You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাহমুদ আলীর দেশদ্রোহিতা ও জাতিদ্রোহিতার কাছে মীরজাফরের কাণ্ডকীর্তি কিছু নয়। আসল কথা বলি। বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার সময় কাপুরুষ মাহমুদ আলীতে পাকিস্তানে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু স্ত্রীপুত্র কন্যা তখনও ঢাকায়। অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, ক্রোধান্ধ জনতার হাতে তারা লাঞ্ছিত হবেন অথবা তার কন্যারত্নটিকে কোলাবরেটর হিসেবে জেলে পাঠানাে হবে। কিন্তু মুজিব দেশে ফিরে কিছুই হতে দিলেন না। পুলিশকে আদেশ দিলেন মাহমুদ আলীর পরিবারের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার। বিশ হাজার টাকা ও পাসপাের্ট দিলেন তাদের গােপনে দেশত্যাগের ব্যবস্থা করার জন্য। তারপর সকলের অগােচরে পুলিশ বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মাহমুদ আলীর ছেলেমেয়ে স্ত্রী বাংলাদেশ ত্যাগ করে পাকিস্তানে মাহমুদ আলীর সংগে গিয়ে মিলিত হলেন। এই কথাটা যখন জানাজানি হল, তখন আওয়ামী লীগের নেতা এবং মুক্তিযােদ্ধাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। মুজিব তাদের শান্ত কণ্ঠে বললেন : মাহমুদ আলীকে হাতে পেলে হয়তাে বিচার করতাম। কিন্তু তার ছেলেমেয়ে বা স্ত্রীর কোন ক্ষতি হােক আমি চাই না।  মুজিব তার প্রবল শক্রর পরিবার পরিজনের উপরও কখনাে প্রতিশােধ স্পৃহা চরিতার্থ করেননি । মাহমুদ আলীর ছেলেমেয়েকে দেশে আটক করে তিনি মাহমুদ আলীকে ‘শিক্ষা’ দিতে পারতেন। পারতেন হামিদুল হক চৌধুরীর একমাত্র ছেলেকে জেলে পাঠিয়ে হামিদুল হককে জব্দ করতে। তিনি তার কিছুই করেননি। তার ফল দাঁড়াল কী? মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের শত্রুরা, মুজিবের শত্রুরা তার দশ বছরের শিশু-পুত্রকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। দ্বিধা করেনি তার একমাসের নব বিবাহিতা দু’টি পুত্রবধূকে হত্যা করতে। আর এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর মাহমুদ আলী আর হামিদুল হকদের কি পৈশাচিক উল্লাস প্রকাশ! রাজনীতিক্ষেত্রে মত পার্থক্য ও শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও এত বড় শিশুঘাতী নারীঘাতী বর্বর হত্যাকাণ্ডে যে মানবিক সহানুভূতি ও সমবেদনা ব্যক্ত হওয়ার কথা, তার সামান্য আভাস পাওয়া যায়নি এসব কাপুরুষ দেশদ্রোহীদের বাক্যে বা আচরণে। 

Reference:

আব্দুল গাফফার চৌধুরী, ইতিহাসের রক্তপলাশঃ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!