You dont have javascript enabled! Please enable it!
কালিগঞ্জের যুদ্ধ
ভূমিকা যশাের শহর থেকে মাত্র ৩২ কিলােমিটার দূরে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ থানা কালিগঞ্জ অবস্থিত। যশাের থেকে একটি পাকা রাস্তা উত্তর দিক দিয়ে কালিগঞ্জঝিনাইদহ হয়ে মাগুরা চলে গেছে। একইভাবে যশাের থেকে রেলপথও কালিগঞ্জে চলে গেছে। ভারতের সাথে কালিগঞ্জ পাকা রাস্তা দিয়ে যােগাযােগ থাকায় কালিগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। কালিগঞ্জ এলাকার যুদ্ধগুলাের মধ্যে মান্দারতলা ও দুলাল মুন্দিয়ার যুদ্ধ অন্যতম।
মান্দারতলার যুদ্ধ
ভৌগােলিক অবস্থান যশাের শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলােমিটার দূরে মান্দারতলা অবস্থিত। এলাকাটি সবুজ গাছে পরিপূর্ণ। এখানকার দক্ষিণ দিকটি অনেক দূর পর্যন্ত খােলামেলা এবং অপেক্ষাকৃত নিচু। মান্দারতলার মাঝ বরাবর যশাের-কালিগঞ্জ রেললাইন ও মহাসড়ক উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত। পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলােমিটার দূরে অবস্থিত ভৈরব নদী, যা এখন মৃতপ্রায়। মান্দারতলার ভিতর দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা পূর্ব-পশ্চিম বরাবর চলে গেছে, যা মান্দারতলা-মহিষহাটি রাস্তা হিসেবে পরিচিত। এলাকাটিতে প্রচুর পুকুর এবং উঁচুনিচু স্থান রয়েছে, যা প্রতিরক্ষায় অবস্থানকারী দলকে শত্রুর সরাসরি ফায়ার থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। যুদ্ধের সংগঠন যুদ্ধের সংগঠন নিমরূপ: ক, পাকিস্তানি বাহিনী: আনুমানিক ১ ব্যাটালিয়নের বেশি সৈন্য। খ. মুক্তিবাহিনী: বাঙালি সৈনিক, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ এবং প্রশিক্ষণহীন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে আনুমানিক ৩ কোম্পানি এবং ২টি ৩ ইঞ্চি মর্টার ও কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। যুদ্ধের অবস্থান ক. পাকিস্তানি বাহিনী: শত্রু যশাের সেনানিবাস থেকে ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে ১টি দল স্বল্পসংখ্যক গাড়ি নিয়ে যশাের-কালিগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে, ১টি দল রেললাইন ধরে এবং অপর দলটি মহাসড়কের অর্ধ কিলােমিটার পূর্ব দিক দিয়ে কালিগঞ্জের দিকে অগ্রাভিযান শুরু করে। খ. মুক্তিবাহিনী: মান্দারতলা গ্রামের সর্বদক্ষিণে পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর দক্ষিণ দিকে মুখ করে অবস্থান নেয়। তাদের অবস্থানটি পূর্ব মহিষহাটি রাস্তার মাইজদি বাওড় থেকে পশ্চিমে ভৈরব নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
যুদ্ধ পরিকল্পনা ক. পাকিস্তানি বাহিনী: শত্রুর আনুমানিক ১ ব্যাটালিয়ন সৈন্য যশাের কালিগঞ্জ অক্ষ বরাবর অগ্রাভিযান পরিচালনা করার পরিকল্পনা করে। শত্রু সৈন্যরা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল। ভােররাতে যশাের সেনানিবাস থেকে যাত্রা করে। শত্রু সৈন্যদের সাথে। ছিল সব ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম। মুক্তিবাহিনী: মুক্তিযােদ্ধারা নায়েব সুবেদার ফিরােজের নেতৃত্বে মান্দারতলা নামক স্থানে অবস্থান নেন। শত্রুদের বাধা দেওয়া এবং ধ্বংস করার জন্য মাইজদি বাওড় থেকে ভৈরব নদী পর্যন্ত। মুক্তিযােদ্ধারা অবস্থান নেন। ১৩ এপ্রিল দুপুর ১২টার মধ্যে পরিখা খনন সম্পন্ন করে মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যুদ্ধের বিবরণ মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যখন পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে, তখন। নায়েব সুবেদার ফিরােজ (১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) যশাের সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যান। গােপন সূত্রে তিনি সংবাদ পান যে, শত্রু ১৩ এপ্রিল যশাের থেকে কালিগঞ্জের দিকে অগ্রাভিযান পরিচালনা করবে। সংবাদের ভিত্তিতে তিনি আনুমানিক ৩টি কোম্পানি নিয়ে মান্দারতলায় অবস্থান নেন। আনুমানিক সাড়ে ১২টার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। মুক্তিযােদ্ধারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে থাকেন এবং শক্রর ২টি গাড়ি ধ্বংস এবং হতাহত করেন। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধ প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা স্থায়ী হয়, পরে আনুমানিক দুপুর ২টায় দুলাল মুন্দিয়া নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী পশ্চাদপসরণ করে। এ যুদ্ধে ২-৪জন। মুক্তিযােদ্ধা এবং ৭জন অসামরিক লােক শহিদ হন।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – সপ্তম খন্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!