You dont have javascript enabled! Please enable it! অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাউদ্দিনের ভূমিকা - সংগ্রামের নোটবুক

 

বিশ্বব্যাংক মুদ্রা তহবিলের সদস্য হওয়ার বিষয় নিয়ে এবং স্বাধীনতার আগের বৈদেশিক সাহায্য সম্বন্ধে আমি দুটো প্রতিবেদন পেশ করেছিলাম, কমিশন একটি ছয় মাসের পুনর্বাসন কার্যক্রম প্রণয়ন করেছিল, তা নিয়ে কিছু মন্তব্য করলেন। তার একটি মন্তব্য ছিল, উচ্চাশার যে বিস্ফোরণ হচ্ছে তাতে অমঙ্গল নিহিত, হতাশা হয়ত অনেক ক্ষতিসাধন করবে। ওয়াশিংটন পৌছেই আমি সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করলাম। আমার যুক্তি ছিল, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার ফলে আমার মধ্যে যে রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে তা সিভিল সার্ভিসের জন্য উপযুক্ত নয়। আমার পদত্যাগ সরকার গ্রহণ না করে আমাকে ওয়াশিংটন দূতাবাসের সাময়িক চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব দিলেন। অগাস্ট মাসে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক মুদ্রা তহবিলের সদস্য হয়। এর মধ্যে খবর পেলাম, বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যােগ দিতে সেপ্টেম্বর মাসে তাজউদ্দীন সাহেব ওয়াশিংটনে আসবেন। আমি সরকারকে জানালাম, এটি হবে বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রথম আমেরিকা সফর, সুতরাং অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সভা করা ছাড়াও আমেরিকান উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার করতে পারেন। আমি আরাে জানালাম, অর্থমন্ত্রীর সফর শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেব না। আমি প্ল্যান বানাতে শুরু করলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকান জনগণ আমাদেরকে জোর সমর্থন জানিয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদ এই সমর্থনটা চেয়েছিলেন, যদিও আমেরিকান সরকার সমর্থন দেয়নি। সেই তিনি আসছেন, আমি মিটিং ছাড়াও খুব সুন্দর অনুষ্ঠান আয়ােজনের চিন্তাভাবনা করতে লাগলাম। তাজউদ্দীন সাহেব ওয়াশিংটনে আমাদের বন্ধু মহলে সুপরিচিত ব্যক্তি, তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলী অনেকেই জানেন, অনেকে৭১ সালে তার সঙ্গে মুজিবনগরে দেখাও করেছেন। আমেরিকান সরকারি মহলও এই স্বল্পবাক, প্রচারবিমুখ, দৃঢ়চেতা মানুষটিকে জানতে চায়, তার চিন্তাভাবনা পরখ করে দেখতে চায়। বাঙালি ভারতীয় মহল মুক্তিযুদ্ধের এই একনিষ্ঠ নেতার সঙ্গে পরিচিত হতে চায়। আমি প্রস্তাব করলাম যে, তাজউদ্দীন সাহেব ব্যাংক ফাভের বড় কর্তাদের সঙ্গে আলােচনা করবেন, সভাসমিতি, সংবর্ধনা এগুলােতে হাজির হবেন। এছাড়াও আমেরিকান সরকারের বড় কর্তাদের সাথে দেখা করতে হবে, বাংলাদেশ এসােসিয়েশনের

সংবর্ধনা গ্রহণ করতে হবে, আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে হবে। এই বন্ধু মহলে ছিলেন অসংখ্য কংগ্রেস সদস্য, সাংবাদিকপ্রচারমাধ্যমের ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক আমেরিকান প্রশাসনের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারী, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, গীর্জার নেতৃত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষকবর্গ। ঢাকা থেকে খবর পেলাম, তাজউদ্দীন সাহেব ব্যাংক মিটিংয়ে আসছেন, এর বাইরে অন্যান্য যােগাযােগে