You dont have javascript enabled! Please enable it! বরিশাল জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - সংগ্রামের নোটবুক
বরিশাল জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
স্যার জন শাের ১৭৫৭ সালে বাকেরগঞ্জকে জেলা ঘােষণা করেন। ১৮০১ সালে জেলার সদর দপ্তর বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে স্থানান্তর করা হয়। ১৮১৭ সালের আগে বাকেরগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা পায় নি। সরকারি কাগজপত্রে এ জেলার নাম বাকেরগঞ্জ, কিন্তু জেলা সদর বরিশালে হওয়ার কারণে সকলেই এ জেলাকে বরিশাল বলে জানে বাকেরগঞ্জ নামকরণ সম্পর্কে তথ্য যত সুলভ, বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে তথ্য তত সুলভ নয়। এ জেলার পূর্ব নাম চন্দ্রদ্বীপ বা বাকলার নামকরণেও স্পষ্ট সর্বজনগ্রাহ্য যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। আগা বাকেরের নাম অনুসারে বাকেরগঞ্জ জেলার নামকরণ হয়েছে এ বিষয়ে কারাে দ্বিমত নেই। বাকেরগঞ্জ, বরিশাল বা চন্দ্রদ্বীপের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাকলার অর্থ একজন আঞ্চলিক ঐতিহাসিকের মতে শস্য ব্যবসায়ী বাকলা নামে কোনাে শহরের সার্বিক সন্ধান পাওয়া যায় না, থাকলেও ১৫৮৪ সালের প্লাবনে। তা বিধৌত হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন যে, বাকলা নামে প্রাচীন স্থান মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে এ জেলাকে পলিমাটি গঠিত মােটামুটি প্রাচীন ভূমি বা পলিমাটিতে গঠিত নিমভূমি বলা হয়ে থাকে। বঙ্গ অববাহিকার একটি উল্লেখযােগ্য স্থান বাকেরগঞ্জ অর্থাৎ বাকলা, চন্দ্রদ্বীপ বা বাকেরগঞ্জ কিংবা বরিশাল বাংলাদেশের নিম সমতল ভূমি। এ জেলাকে সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চল নামেও অভিহিত করা হয়।  বাকেরগঞ্জ জেলার প্রাচীন নাম বঙ্গাল – এ ধারণা অনেকে পােষণ করেন। বঙ্গ-বঙ্গাল ছিল নদীবহুল জনাকীর্ণ নিমভূমি।
হিউয়েন সাং এখানে ৭ ক্রোশ বিস্তৃত বহু হাওর দেখেছিলেন, আজও সব হাওর বিলুপ্ত হয় নি। এসব অঞ্চলে সাধারণত ভাগ্য বিতাড়িত নিঃস্ব লােক এসে বাস করে। তাদের স্বভাবে ও সংস্কৃতিতে থাকে রুক্ষতা ও স্থূলতা চরবাসীর প্রতি অবজ্ঞা আজও বিদ্যমান। বাকেরগঞ্জ জেলার সব অংশ নতুন ভূমি নয়। প্রায় শতাধিক বছর আগে লিখিত এক আলােচনায় রেভা, জে লং মসিয়ে জোনার্ডের সৌজন্যে প্যারিসের বিরুলিওথেক রয়েল ১৫ শতকে তৈরি বাংলাদেশের যে মানচিত্রের কথা বলেছেন এবং সেখানে সুন্দরবন অঞ্চল বলে কথিত ৫টি বৃহৎ শহরের উল্লেখ করেছেন, সে শহরগুলাের বয়স প্রায় আড়াই হাজার বছর। পর্তুগিজদের অঙ্কিত কোনাে কোনাে মানচিত্রেও এ ৫টি শহরের কথা বলা হয়েছে।  একটি অতি পরিচিত প্রবাদ- ধান-নদী-খাল এ নিয়ে বরিশাল বরিশাল বা বাকেরগঞ্জ জেলায় জালের মতাে নদী ছড়িয়ে আছে মেঘনা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ নদী। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা (পদ্মা) এবং হিমালয়ের কৈলাশ শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন যমুনা (ব্রহ্মপুত্র) গােয়ালন্দের কাছে মিলিত হয়ে পদ্মা নামে প্রবাহিত এবং চাঁদপুরের কাছে মেঘনার স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। কালনি ভৈরববাজারের কাছে মেঘনা নাম ধারণ করে চাঁদপুরের নিকট পদ্মার সাথে মিলিত হয় এবং মেঘনা নামে বাকেরগঞ্জ জেলার পূর্ব পাশ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। কবাই নদী অনেক নদীর সমন্বয়ে বাকেরগঞ্জ জেলার বৃহত্তম নদীর মর্যাদা পেয়েছে। ইলিশা মেঘনার শাখানদী এ নদীর সঙ্গে টরকী, আড়িয়াল খা, ছবিপুর, নয়াভাঙানী, মেহেন্দীগঞ্জের কাছে মিলিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ৩০ মাইল, প্রস্থ ২-৪ মাইল। তেঁতুলিয়া বাকেরগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তর নদী। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলােমিটার, প্রস্থ প্রায় ৩ কিলােমিটার। বলেশ্বর বৃহৎ বাকেরগঞ্জ জেলার একটি বড়াে নদী।
দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪ কিলােমিটার, প্রস্থ ৩-৮ কিলােমিটার। বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলার একটি। বড়াে নদী বিষখালী। এ নদীর দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলােমিটার, প্রস্থ ১-৩ কিলােমিটার। বিষখালী নদীর প্রবাহিত স্রোত বলেশ্বরের মাধ্যমে বুড়িশ্বর বা পায়রা নদী নামে। অভিহিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৮ কিলােমিটার প্রস্থ প্রায় তিন কিলােমিটার। বাকেরগঞ্জ জেলায় আড়িয়াল খাঁ নদী আন্দাল খাল নামেও পরিচিত টলেমি উল্লিখিত সিওডােস্টমনই সম্ভবত আড়িয়াল খাঁ নদী আড়িয়াল খাঁ নদী এক সময় পদ্মার প্রবাহকে ধারণ করে প্রবাহিত হতাে নয়াভাঙানী বাকেরগঞ্জ জেলার উল্লেখযােগ্য নদী। এ নদীর দৈর্ঘ্য ১৫ মাইল, প্রস্থ ২ মাইল উইলিয়াম হান্টার পদ্মার প্রবাহ কীর্তিনাশা ও নয়াভাঙানী খাতে প্রবাহিত দেখেছিলেন। হিজলা নদী বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলার একটি মাঝারি নদী এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ কিলােমিটার প্রস্থ প্রায় ১ কিলােমিটার কচা-আন্ধারমানিক। নীলগঞ্জ চাওরা বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলার মাঝারি নদী। কীর্তনখােলা নদীর। তীরে বরিশাল শহর অবস্থিত এ নদী আড়িয়াল খাঁর একটি শাখানদী  টরকী, ছবিপুর, লতা, কালিজিরা, সুগন্ধা, উজিরপুর, আঙ্গারিয়া, পটুয়াখালী, আয়লা এবং বিঘাই-কাজল বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলার ছােটো নদী হেনরি রেভারিজ বলেছিলেন যে, বাকেরগঞ্জ জেলার সুন্ধ্যা নামক নদী থেকেই। সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে। সুগন্ধা নদী সুন্ধ্যা বা সন্ধ্যা নামে পরিচিত। পাবনী নদী বাকেরগঞ্জ জেলার লুপ্ত নদী নলিনী পাবনীর সমসাময়িক নদী ঘণ্টেশ্বর এখন একটি খাল। ধানসিড়ি নদী বাকেরগঞ্জ জেলার এক সময়ের খরস্রোতা নদী। ১৮০২ সালের ৭ জানুয়ারি তদানীন্তন বাকেরগঞ্জের জেলা। ম্যাজিস্ট্রেট জে উইন্টল এক চিঠিতে এ জেলার জনসাধারণ সম্পর্কে বলেছিলেন। যে, এ জেলার অধিবাসীরা ডাকাত।
কাজী নজরুল ইসলাম ঠিক একই কথা। বলেছিলেন তাঁর এক কবিতায়: “পরের মুলুক লুট করে খায়/ডাকাত তারা। ডাকাত।” কাজী নজরুল ইসলাম বরিশালকে প্রাচ্যের ভেনিস বলেছিলেন। বরিশাল বা বাকেরগঞ্জের জনসাধারণকে কবি ঈশ্বরগুপ্ত পরােক্ষভাবে উইন্টলের মতাে ডাকাত বলেছেন। তাঁর উক্তি: “এ বরিশাল অতি বিশাল। এমন দস্যুভয় আর কুত্রাপি নেই। লাঠালাঠি, কাটাকাটি নিয়তই হইতেছে।” হেনরি বেভারিজ (১৮৩৭-১৯২৯) এ জেলার অধিবাসী বা জনসাধারণ সম্পর্কে বলেছেন, “They were a ‘by word for turbulences’.” সুপ্রকাশ রায় তার ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’ গ্রন্থের। পঞ্চদশ অধ্যায়ে বাকেরগঞ্জের সুবান্দিয়া বিদ্রোহ (১৭৯২) সম্পর্কে বলতে গিয়ে যথার্থই বলেছেনঃ “সমগ্র বঙ্গদেশে বাখেরগঞ্জের মানুষ দাঙ্গাবাজ ও হাঙ্গামাপ্রিয় বলিয়া কুখ্যাত। তাহারা একটু বেশি উত্তেজনাপ্রবণ, সামান্য কারণেই উত্তেজিত হইয়া পড়ে বিশেষত ভাটিদেশের (দক্ষিণ অঞ্চলের) মানুষ।” অন্যান্য জেলার মতােই বাকেরগঞ্জের কৃষকেরাও জমিদার গােষ্ঠীর লুণ্ঠন ও উৎপীড়ন নীরবে সহ্য করে নি। পলাশির যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার অনেক