You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ঘোষণাঃ র‍্যাডক্লীফ রোয়েদাদ
সুত্রঃ পাকিস্তান রেজোলিউশান টু। পাকিস্তান পৃষ্ঠা – ২৬১
তারিখঃ ১২ই আগস্ট, ১৯৪৭

বেঙ্গল সীমান্ত পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃক প্রদত্ত প্রতিবেদন

বরাবর,
মাননীয় গভর্নর জেনারেল,
১।আমি সত্যি গর্বিত যে আজ আমি বাংলার সীমান্ত চুক্তির সনদের বিশেষ সিদ্ধান্ত নিতে পারছি যেটা ধারা সেকশন তিন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় উত্থাপিত হয়েছিল যা বর্তমানে আমার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর পুনরায় পরিবেশিত হচ্ছে। এই চুক্তিতে সিলেট ও অন্যান্য অঞ্চলের সাথে পুরো বাংলা অঞ্চলের সংঘবদ্ধতার দলিল অন্য একটি প্রতিবেদনে প্রদর্শিত হবে।
২।নমুনাপত্র নামা ৫০/৭/৪৭ অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ৩০ শে জুন গভর্নর জেনারেলের আদেশ বলে এই সীমান্ত চুক্তি ঘোষিত হয়। এই কমিশনের সদস্য ছিলেন- জনাব বিচারপতি বিজন কুমার মূখারজি জনাব বিচারতি সি সি বিশ্বাস জনাব বিচারপতি আবু সালেহ মোহাম্মদ আকরাম এবং জনাব বিচারপতি এস এ রহমান পরবর্তীকালে আমি সেই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হই। ৩।সেই ঘোষিত কমিশনের নীতিমালা অনেকটা এমন ছিল যেঃ সেই সীমান্ত কমিশনকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় যে তারা যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পাকিস্তানের মুসলিম এবং অমুসলিম দুই জাতির ভেতর সীমানা নির্দেশ করে দেয়। যার প্রভাব পারিপার্শ্বিক আরো বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর পরবে। আমরা ১৫ ই আগস্টের পূর্বেই কোনো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেয়েছিলাম।
৪। পার্লামেন্টারি মিটিং এর পর এই কমিশন আগ্রহী দলসমূহকে তাদের নিজেদের স্মারকলিপি এবং প্রতিনিধিদের বিবরণী জমা দেওয়ার আমন্ত্রণ করল। বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর আবেদন পাওয়া গিয়েছিল।
৫। কমিশন ভারতের কলকাতায় একটি লোকসভার আয়োজন করে এবং সেটা ১৯৪৭ সালের ২০ শে জুলাই, রবিবার ব্যতীত ১৬ জুলাই, বুধবার থেকে ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। সেখানে কমিশনের নিকট বিভিন্ন প্রার্থী এবং দল পারস্পরিক আলোচনায় অংশ নেয় । যেখানে একদিকে বেশিরভাগ দাবি-দাওয়া পেশ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস , বাংলা আঞ্চলিক হিন্দু মহাসভা এবং বাংলা সংগঠন। অন্যদিকে মুসলিম লীগের সদস্যবৃন্দ । সেই অবস্থায় আমি তখন পাঞ্জাব সীমান্ত চুক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছি। এককালে এই পাঞ্জাব চুক্তি ধীরে ধীরে বঙ্গচুক্তির জায়গায় স্থান করে নিতে লাগল আমার ভেতর। আমি বঙ্গচুক্তির সেই অধিবেশনে ব্যক্তিগতভাবে ছিলাম নাহ । কিন্তু সেই চুক্তির সকল তথ্যই বিবেচনার স্বার্থে আমাদের কাছে আসত।