রাজি নন। বেশ হতাশ হলাম। কিন্তু এর পরপরই আবার বার্তা পেলাম, তিনি সব ধরনের প্রােগ্রামই করবেন, তবে তা হতে হবে আড়ম্বরহীন, গরিব বিধ্বস্ত দেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং অর্থমন্ত্রীর জন্য হােটেলে সুইট নেয়ার দরকার নেই, শুধু একটি এক শয্যার কক্ষ হলেই যথেষ্ট। নতুন অফিস নিয়ে বাড়তি খরচ করে লাভ নেই, তাই এই খরচটি এড়িয়ে অফিসের কাজ চালাবার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হল। ওয়াশিংটনে সমস্ত অনুষ্ঠানই হল আড়ম্বরহীন, কিন্তু প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। তাজউদ্দীন সাহেব অনেকের সাথেই দেখাসাক্ষাৎ করলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী, আমেরিকার অর্থমন্ত্রী জর্জ শুলজ এবং এইড প্রশাসক . জন হান্না, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা এবং মুদ্রা তহবিলের পিয়ার পল সােয়াইটজার। এই প্রতিটি সাক্ষাতেই আমার উপস্থিত থাকার সুযােগ হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সমস্ত মিটিংআলােচনার ফাঁকে প্রতিদিনই তার সাথে আমার সমাজতন্ত্র, দুর্নীতি, উন্নয়ন, বৈদেশিক সাহায্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলােচনা এমনকি বিতর্ক পর্যন্ত হয়ে যেত। আশ্চর্য বিষয়, আমি লক্ষ্য করতাম তিনি তার প্রতিক্রিয়া দেখান না। আমি সরকারের কত রকম সমালােচনা করছি, কত কী বলছি, তিনি শুধু শুনছেন। আমার মনে হল, তিনি অনেক বিতর্কের অবতারণা করেন শুধু যুক্তিগুলাে অনুধাবনের জন্য। সমাজতন্ত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ নিয়ে একদিন তার সাথে গভীর একটি আলােচনা হয়। তাঁর কথা ছিল যে, আমরা সবাই সমাজতন্ত্রের বৈষম্যহীন সমাজে আকৃষ্ট, কিন্তু কী করে একটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলব তা তাে জানি না। পশ্চিমের শিক্ষালয় থেকে আহরিত সমাজতান্ত্রিক তত্ত্বকথা দিয়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তােলা খুবই কষ্টকর। সরকারি খাতে উদ্বৃত্তের ব্যবস্থা করে বিনিয়ােগের প্রবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ করের কি কোন ভূমিকা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হতে পারে ? প্রয়ােজনমত সম্পদ যদি সবাইকে নিশ্চিত করা যায় তাহলে প্রত্যক্ষ করের তাে কোন অবকাশ থাকে না। অথচ আমাদের উদ্বৃত্তের জন্য প্রত্যক্ষ করএবং বৈদেশিক বাণিজ্য করই হচ্ছে প্রধান উপাদান। আমাদের বৈপ্লবিক অভিভূতিটি ছিল এত স্বল্পস্থায়ী এবং এতে স্বার্থের সমাহার ছিল এত জটিল যে এর উপর ভিত্তি করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন। আমাদের। নেতৃত্বও যে সেজন্য প্রস্তুত আছে তাও সজোরে দাবি করা যায় না। আমার মনে হল, স্বপ্ন বাস্তবের সংঘাত, আদর্শ প্রয়ােগবাদের মধ্যে ফাঁক নিয়ে তিনি ছিলেন গভীরভাবে চিন্তিত। প্রতিটি আলােচনায় বাংলাদেশের সমস্যা। এবং কৌশল নিয়ে তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্বাসনের জন্য কি করতে হবে সে সম্বন্ধে তার ধারণা ছিল পরিষ্কার। বাংলাদেশের প্রয়ােজন সম্পর্কে তার হিসেব ছিল সহজসরল। বিশ্বব্যাংক, মুদ্রা তহবিল এবং অন্যান্য মিটিংগুলাে হল আশাতীত সাফল্যজনক। ম্যাকনামারার পরিচিতি ছিল তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন কমপিউটার মনের মানুষ হিসেবে। তিনি তাজউদ্দীন সাহেবের সাথে