You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | সমগ্র পূর্ব-পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে পাক যুদ্ধ প্রস্তুতি: ৯টি বিমানঘাঁটিতে হানা | দেশের ডাক - সংগ্রামের নোটবুক

সমগ্র পূর্ব-পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে পাক যুদ্ধ প্রস্তুতি: ৯টি বিমানঘাঁটিতে হানা
সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘােষণা
মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি অব্যাহত

আগরতলা, ৩ ডিসেম্বর পাক বাহিনী সারা পূর্ব-পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতি চালিয়েছে। আগরতলা শহরে বুধবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত গােলাবর্ষণ করে চলেছে। আজ পাক-বিমান বাহিনী আগরতলা, অমৃতসর, পাঠানকোট, আম্বালা, শ্রীনগর, পাতিয়ালাসহ ৯টি বিমান ঘাঁটির উপর মিরেজ ও স্যাবর জেট দিয়ে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণের ফলে বহু অসামরিক লােক ঘরবাড়িসহ বিমান অবতরণ ক্ষেত্র ক্ষগ্রিস্ত হয়। পাক বাহিনী দিল্লী ও বােম্বের উপরও আক্রমণ চালাতে চেষ্টা করে। ৩টি পাক জঙ্গি বিমান ভারতীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে ধ্বংস হয়।
এদিকে আজ মধ্য রাত্রি থেকে সারা ভারতবর্ষে জরুরি অবস্থা ঘােষণা করা হয়েছে।
অপরদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছেন।
১ ডিসেম্বর রাত থেকে পাকবাহিনী আগরতলা শহরের উপর মর্টার ও কামান থেকে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণের ফলে শহরের কুজবন, বেসিক ট্রেনিং কলেজ, সার্কিট হাউস, রাধানগর, জয়নগর এই সমস্ত এলাকায় ৬ জন অসামরিক ব্যক্তি নিহত ও ৪৭ জন আহত হন। অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। ২ ও ৩ তারিখ আক্রমণ চলে আগরতলা বিমান ঘাঁটিতে। এই আক্রমণের ফলে বিমান ঘাঁটির রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে গােলা এবং রকেট এসে পড়ায় ৭-৮ জন আহত হন এবং বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। আগরতলা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনাে বিক্ষিপ্তভাবে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার কিছু পরে পশ্চিম সীমান্তে অমৃতসর, শ্রীনগর, পাঠানকোট এবং মধ্যরাতে আগ্রা, আম্বালাসহ আরও কয়েকটি বিমান ঘাঁটির উপর পাকবাহিনী ৭টি স্যাফারেজট ও ৩টি মিরেজ দিয়ে আক্রমণ চালায়। পাল্টা আক্রমণে পাক বাহিনীর ৩টি সাফারজেট ধ্বংস হয়। এই বিমান আক্রমণের ফলে অমৃতসরসহ কয়েকটি শহরের বহু অসামরিক ব্যক্তি নিহত ও আহত হন।
আজ মধ্য রাত থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি এক অভিন্যান্স জারি করে জরুরি অবস্থা ঘােষণা করেছেন। আগামীকাল বেলা এগারটায় লােকসভা ও রাজ্যসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। আজ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ঠাকুরগাঁও জংশন ও সিলেটের শমসের নগর দখল করে নিয়েছে। যশােহর, খুলনা, কুষ্টিয়ার বহু রণাঙ্গনে পাকবাহিনীর সাথে ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। পাক-বাহিনী মরিয়া হয়ে গতকাল ও আজ আখাউড়ার মুক্তিবাহিনীর উপর বিমান আক্রমণ চালিয়েছে।
অধিক রাতের সংবাদে প্রকাশ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বেতার ভাষণে দেশ রক্ষার প্রয়ােজনে সমস্ত রাজনৈতিক দল, মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: দেশের ডাক
০৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
১৭ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