাতিল করে আনসার বাহিনীকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আনসার বাহিনীর এ্যাডজুট্যান্টদর পরিণত করা হয় রাজাকার এ্যাডজুট্যান্টে। ২১ আগষ্ট রাজাকার অর্ডিন্যান্সের ব্যাখ্যায় বলা হয়, রাজাকার বাহিনীকে নিয়োগকৃত ব্যক্তিদেরকে পূর্ব পাকিস্তান সরকার ট্রেনিং এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করবে। ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, অর্ডিন্যান্সের বিধান মতে প্রাদেশিক সরকার সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে সকল রাজাকার অথবা নির্দিষ্টসংখ্যক রাজাকারকে প্রাদেশিক পুলিশ বাহিনীর অন্তভূক্তির আদেশ দিতে পারবে।

২১ আগস্ট ১৯৭১ সাতক্ষীরা
নোটঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ১০ম খণ্ডে মেজর জলিলের সীমাহীন সমর বইএর রেফারেন্সে বিষয় টি প্রত্যাখ্যান করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল বিজয়ের কথা উল্লেখ আছে।

সেভেন মার্ডার ১৯৭৪ সাক্ষী জুগল হাসমি এর জেরা ১৯৭৫ মাঝামাঝি

koment – সফিউল আলম প্রধান যার অন্যতম আসামি হিসাবে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন এবং পরে জিয়ার বদন্যতায় খালাস পায়।ঐসময়ে সে ছাত্রলীগের বড় নেতা ছিলো কিন্তু মুজিব এব্যাপারে আপোষ করেননি। পরে সে জিয়া এবং এরশাদের মন্ত্রী ছিল,এখনও সে মাঝে মাঝেই মিটিং করে আর খালেদা /তারেক বা বিএনপি মহাসচিব তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।তার বর্তমান দলের নাম জাতীয় গনতান্ত্রিক দল(জাগপা)।তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি আনোয়ার জাহিদ, এরশাদের সময় তারা বিশাল আলোচনা- সমালোচনায় আসেন তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য।

২২ আগস্ট ১৯৭১ মাওলানা আবদুর রহিম
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রী কমিটির এ দিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাওলানা আবদুর রহিম জানান, হানাদার বাহিনীর তৎপরতা যথেষ্ট নয় তিনি বাঙালীদের ওপর ৬০ এবং ৭২ নং সামরিক বিধিকে আরো নির্মমভাবে প্রয়োগের সুপারিশ করেন। (আজাদ)

২২ আগস্ট ১৯৭১ জয়বাংলা রেকর্ড বাজেয়াপ্ত
১৯৭০ সালের শেষ দিকে বাংলা দেশাত্মবোধক গানের এল পি রেকর্ড এই দিনে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।

২২ আগস্ট, ১৯৭১ সাবেক মন্ত্রী আজমল আলী

সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী আজমল আলী চৌধুরী সিলেটে বলেন, সিলেট রেফারেন্ডামের মাধ্যমে পাকিস্তানে যোগদান করেছে। কাজেই পাকিস্তান বিরোধী হিন্দুস্তানী চক্রান্ত নস্যাৎ করে পাকিস্তানের অখন্ডতা বজায় রাখা আমাদের(সিলেটবাসীর ) পবিত্র দায়িত্ব।

২২ আগস্ট ১৯৭১
এ দিন ইরাকের বাগদাদের পাকিস্তানী দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এ. এফ. এম. আবদুল ফাতেহ স্বপক্ষ ত্যাগ করেন। উল্লেখ এ সময়ের মধ্যে যে ২০ জন বাঙ্গালী কূটনীতিক পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন তাদের মধ্যে মিঃ ফতেহ সবচেয়ে উচ্চপদস্থ অফিসার। তার লন্ডন আগমনের সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। তিনি ইরাক থেকে গোপনে লন্ডনে চলে এসেছিলেন। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনার জন্য। পরবর্তীতে বিচারপতি চৌধুরী এক তার বার্তায় মুজিবনগরস্থ বাংলাদেশ সরকারকে মিঃ ফতেহর আনুগত্যের সংবাদ জানান।

২২ আগস্ট, ১৯৭১ভুট্টো

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, জনগণ চায় পিপলস পার্টির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বেআইনী ঘোষিত হবার পর তাঁর দলই এখন কেবল পাকিস্তানের বৃহত্তম দল নয়, জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।

২৩ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আজম
লাহোরে পূর্ব পাকিস্থান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় চরদের (মুক্তিযোদ্ধা) প্রধান শিকার জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (আওয়ামী লীগ) বিরোধীতা করার জন্য সেখানে বহু জামায়াত কর্মী দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) হাতে প্রাণ হারিয়েছে। একমাত্র জামায়াত ইসলামী প্রদেশের প্রতিটি অংশে দুষ্কৃতকারীদের মোকাবেলা করছে।

২৩ আগস্ট, ১৯৭১ মাহমুদ আলী
লন্ডনে পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী এদিন বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ডের সাফাই গেয়ে এক বক্তব্য দেন।
মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলছি, পত্র-পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে পরিস্থিতি ঠিক তার বিপরীত। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে সব প্রশ্ন তুলেছেন তা ঠিক নয়। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। মিল, কলকারখানা, ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান বাঙালী অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কেন্দ্রেও বাঙালীরা উচ্চ পদে রয়েছে।
উল্লেখ্য, এসময়ে লন্ডনে বাঙ্গালী নিধনের স্বপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রচারণা কাজে নিয়োজিত ছিলেন মাহমুদ আলী, জামির উদ্দিন আলী, ব্যারিষ্টার আব্বাস, বেগম আখতার সোলায়মান প্রমুখ।

২৩ আগস্ট, ১৯৭১ বহাল এম.এন.এ. এম.পি.এ. দের প্রকাশ্য হওয়ার আবেদন।
ঢাকায় প্রাদেশিক সরকারের জনৈক মুখপাত্র বলেন, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সব সদস্যকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ৮৮ জন এম.এন.এ. ও ৯৪ জন এম.পি.এ.-র বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সঙ্কট মুহুর্তে অর্পিত দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে তাদের দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়। সরকার তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
নোটঃ এ পর্যন্ত ৯ জন সদস্য পাকিস্তানের আনুগত্য স্বীকার করে বিবৃতি দিয়াছেন। যদিয় তাদের অনেকে দোটানা ছিলেন।

১৯৭২ কাদের সিদ্দিকি
১৯৭২ সালেই কাদের সিদ্দিকির বিরুদ্ধে লুটপাট চাদাবাজি গুণ্ডামি সহ বিবিধ অভিযোগ উঠে খোদ ছাত্রলীগ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। বাধ্য হইয়া কাদের সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রায় সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। শেষ মেস শেখ মুজিবের এক বিবৃতি ই তাকে রক্ষা করে নচেত মেজর জলিলের মত তার অবস্থা হইত।

মার্চ ১৯৭২
ইন্দিরা গান্ধীর সফর উপলক্ষে তার প্রতি শেখ মুজিবের পিতা শেখ লুতফর রহমানের চিঠি। চিঠিতে অসুস্থ লিখলেও তিনি ভ্রমন করার মত সুস্থ ছিলেন না। ১৭ মার্চ শেখ মুজিবের জন্ম দিনে তার গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকের মুখোমুখি। তার পোড়া বাড়িতে তখনও তাবু।