আলােচনায় অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করলেন। বিশ্বব্যাংকের কাছে ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়ােজনীয়তার কথা তুলে ধরা হল। ১৬০ মিলিয়ন ডলার চলতি প্রকল্পের জন্য এবং ৬২ মিলিয়ন ডলার নতুন প্রকল্পের জন্য ঋণ চুক্তি সম্পাদন হয়। মুদ্রা তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৬২. মিলিয়ন ডলার। আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি (অর্থমন্ত্রী) জর্জ শুলজএর সাথে বৈঠকের পর তাঁদের দুজনের সম্পর্ক এমন ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের পর্যায়ে পৌছে, যা পরবর্তী বছরগুলােতেও একইরকম থেকে যায়। আমেরিকান এইড ডাইরেকটার . হান্নার সাথে আলােচনাও অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়। আমেরিকান প্রশাসনে তাজউদ্দীন সাহেব সম্পর্কে ধারণা ছিল, তিনি অত্যন্ত কট্টর ব্যক্তি। কিন্তু তার সাথে আলােচনার পর সেই ধারণাটা বদলে যায়। তারা প্রত্যেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, মানুষটি বাস্তববাদী বা প্র্যাগম্যাটিক। সফর শেষ করে ফেরার সময় তিনি আমাকে দুটো কথা বললেন। এক, আমি যেন এক্ষুণি চাকরি থেকে পদত্যাগ না করি, আর অন্যটি গূঢ় তত্ত্বকথাদেশকে গড়ে তুলবার জন্য প্রয়ােজন নিবেদিত দেশপ্রেম। সত্যি কথা বলতে, আমি তখনও জানি না তিনি আমার সম্পর্কে কী ধারণা পােষণ করেন। কারণ ওই যে ওয়াশিংটনে অবস্থানের কটা দিনের আলােচনাবিতর্কের কথাই আমার মাথায় ছিল। এর কয়েকদিন পরেই আমি লন্ডনে গেলাম। বন্ধু মঈদুল হাসান (মূলধারা একাত্তর বইয়ের লেখক) বললেন, ‘আপনি তাজউদ্দীন সাহেবকে কী বলেছেন যে শুধু মুহিত ছাড়া আর কোন কথা নেই ? মনে হল।একেবারেই মােহিত করে ফেলেছেন। এইভাবেই আমি প্রথম জানলাম আমার প্রতি তাজউদ্দীন সাহেবের মনােভাব। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই বছর এই নিবেদিতপ্রাণ নেতার সঙ্গে কাজ করার অনেক সুযােগ আমার হয়েছিল। তখনই প্রত্যক্ষ করেছি, তিনি এক বিরাট মাপের প্রশাসক। একজন দক্ষ প্রশাসকের মত নিরপেক্ষতা, চট করে একটা বিষয় বুঝে ফেলার ক্ষমতা এবং কোন কিছুর গভীরে পৌছে বিশ্লেষণ করবার মত তীক্ষ জ্ঞান ছিল তার। তার আলােচনায়, নােটে, সিদ্ধান্তে সবসময়ই আমি লক্ষ্য করেছি জ্ঞানগর্ভ গভীরতা। তাঁর আলােচনা, কথাবার্তা সবসময়ই ছিল স্ট্রেইটফরােয়ার্ড। এদিকেও আছি, ওদিকেও আছিএটা তিনি কখনই করতেন না। ১৯৭২ ছিল পুনর্বাসনের বছর, অর্থনীতিকে সচল করার সময়। মুক্তিযুদ্ধে বাম রাজনীতির বিকাশ বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সবিশেষ এগিয়ে

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রী আর্ল বাটজএর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ

দেয়। পশ্চিম পাকিস্তানের বহু শিল্পপতি তাদের শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা সংস্থা পরিত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এগুলাের ব্যবস্থাপনার ভার সরকারকে নিতে হয়। এসব প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রতিষ্ঠান মিলে ৮২ শতাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান সরকারের হাতে এসে পড়ে। এই অবস্থায় অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ ছিল স্বাভাবিক। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার খাতিরে যে শিল্পনীতি গ্রহণ করা হল, তাতে ব্যক্তিমালিকানা খাতের সুযােগ মােটেই রইল না। