বঙ্গবন্ধুকে হত্যার একটি সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের জুন মাসে। তিনি চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য গেলে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ট্যাঙ্ক বাহিনীর সহায়তা ছাড়া এই চক্রান্ত সফল করা যাবে না ভেবে তা বাতিল করা হয়। ‘দি ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ পত্রিকার ১৪ই নভেম্বর সংখ্যায় লেফটেনান্ট কর্ণেল ফারুক রহমানের যে সাক্ষাৎকার বের হয়, তাতে ফারুক বলেন, “খােন্দকার মােশতাক পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। ঢাকার অন্য এক সাংবাদিক সূত্র থেকে জানা যায়, মুজিব-হত্যার আগে খােন্দকার মােশতাকের আগা মসিহ লেনের ভােজসভায় নেতৃস্থানীয় খুনী মেজরেরা উপস্থিত ছিলেন। মুজিব-হত্যার পেছনে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সক্রিয় সহযােগিতা ও সমর্থন ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় রয়টার ও ব্যাঙ্কক ওয়ার্ল্ডের ৫ই নভেম্বরের খবরে। এই খবরে বলা হয়, “ফারুক রহমান জানান যে, ব্যাঙ্ককে পৌছার পরেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান দূতাবাসে তাদের উপস্থিতির খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং ওই দুইটি দেশেই তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন।” ‘ব্যাঙ্কক পােস্টের’-৭ই নভেম্বরের সংখ্যার খবর : “জনৈক মার্কিন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, ফারুক আজ (৬ই নভেম্বর) মার্কিন কনসুলেটে আসেন এবং তার ও আরাে ১৬ জন অফিসারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি চান।’ এখানে উল্লেখযােগ্য যে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ খুনী মেজরদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এডওয়ার্ড কেনেডী প্রমুখ গণতান্ত্রিক নেতার প্রকাশ্য বিরােধিতায় তারা তা পারেননি। ‘ব্যাঙ্কক পােষ্ট’ পত্রিকার ১৮ই নভেম্বরের সংখ্যায় বলা হয়, “ফারুক আরাে জানান যে, ব্যাঙ্ককে অবস্থানকালে তারা ঢাকায় খােন্দকার মােশতাকের সংগে দূরপাল্লার টেলিফোনে নিয়মিত যােগাযােগ রেখেছেন।” মার্কিন প্রভাবে থাইল্যান্ড প্রথমে খুনী মেজরদের আশ্রয় দেয় এবং পরে পাকিস্তানের অনুরােধে গাদ্দাফী-সরকার খুনী মেজরদের লিবিয়ায় আশ্রয় দিতে রাজি হন। এই ব্যাপারে জিয়া-সায়েম সরকারের ভূমিকা আরাে ন্যাক্কারজনক। বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাধীনে খুনীদের লিবিয়ায় রাখার ব্যবস্থা হয়। ওদের ব্যাঙ্কক-এ সপ্তাহ দুই থাকা-খাওয়া এবং বেনগাজি পর্যন্ত চার্টার্ড বিমানে পেীছার খরচ মােট ৩৫ হাজার ডলার (৪ লাখ টাকার বেশি) দিয়েছেন জিয়া-সায়েম সরকার। ঢাকা জেলের ভেতরে চারজন জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার সংগে মােশতাকের কতটা সম্পর্ক রয়েছে তা বােঝা যায়, ফারুকের আরেকটি মন্তব্যে। ব্যাঙ্কক ওয়ান্ত’ পত্রিকার ৫ই নভেম্বর সংখ্যায় এবং “দি ভয়েস অব দি নেশন’ পত্রিকার ৬ই নভেম্বর’র সংখ্যায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে’ ফারুক বলেন, প্রেসিডেন্ট (খােন্দকার মােশতাক) আমাদের দেশত্যাগ করতে বলেন। প্রেসিডেন্টও আমাদের সঙ্গে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আসতে দেওয়া হয়নি।”
Reference:
ইতিহাসের রক্তপলাশঃ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর (১ম পর্ব), আব্দুল গাফফার চৌধুরী