অনুগত সৈন্য বাকেরগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছিল, এমন ধারণা অনেকের আছে হেনরি বেভারিজ। তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, “প্রাচীনকালে বাকেরগঞ্জ জেলা লবণ তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। অসংখ্য নদী শাখা নদী এবং খালবিলে ভরপুর বাকেরগঞ্জ জেলা।” এ কারণেই ব্রিটিশ আমলে এ জেলায় সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নে কোনাে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। বরিশাল রূপসি বাংলার মুখ, বরিশাল বাংলার ভেনিস, বরিশাল বাংলার শস্যভাণ্ডার, বরিশাল উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত, বরিশাল বাঙালি ও জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে বরিশালের রয়েছে আবহমানকালের অবদান। বাঙালি জনগােষ্ঠীর আদি বাসভূমি বরিশাল বাঙ্গ থেকে বাঙালা এ বরিশালের অবদান।
বাকলা এবং বাঙালি অভিন্ন। বরিশাল জন্ম দিয়েছে বার। ভূঁইয়াদের বীর সেনানী রাজা রামচন্দ্র রায়, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেতা ও ব্রজমােহন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, চারণকবি মুকুন্দ দাস, সশস্ত্র বিপ্লবী দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রজ্ঞা নানন্দ সরস্বতী ও দেবেন্দ্রনাথ ঘােষ, মুসলিম জাগরণের নেতা খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন, বাঙালি। জাতীয়তাবাদের জনক শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, প্রজা আন্দোলনের নেতা বাহাদুর হাসেম আলী খান, সংগ্রামী সাংবাদিক তােফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া এবং অন্যান্যদের। বাংলার রাজনীতি ও বাংলার স্বাধীনতা সগ্রামে বরিশালের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়, ইংরেজবিরােধী আন্দোলনে বরিশাল। অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। উপমহাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে প্রবাদ আছে, “বাংলাদেশ আজ যা ভাবে ভারতের অন্যান্য অঞ্চল তা আগামীকাল ভাবে। বরিশাল আজ যা ভাবে বাংলার অন্যান্য জেলা তা আগামীকাল ভাবে।”  বরিশালের ইতিহাস একটি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভের সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রামের ইতিহাসে ইংরেজ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকবিদ্রোহ, সশস্ত্র বিপ্লব, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, কৃষক-প্রজা আন্দোলন, উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গ-আসাম প্রদেশ গঠন করা হয়। কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন শুরু করে। অশ্বিনী কুমার দত্তের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে বরিশালবাসী ঝাপিয়ে পড়ে। বরিশালে স্বদেশি আন্দোলনের সাফল্য বাংলা তথা ভারতকে আকৃষ্ট করে।
তাই কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল বরিশালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুগান্তর ও অনুশীলন দলের অবদান গৌরবােজ্জ্বল। বরিশালে যুগান্তর ও অনুশীলন উভয়। দলের শাখা ছিল। বরিশালের যুগান্তর দল বরিশালের পার্টি নামে পরিচিত ছিল। অনুশীলন দলে বরিশালের অনেক ছাত্র যােগ দেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁরা বিশেষ অবদান রেখেছেন। ১৯০৮ সালে কলকাতার আইনজীবী কেনেডীর পত্নী ও কন্যা হত্যার মামলায় ক্ষুদিরামের সাথে বরিশালের সুরেশ গুপ্ত ও ওয়াজেদ আলী ছিলেন এবং তাদের ২ মাসের কারাদণ্ড হয়। ১৯১২ সালে জার্মান যুবরাজ উইলিয়াম কাইজার বরিশালে আগমন করেন এবং উপকূলীয় দ্বীপ কুকরী। মুকরীতে শিকারে যান। তাদের গােপন উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের জন্য উপকূলীয় অঞ্চল জরিপ করা। বরিশালের বাসিন্দা ও কালীপীঠ বিদ্যালয়ের ১৪ বছরের ছাত্র রমেশ চ্যাটার্জি ১৯২৯ সালের ১৪ মার্চ সদর বালিকা বিদ্যালয়ের নিকট অত্যাচারী দারােগা জ্যোতিষ চন্দ্র ব্যানার্জিকে হত্যা করেন। বরিশালের বিপ্লবীদের এমন অনেক দুঃসাহসী অভিযানের কাহিনী রয়েছে। বরিশালের মেয়েরাও বিপ্লবী রাজনীতি থেকে পিছিয়ে ছিলাে না। ব্রজমােহন কলেজের অধ্যাপিকা শান্তিসুধা ঘােষ ১৯৩১ সালে মেয়েদের জন্য শক্তি বাহিনী নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩০ সালে কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হত্যাকারী শান্তি ঘােষের বাড়ি ছিল পিরােজপুরের রায়েরকাঠিতে। বরিশালের রাজনীতির প্রধান পুরুষ এ কে ফজলুল হক ও মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত। একজন কৃষক আন্দোলনের নেতা, অন্যজন স্বদেশি আন্দোলনের নেতা। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত বরিশালের রাজনীতি শহরকেন্দ্রিক ছিল। ১৯২১ সালের মার্চ মাসে বরিশালে বঙ্গীয় কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর মহাত্মা গান্ধী ও মওলানা মুহাম্মদ আলী স্টীমারযােগে প্রথম। বরিশালে আগমন করেন। ১৯২২ সালে মীর্জাকালুর গুলির প্রতিবাদে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ঐ জেলায় লবণ আন্দোলন চলে।
১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে জেলা কংগ্রেস বরিশালে লবণ আন্দোলন পরিচালনা করে এবং শরৎ কুমার ঘােষসহ অনেকে গ্রেফতার হন। প্রজা আন্দোলন বরিশালের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সৃষ্টি, জমিদারি প্রথা বাংলার কৃষক সমাজকে ভূমিদাসে পরিণত করে। জমিদার, তালুকদার ও তাদের কর্মচারীদের উৎপীড়ন বরিশালেই বেশি চলে।  পটুয়াখালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন বরিশালের রাজনীতির একটি বিতর্কিত অধ্যায়। এ আন্দোলনে শত বছরের হিন্দু-মুসলমানের সুসম্পর্কের অবনতি ঘটে। সত্যাগ্রহ আন্দোলন ১৯২৪-২৮ সাল পর্যন্ত চলে। এ আন্দোলনের নেতা ছিলেন বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক সতীন্দ্রনাথ সেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বরিশালের ছাত্রগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পালন করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাকেরগঞ্জ-পটুয়াখালী জেলার ৬০ লক্ষ জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং যুদ্ধে এ অঞ্চলের ৭৫ হাজার স্বাধীনতাকামী জনতা শহিদ হয়েছেন। ২৫ মার্চ হতে ২৫ এপ্রিল, দীর্ঘ এক মাসব্যাপী বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলা দুটি মুক্ত ছিল। ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বরিশাল শহরে বিমান হামলা চালায় এবং অনেককে হত্যা করে। বরিশালের এক দল মুক্তিযােদ্ধা চাঁদপুরে এবং এক দল খুলনা বেতার কেন্দ্রের নিকট যুদ্ধে অংশ নেয়। ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বরিশাল দখল করার জন্য বিমান, পদাতিক ও নৌবাহিনী নিয়ে বরিশালের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযােদ্ধারা তালতলী, জুনাহার ও গৌরনদীতে বাধা দেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ভারি অস্ত্রের কাছে। মুক্তিযােদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটে যান। পাকিস্তানি বাহিনী গৌরনদী ও চরবাড়িয়া ইউনিয়নে শত শত লােক হত্যা করে। ২৬ এপ্রিল তারা বরিশাল শহর দখল করে।

সূত্র : মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান – সপ্তম খন্ড