দত্তনগর কৃষি ফার্মের যুদ্ধ
ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা রাস্তার উভয় পাশে ৩৫-৪০জন পাকিস্তানি সৈন্য দত্তনগর কৃষি খামার এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। দত্তনগর কৃষি ফার্মের মধ্যে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর একটি খাল অবস্থিত। পাকিস্তানি বাহিনী খালের পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নেয়। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর হাবিলদার মহররম ১০০-১৫০জনের ১টি মুক্তিযােদ্ধা দল নিয়ে দত্তনগর কৃষি ফার্ম এলাকায় আক্রমণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হাবিলদার মহররম তার দলকে ২ ভাগে বিভক্ত করেন। ঐ দিন বেলা ১১টায় মুক্তিযােদ্ধারা দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর দিক থেকে একসাথে আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে পালটা গুলি বর্ষণ শুরু করে। উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল গােলাগুলির পর পাকিস্তানি বাহিনী খালের পশ্চিম পাড় থেকে সরে এসে পূর্ব পাড়ে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী এ সময় অগ্রসর হয়ে পশ্চিম পাড়ে এসে অবস্থান নেয় এবং পূর্ব পাড়ে অবস্থিত শত্রুর উপর হামলা অব্যাহত রাখে। ২৭-২৮ নভেম্বর রাতে মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ৩০-৪০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ২৮ নভেম্বর দিনে কোনাে হামলা হয় নি।
এ সময় মুক্তিবাহিনী বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনাে সাড়া না পেয়ে ২৯ নভেম্বর সকালে মুক্তিযােদ্ধাদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ৩জন। পাকিস্তানি সেনা মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের নিকটে চলে আসে। ৩জনই মুক্তিবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ফার্ম এলাকা ত্যাগ করে জীবননগরের দিকে পালিয়ে যায়। ৩০ নভেম্বর সকাল থেকে মুক্তিবাহিনী এলাকাটিতে টহল দিতে থাকে এবং জানতে পায় যে, পাকিস্তানি বাহিনী পুনরায় ফার্ম এলাকা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য মুক্তিবাহিনী দত্তনগর হতে জীবননগরের দিকে ২-৩ কিলােমিটার অগ্রসর হয়ে অ্যামবুশ স্থাপন করে। এ দিন রাত ১০টায় পাকিস্তানি বাহিনী পুনরায় জীবননগর হতে দত্তনগর আক্রমণের চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে। ২০-২৫ মিনিট গুলি বিনিময়ের পর পাকিস্তানি বাহিনী পুনরায় জীবননগরে পশ্চাদপসরণ করে।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – সপ্তম খন্ড