বাংলাদেশের বন্ধু কুলদীপ
কুলদীপ নায়ারকুলদীপ নায়ার উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে যতটা ভালোবাসা ও সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন, আর কোনো সাংবাদিক সেটি পারেননি। সাতচল্লিশের দেশ বিভাগ থেকে হালের ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে তাঁর নিরপেক্ষ ও নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি সবার প্রশংসা কেড়েছে।
কুলদীপ ইংরেজি দৈনিক ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর সম্পাদক ছিলেন। শেষ দিকে কলাম লেখাই ছিল তাঁর পেশা। তিনি প্রথম আলোতেও নিয়মিত লিখতেন।
দেশ বিভাগের সময় কুলদীপ জন্মভূমি পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।।
কুলদীপ নায়ার একাত্তরে তার লেখনী দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছেন।
কুলদীপ নায়ারের আত্মজীবনীমূলক বই ‘বিয়ন্ড দ্য লাইনস’। ‘বিয়ন্ড দ্য লাইনস’-এর শুরু শিয়ালকোটে, তাঁর কৈশোরে যখন দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র হয়, সমাপ্তি টেনেছেন মনমোহন সিংয়ের শাসনামলে এসে। ১৯টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই আত্মজীবনীকে আমরা মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। ১. শৈশব থেকে দেশ বিভাগ পর্যন্ত; ২. দেশ বিভাগ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে হালনাগাদ।
কুলদীপ নায়ার শিখ ও হিন্দু উভয় পারিবারিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। তাঁরা শিখ হলেও লম্বা চুল রাখেননি। কুলদীপ নিজের নামের সিং বাদ দিয়ে নামের শেষে নায়ার যোগ করেছেন।
কুলদীপ নায়ার তাঁর আত্মজীবনীতে ‘বাংলাদেশ যুদ্ধ’ নামে যে অধ্যায়টি লিখেছেন, সেটি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকার এবং নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে। পটভূমি হিসেবে এসেছে ১৯৭০ সালের নির্বাচন, বাঙালিদের বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া-ভুট্টোর চক্রান্ত, ২৫ মার্চের সেনা অভিযান, ভারতে লাখ লাখ শরণার্থীর আশ্রয় গ্রহণ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধে ভারতের সহায়তা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইত্যাদি। তিনি শেখ মুজিবের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির ঘটনা প্রবাহ জানতেন তা তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
কুলদিপ নায়ার প্রথম বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করেন লন্ডনে ১৯৫৮ সালে। শেখ মুজিব মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের পর ১ মাসের সফরে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য সহ আর কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ সফরে বেড়িয়েছিলেন। সেই সময়ে মুজিব যুক্তরাষ্ট্র সফর করে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। শেখ মুজিবের সাথে তখনকার আলোচনায় তিনি মুজিবের মধ্যে পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব দেখতে পান। ৩৮ বছর বয়সী মুজিবের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ দেখতে পান। উল্লেখ্য পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগের আমলেই(সেপ্টেম্বর ৫৬—অক্টোবর ৫৭) ভারতের সাথে পাকিস্তানের সবচে খারাপ সম্পর্ক ছিল। কারন তখন প্রধান মন্ত্রী ছিলেন সোহরাওয়ারদি। ৬৫ যুদ্ধের সময়ে ভাল সম্পর্কের মাঝেই পাকিস্তান ভারতের সাথে যুদ্ধে জড়াইয়া ছিল। শেখ মুজিবের সাথে নায়ারের ২য় দেখা হয় ৭২ সালের জুনে। এই সাক্ষাত না হলে তার বিয়নড দা লাইন বই লেখা শেষ হয় না। বইয়ের স্বার্থে নায়ার জুলফিকার আলী ভুট্টো এর সাক্ষাৎও নেন। (সোহরাব হাসান প্রথম আলো এর লেখা থেকে আংশিক নেয়া)

২৪ আগস্ট ১৯৭১ গোলাম আযম
জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রামে’ এ দিনের প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, লাহোরে জামায়াতে ইসলামীর এক সম্বর্ধনা সভায় গোলাম আযম দেশের বর্তমান অবস্থার জন্যে কতিপয় স্লোগান সর্বস্ব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দায়ী করেন । সরকারের বর্তমান কার্যক্রম দুষ্কৃতকারী’ দমনের জন্যে পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি জানান । আর কোনদিন যাতে ‘তথাকথিত স্বাধীনতা’র জন্যে বাঙালীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে তার জন্যে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব চৌধুরী রহমত লাহোরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশে কোনো বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার সময় এখনো আসেনি।