৬। লোকসভার পর ধীরে উত্থাপিত সকল দাবি দাওয়া এবং সমস্যাদির কৈফিয়ত এবং সমাধান দেওয়ার সময় এসে গেল। । কলকতায় আমাদের আলোচনা শুরু হল।
৭। যখন পশ্চিম বাংলা এবং পূর্ববাংলায় একটি নির্দিষ্ট সীমান্ত অংকনের প্রশ্ন আসল তখন দলগুলো হতে বিচিত্র সব সমাধান প্রস্তাবিত হল। বেশীরভাগই মুসলিম বা অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে এর সংলগ্ন এলাকার সমন্বয়ে সীমান্ত অংকনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।
৮। আমার মতে নিম্নে উল্লেখিত কিছু প্রশ্নের উত্তরের উপর ভিত্তি করে পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলার বিভাজন করা হয়েছিলঃ
ক।দুটো অঞ্চল বিভাজনের পর ঠিক কোন অঞ্চলটাকে কলকাতা হিসেবে অভিহিত করা হবে?
খ। যদি কোনো অংশকে কলকাতা হিসেবে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে চিহ্নিত করা হয় , তবে কলকাতার কোন অংশে কাদের আধিপত্য বেশি থাকবে। কলকাতার সকল জলবন্দর যা নদীয়া এবং কুলতি নদীকে ঘিরে রয়েছে সেগুলোর কোন অংশ কাদের অধীনে থাকবে?
গ। গঙ্গা-পদ্মা-মধুমতি প্রভৃতি নদীর প্রতি আকর্ষণ কি আর থাকবে যশোর এবং নদীয়াবাসীদের কাছে? সেসব নদীর ভাগাভাগী নিয়ে তাদের মধ্যে কি দাঙ্গা বাজতে পারে না?
ঘ। এটা কি সম্ভব যে খুলনা এখনো সেই অঞ্চল দ্বারাই চলবে যা যশোর থেকে ভিন্ন হয়ে গিয়েছে?
ঙ। মালদা এবং দিনাজপুর এর মত এলাকা যেখানে অমুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশী সেসব অঞ্চল পূর্ববাংলার অধীনে মনোনয়ন দেওয়াটা কি সঠিক হচ্ছে?
চ। আবার পশ্চিম বাংলার অধীনস্থ দার্জিলিং অঞ্চল এবং জলপাইগুড়ি অঞ্চল যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা যথাক্রমে ২.৪% এবং ২৩.০৮% সেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের বোঝানো কি সম্ভব হবে? অমুসলিম অঞ্চল সংলগ্ন এসব মুসলিম এলাকার বাসিন্দারা স্বভাবতই মুসলিম অধ্যুষিত বাংলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তৎপর থাকবেন নাহ?
ছ। পার্বত্য চট্টগ্রামকে কোন অঞ্চলের অধীনস্থ করা হবে যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা মাত্র তিন শতাংশ । চট্টগ্রাম অঞ্চল নিজেদেরকে স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে স্বায়ত্বশাসিত থাকা কি তাদের পক্ষে খুব কঠিন হবে?
জ। বহুল আলোচনার পরও আমার সহকর্মীরা বুঝতে পারলেন যে এসব সমস্যা উত্তরণ এবং এই প্রশ্নগুলোর সপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে কেও কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারছিলেন নাহ । তারা দক্ষিণ পশ্চিম , উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব সহ সকল এলাকার সঠিক সীমারেখা বন্টনের ক্ষেত্রে অপারগ ছিলেন। তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে আমার নিজেস্ব সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
ঝ। এখন আমি সেই পথেই এগুতে চাচ্ছি এবং আমি আমার মত আমার সহকর্মীদের নিকট প্রকাশ করেছি এবং একই সময় এসব কঠিন সিদ্ধান্ত এবং সমালোচনার একটি সুষ্ঠু সমাধান বের করার চেষ্টা করছি। তাই এসব অঞ্চলের সীমান্ত নির্ধারণের একটি কার্যতালিকা নির্ণয় করতে হবে এবং এরপর দুটো অঞ্চলের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা সম্বলিত সকলের বোধগম্য একটি মানচিত্র নির্ণয় করতে হবে।
ঞ। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি দুটি প্রদেশের সকল রেলওয়ে যোগাযোগ পদ্ধতি এবং নদীপথে যাতায়াত পদ্ধতি যেগুলো দুটি প্রদেশের মানুষের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে বাদ না দিয়ে দুই বঙ্গের সীমান্ত অংকনের এবং এটা এখন তাদের
উপর নির্ভর করছে তারা পরস্পরের সাথে কতটুকু সমঝোতা বজায় রেখে একে অপরের সীমান্ত এবং ক্ষেত্রে দখলদারি করবে নাহ।
নয়াদিল্লি, স্বাক্ষর, সাইরাল রেডক্লিফ ১২ই আগস্ট, ১৯৪৭