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র শিল্প রইল ব্যক্তি উদ্যোগের আওতায়। ২৫ লাখ টাকা হল ব্যক্তিমালিকানা খাতের সর্বোচ্চ বিনিয়ােগসীমা। সরকারের পক্ষে ছােট ছােট পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা হল অত্যন্ত জটিল। দেখা গেল যে, শিল্প নীতির কড়াকড়িতে বিনিয়ােগ মােটেই হচ্ছে না। ব্যক্তিমালিকানা খাতে বৈদেশিক বিনিয়ােগের কোন সুযােগই ছিল না। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিল। ব্যাপারে প্রয়ােগবাদী সুপারিশ প্রণয়নের কৃতিত্ব তাজউদ্দীন আহমদের শিল্প মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামের অবদান ছিল বিনিশ্চায়ক। বৈদেশিক বিনিয়ােগের জন্য সুযােগদান, মাত্র ১৮টি শিল্পকে সরকারি খাতে রেখে বাকি সব শিল্পে ব্যক্তি উদ্যোগের ব্যবস্থা করা, বিনিয়ােগের সীমা ২৫ লাখ থেকে ৩০০ লাখে বর্ধিত করাএসব সুপারিশ পেশ করেন তাজউদ্দীন সাহেব। ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে নতুন শিল্প নীতি ঘােষণা করা হয় এদিকে আমি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিতে চাইছি, অথচ তাজউদ্দীন সাহেব বিনা নােটিশে আমাকে এক তারবার্তা পাঠালেন যে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমােদন নিয়ে আমাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে বিশ্বব্যাংকে একান্ত নির্বাহী পরিচালকের পদে নিযুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি যেন অনতিবিলম্বে দায়িত্ব গ্রহণ করি। ভদ্রলােকের সঙ্গে রােজই বিতর্ক হয়েছে, অনেক কড়া কড়া মন্তব্য করেছি। আর তিনি কিনা আমাকে একটি অযাচিত চাকরি উপহার দিচ্ছেন। প্রায় বছরখানেক এই চাকরিতে ছিলাম এবং আরাে প্রায়। বছরখানেক এর জের টানতে হয়। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় একটি দাতাগােষ্ঠীর সম্মেলন আহ্বান করে। যদিও বাংলাদেশ এইড গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালের অগাস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৯৭৩ সালের সভাকে এর পথপ্রদর্শক বিবেচনা করা যায়। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ তাদের উন্নয়ন সমস্যা কৌশল সম্বন্ধে দাতাদের অবহিত করে এবং তাদের প্রয়ােজনের হিসেব দেয়। বিশ্বব্যাংক, অর্থ তহবিল

এবং আনরব অর্থনৈতিক অবস্থান, সম্পদের প্রয়ােজন, কারিগরি সাহায্যের ক্ষেত্র ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রতিবেদন পেশ করে। একটি জটিল বিষয় ছিল পাকিস্তানের ঋণ সমস্যা। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কট মুক্তিযুদ্ধের আগেই সৃষ্টি হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে সঙ্কটটি গুরুতর আকার ধারণ করে। পাকিস্তান ১৯৭১ সাল থেকেই তার ঋণ পরিশােধে অক্ষম হয়। ১৯৭৩ সালে তাদের আবদার ছিল যে, ঋণের। একাংশের বোেঝা বাংলাদেশের ভাগে ফেলতে হবে। আমাদের কথা ছিল যে, পাকিস্তান তখন বাংলাদেশকে স্বীকার করছিল না বরং তাদের সংবিধানে পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের অংশ বলে দাবি করছিল, সুতরাং তাদের কোন ঋণ আমরা বহন করতে পারি না। আর তাদের সঙ্গে যদি আলােচনা শুরু হয় তখন আরাে সব লেনদেনের হিসেব করতে হবে। সম্মেলনের আগের দিন দাতাগােষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আমাদের তরফ থেকে ছিলেন চারজনতাজউদ্দীন আহমদ, . কামাল হােসেন, , নুরুল ইসলাম এবং