শিরোনামঃ ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব
সূত্রঃ দি ইভুল্যশান অব ইন্ডীয়া এন্ড পাকিস্তানঃ সি,এইচ, ফিলিপ্স, পৃষ্ঠা- ৩৭৮
তারিখঃ ১৬ই মে ১৯৪৬।
দ্য ক্যাবিনেট মিশন
১৬ মে ১৯৪৬
১। গত ১৬ই মার্চ, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতে ক্যাবিনেট মিশন শেষ হবার একটু আগে এই কথাগুলো বলেছেন,
‘আমার সহকর্মীরা, যতটা সম্ভব দ্রুত এবং সম্পূর্ণভাবে মুক্তি অর্জনে ভারতকে সর্বোচ্চ সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে, সেখানে যাচ্ছেন। কোনধরনের সরকার বর্তমান শাসনকে প্রতিস্থাপিত করবে তা ভারতকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে; কিন্তু আমাদের অভিপ্রায় এটাই যে, তাঁকে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত নিতে সকলভাবে সাহায্য করা …… ?
আমি আশা করি ভারতীয় জনগণ বৃটিশ কমনওয়েলথের মাঝে অবস্থানকে বেছে নেবে। আমি নিশ্চিত ভারত এর মাধ্যমে বৃহৎ সুবিধাভোগী হবে ……
‘কিন্তু ভারত যদি তা বেছে নেয়, তবে সেটা অবশ্যই স্বেচ্ছায় হতে হবে। বৃটিশ কমনওয়েলথ এবং সাম্রাজ্য কোনো বাহ্যিক বাধ্যবাধকতায় একত্রে আবদ্ধ নয়। এটা সকল মুক্ত মানুষের একটা মুক্ত সমিতি। যদি অন্যথায় ভারত তার স্বাধীনতাকে বেছে নেয়, আমাদের দৃষ্টিতে ভারত তা করার পূর্ণ অধিকার রাখে। আমাদের করনীয় শুধু এই রূপান্তরকে যতটা সম্ভব মসৃণ ও সহজ করা।’
২। এই ঐতিহাসিক কথাগুলোয় উদ্দীপ্ত হয়ে, আমরা – মন্ত্রীসভার সদস্যরা এবং ভাইসরয়, দুই রাজনৈতিক দলকে ভারতের অখন্ডতা বা বিভক্তির মতো মৌলিক ইস্যুতে সহমতে পৌঁছানোর জন্য আমাদের সর্বোচ্চটুকু করেছি। দিল্লীতে দীর্ঘ আলোচনার পর, আমরা কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগকে সিমলায় সম্মেলনে একত্রে উপস্থিত রাখার ব্যাপারে সফল হয়েছি। সেখানে উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গির পূর্ণ বিনিময় ছিল এবং উভয় দলই একটা মীমাংসায় পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোয় ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল, কিন্তু পরিশেষে দুই দলের মাঝে থাকা অবশিষ্ট ফাটলগুলো বন্ধ করা অসম্ভব বলেই প্রমাণিত হয়েছে ও ফলে উপসংহারে কোনো সহাবস্থান আসে নি। যেহেতু কোনও ঐক্যমতে পৌঁছানো যায় নি, সেহেতু দ্রুত একটা নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য যেসব সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা সর্বোত্তম বলে আমাদের বিবেচনাধীন তা দাখিল করা আমাদের দায়িত্ব বলে আমরা অনুভব করি। এই বিবৃতি যুক্তরাজ্যের সরকার কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে দেয়া হয়েছে।
৩। তদনুসারে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে অবশ্যই কিছু আশু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যার মাধ্যমে ভারতীয় জনগণ ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, এবং যতদিন না নতুন সংবিধান চলে আসছে ততদিন পর্যন্ত বৃটিশ-ভারতের প্রশাসন চালানোর জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যাবে।
আমরা জনগণের ক্ষুদ্রতর সাথেসাথে বৃহত্তর স্বার্থে পাশে থাকব বলে ও তাঁদের সমস্যাগুলোর সমাধান সুপারিশ করার প্রয়াস চালাবো বলে স্থির করেছি যা ভবিষ্যতের ভারতকে পরিচালনার ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী নেতৃত্বে সহযোগিতা যোগাবে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটা যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি ও সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আর্থনীতিক ক্ষেত্রে একটা ভাল সুযোগ করে দেবে।