২৪ আগস্ট, ১৯৭১ নেজামে ইসলাম
পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলাম দলের জেনারেল সেক্রেটারী মওলানা আশরাফ আলী ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, সীমান্ত এলাকায় নিরীহ জনগণের ওপর ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা অত্যাচার করছে। তিনি এ সময়ে রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, বগুড়া এলাকায় পাকপন্থীদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে সফর করেন।

২৪ আগস্ট ১৯৭১ খয়েরউদ্দীন
শান্তি কমিটির আহবায়ক কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দীন এ দিন পশ্চিম পাকিস্তান গমন করেন। তিনি লাহোর ও রাওালপিণ্ডিতে তার দলের সমাবেশ ও সভায় বক্তব্য রাখবেন। তার সাথে সেখানে গিয়াছেন প্রাদেশিক সহ সভাপতি একিউএম শফিকুল ইসলাম। সেখানে তারা মুসলিম লীগের ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়া আলোচনা করবেন। লাহোর বিমান বন্দরে খয়ের বলেন তার দল পাকিস্তান আনিয়াছে তাই সকলের উচিত মুসলিম লীগে যোগ দেয়া। তিনি পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসীদের হাত মিলাইতে অনুরোধ করেন

২৪ আগস্ট ১৯৭১
মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরায় রাজাকারদের আশাশুনি ক্যাম্প আক্রমণ করে। এই আক্রমণে রাজাকারদের ক্যাম্পটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং অনেক রাজাকার নিহত হয়।
(পত্রিকার তথ্য এর সাথে প্রাপ্ত ইতিহাসের গরমিল দেখা যায়)

৫ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আজম

জামায়াতের প্রাদেশিক আমীর গোলাম আজম পেশোয়ারে বলেন, সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিশ্বাসঘাতকতা থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে। দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারিদের নির্মূল করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন।

২৫ আগস্ট ১৯৭১
পাকিস্তান ব্রিটিশ সরকারের কাছে ইরাকে নিযুক্ত পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহকে আশ্রয় দেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে আবেদন জানায় । পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রোদ্রহী’ কর্মচারীকে আশ্রয় দেয়ার ব্রিটিশ নীতিকে পাকিস্তান সমালোচনা করেন।

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ২ দিন বয়সী জয় (সভেন নিকোলাশ স্টর্মবার্গ) পরিবারের একমাত্র জীবিত মানুষ।
বর্তমানে সুইডেনের নাগরিক এবং মনোবিদ। বাংলাদেশ দেখে গেছেন অনেক আগেই। তিনি কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নন।

২৬ আগস্ট, ১৯৭১ আবদুস সাত্তার

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার বিষয় ছিল বাতিল কৃত আওয়ামী এমপি দের শুন্য আসনে উপ নির্বাচন সম্পন্ন করা।
নোটঃ সাত্তার ইয়াহিয়াকে পরামর্শ দেন যাতে পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচন না করে সমঝোতার ভিত্তিতে আসন গুলি ভাগ করে নেয়া। ইয়াহিয়া পরে এই সমঝোতা ভিত্তিক ভাগাভাগির দায়িত্ব দেন রাও ফরমান আলীর উপর। রাও ফরমান আলি ৭০% আসনে ভাগাভাগি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। গোলাম আজম কে দেয়া হয়েছিল টাঙ্গাইল সদর।

২৬ আগস্ট ১৯৭১ এ এম মালিক
এ দিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও তাহার ত্রান বিষয়ক বিশেষ সহকারী ডাঃ এ এম মালিকের মধ্যে আলোচনা বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ত্রান বিষয়ক বিশেষ সহকারী ডাঃ এ এম মালিক পরে ইসলামাবাদে বলেন, ইয়াহিয়া খান দেশে একটি বেসামরিক সরকার গঠনে আগ্রহী।

