You dont have javascript enabled! Please enable it!

সােভিয়েতের জয়ধ্বনিতে এপার ও ওপার বাঙলা মুখরিত
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৫ ডিসেম্বর-এপার বাংলা আর ওপার বাংলার স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রী মানুষ সােভিয়েত দেশের জয়ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করেছেন। সকালে রেডিও সংবাদ দিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে সােভিয়েত ভেটো দিয়েছে। তখন থেকেই শুরু হয়েছে সােভিয়েতের জয়ধ্বনি। জয়ধ্বনি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে সােভিয়েত সরকারের পরবর্তী ঘােষণায়-ভারত-পাক সংঘর্ষ থেকে বিশ্ব দূরে থাক। কিন্তু সােভিয়েত নির্লিপ্ত থাকবে না। এই ঘােষণা বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়েছে।
বাঙলাদেশের ছাত্র সমাজের প্রধান সংগঠনদ্বয়-বাঙলাদেশের ছাত্র ইউনিয়ন ও বাঙলাদেশের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বাঙলাদেশের মুক্তাঞ্চলের এক বৈঠকে মিলিত হয়ে এক বিবৃতি প্রচার করে বলেছেন, সমাজতান্ত্রিক শিবিরের নেতা সােভিয়েত ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মার্কিন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়ােগ করে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও ভারতের ন্যায্য প্রতিরোেধ সংগ্রামের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে বাঙলা দেশের সকল ছাত্র-যুবকদের পক্ষ থেকে আমরা তাই সােভিয়েত ইউনিয়নের জনগণ ও সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
উদ্বেল মহানগরী
মহানগরীর মানুষ আজ সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিটি ঘােষণাকে বিপুলভাবে বৈঠক, জটলায়, ঘরে বাইরে অভিনন্দন জানিয়েছে। একমাত্র সাম্রাজ্যবাদের পা-চাটা দালালরা মিউ মিউ করে সােভিয়েতের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছে। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র, জনসংঘ সিন্ডিকেটের লােকেরা যেমন তেমনি রয়েছে বামপন্থী নামাবলীর মুখখাশধারী সি পি এম এর একদল লােক।

পাক-ভারত সংঘর্ষ থেকে দূরে থাকুন
অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির প্রতি সােভিয়েত সরকারের হুঁশিয়ারি

মস্কো, ৫ ডিসেম্বর (ইউ এন আই) নিরাপত্তা পরিষদ চীন সমর্থিত আমেরিকান প্রস্তাবে ভেটো’ প্রয়ােগ করার পর যখন বিরতি চলছিল ঠিক তখনই সােভিয়েত সরকারী মুখপত্র তাস-এ পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিগুলিকে পাক-ভারত সংঘ থেকে দূরে থাকার হুঁশিয়ারি জানানাে হয়। তাস’-এর ৮শশা শব্দ সম্বলিত এই বিবৃতিতে ভারতের ও র সামরিক হুমকির উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, সােভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে এবং পূর্ব পাকিস্তানে সেখানকার জনগণের আইনানুগ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধান করতে চায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, সােভিয়েত রাশিয়ার সীমান্তের প্রত্যক্ষ আওতার মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তা বিবেচনা করে এবং দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থের কথা মনে রেখে সােভিয়েত ইউনিয়ন এই উপমহাদেশের ঘটনাবলীতে নির্লিপ্ত থাকতে পারে না।
বিবৃতিটির শেষাংশে পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিকে দূরে থাকার হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলা হয়েছে, সােভিয়েত সরকার বিশ্বাস করে যে অন্যান্য সকল দেশের সরকার এই সংঘর্ষে কোন রকম ভাবেই জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং হিন্দুস্তান উপ মহাদেশের পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলবেন না।

‘তাস’ এর বিবৃতির সংক্ষিপ্তসার
ভারতের উপরে বর্তমান সামরিক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সােভিয়েত ইউনিয়ন দ্রুততম রক্তপাত বন্ধের এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আইনানুগ অধিকার ও স্বার্থের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধান করতে চায়।
সােভিয়েত সরকার বিশ্বাস করে যে অন্যান্য সকল দেশের সরকার এই সংঘর্ষে কোন রকম ভাবেই জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং হিন্দুস্তান উপমহাদেশের পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলবেন না।…
ধাপে ধাপে
* ২৫ মার্চ, ১৯৭১; প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পাক-বাহিনী কর্তৃক বাঙলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘােষণা।
* ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১; মুজিব নগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশের জন্ম; বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সনদ ঘােষণা।
* ৯ আগস্ট ১৯৭১; বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের রক্ষাকবচ ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত।
* ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১; ভারতের বিরুদ্ধে পাক সরকারের সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘােষণা।
* ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১; ভারত সরকার কর্তৃক গণপ্রজাতান্ত্রিক বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দান।

সূত্র: কালান্তর, ৭.১২.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!