আমি। এই বৈঠকে এই জটিল বিষয় নিয়ে কথাবার্তা পাকা করা ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। দাতাদের কথা হল যে, যে সব প্রকল্প বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হয় সেগুলাের জন্য অপরিশােধিত ঋণের দায়িত্ব বাংলাদেশকে নীতিগতভাবে গ্রহণ করতে হবে। . হােসেন আইনের অবস্থান বিশ্লেষণ করে আমাদের বক্তব্যকে জোরালােভাবে তুলে ধরলেন। যুক্তি অকাট্য, কিন্তু তারা তাদের পাওনা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে চান। তাজউদ্দীন সাহেব। উপসংহারে বললেন, বাংলাদেশ সমস্যাটির গুরুত্ব স্বীকার করে এবং এর সমাধানে ভূমিকা রাখতে চায়। যথাসময়ে আইনগত ফাকের সুযােগ তারা নেবে।

তবে বাংলাদেশকে কোন ঋণের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য যে ভিত্তির প্রয়ােজন। তা পাকিস্তানকে তৈরি করে দিতে হবে, অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব তাদের স্বীকার করতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্য এজন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করে বসে থাকবে না, কিন্তু এই মুহূর্তটা যথােপযুক্ত নয়। বাংলাদেশ তার উন্নয়ন সহযােগীদের সঙ্গে সম্প্রীতি বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। ইতােমধ্যেই বাংলাদেশের সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যেসব পুরনাে প্রকল্প পুরােপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, বাংলাদেশ সেগুলাে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবার সময় এসব প্রকল্পের পুরাে ঋণের বােঝা গ্রহণ করছে, যদিও অসম্পাদিত কাজের খরচ যৎসামান্য। বাংলাদেশের প্রয়ােজন বড়াে মাপে সম্পদ প্রবাহের, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আগুয়ান হতে লম্বা হাতে বিনিয়ােগ করতে হবে। এবং এই উদ্যোগে উন্নয়ন সহযােগীদের সহায়তা সহমর্মিতা বাংলাদেশ কামনা করে।

১৯৭৩ সালের জুলাই মাসের শেষে তাজউদ্দীন আহমদ দ্বিতীয়বারের মত ওয়াশিংটন সফরে আসেন। উপলক্ষ ছিল আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা সংস্কার কমিটির একটি সভা। এই কমিটিকে বলা হত বিশজনের কমিটি বা কমিটি অফ টুয়েন্টি দুবছর সভাসমিতি করে কমিটি বিশ্ব অর্থব্যবস্থার সংস্কারে সামান্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কমিটির সভাসমিতি ছাড়াও এবারে অর্থমন্ত্রী আমেরিকান সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে সংযােগ স্থাপন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী। উইলিয়াম রজার্স, কৃষি মন্ত্রী আল বাটজ এবং এইডের প্রশাসক , জন হান্নার সঙ্গে তার বিস্তৃত আলােচনা হয়। প্রত্যেকটি আলােচনায় দুটি বিষয় গুরুত্ব পায়। একটি হল খাদ্য সরবরাহ। কংগ্রেসের অনুদানের অধীনে বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে প্রচুর গম আমদানি করছিল। মন্ত্রী যে সমস্যাটি তুলে ধরেন তা ছিল আমদানির নির্ঘণ্ট নিয়ে। নবান্নের আগে বাংলাদেশের প্রয়ােজন ছিল তিন লাখ টন আমেরিকান গম। অন্য বিষয়টি ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সংশ্লিষ্ট ঋণের বােঝা বিভাজন। তাজউদ্দীন সাহেব ঋণের ব্যাপারে তার আগের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং এবারে সেই যুক্তি গৃহীত হয়। বিশ্বব্যাংকের সভাপতি রবার্ট ম্যাকনামারা জানালেন যে, ঢাকায় ঋণের বিষয়টি নিয়ে জারিজুরিটি সঠিক ছিল না। এবং বাংলাদেশের। অত্যন্ত প্রয়ােগবাদী অবস্থান এখন সব দাতা মেনে নিয়েছেন। সেক্রেটারি অব স্টেটস্ উইলিয়াম রজার্স যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি উত্থাপন করে বাংলাদেশকে নমনীয় হতে অনুরােধ করলেন এবং বললেন যে, নাইজেরিয়া বায়াফ্রার যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করে দিয়েছে। তাজউদ্দীন সাহেব এই বক্তব্যকে গ্রহণ করলেন না। তিনি বললেন যে, বায়াফ্রায় সংখ্যালঘু গােষ্ঠী। