You dont have javascript enabled! Please enable it!

২৬ মার্চের পর থেকে তাজউদ্দীন সাহেব যে আলাপগুলাে করতেন সে আলাপের আঙ্গিকেই আমি তখন কর্নেল ওসমানীকে বললাম, ‘আমরা একটা জনযুদ্ধে আছি, সেটা সংগঠিত করার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে।’ ট্রাডিশনালওয়ারফেয়ার-এর কথা বাদ দিয়ে কিভাবে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে আমি জেনারেল নগেন্দ্র সিং-এর সাথে কর্নেল ওসমানীর পরিচয় করিয়ে দেই এবং নগেন্দ্র সিং, ওসমানী ও আমি একটা বৈঠক করি। ইতােমধ্যে রাত্রিবেলায় সরকার গঠন নিয়ে আলাপ-আলােচনার জন্য সমস্ত এমপিদের ডাকা হল। সেখানে সবচাইতে বেঁকে বসলেন খন্দকার মােশতাক সাহেব। মােশতাক সাহেব কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না ক্যাবিনেটে থাকতে। তাঁর এ রকম একটা মনােভাব যে, হয়ত তাকেই প্রধানমন্ত্রী করলে ঠিক হত । তাজউদ্দীনের প্রধানমন্ত্রিত্ব তিনি মেনে নিতে চাচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, শেখ মণি ওখানে নেমেই চলে গেছেন তার নিজস্ব ডেরায়। আমাদের এই সরকার গঠন করবার ব্যাপারে তাঁর যে সাহায্য করার কথা ছিল সেটা তিনি করলেন না। তবে, একমাত্র মােশতাক সাহেব ছাড়া সকলেই খুব আনন্দিত যে আমরা ক্যাবিনেটটা গঠন করেছি। ফলে এখন যুদ্ধটা অন্য মােড় নেবে, জাতি একটা নেতৃত্ব খুঁজে পাবে। কিন্তু মােশতাক সাহেব বলছেন, তাঁকে মক্কাশরীফ পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে, তিনি হজ্জ করতে যাবেন এবং তার যদি মৃত্যু হয় তাহলে দেশে যেন একটু কবরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। মােশতাক সাহেব এ ধরনের খেয়ালী কথাবার্তা শুরু করে দিলেন এবং কিছুতেই মন্ত্রিসভায় থাকতে রাজি হচ্ছিলেন না। ডা. টি. হােসেনের সাথে মােশতাক সাহেবের খুব বন্ধুত্ব ছিল। টি. হােসেনই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে নিয়ে এসেছিলেন। শেষ পর্যন্ত টি, হােসেনকে বলা হল, “আপনি রাজি করান।’ তারপর তিনি রাজি হলেন এক শর্তে যে, তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী করতে হবে। সকলেই তাতে মত দিলেন। ক্যাবিনেট হল। জহুর আহমদ চৌধুরী তখন আধঘণ্টা ধরে মােনাজাত করলেন। এমন মােনাজাত করলেন যে সকলেরই সেদিন চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে, আমাদের ঘরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন, প্রিয়পরিজন সকলকে ছেড়ে আমরা এখানে এসেছি, বঙ্গবন্ধু কীভাবে আছেন আমরা জানি না; এই রকম পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে আমরা সেই তওফিক চাই যেন স্বাধীন দেশে ফিরে যেতে পারি । আমরা কলকাতায় ফিরে এসে সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেবার জন্য চিন্তাভাবনা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এই অনুষ্ঠানটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে হবে ।চুয়াডাঙ্গাতেই অনুষ্ঠানটি হবে এমন একটা আভাস সেখানে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই কথাটা ডাক্তার আসহাবুল হক অতি উৎসাহে প্রকাশ করে দেন সাংবাদিকদের কাছে। যার ফলে চুয়াডাঙ্গায় একটা বম্বিং হয়। চুয়াডাঙ্গায় আর আমাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান কার্যকর হল না।

Source: তাজউদ্দীন আহমদ – আলোকের অনন্তধারা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!