You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু অস্ত্র উদ্ধারের ডাক দিলেন, এটা তাজউদ্দীন সাহেবের মনঃপূত হয়নি। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব এটা বঙ্গবন্ধুকে বলতেও পারেননি। কারণ বলতে গেলে আবার সন্দেহ করে বসতে পারেন যে, এদের অস্ত্র তােলার ব্যাপারে তাজউদ্দীন সাহেবের আপত্তি কেন—নিশ্চয় কোন কারণ আছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুকে তার চারপাশের লােক নানারকম কান ভাঙানি দিচ্ছিল। তাজউদ্দীন সাহেবের পরিকল্পনা ছিল, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ না করে এর পেছনে যে মানুষগুলাে আছে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা। যদি অস্ত্রের পেছনের লােকগুলাে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে অস্ত্র স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। সেজন্য তিনি দেশ মুক্ত হবার সাথে সাথে প্রতিটি জেলায় মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলেছিলেন। সেখানে তাদের অস্ত্রসহ তারা থাকবে, তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তােলা হবে। এরপর তারা নিজ নিজ পেশায় চলে যাবে। তারা রাজাকারদের অস্ত্র উদ্ধারে সাহায্য করবে। তারা এই ক্যাম্পে থাকবে, এতে যত অর্থই লাগুক না কেন। তার প্রথম বিবেচনা ছিল মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য ক্যাম্প করা। তাতে প্রত্যেকটি মুক্তিযােদ্ধা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে প্রয়ােজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কাজে তাদের লাগানাে যেত। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আর করা হল না। তাদেরকে সােজা বলা হল, তােমরা অস্ত্র জমা দিতে আসাে। তাতে যেগুলাে ভারি অস্ত্র, যেগুলাে নিয়ে ঘুরে বেড়ানাে যায় , সেগুলাে জমা হল, কিন্তু ছােট ছােট অস্ত্র রয়েই গেল। সেগুলাে কোনদিনই উদ্ধার করা গেল না এবং এই ছেলেগুলােকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। অথচ এরা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় ফসল। মুক্তিযােদ্ধাদের সার্টিফিকেট দেয়ার পদ্ধতিটা ছিল ভুল। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেল বলে মুক্তিযােদ্ধাদের কাজও শেষ হয়ে গেল, এটা কিন্তু ঠিক হয়নি। তাজউদ্দীন ভাইসহ আমাদের ইচ্ছে ছিল, আমরা নিজেরাও মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে এই ক্যাম্পে এসে থাকব। দরকার হলে আমরা আমাদের নিজেদের কাজে যাব না। আমরা এই ক্যাম্পের সাথে থাকব যতদিন দেশের পুনর্গঠন না হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের সম্পূর্ণভাবে স্থিতিলাভ করতে যতদিন সময় লাগবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের ক্যাম্প চলতেই থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ একটা প্রক্রিয়া ছিল, চলমান প্রক্রিয়া, যা ১৬ ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যায়নি। পরে ক্রমশ সেই প্রক্রিয়াটার সাথে বিরােধ ঘটল। এবং যা হল তাতে মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব এবং আমরা বাংলাদেশে সত্যিকার ন্যায়বিচার, সমাজে সুষম বণ্টন ইত্যাদি বাস্তবায়ন করবার জন্য মুক্তিযােদ্ধাদের মাধ্যমে যে সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম, সে সুযােগ আর পাওয়া যায়নি।

  • আমীর-উল ইসলাম
  • তাজউদ্দীন আহমদ – আলোকের অনন্তধারা
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!