মওলানা সাইদি ১৯৭২
মওলানা সাইদি ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ দালাল আইনের অপরাধ এর চেয়েও কঠোর ছিল। তিনজন দালাল ও একজন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতার জেল জীবনের উপর লেখা বইয়ে সাইদির মুক্তির বিবরন না পাওয়ায় ধারনা করা যায় তিনি দীর্ঘদিন কারাবন্দী ছিলেন।

২৭ আগস্ট ১৯৭১ ফরিদ আহমেদ
কেন্দ্রীয় শান্তি ও কল্যাণ কমিটির সভাপতি ও পিডিপি ভাইস প্রেসিডেন্ট মৌলভি ফরিদ আহমেদ (কক্সবাজার ) চট্টগ্রামের মুস্লিম ইন্সটিটিউটে এক সমাবেশে বলেন পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় অভিসন্ধিকে প্রতিহত করার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানাইয়াছেন। তিনি বলেন ভারত ইতিমধ্যেই বেরথ হইয়াছে তাই তারা এখন অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের ক্ষতি করছে। সকল নাগরিকের কর্তব্য হইল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূল করা।

২৭ আগষ্ট ১৯৭১ লন্ডনে বাংলাদেশের মিশন
এ দিন লন্ডনে ২৪ প্রেসব্রিজ গার্ডন্সে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর নেতৃত্ব স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় মিশন উদ্বোধন হয়। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বাঙালী কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবুল ফাতেহ, মহিউদ্দিন আহমদ, লুৎফুল মতিন, আব্দুর রউফ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, আব্দুস সালাম, এক এম নূরুল হুদা ও ফজলুল হক চৌধুরী। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দস্তখত সম্বলিত ‘লেটার অব ক্রেডিন্স’ বিচারপতি চৌধুরীকে মুজিব নগর থেকে প্রেরণ করা হয়। দূতাবাস উদ্ধোধনের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন।

২৭ আগস্ট ১৯৭১ ডাঃ মালিক (চুয়াডাঙ্গা )
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকায় ফেয়ার পথে আজ ডঃ এম.এ.মালিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে বলেন,’প্রেসিডেন্ট বর্তমানে বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত আগ্রহী’। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করে,’ সেখানে অত্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। ‘সমাজবিরোধীদের প্ররোচনায় যারা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা বুঝতে পেরে আবার ফিরে আসছে।এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার উদ্ধাস্তু দেশে ফিরে এসেছে।
সেনাবাহিনী দেশের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে

২৭ আগস্ট ১৯৭১ বহাল এমপিএ এমএনএ
বহাল এমপিএ এমএনএ গনেরা যাতে পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত আসে সেই জন্য তারা যে ভারত গিয়াছিল তাহা অপরাধ হিসাবে গণ্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়াছে ইয়াহিয়া প্রশাসন।
নোটঃ এই সুযোগ নিয়াছিল মাত্র ৪-৫ জন বহাল এমপিএ এমএনএ

২৭ আগস্ট, ১৯৭১ মিজানুর রহমান চৌধুরী
বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র মিজানুর রহমান চৌধুরী মুজিবনগরে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মোতায়েন না করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব উ’ থান্টের প্রতি আহ্বান জানান।

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের নিহত সক্রিয় কর্মী সংখ্যা
নোটঃ কর্মী বলতে বুঝায় অন্তত তৃণমূলের কোন কমিটিতে ছিলেন।

২৮ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আজম

পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম বলেন, শ্লোগান আওড়াইয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবেলা করা যাবে না। সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। দেশপ্রেমিক জনগণকে অবিলম্বে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহবান জানান।