৪। এই বিবৃতিতে বিস্তারিত প্রমাণাদির, যা মিশনে দাখিল করা হয়েছে, পর্যালোচনা করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না; কিন্তু এটা ঠিক যে আমরা অবশ্যই বলতে চাই এটা, মুসলিম লীগের সমর্থকদের বাইরে, ভারতের অখন্ডতার জন্য প্রায় সার্বজনীন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখিয়েছে।
৫। যদিও এই বিবেচনা আমাদেরকে, ভারতের বিভক্তির সম্ভাব্যতাকে, পুঙ্খানুপুঙ্খে ও নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষা করা থেকে নিরস্ত করে নি; কেননা আমরা মুসলিমদের হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে স্থায়ীভাবে শাসিত হবার অকৃত্রিম এবং তীব্র উদ্বেগে প্রভাবিত হয়েছিলাম। এই অনুভূতি মুসলিমদের মাঝে এতটাই প্রবল এবং ব্যাপক আকার পেয়েছে যে কোনো নির্দিষ্ট কাগজের তৈরি রক্ষাকবচের মাধ্যমে এর প্রশমন সম্ভব নয়। যদি ভারতে অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখতে হয় তবে মুসলিমদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও অর্থনীতি অথবা অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ বিশেষ কিছু ব্যবস্থার মাধ্যমে সংরক্ষিত হতে হবে।
৬। তাই আমরা প্রথম উদাহরণসরূপ মুসলিম লীগ প্রদত্ত পাকিস্তান নামের একটা আলাদা ও সম্পুর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রশ্নটা পরীক্ষা করে দেখি। এই পাকিস্তান রাষ্ট্রটিতে দু’টো অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত থাকবেঃ একটা অঞ্চল উত্তর-পশ্চিমে যাতে থাকবে পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এবং বৃটিশ বেলুচিস্তান প্রদেশগুলো; অন্যদিকে আরেকটা অঞ্চল উত্তর-পূর্বে যাতে থাকবে বাংলা এবং আসাম প্রদেশ। মুসলিম লীগ সীমান্তের পুনর্গঠন নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিবেচনা করতে সম্মত হলেও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর আবশ্যিক স্বীকৃতির জন্য দাবি জানিয়েছে। আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিতর্কের ভিত্তি ছিল, প্রথমত, মুসলিম সংখ্যাগুরুদের তাঁদের পদ্ধতি বা তাঁদের আকাঙ্ক্ষিত সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারের ওপর, এবং, দ্বিতীয়ত, যেসব অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যালঘু সেসব অঞ্চলগুলো অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর, যাতে করে পাকিস্তান প্রশাসনিক ও আর্থনীতিকভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে।
পাকিস্তানে অংশীভূত করে ছয়টি প্রদেশের সামগ্রিক অমুসলিম সংখ্যালঘুদের পরিমাণের সমগ্র গাণিতিক হিসাব এখানে খুবই বিবেচ্য হবে যা নিচে দেখানো হয়েছে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলঃ | মুসলিম | অমুসলিম |
পাঞ্জাব | ১৬,২১৭,২৪২ | ১২,২০১,৫৭৭ |
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ | ২,৭৮৮১৭৯৭ | ২৪৯,২৭০ |
সিন্ধু | ৩,২০৮,৩২৫ | ১,৩২৬,৬৮৩ |
বৃটিশ বেলুচিস্তান | ৪৩৮,৯৩০ | ৬২,৭০১ |
২২,৬৫৩,২৯৪ | ১৩,৮৪০,২৩১ | |
শতকরা ৬২.০৭ ভাগ | শতকরা ৩৭.৯৩ ভাগ |
উত্তর-পূর্বাঞ্চলঃ | ||
বাংলা | ৩৩,০০৫,৪৩৪ | ২৭,৩০১,০৯১ |
আসাম | ৩,৪৪২,৪৭৯ | ৬,৭৬২,২৫৪ |
৩৬,৪৪৭,৯১৩ | ৩৪,০৬৩,৩৪৫ | |
শতকরা ৫১.৬৯ ভাগ | শতকরা ৪৮.৩১ ভাগ |
দুই কোটি মুসলিম সংখ্যালঘু পুরো ১৮.৮ কোটি জনসংখ্যার বৃটিশ ভারতের মাঝে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
