বৃহত্তর বগুড়া জেলার সশস্ত্র যুদ্ধ
মাটিডালীর অভিযান ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের ক্যাম্প অথবা সদর দপ্তর স্থাপন করতাে কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের বিশাল জায়গা তারা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতাে। মাটিডালী মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজেও পাকিস্তানি। সেনারা অনুরূপ একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এখান থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল। পাকিস্তানি সেনারা অতি দ্রুত এ ক্যাম্প থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সহজে অভিযান চালাতে পারতাে মাটিডালী সড়কটি বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের সাথে যুক্ত হওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর রংপুরের সাথে যােগাযােগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছিল। যুদ্ধের পটভূমি। এ এলাকাটিতে অবস্থিত ক্যাম্পটি তাদের অন্যান্য ক্যাম্প থেকে সামান্য দূরে এবং শহরের প্রায় শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছিল।
শহরের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর প্রবেশ এ ক্যাম্পের মাধ্যমে রােধ করা হতাে। পাকিস্তানি বাহিনী ২৬ মার্চ বগুড়ায় প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আজাদ, টিটু, সুনু এবং আরও ২৫জনের মতাে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। ভূমির পরিচিতি এলাকাটি মূলত একটি বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে রয়েছে অনেক শিল্পকারখানা, টিঅ্যান্ডটি অফিস ও কটন মিল। যুদ্ধের সময় এখানকার বাড়িঘরগুলােও ছিল বেশ উন্নত। মাটিডালীর মাঝখান দিয়ে একটি সড়ক গাবতলী হয়ে দক্ষিণে সাতমাথার সাথে যুক্ত হয়েছে, যা শহরের প্রাণকেন্দ্রের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করে। মাটিডালী একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিম্নরূপ:
ক. পাকিস্তানি বাহিনী: আনুমানিক ১টি কোম্পানি। খ, মুক্তিবাহিনী: ইপিআর, পুলিশ এবং ৫০-৬০জন মুক্তিযােদ্ধা। যুদ্ধের বিবরণ মুক্তিবাহিনী মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের উত্তর পার্শ্বে বিভিন্ন পাকা দালানকোঠায় আক্রমণের জন্য অবস্থান গ্রহণ করে। পরবর্তী সময় মেজর নাজমুলের নেতৃত্বে এ সম্মিলিত বাহিনী সাতমাথা, গাবতলী হয়ে মাটিডালীতে প্রবেশ করে এবং ক্যাম্পটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। অবস্থান গ্রহণ সম্পন্ন হলে মেজর নাজমুল গুলিবর্ষণের আদেশ দেন। প্রায় আধ ঘন্টা গুলিবিনিময়ের পর পাকিস্তানি বাহিনী সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে পালাতে শুরু করে। এদের মধ্যে কিছু পাকিস্তানি সেনা গাড়িতে করে রংপুর অভিমুখে পালাতে সক্ষম হয়। অভিযানে মুক্তিবাহিনী বা পাকিস্তানি বাহিনীর কোনাে হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায় নি। বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের কারণ এ অভিযানে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে মাটিডালী এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়। অভিযানের সাফল্যের কারণগুলাে হলাে: ক, বিভিন্ন দলের মধ্যে সঠিক সমন্বয় সাধন।
খ, ইপিআর ও পুলিশের সহায়তা। গ. সঠিক নেতৃত্ব ও দৃঢ় মনােবল। পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যর্থতার কারণ এ অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যর্থতার কারণগুলাে: ক, সঠিক পরিকল্পনার অভাব। খ, সদর দপ্তরের সাথে সমন্বয়ের অভাব। গ. অস্ত্র ও জনবলের স্বল্পতা। শিক্ষণীয় বিষয় এ অভিযানের মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যে-কোনাে যুদ্ধের জন্যই প্রথাগত প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যকীয় একটি সম্মিলিত বাহিনীর মধ্যে সব সদস্যকেই হতে হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তবেই কোনাে যৌথ বা সম্মিলিত অভিযানে সফলতা। আনা সম্ভব হবে। উপসংহার এ যুদ্ধ ছিল একটি সম্মিলিত অভিযান। যে-কোনাে যৌথ বা সম্মিলিত অভিযান পরিচালনা করতে দরকার হয় সঠিক ও নিপুণ সমন্বয় সাধন। সঠিক সমন্বয় সাধন এবং অভিযানের নেতৃত্বদানকারী যােদ্ধাদের কঠিন সাহসিকতা ও দৃঢ় মনােবলের জন্যই অভিযানটিতে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে মাটিডালী। এলাকা থেকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছিল।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড