You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের ব্যাপারে গুরুত্ব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সমর্থন মেলেনি। - ইন্দিরা - সংগ্রামের নোটবুক

১। বাংলাদেশের ব্যাপারে গুরুত্ব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সমর্থন মেলেনি। – ইন্দিরা
২। শরনার্থিরা এই দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে মিশে গেলে অসুবিধার সৃষ্টি হবে – ইন্দিরা

কোলকাতা, ৫ জুন – প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আজ এখানে বলেন, পূর্ব বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ শরনার্থী আগমনের ফলে অতি গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। এবং এর পরিণতি দেশের পক্ষে গুরুতর হতে পারে। কিন্তু আমরা যেন তাতে শঙ্কিত না হই। আমাদের সুস্থিরভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে যাতে ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শরনার্থিরা যাতে স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন, তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় অবস্থার সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন।

আজ রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে এবং তাঁর পড়ে সামরিক অফিসার সহ বিভিন্ন অফিসার ও রাজ্যের মন্ত্রীসভার সঙ্গে বাংলাদেশের শরনার্থি সমস্যা নিয়ে আলোচনার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে ‘সমস্যার বিরাটত্ব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সমর্থন মেলেনি। ’

তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের শরনার্থি সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের শরনার্থিদের রাজ্যের বাইরে কেন্দ্রীয় সরকারের যে জমি আছে, সেই সব জমিতে শিবির করে নিয়ে যাবার অবস্থা হচ্ছে কিন্তু সমস্ত ব্যাবস্থাই হচ্ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে কারণ শরনার্থিদের দেশে ফিরে যেতে হবে এবং তাদের স্বদেশে ফিরে যাবার অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে।

পুর্বাহ্নে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী কে সি পন্থ জানান, রাজ্যের মন্ত্রীসভার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককালে মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে লক্ষ লক্ষ শরনার্থির অব্যাহত আগমনের ফলে রাজ্যের প্রশাসনের উপরে যে গুরুতর চাপ পড়েছে তা বিস্তারিতভাবে জানিয়ে যেসব ব্যাবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তাঁর মধ্যে ছিল,

ক) ভারত সরকার কর্তৃক শরনার্থিদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করা
খ) শরনার্থিদের ক্যাম্পের মধ্যে রেখে যাতে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় তাঁর উপযুক্ত ব্যাবস্থা করা।
কারণ শরনার্থিরা এই দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে মিশে গেলে অসুবিধার সৃষ্টি হবে।

তারা এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, কিছু কিছু লোক শরনার্থিদের এখানে জমি ও লোকদের বাড়ি দখল করতে প্ররোচিত করছে। এর ফলে অনাবশ্যক একটা আইনশৃঙ্খলা সমস্যার উদ্ভব হবে এবং তা শরনার্থিদের স্বার্থানুগত হবেনা।

এই বৈঠকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যাবস্থা নেবার প্রয়োজনীয়তাও বিশেষভাবে আলোচিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী মন্ত্রীসভাকে জানান যে, ভারত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতায় উৎসাহী নয়। বাংলাদেশ যে অশান্ত, তা পাকিস্তানেরই সৃষ্টি। কিন্তু ওইসব ঘটনা সম্পর্কে আমরা উদাসীন থাকতে পারিনা। কারণ আমরা ভারতের শান্তি ও স্থায়িত্বে আগ্রহী। ভারতের শান্তি ও স্থায়িত্বকে বিঘ্নিত করে এমন যে কোন ঘটনাই আমাদের স্বার্থের সাথে জড়িত। বস্তুত আমরা মনে করি, ভারতে শান্তি ও স্থায়িত্ব পাকিস্তানের উপরেও একটা নিয়ামক প্রভাব বিস্তার করবে।

প্রধানমন্ত্রী কার্যকরিভাবে আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবেলা করার উপরেও জোর দেন।

পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা সম্পর্কে কেন্দ্র যে সর্বদা রাজ্য সরকারের সঙ্গে ঘনিস্ট যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে, তা জানিয়ে শ্রী পন্থ বলেন যে, শরনার্থিদের কত দ্রুত ও কি পরিমাণে এই রাজ্য থেকে অপসারণ করা যায় সে বিষয়ে নির্দিস্ট পরিকল্পনা করার জন্য আগামী সোমবার পশ্চিমবঙ্গের দুজন অফিসার দিল্লী যাচ্ছেন। শরনার্থিদের শিবিরের প্রশাসন চালাবার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে যতটা সম্ভব দায়িত্বমুক্ত করার জন্যও কেন্দ্র চেষ্টা করবে।

তিনি আরও জানান, ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রী বিদেশী রাষ্ট্রগুলোকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ভূত সমস্যা ব্যাখ্যা করতে এবং এই সমস্যা সমাধানে কতটা তারা সাহায্য করতে পারে তা জানাবার জন্য সফরে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় চারটি রাষ্ট্র সফর করবেন।

মন্ত্রীসভার সঙ্গে আগে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ইস্টার্ণ কমান্ড – এর জি ও সি লেঃ জেঃ জগসিত সিং আরোরা, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল শ্রী প্রসাদ বসু, কোলকাতার পুলিশ কমিশনার শ্রী রঞ্জিত চ্যাটার্জির সঙ্গে আলোচনা করেন। ‘

দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার দরুন প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী প্রত্যাবর্তন আজকের মত স্থগিত রাখছেন। আগামীকাল তিনি ফিরে যাবেন।