You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ভারতীয় সৈন্য প্রবেশ ও ফেরত যাবার বিষয়ে তাজউদ্দীনের ভূমিকা - সংগ্রামের নোটবুক

তাজউদ্দীন সাহেব ভারতঘেঁষা, এটা আমাদের শত্রুরা প্রচার করেছে। আবার কেউ কেউ হয়ত ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ থেকেও এই ধরনের উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব খুবই সজাগ ছিলেন যেন আমাদের স্বাধীনতা মেঘাচ্ছন্ন না হয় ভারতবর্ষের কোন চাপের মুখে বা ভারতের কোন অতিপদক্ষেপের কারণে। সেটার প্রমাণ দুটি জায়গায় পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে, যখন ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ইয়াহিয়া খান ভারতের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিল এবং ভারতের সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হওয়া ছাড়া উপায় নেই, সেই সময়ে তাজউদ্দীন সাহেব শ্রীমতি গান্ধীকে বললেন যে, বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্য ঢুকবার আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃত দিতে হবে এবং কীভাবে সৈন্য ঢুকবে তার একটা ভিত্তি তৈরি করতে হবে। সেই ভিত্তি ছাড়া বাংলাদেশে ঢােকা যাবে না। তাজউদ্দীন সাহেবের কত বড় দূরদর্শিতা, এবং তিনি কত বেশি সজাগ থাকলে এই কথা বলা সম্ভব, এটা ইতিহাস নিশ্চয়ই বিচার করবে। অথচ এটার জন্যই তাকে দোষারােপ করা হয় যে, তিনি নাকি ভারতের সাথে চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি যদি বলা হয়, চুক্তি নিশ্চয় করেছেন, কিন্তু সেই চুক্তি ছিল যে, ভারত আমাদেরকে স্বীকৃতি দেবে, তারপরে ভারতের সৈন্য বাংলাদেশে ঢুকবে এবং যৌথ কমান্ডের মাধ্যমে ঢুকবে। যুদ্ধ পরিচালনার ব্যাপারে ভারতকে সবসময়। আমাদের সাথে, আমাদের কমান্ডের সাথে একত্রিত থাকতে হবে। এবং যখনই বাংলাদেশ সরকার বলবে তখনই ভারতের সৈন্যদের বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।। এই চুক্তি যদি তিনি করে থাকেন তবে এর চেয়ে ভাল এবং মহৎ এবং এত সুন্দর চুক্তি আমি তাে পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই দেখি। যখন অ্যালাইড ফোর্স ফ্রান্সে ঢুকেছিল তখন তাে এই রকম চুক্তি করে তারা ঢােকেনি। এমনকি সাম্প্রতিক অতীতে বন্যা, জলােচ্ছাসের সময় যে আমেরিকান টাস্কফোর্স বাংলাদেশে ঢুকল, তারা তাে কোন চুক্তি ছাড়াই ঢুকেছিল। এখানে আমাদের বুঝতে হবে যে, তাজউদ্দীন সাহেব কত দূরদর্শী, কত সজাগ, কত সতর্ক ছিলেন। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, স্বাধীনতার প্রশ্নে যৌথ বাহিনীর অধীনে ভারতীয় সৈন্য ঢােকার আগেই তিনি কিন্তু চুক্তি করেছিলেন—যে চুক্তির জন্য তাকে আবার দোষ দেয়া হয়। এটা আমার কাছে খুবই আশ্চর্য লাগে। অথচ এই চুক্তির বলেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার অনুরােধ জানান।

Source:

আমীর-উল ইসলাম।

তাজউদ্দীন আহমদ-আলোকের অনন্তধারা (প্রথম খণ্ড) – সিমিন হোসেন রিমি