এই সংখ্যাগুলো আমাদের দেখায় যে মুসিলম লীগের দাবি অনুসারে একটি আলাদা সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে সাম্প্রদায়িক সংখ্যালঘু সমস্যার কোনো সমাধান হবে না; আবার একটি সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রে পাঞ্জাব এবং বাংলা এবং আসামের অমুসলিম সংখ্যাগুরু এলাকাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ন্যায্যতাও দেখি না। আমাদের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের পক্ষে প্রতিটি বিতর্কই অমুসলিম এলাকাগুলোকে পাকিস্তান থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। এই বিষয়টা শিখদের অবস্থান বিশেষভাবে প্রভাবিত করবে।
৭। তাই আমরা বিবেচনা করেছি যদি শুধু মুসলিম সংখ্যাগুরু এলাকাগুলো নিয়ে একটি সার্বভৌম পাকিস্তান গঠন করা যায় তবে তা সমঝোতার একটা সম্ভাব্য ভিত্তি হতে পারে। এই ধরণের পাকিস্তান মুসলিম লীগ এর বিবেচনায় সম্পুর্ণ অবাস্তব কেননা এর ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান থেকে (ক) পাঞ্জাবের আম্বালা ও জলন্ধর বিভাগ (খ) পুরো আসাম শুধুমাত্র সিলেট বাদে (গ) পশ্চিম বাংলার বিরাট অংশ, কোলকাতা সহ, যাতে পুরো জনসংখ্যার মুসলিমরা পুরো জনসংখ্যার শতকরা ২৩.৬ ভাগ। আমরা আরও উপলব্ধি করতে পেরেছি যে কোনো সমাধান যা পাঞ্জাব এবং বাংলাকে মৌলিকভাবে বিভক্ত করে ফেলে তা এই প্রদেশগুলোর মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে। বাংলা এবং পাঞ্জাব প্রত্যেকেরই নিজস্ব ভাষা আছে এবং একটা দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। এছাড়াও, পাঞ্জাবের কোনোপ্রকার বিভাজন করতে গেলে সীমান্তের দু’পারেই প্রচুর পরিমাণ শিখদের রেখে বিভাজিত করতে হবে। অতএব এ থেকে আমরা বাধ্য হয়েই এই উপসংহারে উপনীত হয়েছি যে বড় বা ছোট কোনো আকারেরই একটি সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক সমস্যার একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান দেবে না।
৮। পূর্বোল্লিখিত বিতর্ক ছাড়াও এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, আর্থনীতিক, এবং সামরিক বিষয়ও বিবেচনাধীন। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ যোগাযোগ এবং ডাক ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের ওপর ভিত্তি করে। এই ব্যবস্থার ভাঙ্গন বিভক্ত ভারতের উভয় অংশকেই চরম ক্ষতির সম্মুখীন করবে। একটি অবিভক্ত প্রতিরক্ষা অনেক শক্তিশালী হবে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরি করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ভারতকে রক্ষার উদ্দেশ্যে, এবং তাদের বিযুক্তি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে এবং উচ্চমানের দক্ষতায় একটি মারাত্মক আঘাত দেবে, ফলে তাদের মধ্যে গুরুতর বিপর্যয় দেখা দেবে। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনীও কম কার্যকর হয়ে পড়বে। প্রস্তাবিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের দু’টো ভাগই ভারতের দু’টো খুবই অরক্ষিত সীমান্ত অন্তর্ভুক্ত করে এবং সমুদ্রে একটি সফল প্রতিরক্ষার জন্যও পাকিস্তানের আয়তন যথেষ্ট নয়।
৯। একটি তদতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হল এই বিভক্ত বৃটিশ ভারতে ভারতীয় রাজ্যগুলো পারস্পরিক সাহচর্যে বৃহত্তর প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।
১০। পরিশেষে, এখানে ভৌগলিক সত্যটা হল প্রস্তাবিত পাকিস্তানের দু’টো ভাগ পরস্পর থেকে সাত’শ মাইল দুরত্বে বিচ্ছিন্ন এবং যুদ্ধ বা শান্তিতে তাদের মধ্যে যোগাযোগ নির্ভর করবে হিন্দুস্তানের দয়ার ওপর।
