You dont have javascript enabled! Please enable it! তাজউদ্দীন আহমদ - ১৯৭০ সালের ঘটনাবলি - সংগ্রামের নোটবুক
১৯৭০ সালের ঘটনাবলি
১৯৭০ সালের ৫ জানুয়ারি সােমবার দুপুরে তাজউদ্দীন আহমদ ও জোহরা তাজউদ্দীন পুত্র সন্তান লাভ করেন। সন্তান জন্মের সময় তাজউদ্দীন, তার কন্যা, আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন সবাই আনন্দিত বন্ধুর পুত্রের জন্মের সংবাদ শুনে টুকরি বােঝাই মিষ্টি নিয়ে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীনের শ্বশুর সেরাজুল হক নাতির নাম রাখলেন সােহেল। পরবর্তীকালে তিনি সােহেল তাজ নামে পরিচিত হন। ‘৭০ সালের ২০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ময়দানে ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ ভাষণ দেন। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ১৯৭০-‘৭১ সালের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ। ‘৭০-এর ১৭ মে নির্বাচনে ১৯৭০-৭১ সালের ডাকসু ভিপি-জিএস নির্বাচিত হলেন আ স ম আবদুর রব এবং আবদুল কুদ্দুস মাখন। ‘৭০ সালের ৪ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন। মতিঝিলের ইডেন হােটেল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। ১১৩৮ জন কাউন্সিলর সম্মেলনে যােগ দেন। এই সম্মেলনে তাজউদ্দীন আহমদ আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
‘৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে একাধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যৌথ নির্বাচন করবে না, এককভাবে নির্বাচন করবে পার্লামেন্টারি বাের্ডের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব তাজউদ্দীন আহমদ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে শত শত প্রার্থী তাদের সাক্ষাত্তার, স্থানীয় গ্রহণযােগ্যতা, দলের প্রতি আনুগত্য ও অবদান বিবেচনা করে তাজউদ্দীন আহমদ প্রার্থী বাছাই করতে অনন্য ভূমিকা পালন করলেন তাজউদ্দীনের প্রতি নির্ভরশীল ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রার্থী নির্বাচনে তাজউদ্দীন অপূর্ব সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, জেলা কমিটি, থানা কমিটিকে সমভাবে গুরুত্ব দিতেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। দলের মধ্যে তিনি গণতন্ত্রের চর্চা করে নির্বাচনে বিজয়ের পথ সুগম করলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন করে জনগণকে অবহিত করলেন। তাজউদ্দীন আহমদকে জাতীয় পরিষদের এনই-১০৮ ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনােনয়ন দেওয়া হয়। ঢাকা জেলার সদর উত্তর মহকুমার। কাপাসিয়া থানা ও কালিগঞ্জ থানা নিয়ে জাতীয় পরিষদের ঢাকা-৫ আসন গঠিত ছিল। এসময় তাজউদ্দীন আহমদকে নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও বাংলাদেশের। সব কেন্দ্রের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করতে হয়েছে। ‘৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তাজউদ্দীন আহমদ বিপুল ভােটে বিজয় লাভ করলেন।
তার আসনে মােট ভােটার ছিল ১,৯১,০৮২, মােট দেয় ভােট ১,১১,৬১৭ তাজউদ্দীন পেলেন ৯৭,২৬৮, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক ইউসুফ আলী পেলেন ১০৬৬৫ এবং ন্যাপের আহমেদুল কবির পেলেন ৮২৮৪টি ভােট প্রসঙ্গত, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারাদেশে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ দুটি আসন হারায়, চট্টগ্রামের নান্দাইলে পিডিএস প্রার্থী নূরুল আমিন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজা ত্রিদিব রায় নির্বাচিত হন।  এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের দায়িত্ব-কর্তব্য বহুগুণে বেড়ে যায়। তিনি শেখ মুজিবের নির্দেশে বাংলার রাজনীতিকে সুচারুরূপে পরিচালিত করেন। প্রত্যেকটি পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন ধীরস্থিরভাবে। তাই দলের কর্মসূচির সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হন। শেখ মুজিবুর রহমান জানতেন পাকিস্তানিরা বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই তিনি ‘৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর তাজউদ্দীনের সঙ্গে আলােচনা করে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করলেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ – স্বকৃত নোমান – উৎস প্রকাশন, ৩ নভেস্বর ২০১৫