You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.29 | জয়বাংলা- বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক মুখপত্র | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

সাময়িকী
জয়বাংলা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক মুখপত্র
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি আহমদ রফিক

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মতিন আহমদ চৌধুরী। মুজিব নগর। মূল্য ২০ পয়সা।

জয়বাংলা ওপার বাংলার মুক্তিপাগল বাঙালিদের মুখপত্র। এ সাপ্তাহিক মুখপত্রের প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষের মর্মবাণী উৎসারিত হয়েছে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে অনেক বিষয়ে আলােকপাত করা হয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্য ছিল আপামর দেশবাসীর সার্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। কিন্তু বাঙালি জাতি কী পেয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর পাকিস্তানের জন্মদিনে মেলেনি সুদীর্ঘ ২৩ বছরে কোনাে দিনই বাঙালিরা মুক্তির স্বাদ পায়নি। বার বার বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের উপর হানা হলাে একটানা হামলা।”
প্রথমে শুরু হয়েছিল বাঙালির মাতৃভাষার উপর আক্রমণ। বাংলাভাষার বিরুদ্ধে ওদের যত ঘৃণা…।’ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চললাে একটানা শশাষণ। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই সমস্যার সমাধান চেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা বার বার বাঙালির আশাকে নস্যাৎ করেছে। শেষ আশা ছিল বাঙালির ১৯৭০ সালের নভেম্বর নির্বাচনে। কিন্তু তা পূর্ণ হলাে না। ইতিহাসে এক নতুন নজির সৃষ্টি হলাে, সংখ্যালঘিষ্ঠরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের ওপরে তাদের জোর খাটাতে চাইল। বাংলাদেশে যে দল গণতান্ত্রিক নির্বাচনে শতকরা ৭৯ টি পপুলার ভােটে জয়ী হলাে, সারা পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল, সেই দলের বিরুদ্ধে একজোট হলাে পশ্চিম পাকিস্তানি আমলাতন্ত্র, কায়েমা স্বার্থবাদীর দল। কিন্তু ঐ দলের পরিচয় শুধু রাজনৈতিক দল হিসেবেই নয়। ঐ দল যে সারা বাংলাদেশের দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রতীক। শেখ মুজিব ত’ শুধু একটা দলের নেতা নন গােটা বাঙালি জাতির যে নেতা!
শেখ মুজিব বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের উদ্গাতা। এই মুক্তি সংগ্রামের শুরু হয়েছে ২৫শে মার্চের এক রক্তঝরা রাত থেকে। ওপার বাংলায় আজ যে মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে তা অভূতপূর্ব। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনােদিন বাঙালিরা জাতি ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এত ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি—অন্তত হাজার বছরের ইতিহাসে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দীন আহম্মদ সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-“ভুলে যান আজ আপনার ধর্ম, বর্ণ, পেশা কী? আমরা সবাই বাঙালি। আমি আগেই বলেছি শত্রু আজ আপনার আমার ধর্ম বিচার করছে না। বাংলাদেশের এ যুদ্ধ আপনার আমার সকলের। নতুন এক জাতীয়তাবাদের উদ্বোধন হয়েছে সেখানে। ঐ জাতীয়তাবাদই বাংলাদেশের মুক্তি ফৌজকে উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে, পশ্চিমে- সর্বক্ষেত্রে মরণ পণ যুদ্ধে ব্রতী হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বিশ্বের কোনাে শক্তিই ঐ নব জাগ্রত বাঙালি জাতির যৌবন জল তরঙ্গকে রােধ করতে পারবে না। জয় বাংলার প্রথম সংখ্যায় এ সত্যটাই তুলে ধরা হয়েছে।
রণজিৎ সেনগুপ্ত।

সূত্র: কম্পাস, ২৯শে মে ১৯৭২