১১। অতএব আমরা বৃটিশ সরকারকে, বৃটিশদের হাতে থাকা বর্তমান ক্ষমতাকে দু’টো সম্পুর্ণ আলাদা, সার্বভৌম রাষ্ট্রে হস্তান্তর করার পরামর্শ দিতে অপারগ।
১২। যদিও এই সিদ্ধান্ত আমাদেরকে মুসলিমদের বাস্তবিক শঙ্কার ব্যাপারে অন্ধ করে দেয় না যে, তাঁদের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন বিশুদ্ধ একক ভারতে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে, যেখানে হিন্দুরা তাঁদের বাস্তবিক সংখ্যাগুরুত্ব দিয়ে একটি প্রভাবশালী অংশ। এই সমস্যা মোকাবেলায় কংগ্রেস একটি পদ্ধতি পেশ করেছে যেখানে প্রদেশগুলো পূর্ণাঙ্গ সায়ত্বশাসন ভোগ করবে শুধুমাত্র পররাষ্ট্রীয়, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগের মতো কেন্দ্রীয় বিষয়গুলো ছাড়া।
এই পদ্ধতিতে প্রদেশগুলো, যদি আর্থনীতিক এবং প্রশাসনিক পরিকল্পনায় বড় পরিসরে অংশ নিতে চায়, কেন্দ্রের হাতে আবশ্যিক বিষয়গুলো ছাড়াও ঐচ্ছিক বিষয়গুলো ছেড়ে দিতে পারবে।
১৩। আমাদের দৃষ্টিতে এধরণের পদ্ধতি ভেবে দেখার মতো সাংবিধানিক ক্ষতি ও বিশৃংখলা বাড়িয়ে দেবে। এভাবে একটি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও আইনসভার পক্ষে কাজ করতে কষ্টকর হবে যাতে কিছু মন্ত্রী, যারা আবশ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে, পুরো ভারতের ব্যাপারে দায়িত্বশীল থাকবে, যখন অন্য প্রাদেশিকভাবে নির্বাচিত মন্ত্রীরা, যারা ঐচ্ছিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে, দায়িত্বশীল থাকবে শুধুমাত্র সেসব ঐচ্ছিক বিষয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য। এই অসুবিধা কেন্দ্রীয় আইনসভায় লক্ষনীয়ভাবে দৃষ্টিগোচরীভুত হবে, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট প্রাদেশিক সদস্যকে আলোচনার মাঝে কথা বলা ও ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখতে হবে যখন বিষয়গুলো তাঁর প্রদেশের সাথে সম্পর্কিত হবে না। এই পদ্ধতিতে কাজ করার অসুবিধাটি ছাড়াও, আমরা মনে করি না, যে অন্য প্রদেশগুলো, যাঁরা কেন্দ্রের ঐচ্ছিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছাপোষণ করে নি, তাঁদের একই উদ্দেশ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অধিকার অগ্রাহ্য করা উচিৎ হবে। যদি এমনটা করা হয় তবে এটা আর তাঁদের স্বায়ত্বশাসনের পরিপন্থী হবে।
১৪। আমাদের সুপারিশগুলো পেশ করার আগে আমরা বৃটিশ ভারতের সাথে ভারতীয় রাজ্যগুলোর মধ্যেকার সম্পর্কে আলোকপাত করব। এটা পরিষ্কার যে বৃটিশ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ফলে, বৃটিশ কমনওয়েলথের ভেতরে থাকুক না না থাকুক, যে সম্পর্ক এযাবৎ রাজ্যশাসক এবং বৃটিশরাজের মধ্যে চলে এসেছে তা আর অস্তিমান থাকা সম্ভব হবে না। বৃটিশরাজ সর্বপ্রধানত্ব না পুনঃ অর্জন করতে পারবে না নতুন সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। প্রদেশগুলোতে আমরা যাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি তাঁরা সবাই এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে গেছে। তাঁরা আমাদের এটাও নিশ্চিত করেছে যে প্রদেশগুলো ভারতের নতুন উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগীতায় প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক।
সাংবিধানিক গঠন তৈরির সময়কালে তাঁদের এই পারস্পরিক সহযোগীতা অবশ্যই যথাযথ আলোচনাসাপেক্ষ হতে হবে এবং অবশ্যই তা সকল প্রদেশের জন্য একই হতে হবে। তাই আমরা বৃটিশ ভারতের প্রদেশ হিসেবে একই প্রকারের রাষ্ট্রগুলো নিয়ে আর পরবর্তী অনুচ্ছেদে আলোচনা করি নি।