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে কিন্তু সংখ্যালঘুরা। সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার হরণে পাশবিক অত্যাচার করে পরাস্ত হয়। এক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ছিল ক্ষমতাশালী এবং তারা যে অপরাধ করেছে তার বীভৎস বিবরণ খােদ আমেরিকার সাংবাদিকরাও লিপিবদ্ধ করেছেন। তবুও বাংলাদেশ সমস্ত সেনাবাহিনীকে ছেড়ে দিয়ে মাত্র ১৯৫ জনের বিচারের দাবি করেছে। এই বিচার মানবজাতির কল্যাণের জন্য প্রয়ােজনীয়। রজার্সের একটি প্রারম্ভিক মন্তব্য ঐতিহাসিকভাবে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক যখন ভাল তখন আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব ভাল লাগছে।তাজউদ্দীন সাহেবের সপ্রতিভ উত্তর ছিল, ‘আমেরিকার জনগণ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সব সময়ইকিন্তু আমাদের সম্পর্ক ছিল উষ্ণ এবং বর্তমানে আপনাদের সাহায্যসহায়তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এদিকে ওয়াশিংটনে একটি ঘটনা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে কাজ করার অভিযােগে কিছু লােকের পাসপাের্ট প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয় এই প্রত্যাহারের আগেই সমস্ত লােকের দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমি সরকারকে লিখলাম যে, এদের বিরুদ্ধে আমি কোন নালিশ করব না। এটা সত্যি এরা মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেয়নি, আমরা এটাও জানি অনেকেই একটু সরেটরে ছিল, সরাসরি জড়িত হয়নি। কিন্তু এর অর্থই যে এরা সবাই শত্রুতা করেছে তা বলতে পারা যায় না। তবে কিছু লােক হয়ত করেছে। কারণে বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনা করা হােক। এতে কোন ফলাফল হল না। আদেশ হয়ে গেছে, তাই পাসপাের্ট প্রত্যাহার করে নেয়া হল। এমনই একটা কেস ছিল . জেড, এম, শামসুল আলমের। তার চাকরিও গেল, পাসপাের্টও গেল। তার শুধু একটাই প্রার্থনা, চাকরি না হয় নাই থাক, কিন্তু সে দেশে ফিরে যেতে চায়। শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তাভাবনার পর আমরা তাজউদ্দীন সাহেবের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। তিনি দরখাস্ত দিতে বললেন। তার মনােভাব ছিল যে, পাসপাের্ট কেন নেয়া হবে, অন্যায় হলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী বিচার হবে। এই কেসটির কোন সম্ভাবনাই ছিল নাকিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব দেশে ফিরে যাবার কিছুদিন পর শামসুল আলম তার পাসপাের্ট ফিরে পায় ১৯৭৪ সালের জুন মাসে বিশেষ কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে তাজউদ্দীন আহমদ ওয়াশিংটনে আসেন। মুদ্রা তহবিল বিশ্বব্যাংক ছাড়াও আমেরিকা সরকারের সঙ্গে তাকে যােগাযােগ করতে হয়। বিষয় ছিল মূলত খাদ্য সাহায্য। এবারে এক নতুন উপসর্গকিউবার সঙ্গে