You dont have javascript enabled! Please enable it!
গণকপাড়ার যুদ্ধক্ষেত্র (অ্যামবুশ)
ভূমিকা
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে দেশের অন্যান্য এলাকার মতাে বগুড়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের একাধিক যুদ্ধ হয়েছিল। ঐ যুদ্ধগুলাের মধ্যে গণকপাড়া অ্যামবুশ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য ভূমির বর্ণনা গণকপাড়া বগুড়া জেলা থেকে আনুমানিক ১৮-১৯ কিলােমিটার পূর্ব দিকে। অবস্থিত। গণকপাড়ার উত্তরে ভেলুরপাড়া, সােনাতলা, পশ্চিমে গাবতলী, বগুড়া, দক্ষিণে বালিয়াদিঘি, ধুনট এবং পূর্বে সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদী অবস্থিত। গণকপাড়া খােলা ভূমি ও হালকা গাছপালা পরিবেষ্টিত। এলাকা শুষ্ক মৌসুমে যে-কোনাে বড় ধরনের সৈন্যদল চলাচলের উপযােগী। এলাকার রাস্তাঘাটের। মধ্যে গণকপাড়া, ভেলুরপাড়া, সারিয়াকান্দি, হাটফুলবাড়ি সড়ক সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উপযােগী। এলাকার ভূমি খুব উর্বর এবং প্রধান ফসলের মধ্যে ধান, পাট, আখ উল্লেখযােগ্য। বর্ষা মৌসুমে খােলা ভূমিতে পানি জমে, যা চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি করে। শুষ্ক মৌসুমে তাপমাত্রা ৩০-৩৫ ডিগ্রি। সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। গণকপাড়ায় একটি ছােটো কাটা খাল ও বাঙালি নদী আছে, যা বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য বেশ সহায়ক। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিমরূপ:
ক. পাকিস্তানি বাহিনী: ১টি কোম্পানি।
খ. মুক্তিবাহিনী: ১টি কোম্পানি। যুদ্ধের বিবরণ। ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধা শােকরানার ১টি দল গাবতলী উপজেলার নারচি গ্রামে অবস্থান করছিল। সে সময় মুক্তিযােদ্ধা রেজাউল বাকি তার দল নিয়ে শােকরানার দলের সঙ্গে যােগ দেন। পাকিস্তানি বাহিনী নারচিতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের সংবাদ পেয়ে যায়। ২৭-২৮ অক্টোবর রাতে মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণের জন্য শতাধিক পাকিস্তানি সেনা বাঁশগাড়ি গ্রামে অবস্থান নেয়। এখান থেকে তারা নারচি গ্রামে হামলার পরিকল্পনা করে। মুক্তিযােদ্ধারা রাতেই এ তথ্য পেয়ে বাঁশগাড়ি আক্রমণের তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা। গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মােতাবেক শােকরানার নেতৃত্বে ২ শতাধিক মুক্তিযােদ্ধার ১টি দল বাশগাড়ি গ্রামের পশ্চিম দিকে অবস্থান নেয় এবং রাতের। শেষ ভাগে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। প্রায় ৩ ঘণ্টা।
গুলিবিনিময়ের পর মুক্তিযােদ্ধারা পিছু হটে গণকপাড়া গ্রামে অবস্থান নেন। এখানে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলিবিনিময় হয়। সন্ধ্যার পর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে আবারও বাশগাড়ি গ্রামে চলে যায় এবং রাতে সেখানেই অবস্থান করে। ভােরবেলায় পাকিস্তানি সেনারা ফুলবাড়ির দিকে চলে যায়। এ যুদ্ধে ৪জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে কেউ হতাহত হন নি। বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা। মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের কারণ এ যুদ্ধ পর্যালােচনা করে দেখা যায় যে, মুক্তিযােদ্ধাদের বিজয়ের কারণগুলাে ছিল নিম্নরূপ: ক. স্থানীয় জনগণের সমর্থন ও সহায়তা: এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী স্থানীয় অধিবাসী কর্তৃক পেয়েছিল ব্যাপক সাহায্য ও সহযােগিতা, যা একটা যুদ্ধ জয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ভূমি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও পরিচিতি: মুক্তিযােদ্ধারা পরিচিত ভূমিতে যুদ্ধ করেছেন। স্থানীয় রাস্তাঘাট, নদনদী, সবই ছিল তাদের পরিচিতি।
এ পরিচিতি তাদের সব কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেছিল। গ, গুপ্তবার্তা প্রবাহ: কোনাে স্থান থেকে পাকিস্তানি বাহিনী কোথাও রওনা হলে মুক্তিবাহিনী দ্রুত সংবাদ পেত এবং সে অনুযায়ী তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ত। এর ফলে তাদের বিজয় হয়েছিল ত্বরান্বিত। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কারণ এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যে-সব কারণে পরাজিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি হচ্ছে: ক, স্থানীয় ভূমি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও পরিচিতি না থাকা: পাকিস্তানিদের ঐ এলাকা সম্পর্কে তেমন জ্ঞান ছিল না। ফলে তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটেছিল। খ, জনসাধারণ কর্তৃক সহযােগিতার অভাব: পাকিস্তানিরা কোনাে স্থানীয় জনসাধারণের সহযােগিতা পায় নি। কিছুসংখ্যক স্বাধীনতাবিরােধী রাজাকার ব্যতীত সবাই ছিল তাদের বিপক্ষে। তাদের স্থানীয় সমর্থন থাকায় পরাজয় হয়েছিল দ্রুত।
উপসংহার
মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিয়ে তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। ফলে গণকপাড়া-বাঁশগাড়ি এলাকা দীর্ঘদিন হানাদারমুক্ত থেকেছে। এভাবে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে জয়লাভের ফলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। ত্বরান্বিত হয়েছিল।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!