১৫। আমরা এখন একটি সমাধান প্রকৃতির দিকে ইঙ্গিত করব যা আমাদের দৃষ্টিতে সকল দলের অপরিহার্য দাবিগুলোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং একইসাথে সমগ্র ভারতে একটি বাস্তব ও স্থিতিশীল সাংবিধানিক গঠন আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ হবে।
আমরা সুপারিশ করি যে সংবিধানের অবশ্যই নিচে দেয়া মৌলিক আকার থাকতে হবেঃ
(১)
এখানে বৃটিশ ভারত ও নব্য রাষ্ট্রদ্বয় উভয়ের সমন্বয়ে অবশ্যই একটা ভারতীয় ইউনিয়ন থাকতে হবে, যা কাজ করবেঃ পররাষ্ট্ বিষয়গুলো, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ নিয়ে এবং অবশ্যই এই বিষয়গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান করে দেবার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে।
(২) ইউনিয়নটির অবশ্যই একজন কার্যনির্বাহী এবং বৃটিশ ভারতীয় ও রাষ্ট্রগুলো থেকে নিয়ে গঠিত আইনসভা থাকতে হবে। আইনসভাতে উত্থাপিত যোকেনো সাম্প্রদায়িক বিষয়ের যেকোনো প্রশ্ন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত দুই প্রধান সম্প্রদায়ের সিংহভাগ প্রতিনিধির উপস্থিতি ও ভোট করার উপর নির্ভর করবে পাশাপাশি সকল সদস্যের সিংহভাগের উপস্থিতি ও ভোট করার উপর নির্ভর করবে।
(৩) ইউনিয়নের বিষয়গুলো ছাড়া অন্যসকল বিষয় এবং সকল লেনদেন সম্পর্কিত ক্ষমতা অবশ্যই প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকতে হবে।
(৪) রাষ্ট্রগুলো কেন্দ্রে সমর্পিত বিষয়গুলো ছাড়া সকল প্রজাদের এবং ক্ষমতা নিজে ধারণ করবে।
(৫) প্রদেশগুলো নিজেদের মাঝে কার্যনির্বাহীদের ও আইনসভাগুলোকে নিয়ে দলবদ্ধ হবার স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং প্রতিটি দল নিজেদের মধ্যে থাকা সার্বজনীন প্রাদেশিক বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে পারবে।
(৬) ইউনিয়ন এবং দলের সংবিধানগুলোতে একটি বিধান থাকতে হবে যার সাহায্যে যেকোনো প্রদেশ তাঁর বিধানসভার অধিকাংশ ভোটের মাধ্যমে দশ বছরের প্রাথমিক পর্যায়ের পর এবং পরবর্তীতে দশ বছর অন্তর অন্তর সাংবিধানিক শর্তগুলোর পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানাতে পারবে।
১৬। এটা আমাদের উদ্দেশ্য নয় যে ওপরে বর্ণিত কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে একটি সংবিধানের বিস্তারিত বিন্যাস করা, বরং কিছু গতিশীলতা প্রদানকারী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন যার সাহায্যে ভারতীয়দের দ্বারা ভারতীয়দের জন্য একটি সংবিধান স্থির করা যায়।
এটা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক এবং আলোচনার সময় থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ভবিষ্যৎ সংবিধানের জন্য যেকোনো সুপারিশ করা ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয় যতক্ষন না বড় দুই সম্প্রদায়কে সংবিধান প্রণয়ণ কারী কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
আমরা আশা করব যে নতুন স্বাধীন ভারত বৃটিশ কমনওয়েলথের সদস্য হতে ইচ্ছাপোষণ করবে। আমরা আশা করি যে, যেকোনো কর্মসূচীতে, আপনারা আমাদের জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সাহচর্যে থাকবেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো আমাদের মুক্ত অভিমতের উপর নির্ভরশীল। তবে অভিমত যাই হোক না কেন, ভবিষ্যতে, যা অতীতের চেয়েও গৌরবময় হবে, আমরা সানন্দে আপনাদের সাথে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিগুলোর মাঝে আপনাদের নিত্য বর্ধনশীল সমৃদ্ধিতে থাকতে চাই।