কার্য নীতিমালা অধ্যায় ১
১। দার্জিলিং জেলার ফন্সিদেওয়া এবং জলপাইগুড়ি জেলার তেতুলিয়া থানার ভেতর একটি সীমারেখা অংকিত হবে যেখানে সেটি বিহার অঞ্চল পর্যন্ত থাকবে এবং এর ভেতর তেতুলিয়া এবং রাজগঞ্জ থানার মধ্যে সীমারেখা অংকিত থাকবে। আবার একই সাথে অন্য অংশে পঞ্চগড় থানা এবং রাজগঞ্জ থানার মধ্যে এবং পঞ্চগড় ও জলপাইগুড়ি জেলার অংকিত সীমারেখা উত্তর দিক বরাবর দেবিগঞ্জ এবং কোচবিহার থানার মধ্যবর্তী সীমান্ত পর্যন্ত যাবে। আর এভাবে দারজলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার যেসকল এলাকা সীমান্তের পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে তারা যাবে পশ্চিম বাংলার অধীনে এবং পাটগ্রাম সহ অন্য যেসব অঞ্চল যেগুলো পূর্ব দিকে রয়েছে তারা যাবে পূর্ব বাংলার অধীনে।
২। হরিপুর এবং রায়গঞ্জ অঞ্চলের মাঝে একটি সীমারেখা অংকিত হবে যা দিনাজপুর থানা থেকে অংকিত সীমারেখা থেকে শুরু করে বিহার অঞ্চল পর্যন্ত অংকিত সীমারেখার সাথে মিলিত হবে যেখানে বঙ্গোপসাগরের এক অংশে রয়েছে ২৪ পরগণা এবং অপর অংশে রয়েছে খুলনা। আগের নিয়মানুসারে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির অধীনস্থ এসব অঞ্চলের যেগুলো সীমারেখার পশ্চিমে পরবে তা পশ্চিম বাংলার এবং যেগুলো পূর্বে পরবে তা পূর্ব বাংলার।
৩। এবার হরিপুর এবং রাজগঞ্জ ,রামশংকইল এবং হেমতাবাদ, পীরগঞ্জ এবং হেমতাবাদ,পীরগঞ্জ এবং কালিগঞ্জ, বোচাগঞ্জ এবং কালিগঞ্জ, বিরাল এবং কালিগঞ্জ, বিরাল এবং কুশুমেন্দি,বিরাল এবং গঙ্গারামপুর, দিনাজপুর এবং গঙ্গারামপুর, দিনাজপুর এবং কুমারগঞ্জ, ফুলবাড়ি এবং বালুরঘাট, চন্দ্রবাড়ী-কুমারগঞ্জ-ফুলবাড়ি সীমা রেখা অংকিত হবে। বালুরঘাট এবং ফুলবাড়ীর উত্তর দক্ষিণ দিকে বাংলা-আসাম রেলওয়ে পথ পরে। এই রেলওয়ে বালুরঘাট এবং পঞ্চবিবি থানার যেখানে মিলিত হবে সীমারেখা সেখানে শেষ হবে ।
৪। এভাবে একেক থানার উপর দিয়ে সীমারেখা একেকভাবে যাবে। যেমনকিঃ
৫। এরপর সেই সীমারেখা গঙ্গা নদীর দিকে মালদা এবং মুরশিদাবাদের ভেতর দিয়ে যাবে। মালদা-মুরশিদাবাদ,রাজশাহি-মুরশিদাবাদ,রাজশাহী-নদিয়া বরাবর সীমারেখা চলবে। নদিয়া জেলার উত্তর-পশ্চিম কোণে যেখানে মাথাভাঙ্গা নদী ও গঙ্গার মোহনা রয়েছে সেদিক দিয়ে যাবে। আর এভাবে সীমান্ত নিয়মের পূর্ব উপখ্যানের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
৬। মাথা ভাঙ্গা এবং গঙ্গা অধ্যুষিত সেই সীমারেখা মাথাভাঙ্গা নদী যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে দৌলতপুর এবং খইরপুর বরাবর যাবে যা মূল সীমারেখার মধ্যবর্তী সীমারেখার অংশ হিসেবে অবস্থান করবে ।
৭। এরপর এখান থেকে পশ্চিম বাংলা এবং পূর্ব বাংলার এই সীমারেখা দৌলতপুর-খইরপুর, গানগানি-করিমপুর,মেহেরপুর-তেহিট্ট,মেহেরপুর-চাপরা,দামারহুদা-চাপরা,দামারহুদা-কিশোরগঞ্জ, চন্দরগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সহ এভাবে সমস্ত জোড়া এলাকাগুলোর মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে সীমারেখা অংকিত হবে যা ২৪ পরগণা এবং খুলনা অধ্যুষিত অঞ্চলের মাঝ দিয়ে যাবে এবং পূর্বের নিয়ম বহাল থাকবে।
৮। এরপর খুলনা এবং ২৪ পরগনার মধ্য দিয়ে সীমান্ত রেখা দক্ষিণ বরাবর যেতে থাকবে যেখানে উভয় সীমান্ত বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

———

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!