২৮ আগস্ট ১৯৭১ঃ ব্রিটিশ এমপি আর্থার বটমলে
ব্রিটিশ এমপি আর্থার বটমলে জুলাই মাসে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা সফর করার পর দেশে ফিরে গিয়ে পাকিস্তানীদের অত্যাচার নিপীড়ন হত্যাযজ্ঞের বিবরণ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরিয়াছিলেন । পাকিস্তান সরকার সবসময়েই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করেছে’ এই মিথ্যা প্রচারণা চালাইয়া আসিতেছে। এদিনে বটমলে বলেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শেখ মুজিবর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সমস্যা সমাধান সম্ভব। পাকিস্তান সফরকালে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে তিনি এ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি বলেন ইয়াহিয়া একরোখা তাই এই প্রস্তাব তিনি মানবেন না।

২৮ আগস্ট, ১৯৭১ কেনেডি ও চেস্টার বোলস

সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ও ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত চেস্টার বোলস বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শাস্তি দেয়া হলে পাকিস্তানের সব ধরনের মার্কিন সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করেন।

২৮ আগষ্ট ১৯৭১ শান্তি কমিটি
এদিন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত এ কিউ এম সফিকুল ও খাজা খয়েরউদ্দীন কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতাদের সম্মানে এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে মিয়া মমতাজ দৌলতানা নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা ও আত্মোৎস্বর্গের জন্যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, যতদিন এসব দেশপ্রেমিকদের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন বজায় থাকবে অখণ্ড পাকিস্তানের।
নোটঃ জামায়াতে’ ইসলামীর গোলাম আযম ও মাওলানা আবদুর রহিম পিডিপি এর নুরুল আমিন, মৌলভি ফরিদ ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। কারন এই সময়ে ইয়াহিয়া বেসামরিক প্রশাসন চালু করতে যাইতেছিলেন। ক্ষমতা পাইতে তারা দৌড় ঝাপ দিতেছিলেন।

২৮ আগস্ট, ১৯৭১ মাহমুদ আলী

পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী তার আড়াই মাসের ইউরোপ সফপের শেষ পর্যায়ে লন্ডনে বলেন ‘ইউরোপ ও আমেরিকার সংবাদসমূহ পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করছে। বাস্তবে পত্র পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে পরিস্থিতি ঠিক তার বিপরীতে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন তা ঠিক নয়। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে।

২৮ আগস্ট, ১৯৭১ আবু সাঈদ চৌধুরী

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মনোনীত হন। এর আগে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ফলে পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে এই কামশনের সদস্যপদ থেকে তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়।

২৮ আগস্ট, ১৯৭১ জর্জ বুশ

জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ বুশ মহাসচিব উ’ থান্টের সাথে সাক্ষাৎ করে জানান, পূর্ব পাকিস্তানের মার্কিন সাহায্য সমন্বয়ের জন্য ‘মার্কিন টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হয়েছে।

ডঃ মোকাররম হোসেন খন্দকার
৭১ এর রাজাকার বুদ্ধিজীবী ডঃ সাজ্জাদ হসাইনের বইয়ে দেখা যায় ডঃ মোকাররম হোসেন খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের না। তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের নামকরন করা হইয়াছে এবং ৭৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার উনি পাইয়াছেন।

২৯ আগস্ট, ১৯৭১ গোলাম আজম

রাওয়ালপিন্ডিতে এদিন গোলাম আযম জামায়তের কর্মীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে আরও কাঠোরভাবে সামরিক বিধিগুলো প্রয়োগ করার আহবান জানান।
পরে তিনি করাচী গমন করেন এবং সেখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আলাদা নির্বাচন পদ্ধতিতে পুনরায় পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান। তিনি বলেন, আলাদা নির্বাচন না হওয়াতে গত নির্বাচনে হিন্দুদের সমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। তিনি আরো বলেন, এ মুহুর্তে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে চরম বোকামী।

২৯ আগষ্ট ১৯৭১ ব্রিটেনে বাংলাদেশ মিশন
এদিন বৃটেনে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সালমান আলী ব্রিটেনে বাংলাদেশ মিশন খোলার অনুমতি দেয়ার ব্রিটিশ সরকারের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানান। ব্রিটেনের এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং তারা প্রকারান্তেরে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন করেছে।

