You dont have javascript enabled! Please enable it! জীবননগরের যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক
জীবননগরের যুদ্ধ
ভৌগােলিক অবস্থান ও গুরুত্ব জীবননগর সীমানা সংলগ্ন চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি থানা। ভারতের কৃষ্ণনগর থেকে একটি সড়ক এ থানার উপর দিয়ে পূর্ব দিকে কোটচাদপুর হয়ে কালিগঞ্জের দিকে গিয়েছে এবং অপর একটি সড়ক দর্শনা থেকে এ থানার ওপর দিয়ে চৌগাছায় মিলিত হয়েছে। ভৌগােলিক অবস্থানগত কারণে মুক্তিযুদ্ধকালীন এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ এলাকার পূর্ব দিক দিয়ে ভৈরব নদ প্রবাহিত, যা নদীপথে দর্শনা থেকে যশাের পর্যন্ত চলাচল নিশ্চিত করে। এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামগুলাে হচ্ছে দত্তনগর, ধােপাখালী, জীবননগর, উথলী ও খালিশপুর। জীবননগর থানা সদর দপ্তর থেকে ৪ কিলােমিটার দক্ষিণে মহেশপুর থানার সীমান্তে প্রায় ৩০০-৪০০ একর জায়গা নিয়ে দত্তনগর কৃষি খামার অবস্থিত। খামারের মধ্যে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর একটি খাল অবস্থিত। জীবননগর থেকে ১০ কিলােমিটার উত্তরে এবং চুয়াডাঙ্গা হতে ২০ কিলােমিটার দক্ষিণে উথলী মােড়ের অবস্থান। এটি একটি রেল স্টেশন এবং বাজারের সংযােগ স্থল। জীবননগরের পূর্ব দিকে ভৈরব নদীর পাড়ে খালিশপুর বাজার অবস্থিত।
যুদ্ধের সংগঠন ও অবস্থান
যৌথ বাহিনী:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রামপুর নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। যৌথ বাহিনীর ৪ মাউন্টেন ডিভিশনের ৬২ মাউন্টেন ব্রিগেড জীবননগর-কালিগঞ্জ অক্ষে অগ্রাভিযান পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। ঐ ক্যাম্পের মুক্তিযােদ্ধারা ৬২ মাউন্টেন ব্রিগেডের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তানি বাহিনী:
পাকিস্তানের ৯ ডিভিশনের ৫৭ পদাতিক ব্রিগেড। জীবননগর এলাকাও এ অক্ষের দায়িত্বে ছিল। তারা নিমােক্ত স্থানে অবস্থান নেয়: ১. দত্তনগর কৃষি ফার্ম: ৩৫-৪০জন। ২. ধােপাখালী বিওপি: ৪৫-৫০জন। ৩. জীবননগর: ১০০-১২০জনের ১টি কোম্পানি। ৪. উথলী মােড়: ৩৫-৪০জন। ৫. খালিশপুর: ১৪০-১৫০জন। যৌথ বাহিনীর পরিকল্পনা মুক্তিবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল জীবননগর এলাকায় শত্রুর অবস্থানে আক্রমণ করা এবং তাদের ধ্বংস করা। যৌথ বাহিনীর ৪ মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এমএস ব্রারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪১ মাউন্টেন ব্রিগেড উথলী সােয়াদী-কোটচাদপুর অক্ষে এবং ৬২ মাউন্টেন ব্রিগেড জীবননগর-কালিগঞ্জ অক্ষে অগ্রাভিযান পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। যুদ্ধের বিবরণ জীবননগর থানার যুদ্ধ, ছােটো-বড়াে কয়েকটি যুদ্ধের সম্মিলিত ফল। 
জীবননগরের ২য় যুদ্ধ
জীবননগর থানা সদরের পশ্চিম ও উত্তর দিকে খাল বরাবর পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল। দত্তনগর হতে ২৯ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে এসে জীবননগরের শক্তিবৃদ্ধি করে। ফলে এটি পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। জীবননগর আক্রমণের জন্য যৌথ বাহিনীর মেজর আই কে বার্মা এবং মেজর আর কে মিত্র এক বিশাল বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত হন। পরিকল্পনা করেন যে, ২জন জীবননগর শহরের দুই দিক হতে আক্রমণ রচনা করবেন। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর তারা তাদের নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে। জীবননগর শহরের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ শুরু করেন। যৌথ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনী মাত্র ১৮ মিনিট প্রতিরােধ করতে সক্ষম হয়। অবশেষে তারা খালিশপুরের দিকে পশ্চাদপসরণ করে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – সপ্তম খন্ড