You dont have javascript enabled! Please enable it! ৭ নম্বর সেক্টর গঠনের ইতিহাস - সংগ্রামের নোটবুক
৭ নম্বর সেক্টর গঠনের ইতিহাস
মুজিবনগরে (মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা, আম্রকাননে) বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশকে মােট ৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। চট্টগ্রাম সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন মেজর জিয়াউর রহমান। মেজর খালেদ মােশাররফ নিযুক্ত হন কুমিল্লা সেক্টরের অধিনায়ক। মেজর সফিউল্লাহ সিলেট সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব নেন এবং কুষ্টিয়া সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হলেন মেজর ওসমান চৌধুরী।
মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপিত হয় কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রােডে। প্রবীণ অফিসার মেজর জেনারেল (তখন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল) রবকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল (তখন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল) ওসমানীর চিফ অব স্টাফ নিয়ােগ করা হয়। গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খান্দকার ( অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল) সহকারী চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত তরুণ অফিসার শেখ কামালকে জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে নিয়ােগ করা হয়। মেজর নুরুল ইসলাম (পরবর্তীকালে মেজর জেনারেল) অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের স্টাফ। অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৭ নম্বর সেক্টর গঠিত হয়েছিল রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে। ইপিআর বাহিনীর নওগাঁয় অবস্থানরত ৭ নম্বর উইং, চাপাইনবাবগঞ্জে অবস্থানরত ৬ নম্বর উইং, দিনাজপুরে অবস্থানরত ৮ নম্বর উইং এবং দিনাজপুর ও রাজশাহী সেক্টর সদর দপ্তরের অধিকাংশ ট্রপস এ সেক্টরে যুদ্ধ করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আনােয়ার সেক্টরটির পুনর্গঠনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল পরবর্তী সময় জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নির্দেশে ইপিআরএর ৭ নম্বর উইং অধিনায়ক মেজর নাজমুল হক সেক্টরটির দায়িত্ব নেন। প্রবীণ সুবেদার মেজর এ রবও কিছুদিন সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। মেজর নাজমুল হক একটি কনফারেন্স শেষে ফেরার পথে রাতে এক মােটর দুর্ঘটনায় দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুবরণ করেন। মেজর নাজমুল হক নিজেই মােটরগাড়িটি ড্রাইভ করছিলেন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত কাজী নুরুজ্জামানকে যুদ্ধকালীন মেজর জামানকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত করা হয় এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনিই ৭ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। ৭ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল তরঙ্গপুর। এর এলাকা ছিল দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও রংপুর জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরাঞ্চল। পর্যন্ত বিস্তৃত।
সৈন্যবাহিনীর মধ্যে ২,০০০ ছিল নিয়মিত বাহিনী এবং আরও ২,০০০ ছিল গেরিলা বাহিনীর সদস্য। ৭ নম্বর সেক্টরের এলাকাকে নিমােক্তভাবে ৯টি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়:১, মালঞ্চ সাব-সেক্টর: বস্তুত ইপিআর জেসিওরাই সাব-সেক্টরটি কমান্ড করেন। তপন সাব-সেক্টর: প্রাথমিক পর্যায়ে সেক্টর অধিনায়ক মেজর নাজমুল হক দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে ইপিআর জেসিওদের কমান্ডে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। ৩. মেহেদীপুর সাব-সেক্টর: প্রাথমিক পর্যায়ে সুবেদার ইলিয়াস সাব| সেক্টরটি কমান্ড করেন। পরবর্তীকালে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (শহিদ) দায়িত্বে ছিলেন। ভােলাহাট সাব-সেক্টর: লেফটেন্যান্ট রফিকুল ইসলাম এ সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। হামজাপুর সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন ইদ্রিস, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দালালদের কাছে টেরর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৬. আঙ্গিনাবাদ সাব-সেক্টর: গণবাহিনীর জনৈক সদস্য মিত্রবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কমান্ড করেছেন। ৭. ঠোকরাবাড়ি সাব-সেক্টর: অধিনায়ক ছিলেন সুবেদার মােয়াজ্জেম। ৮, লালগােলা সাব-সেক্টর: ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাব সেক্টরটি কমান্ড করেন। ৯, শেখপাড়া সাব-সেক্টর: মেজর রশিদ সাব-সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন।
একনজরে ৭ নম্বর সেক্টর
অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান সদর দপ্তর : তরঙ্গপুর এলাকা দিনাজপুর, দক্ষিণাঞ্চল, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও রংপুর জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরাঞ্চল । সৈন্যবাহিনী : ১. নিয়মিত বাহিনী: ২,০০০ (দুই হাজার) ২. গেরিলা: ২,০০০ (দুই হাজার) অফিসারবৃন্দ: লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান মেজর মাে. নাজমুল হক মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মেজর মকসুল হােসেন চৌধুরী ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। ক্যাপ্টেন মােহাম্মদ ইদ্রিস। ক্যাপ্টেন আব্দুর রশীদ লেফটেন্যান্ট বজলুল রশিদ। লেফটেন্যান্ট আমিনুল ইসলাম লেফটেন্যান্ট কায়সার মাে. হামিদুল হক লেফটেন্যান্ট আবদুল কাইউম খান লেফটেন্যান্ট রফিকুল ইসলাম লেফটেন্যান্ট মাে. আবদুল আউয়াল চৌধুরীউলেফটেন্যান্ট মােহাম্মদ সাইফুল্লাহ। ৭ নম্বর সেক্টর বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে ক্রমান্বয়ে একটি সুসংবদ্ধ সেক্টরের রূপলাভ করে। এ সেক্টরের অধীন প্রতিটি সাব-সেক্টর ট্রুপস মে মাস থেকে পাকিস্তানি অবস্থান খঞ্জনপুর, সাপাহার, নিদপুর, পত্নীতলা, ধামুইরহাট, পাশীপাড়া, ইসলামপুর, গােদাগাড়ি, শাহপুর, চারঘাট, মীরগঞ্জ, আলাইপুর, সারদা পুলিশ একাডেমী, কাটাখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পুটিয়া, দুর্গাপুর, লালপুর, তাহেরপুর ইত্যাদি এলাকার উপর আক্রমণ, অ্যামবুশ অব্যাহত রেখে পাকিস্তানিদের মনে ভীতির সঞ্চার করে এবং সর্বদা ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। ১৬ ডিসেম্বর ৭ নম্বর সেক্টর মুক্ত হয়ে যায়।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান -ষষ্ঠ খন্ড