২৯ আগস্ট, ১৯৭১ রুমী, সুরকার আলতাফ সহ শীর্ষ ৬-৭ গেরিলা গ্রেফতার

রাতে পাকবাহিনী আকস্মিভাবে এলিফ্যান্ট রোডের ৩৫৫ নম্বর কনিকা বাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে পাকসেনারা শরীফ, জামিল ও গেরিলা যোদ্ধা রুমীকে বন্দী করে নিয়ে যায়। এরপর রুমিকে তার অন্যান্য সহযোগীসহ ঢাকা সেনানিবাস নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা সেনানিবাসের একটি ছোট কক্ষে সেই গ্রুপের সব(শহীদ আলতাফ মাহমুদ সহ) গেরিলাযোদ্ধাদের আটক রেখে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এরপর রুমি আর তার সঙ্গীদের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অজস্র বন্দির মতোই কোন এক অজ্ঞাত স্থানে হত্যা করা হয় দেশপ্রেমিক এই সন্তানদের। রুমী ভারতের ‘মেলাঘরে’ ২ নং সেক্টরের আওতায় খালেদ মোসাররফের থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে জুন মাসে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

শাহ মোয়াজ্জেম তার বইয়ে যে চৌধুরীর কথা বলছেন তিনি হলেন বি চৌধুরীর পিতা কফিল উদ্দিন চৌধুরীর। শাহ মোয়াজ্জেম এর আসনে তার পরিবর্তে দলে উড়ে এসে জুড়ে বসা কফিল চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কফিল কিছুদিনের জন্য ভারত গেলেও মুজিবনগর সরকারের সাথে যুক্ত ছিলেন না। পরে আগস্ট মাসের দিকে প্রদেশে এসে জহির গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিলেন। দালাল আইনের খরগ থেকে তিনি কোনোমত রেহাই পান বয়সের কারনে।

৩০ আগষ্ট ১৯৭১ বাংলাদেশ মিশন
এ দিন নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ মিশন চালু হয়। হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী মিশন প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

৩০ আগস্ট ১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী
এদিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিম বাংলা এবং ত্রিপুরায় শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। শিলিগুঁড়ির কাছে তাপুরহাট মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ শিবির তিনি পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জনাব মতিউর রহমান এম.এন. এ. প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। তাপুর হাট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৮০০ জন যুবক প্রশিক্ষণরত ছিলেন।

৩০ আগস্ট, ১৯৭১ খাজা খয়রুদ্দিন
রাওয়ালপিন্ডিতে কাউন্সিল মুসলীম লীগের খাজা খয়রুদ্দিন ও মওলানা শফিকুল ইসলাম প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করেন।

৩০ আগস্ট ১৯৭১ বাংলাদেশ সরকারের নামে ডাক টিকেট প্রকাশ প্রসঙ্গে

৩০ আগস্ট, ১৯৭১ পাকিস্তান সরকারের প্রতিবাদ লিপি
পাকিস্তান সরকার বৃটেন ও বৃটিশ উপনিবেশগুলোর বিরুদ্ধে বৃটিশ সরকারের কাছে এক প্রতিবাদ লিপি পেশ করে। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয় : বৃটিশ সরকার ও হংকং প্রশাসন সেখানে আশ্রয় প্রার্থী বাঙালী বিদ্রোহীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করছেন এবং বিদ্রোহীদের বৃটেনে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। বিদ্রোহীদের বি.বি.সি বেতার ও টেলিভিশন ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে। বহু বৃটিশ নাগরিক পাকিস্তান ধ্বংসাত্মক কাজ চালানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও অস্ত্র ক্রয় করতে বিদ্রোহীদের সাথে হাত মিলিয়েছেন।

(পোস্টের বাকি অংশ বিভিন্ন পোস্টে যুক্ত হয়েছে।)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!