ব্যবসার কারণে খাদ্য সরবরাহে বিলম্ব। বাংলাদেশ কিউবাতে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে। আমেরিকার বৈদেশিক সাহায্য বিলের একটি শর্ত ছিল যে, কেউ যদি কতকগুলাে নির্দিষ্ট কমিউনিস্ট দেশের সঙ্গে ব্যবসা করে বা তাদের জাহাজে যদি ওইসব দেশে মাল সরবরাহ করে তবে সেই দেশ আমেরিকার সাহায্য পাবে না। সমস্যাটি প্রথমে উত্থাপন করেন এইড প্রশাসক ড্যানিয়েল পার্কার এবং পরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রী জোসেফ মিসকো। তাজউদ্দীন সাহেবের ব্যাখ্যা ছিল বাস্তববাদী এবং জোরালাে। তিনি বলেন যে, কিউবার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তারা কোন দ্রব্য আমদানি করতে চাইলে বাংলাদেশ সাগ্রহে তাতে রাজি হয়। বাংলাদেশের প্রগতির জন্য তার রপ্তানি বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়। এছাড়া ১৯৫৪ সালের আইন এখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। আমেরিকা নিজেই বড় বড় কমিউনিস্ট দেশের সঙ্গে ব্যবসায় লিপ্ত, এই প্রেক্ষিতে এই আইনটিকে নমনীয় দৃষ্টিতে দেখা দরকার এবং সম্ভবত এর সংশােধনও প্রয়ােজন। বাংলাদেশের খাদ্যসঙ্কটের গুরুত্ব বিবেচনা করে গম সরবরাহ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা নিতে তিনি অনুরােধ করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার সর্বশেষ ওয়াশিংটন সফর ছিল ১৯৭৪এর সেপ্টেম্বরঅক্টোবরে। এই সফরে প্রথমে তিনি ব্যাংক ফান্ডের বার্ষিক সভায় অংশ নেন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরে যােগদান করেন। এবারের সমস্যা ছিল সবই বড় মাপের। বাংলাদেশে তখন চলছে খাদ্যসঙ্কট, দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের অবস্থা কাহিল। আমদানির খরচ যােগাতে পয়সা নেই বাংলাদেশের টাকার বিনিময় হার নিয়ে ছিল হাজার প্রশ্ন। এই বিনিময় হারের সমস্যাটির সমাধান হয় ১৯৭৫এর এপ্রিলে। অন্য যে সমস্যা সেটা ঠিক তত বড় সমস্যা নয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এইড গ্রুপের প্রথম সভা। এই সভাটি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় ২৪ ২৫ অক্টোবরে। ওয়াশিংটনের পথে তাজউদ্দীন আহমদ সভিয়েট রাশিয়া সফর করে আসেন। এবারে তিনি ছিলেন অনেকটা চিন্তাক্লিষ্ট বিমর্ষ। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে জরুরী ভিত্তিতে বৈদেশিক লেনদেনের জন্য কিছু সাহায্য সংগ্রহ করতে অনুরােধ করেছিল। কিন্তু ম্যাকনামারা সাহেবের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়, অক্টোবরের আগে কেউ কোন অঙ্গীকার করতে রাজি ছিলেন না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের সূত্রে ঋণ গ্রহণের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। নতুন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জন্য মাত্র পাঁচদশ মিলিয়ন ডলারের বেশি কিছু আহরণ করা ছিল দুরূহ। খাদ্য সাহায্যের জন্য অঙ্গীকার যা পাওয়া গেল তার সরবরাহ ছিল বিলম্বিত। প্রায় প্রতিদিন এইসব বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আমার আলােচনা হত। জাপানি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেখা হয় এবং তখন তাকে দেখলাম কিছুটা আশাবাদী, জুনেও এই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার উৎসাহব্যঞ্জক আলােচনা হয়েছিল। ওয়াশিংটন থেকে তার জাপানে যাওয়ার কথা, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে তিনি প্রস্তুতিপর্বে অবদান রাখবেন। এই সফর নিয়ে তিনি ছিলেন বেশ উৎসাহিত। কিন্তু দেশে দুর্ভিক্ষ রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ছিল তার সার্বক্ষণিক চিন্তা। ওয়াশিংটনে তাজউদ্দীন আহমদের এই চারটা সফরে আমার স্ত্রী আমি তার সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযােগ পাই। ছাড়াও ১৯৭৪ সালের শুরুতে তার সঙ্গে রােমে বিশেষ কমিটির একটি অধিবেশনে সফরসঙ্গী ছিলাম ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রস্তুতি সভায়ও তার সঙ্গে ছিলাম জেদ্দায়। বস্তুতপক্ষে তিনি অর্থসচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বৈরুতে অপেক্ষা করছিলেন এবং মরহুম রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান এবং আমি জেদ্দায় আমাদের সদস্যপদের জন্য তদবিরে লিপ্ত ছিলাম। প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টুংকু আবদুর রহমানের সৌজন্যে আমরা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মর্যাদা লাভ করি এবং তখনই অর্থমন্ত্রীর দল বৈরুত থেকে জেদ্দায় আসেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক ফান্ডের সভা হয় নাইরােবিতে, সেখানেও তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে ছিলাম।৭৪ খবর এল, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিউইয়র্কওয়াশিংটন আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন আসা নিয়ে আমাদের অনেকেরই একটু আপত্তি ছিল। তিনি ওয়াশিংটনে আসবেন, কিন্তু তাকে তেমন সংবর্ধনা দেয়া হবে

যেটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রাপ্য। বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বিশ্বের বিস্ময়কর নেতা। তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথি। হিসেবে আপ্যায়ন করা হবে না এটা আমাদের মনঃপূত হচ্ছিল না। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে স্বল্প সময়ের সাক্ষাৎ ছাড়াও আমরা আমাদের সাধ্যমত বিভিন্ন সিনেটরদের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎ এবং চাআপ্যায়নের ব্যবস্থা করলাম। বিশ্বব্যাংক প্রধান রবার্ট ম্যাকনামারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। তাজউদ্দীন সাহেব, নূরুল ইসলাম সাহেবও এই আলােচনার সময় ছিলেন। যাই। হােক, তাজউদ্দীন সাহেবকে আমি খুব স্ট্রংলি সমস্ত কথা বললাম। তিনিও আমার সাথে একমত হলেন। বললেন, এই সফরটা দাওয়াতের মাধ্যমে হলে আসলেই ভাল হত। দেশে ফেরার আগে এক রাতে কথার ফাকে তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, ‘মনে হচ্ছে এটাই আমার শেষ সফর।আর কিছু খুলে বললেন না, কিন্তু আমার মনে হল যেন বলতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু তার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘স্যার, আপনি যদি বলেন এটা আপনার শেষ সফর তা হলে কী করবেন ? বললেন, ‘কী আর করব ? আমি এমপি আছি, এমপি থাকব। আর রুটিরুজির একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। আমাকে তাে আওয়ামী লীগেই থাকতে হবে। আমি কখনও আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে পারব না এবং রাজনীতি ত্যাগ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু যা হবে, আমি মন্ত্রী থাকব না।

Reference:

আবুল মাল আব্দুল মুহিত

তাজউদ্দীন আহমদ – আলোকের অনন্তধারা post