এদিকে প্রথম থেকেই মুজিব বাহিনী করার ব্যাপারটা তাজউদ্দীন ভাইসহ আমরা খুব অপছন্দ করেছি এই কারণে যে, আমরা মনে করেছি এটা একটা বিভক্তি সৃষ্টি করবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। অল দি এগ শুড নট রিমেইন ইন ওয়ান বাস্কেট—এই কথাটা আমি ভারতীয় একজন কর্মকর্তার কাছ থেকেই জানতে পেরেছিলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এর আসল উদ্দেশ্যটা কী? আর দিল্লী সরকার বা ‘র’ কেন এটা করছে ? এই প্রশ্নের জবাবের জন্য তিনি কিছু সময় নিয়েছিলেন। সময় নিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, এর উত্তর একটিই : ইন্ডিয়া ডাজ নট ওয়ান্ট টু কীপ অল দি এগুস্ ইন ওয়ান বাস্কেট। তাে সেটা একটা কারণ। আর এটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা একে অপরের বিরুদ্ধে, এটাও একটা কারণ ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি যে, ‘র’ বা এ জাতীয় কোন গােয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ হতে গেছে সেই সমস্ত জায়গাতেই খুব মেসি কাজকর্ম হয়েছে। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য হচ্ছে যে, তাজউদ্দীন সাহেবের নেতৃত্বে আমরা যে যােগাযােগটা করেছিলাম সেটা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের যােগাযােগ। যতদিন আমরা যুদ্ধ পরিচালনা করেছি ততদিন সেই রাজনৈতিক পর্যায়েই যােগাযােগটাকে রক্ষা করেছি। আমরা কখনােই কোন গােয়েন্দা সংস্থা বা রাষ্ট্রীয় অন্য কোন সংস্থার মাধ্যমে যাইনি এবং আমরা এটাকে খুব অপছন্দ করেছি। আমার মনে হয় যে, শ্রীলংকাতে যে মেসি ব্যাপারটা হয়েছে, এর অনেকখানি দায়িত্ব ‘র’-এর। কারণ র এই সমস্ত টাইগার বাহিনী তৈরি করার ব্যাপারে এক সময় সাহায্য করেছিল। আবার শ্রীলংকাকে সাহায্য করতে গিয়ে টাইগারদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীকে অস্ত্রধারণ করতে হয়। যার ফলে এই মেসি ব্যাপারটার কারণে হয়ত রাজীব গান্ধীর জীবনটা পর্যন্ত গেল। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেবের মত যােগ্য নেতৃত্ব থাকার কারণে তারা এটা সম্পূর্ণভাবে করতে পারেনি। কিন্তু চেষ্টা তারা অনেক করেছিল। আমি তাজউদ্দীন সাহেব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য বলছি, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বিশ্বের সমস্ত দেশের সাথে আমরা বন্ধুত্ব চাইব এবং সেই বন্ধুত্ব হবে মানুষের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব, রাজনীতির বন্ধুত্ব বা সরকারের সাথে সরকারের বন্ধুত্ব। কিন্তু কোন এজেন্সির মাধ্যমে যেনকোন জাতি বা রাষ্ট্র বা সে দেশের নাগরিকরা আমাদের দেশের কোন অমঙ্গল করতে না পারে।
Source:
আমীর-উল ইসলাম।
তাজউদ্দীন আহমদ-আলোকের অনন্তধারা (প্রথম খণ্ড) – সিমিন হোসেন রিমি